বিবর্তনের ধারনা প্রচলিত সেই 2500 বছর আগে থেকেই। পরিবর্তিত হওয়া, বিকশিত হওয়া, বিনাশ ওবিন্যস্ত হওয়ার ধারনাটা প্রচলিত অনেক আগে থেকেই। ভৌত পরিবর্তন, সাংস্কৃতিক পরিবর্তন পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার ধারনাগুলো প্রচলিত ছিলো।প্রাচীন সভ্যতার মানুষেরা এসব নিয়ে আলোচনা করেছে, তখনও এটার পেছনে শক্ত কোনো যুক্তি ছিলো না, পরম স্রষ্টার ধারনার বিপরীতের একটা ধারনা হিসেবেও এটার ব্যাবহার হয়েছে, যেখানে জীবন সৃষ্টির জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশকেই মূখ্য ধরা হয়েছে। তবে ডারউইনের বিবর্তনবাদ সেই সমাজে বড় মাপের ধাক্কা হলো কেনো?এটার সামাজিক প্রভাব, সমাজের উপর এই বিবর্তনবাদের প্রভাব, মানসিকতার উপর এর প্রভাব এবং এর প্রভাবে পরিবর্তিত মানসিকতা, অনেক কিছুই আলোচনায় আনা যায়, আলোচনার পরিসর অনেক। একটা তত্ত্ব বা ধারনা চিন্তার জগতে এমন শক্তিশালী প্রভাব এনেছে এমনটা খুব কম ধারনার ক্ষেত্রেই ঘটেছে।ডারউইনের সিদ্ধান্ত সে সময়ের প্রেক্ষিতে বৈপ্লবিক, শুধুমাত্র জীবাশ্মঘটিত সাক্ষ্যপ্রমান হাজির করলেও ওটার বৈজ্ঞানিক কার্যকরনের অনেকটাই ব্যাখ্যাহীন ছিলো। এমন কি এখনও অনেক কিছুই ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। এই বিষয়ে অগ্রগতির জন্য 1950 জিন আবিস্কারের কথাই প্রথমে মনে আসে।এই একটা প্রক্রিয়া আমাদের সামনে এইসব পরিবর্তনের সময়সূচি তুলে ধরছে, আমরা এখন আমাদের শাররিক কাঠামোর জন্য আসলে আমাদের জেনেটিক কোডই প্রধান ভূমিকা রাখে এটাপ্রমান করতে পেরেছি। এমন কি বিভিন্ন জিনের ভেতরে থেকে আমরা এই একটা বিষয়ও নির্ণয় করতে পেরেছি যে আমাদের হাত-পা তৈরি করার জিনটার সাথে মৌমাছির পা তৈরি করা জিনের পার্থক্য খুবই সামান্য, এমন কি এদের প্রতিস্থাপনের পরও এরা তাদের কাজটা ঠিক মতো করে যায়। যদি মৌমাছির পা তৈরি করার জিন দিয়ে আমাদের হাত পা তৈরির জিনকে প্রতিস্থাপিত করা হয় তাহলে আমাদের হাত-পা তৈরি হবে মৌমাছির মতো রোমশ পা শুধু তৈরি হবে না। এটা প্রমানিত হয়েছে ফ্রুট ফ্লাই এবং ইঁদুরের চোখের জন্য দায়ি জীনকে প্রতিস্থাপিত করে। দেখা গেছে ইঁদুরের চোখের জন্য দায়ী জীনকে মাছিতে প্রতিস্থাপিত করার ফলে মাছি ইঁদুরের চোখ নিয়ে না জন্মিয়ে মাছির চোখ নিয়ে জন্মেছে।অর্থ্যাৎ জিনগুলো জানে তাদের কাজ কি, এবং আশেপাশের জীনগুলো তাদের কার্যপরিধি নির্ধারন করে দেয়। একজন বেশ চমৎকার একটা মডেল তৈরি করেছে, শুধুমাত্র আলোক সংবেদি একটা কোষ থেকে ধারাবাহিক বিবর্তনে কিভাবে চোখের মতো জটিল একটা জৈবযন্ত্র তৈরি হতে পারে তা নিয়েই এই মডেল। এসবের পরও ডারউইনের প্রাথমিক বিবর্তন তন্ত্রের প্রধান কিছু দূর্বলতা দুর হয়েছে তার প্রস্তাবের কয়েক দশক পরে। যৌন সঙ্গি বাছাই করার আগ্রহ এবং প্রক্রিয়াই জীববৈচিত্র এবং বিবর্তনে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। প্রজাতি রক্ষা করা এবং পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলা এই হলো জীবন নামক সত্ত্বার কাজ। এই ধারনার উপর ভিত্তি করে একজন নতুন একটা ধারনা সামনে এনেছে, বলা হচ্ছে আমরা আমাদের অতি অতি প্রাচীন পূর্বপুরুষের মানসিকপ্রেষণাকে বহন করছি আমাদের আচরনে।মানুষ নামক জীবটা বিবর্তনের সাথে কিছু কিছু বিষয়কে একই ভাবেই বিশ্লেষন করে, গলিত জীবানুযুক্ত খাদ্যের গন্ধ তাদের কাছে খারাপ লাগে, তারা এই ধরনের খাওয়ার এড়িয়ে যাবে, যেনো খাদ্যবিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃতু্য বরন না করে, এই একটা সচেতন নিষেধ অনুদিত হয়েছে আমাদের মস্তিস্কে, তাই আমরা এই গন্ধটাকে বিবমিষাউদ্্রেককারী হিসেবে পাই। এই নির্ধারন মানুষ মাত্রই করছে,এমন সাধারন কিছু অনুভবকে একিভূত করে একটা সাধারনীকরন। এবং এদের একজন বলছে, আমাদের মগজ বৃদ্ধি পাওয়ার একটা কারন হলো যৌন সঙ্গি বাছাইয়ের লড়াই। এবং বিবর্তনের ক্ষেত্রে মূল ভুমিকাটা রাখছে নারী, মতান্তরে সেই জীব গোষ্ঠি যারা সন্তান লালন পালনের ভারটা নিচ্ছে, সচারাচর এই কাজটা করে নারী প্রানীরা। যারা পালনের ভার গ্রহন করছে তাদের বীজ উৎপাদন কম কিন্তু যারা সন্তান উৎপাদনের কাজ করছে তাদের বীর্য উৎপাদন ক্ষমতা অসীম। তাদের প্রজাতি টিকিয়ে রাখার জন্য ব্যাপক জন্মদান করতে সক্ষম বীজ ছড়াতে হয়,যত বেশী সংখ্যক জায়গায় বীজ ছড়াতে পারবে প্রজাতি ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটাতে তারা ততটাই সফল হবে।এবং সামাজিক এই ধারনাটা শুধুমাত্র মানুষের জন্য না সকল প্রানীর জন্যই প্রযোজ্য, এবং যদি এই বিষয়টাকে বদলে দেওয়া হয় তাহলে নারীর উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে যায়। এবং বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে যেই জেনেটিক বিবর্তন ঘটে সেটার সফল পরিসমাপ্তি হলো একটা ভিন্ন প্রজাতির সৃষ্টি। এই ধারাবাহিক বিবর্তনের ধাপে ধাপে এইসব প্রজাতির ভেতরে আন্তনিষেক ঘটে, যখন যৌনজনন পদ্ধতিতে একটা অন্যটার সাথে বংশবিস্তার করতে পারে না তখনই সেটাকে আমরা পৃথক প্রজাতি বলি। লাভ বার্ডস আর তোতা পাখির মূল প্রজাতি একই হলেও তাদের ভেতরে যৌনজননের মাধ্যমের নতুন প্রজাতি সৃষ্টি সম্ভব না। সুকুমার রায়ের বইয়ে অনেক কিছুই সম্ভব হলেও বাস্তবে সেটা সম্ভব না।যৌনতাই প্রজাতির নির্ধারক, যৌনতার দ্্বন্দ্বই ক্রিয়াশীল বিবর্তনে, যৌনতার প্রভাব তাই বিবর্তনে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। যৌন জনন এবং ক্লোনিংয়ের প্রধান পার্থক্য হলো যৌন জননে জেনেটিক গুনাবলীর ব্যাপক পরিবর্তন ঘটতে পারে কিন্তু ক্লোনিংএ এই সুযোগ অনুপস্থিত, যৌন জননের মাধ্যমে সৃষ্ট প্রজাতির বিরূপ পরিবেশের টিকে থাকার সম্ভবনা বেশী। যেখানে ক্লোনিং করে বংশবিস্তার করা জীবেরা হেরে যায়।তাই আমাদের যৌনতা বিষয়টা নিয়ে আরও উচ্চকিত হওয়া উচিত। এটাই আমােেদর বৃক্ষাচারী বাঁদর থেকে 2 পায়ে হাঁটা প্রাইমেট থেকে শুরু করে এখনকার আধুনিক মানুষ বানিয়েছে ,কারন আমরা যৌনতার জন্য সঙ্গি বাছাইয়ের সময় আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি ব্যাবহার করে থাকি।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন