প্রশ্নটা খুবই স্বাভাবিক ভাবেই উঁকি দেয় মনে, প্রাকৃতিক নির্বাচন কিভাবে রাসায়নিক গঠনকে পরিবর্তিত করতে পারে, যদিও এটা ঘটতে দেখা যাচ্ছে অহরহই। উদ্ভিদজগতে আমরা দেখছি এই পরিবর্তন, দেখছি জীবের ভেতরেও।জেনেটিক পরিবর্তন উস্কে দেওয়ার পেছনে রাসায়নিক যৌগের উপস্থিতি এবং সেটা গ্রহন করার বিষয়টাই গুরুত্বপূর্ন মনে হয়েছে আমার কাছে। আমাদের পুষ্টির চাহিদা আমাদের জেনেটিক পরিবর্তনের অন্যতম কারন। অবশ্য এটা আমার নিজস্ব অভিমত, কোনো শক্ত প্রমান হাজির করতে পারবো না এর সপক্ষে, কোনো গবেষণালব্ধ প্রমান বা পরিক্ষীত কোনো পন্থাও বলতে পারবো না যেটা এই বিশেষ বিষয়টাকে নিয়ে কাজ করছে। আমার এই অনুমানের পেছনের কারনটা খুব সাধারন, পৃথিবীতে জীবানুদের পরিবর্তন আমরা দেখছি, গবাদি পশুবাহিত রোগের প্রতিরোধশক্তি আমাদের ভেতরে তৈরি হচ্ছে, কদিন আগে পড়লাম সাধারনত যারা ধুলাবালি মুক্ত পরিবেশে বসবাস করে তাদের ডাস্ট এলার্জি হওয়ার সম্ভবনা বেশী। এলার্জি আসলে কি? শরীরে কোনো যৌগের আগমন, এই যৌগের সাথে শরীরের পরিচিতি না থাকলে শরীর এই রাসায়নিক যৌগমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। একই কাজ করে যখন আমাদের শরীরে আর্সেনিক বেড়ে যায়, ফোস্কা উঠে সেই আর্সেনিককে শরীরের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করে শরীর। সব সময় সফল হয় না, আমাদের মস্তিস্কে বিষক্রিয়া উৎপাদনকারী রাসায়নিক যৌগসমুহের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিত সত্ত্বেও ঢাকার শিশুরা অন্য জেলার শিশুদের তুলনায় বুদ্ধিবৃত্তিতে পিছিয়ে এমন পরিসংখ্যান এখনও হাতে আসে নি। যদিও বাতাসে সহনিয় মাত্রার বেশী সীসা বা দুষন থাকলে সেটা শিশুদের মানসিক ভাবে পরিনত হতে বাধা দেয়, খুব খারাপ হলে তাদের মানসিক ভাবে বিকল করে দেয়। এই সীসার সাথে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির সম্পর্ক কি আমি জানি না, হয়তো এটা মস্তিস্কের সিগন্যাল পাঠানোর আয়নগুলোকে কোন ভাবে তাদের নির্ধারিত কাজ করতে বাধা দেয়। যার ফলে তথ্যবিশ্লেষন, নিউরন নিউরন নেটওয়ার্কিং সম্ভব হয়ে উঠে না। আমরা বুদ্ধিবৃত্তি বা মানসিক পরিপককতা বলতে যা বুঝি তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, পরিস্থিতি বিশ্লেষন করার ক্ষমতা আদতে। এইসব কাজ সম্পাদন করে আমাদের স্মৃতি, আমাদের অভ্যাস, আমাদের অভ্যস্ততা আছে বলেই আমরা একই ধরনের গানতিক সমস্যাকে সমাধানের জন্য নির্দিষ্ট একটা নিয়ম উদ্ভাবন করতে পারি। এই কাজগুলোর উদ্দিপনা আসে নিউরন নিউরন নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে, স্মৃতি আমাদের মস্তিস্কে সঞ্চিত থাকে। কোনো কারনে যদি এই সঞ্চিত স্মৃতির ভান্ডার থেকে তথ্য আসতে না পারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলিষ্ঠ অংশে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না বা আমরা সঠিক কোনো রূপকও উদ্ভাবন করতে পারবো না। ফলাফল মানসিক বৈকল্য, সীসার মাত্রাতিরিক্ত গ্রহনের ফলে এমন কিছুই ঘটে মস্তিস্কে।শরীরে যখন জীবানুর সংক্রামন ঘটে তখন শরীর শ্বেত রক্ত কনিকা পাঠিয়ে এই অগ্রাসনের বিপক্ষে লড়াই করে, এবং এই শ্বেত রক্ত কনিকা বেশী কর্মক্ষম হয়ে উঠে যদি শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশী থাকে। জ্বর আসার পেছনে এটাও একটা কারন। কিন্তু কিছু কিছু স্মার্ট জীবানু থাকে যারা এমনভাবে নিজেদের পরিবর্তিত করে ফেলে যে শ্বেত রকড়কণিকা তাদের শরীরের বাইরের কিছু বলে অনুমান করতে পারে না। আমাদের এন্টিবায়োটিকগুলোর কাজও এমন, পোষমানানো কিছু জীবানুকে শরীরে বসত গড়তে দেওয়া যেনো তারা শরীরকে এই জীবানুর উপস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রাখতে পারে । এমন পরবর্তিতে এই জীবানুর বংশবিস্তার সীমাবদ্ধ হয়ে যায়, কারন কোষগুলোকে দখল করে নিজেদের প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয় করতে তারা পারে না। খুবই সাধরনীকৃত মন্তব্য হলেও মূল বিষয়টা এরকমই।এমন যদি হয়ে কিছু দুর্বিনীত জীবানু আবার নিজেদের প্রয়োজনে নতুন একটা বেশ ধরে আসলো, যেমন নতুন ম্যালরিয়ার জীবানু, নতুন যক্ষার জীবানু, এইডসের জীবানু, অনেক জীবানুই আছে যারা নিজেদের জেনেটিক গঠনে সামান্য পরিবর্তন এনে প্রতিষোধকের বিপরীতে নিজেদের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে সফল ভাবে, এরা মোস্ট এডাপটিভ জীবানু, ওদের নির্মূল করা এজনই কঠিন, আবার নতুন করে পোলিও ভাইরাস ফিরে আসছে, মজার তথ্য হলো পৃথিবীর বেশিরভাগ বিড়ালই এইডসপ্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়েই জন্মেছে, তবে তাদের জীবানুকে বলা হচ্ছে ফেইডস, বাঁদরের শরীরেও অনুরুপ প্রতিষোধক লক্ষ্য করা গেছে, এবং আরও আশ্চর্য হলো কিছু কিছু মানুষের শরীরেও এমন এইডস প্রতিরোধক ব্যাবস্থা আছে, শ্বেতাঙ্গদের গড়ে 10 শতাংশ মানুষ এই রোগের প্রতিরোধক নিয়ে জন্মেছে,এশিয়ান আফ্রিকানদের এর প্রতিষোধক নেই, তাই তারা নিকেশ হয়ে গেলেও এই 10 শতাংশ মানুষের বংশবিস্তারের ফলে বেড়ে ওঠা মানব সমাজ এইডসের প্রতিরোধক নিয়ে জন্মাবে। তাদের এইডসে কিছু হবে না।এইডসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত আছে, এখন পর্যন্ত প্রায় 6 ধরনের প্রতিষোধক আবিস্কার করেছে বিজ্ঞানীরা, অবশ্য এসব খুবই দামি ঔষধ এ কারনে গড়ে 10% আফ্রিকানের এইডস হলেও, তারা গন হারে মরলেও তারা চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থযোগার করতে পারে না, তারা মরছে, প্রায় প্রতিটা আফ্রিকান দেশের জনসংখ্যার 5 থেকে 15 শতাংশ মানুষ এইডসে ভুগছে, ভারতে এইডস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হয়তো এদের কোনো এক শিশু সয়ংক্রিয় ভাবেই এর প্রতিষওধক নিয়ে জন্মাবে। ওদের দ্্বারাও নতুন স্মার্ট প্রজাতি তৈরি হবে যেভাবে বিড়াল, বাঘ, সিংহ, চিতা সবার শরীরে এইডসের প্রতিষোধক পাওয়া গেছে।জীাবনুগুলো কিভাবে এত তাড়াতাড়ি পরিবর্তিত হয়, তারা জেনেটিক গঠন পালটে ফেলে , এবং নতুন জেনেটিক গঠন এমন হয় যে প্রতিষওধক তার কাজ করতে পারে না, এমন কিছু লোকের জন্য জার্মানির এক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা নতুন একটা পদ্ধতির কথা চিন্তা করছে, হঠাৎ করেই তাদের প্রতিষোধক বন্ধ করে দেওয়া হয়, ফলে নতুন পরিবর্তিত জীবানুরা পুষ্টির অভাবে আবার নিজেদের পরিবর্তিত করে সাধারন এইডসের জীবানু হয়ে যায়। এই পরিবর্তন সফল হতে যে সময়টুকু লাগে সে সময়টা সংকটপূর্ন তবে যদি টিকে যায় এই সময়টাতে কেউ তাহলে এর পরের প্রতিষোধক পূর্নক্ষমতায় জীবানুনিকেশ করতে পারে। এটা ডেলিকেট চেক এন্ড ব্যালেন্স প্রক্রিয়া। সাফল্য আসলেও ব্যাপক মাত্রায় ব্যাবহার করা আগে আরও গবেষনার প্রয়োজন আছে।এই জেনেটিক পরিবর্তনের উৎস হলো শরীরের পুষ্টস্রোতে বিভিন্ন রাসায়নিকের উপস্থিতি, এটার সাথে মানিয়ে চলার জন্যই জিবানু নিজের জেনেটিক গঠন পরিবর্তন করছে। এমনটা ধারাবাহিক ভাবে ঘটাতে পারলে আমাদের পুষ্টির ধরন নির্ধারন করে দিবে আমরা কিরূপে পরিবর্তিত হবো।প্রাথমিক এক কোষী জিবের সাথেও এমন কিছু ঘটেছিলো, তারা ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতি পরিবেশে জলবাহিত হয়েছে, এবং সেই প্রাকৃতিক পরিবেশে লব্ধ পুষ্টির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে, এর একটা পর্যায়ে বিবর্তন শুরু হয়েছে খুব ভালো ভাবেই, সূরের আলো দিয়ে পুষ্টি পাওয়ার চেষ্টায় কিছু সবুজ উদ্ভিদ হয়েছে, এমন কি লাল, নীল বেগুনী সব রংয়ের উদ্ভিদই সূর্যের আলো থেকে শক্তি সংগ্রহ করতে সক্ষম। একদল অলস এই উদ্ভিদভুক হওয়ার মাধ্যমে নিজেদের পুষ্টি চেয়েছে, এখানেই অস্তিত্বের লড়াই শুরু, এখানেই নতুন প্রজাতি সৃষ্টির প্রেষণা, এভাবেই জেনেটিক গঠন বদলে একটা পর্যায়ে ভিন্ন শ্রেনীর প্রানী এবং উদ্ভিদ তৈরি হয়েছে। অসংখ্য এমন ঘটনায় এখন পৃথিবীতে জীব বৈচিত্র কোটিরও অধিক। সবাই তাদের জেনেটিক গঠনে সতন্ত্র। অথচ এখনকার সময়টা দেখলে অতীতের সাধারন অবস্থাটাকে রীতিমতো অসম্ভব সম্ভবনা মনে হয়।ঠিক এই রকম কিছু কথাই ডারউইনের বিবর্তনবাদকে সংজ্ঞায়িত করতে পারে। আমরা পরিবেশের উপর নির্ভরশীল পুষ্ঠির প্রয়োজনে, পুষ্ঠির উৎসে টানাটানি হলে নতুন পুষ্টির উৎস খুঁজতে বাধ্য হয় জীব, এবং পুষ্টির বিকল্প সন্ধানের চেষ্টাই বিবর্তন। এখানেই মনে হয় আরও একটা ধাঁধাঁর সমাধান লুকিয়ে ,কেনো ব্যায়মবিদদের সন্তান ব্যায়মবিদের শাররিক গঠন পায় না। তাদের পুষ্টির সংগ্রমের কোথাও হয়তো এই শাররীক গঠনের উপকারিতা নেই। এই চর্চাটা যদি কেউ 15 প্রজন্ম চালিয়ে যায় তাহলে কি এমন কোনো পরিবর্তন সম্ভব। উত্তর আমার জানা নেই, তবে আমার অনুমান হলো উত্তরটা নাই হবে পরিশেষে।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন