মুহাম্মদ ইউনুস নোবেল শান্তি পু রস্কার পেলেন, আমার অনুভুতি মিশ্র, এর আগে আমরা যেভাবে অমর্ত্য সেন বাংলাদেশে জন্মেছে বলে একটা সান্তনা খুঁজছিলাম এই বৈশ্বিক গর্বে বাংলাদেশকে আত্তিকরনের জন্য এই হাহাকারটা কমে গেলো। একেবারে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের একজন নাগরিক বৈশ্বিক স্ব ীকৃতি পেয়েছে। একজন বাংলাদেশি হিসেবে এই গর্বের অংশীদার আমি। তবে অন্য একটা প্রশ্নও মাথায় ঘুরছে। আমার অনুভুতি বলতে হলে আমি বলবো, একজন ব্রেইন সার্জন যদি তার নখ কাটার দক্ষতার জন্য পুরস্কৃত হয় যেমন লাগবে আমারও তেমন লাগছে। পুরস্কারের জন্য ভালো লাগছে তবে পুরস্কারটা আসলে সম্মানিত করলো নাকি অসম্মানিত করলো মুহাম্মদ ইউনুসকে এটা বুঝলাম না।মুহাম্মদ ইউনুসের মাইক্রোক্রেডিট প্রকল্প যত বড় সাফল্যজনক প্রকল্প হিসেবে মিডিয়ায় চিহি্নত আসলে কি ততটা সফল কোনো প্রকল্প এটা? এই আলোচনায় যাওয়ার আগে ক্ষুদ্্র ঋন প্রকল্পের সাথে প্রান্তিক জনগনের সম্পর্কটা বিশ্লেষন করা যাক। অবশ্যই আদর্শবাদীতার দিক থেকে এটার একটা জনকল্যানমুখী চরিত্র আছে। বড় বড় ব্যাংকগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে ঋন দেয় না কারন এই ঋনের বিপরীতে জমা রাখার মতো পর্যাপ্ত জমানত তাদের থাকে না। তারা সেসব ইনভেস্টরকে ঋন বিতরন করবে যারা ঋনের অন্তত 20% জমানত রাখতে পারবে। যাদের ক্ষুদ্্র ঋন প্রয়োজন এবং যাদের জমানত দেওয়ার যোগ্যতা নেই তাদের বিনাজমানতে ঋন সরবরাহ করে তাদের স্বাবলম্বি করে তোলার ধারনাটা মহৎ।তবে জমানতের বিষয়টার চেয়ে বড় একটা বিষয় আছে এই ঋন বিতরনের বিষয়ে, ব্যাংক যখন ঋন দেয় এর বিপরীতে তাদের অনেকগুলো কাগজপত্রের কাজ করতে হয়, এর জন্য যে ব্যায় হয় ওটা ক্ষুদ্্র ঋনের ক্ষেত্রে যা হয় বড় ঋনের ক্ষেত্রেও একই রকম, তাই 1 লক্ষ টাকা একজনকে ঋন দেওয়ার সময় যে খরচ হয় 100 জনকে 1000 টাকার ক্ষুদ্্র ঋন দেওয়ায় তার 100 গুন বেশী খরচ হয়। এই কস্ট ইফেকটিভ না হওয়াটাও ব্যাংকগুলোর ক্ষুদ্্র ঋনবিমুখতার একটা কারন।মুহাম্মদ ইউনুসের গ্রামীন ব্যাংক প্রকল্প এমন একটা ভালো প্রকল্প। তারা এই ব্যাংকের ঋন দানের কাজটা করছে, তবে তাদের সামাজিকিকরনের প্রক্রিয়া বলে একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা তৈরির প্রক্রিয়া আবিস্কার করতে হয়েছে। যেখানে 5 জনের একটা ছোটো উপদল তৈরি করা হবে, এদের জন্য বরাদ্দ ঋনের একটা অংশ দিয়ে দেওয়া হবে এবং এই ঋন ফেরত না আসা পর্যন্ত অন্য কাউকে ঋন দেওয়া হবে না সেই দলের। ফলেএকটা সামাজিক চাপ থাকবে ঋন ফেরত দেওয়ার, তাগাদা দেওয়ার জন্য ব্যাংকের কর্মি না রেখে কইয়ের তেলে কই ভাজার এই বিশেষজ্ঞ সমাধান হয়তো খুব ভালো একটা প্রক্রিয়া।তবে আমার মনে হয় গ্রামিন ব্যাংকের এই ঋন উত্তলোন পদ্ধতি বিশাল এক ব্যার্থতা। এছাড়া এদের সততার বিষয়টাকে সামনে আনা হয়েছে যেভাবে আসল ছবিটা এমন না, সততার বিষয়টাকে প্রশ্ন না করে বলা যায় গ্রামীন এমন একটা ম্যাসেজ দিয়ে দিয়েছে 99% মানুষ তাদের ঋন ফেরত দিয়েছে, শত ভাগ ঋন ফেরত পাওয়ার এই ম্যাসেজটা হয়তো তাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মিরা বেদ বাক্য ধরে নিয়েছে, তাই গ্রামীন ও মাঠ পর্যায়ে এমন বীভৎস কাবুলিওয়ালা ধাঁচের কর্মিকে অত্যাচার করতে দেখা যাচ্ছে ঋনগ্রহীতাকে।এর মানবিক দিকটা অনুপস্থিত এই প্রক্রিয়ায়। তবে ইউনুস যখন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন তখন তার এই অর্থনৈতিক মডেলকে যতটা মহান বলে প্রচারনা চালানো হচ্ছে ততটা মহান যে এই মডেল না তাই নগ্ন ভাবে প্রকাশিত হয়। যদি দারিদ্্রবিমোচনের জন্য তার এই ক্ষুদ্্র ঋন প্রকল্প সফল একটা মডেল হয় তবে এটা একটা বিপ্লবের মতো, এমন বিশাল অর্থনৈতিক পদক্ষেপ এবং বৈপ্লবিক অর্থনৈতিক তত্ত্বের জন্য তার অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়া প্রয়োজন। সবাই দাবি করছে এই পদ্ধতি সফল, একটা অর্থনৈতিক তত্ত্ব যখন সাফল্যের মুখ দেখে এবং এর প্রায়োগিক দিকটাতেও সাফল্য চলে আসে তখন বৈশ্বিক পরিবেশে এমন সফল অর্থনৈতিক তত্ত্বের জন্য তাকে শান্তি পুরস্কার দিয়ে দেওয়া একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে তার তত্ত্বকে দুর্বল প্রমানিত করে। একটা কারন হতে পারে এখনও এত ব্যাপক প্রচারনার পরও এই তত্ত্বের সাফল্য সম্পর্কে উচ্ছাসের ভাব আসছে না নোবেল কমিটির মানুষদের।হয়তো মডেলটা ব্যার্থ। এখনও এটা বলা যাচ্ছে না, কাবুলি ওয়ালার মতো গলায় দড়ি বেঁধে ঋন ফেরত নেওয়া হবে যতদিন ততদিন ঋনের ভয়ে ফেরার মানুষের সংখ্যা বাড়বে হয়তো, হয়তো টাদের সম্পদ ক্রোক করে গ্রামীন ব্যাংক শতভাগ ঋন ফেরতের দাবি জানাতে পারবে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে।অন্য একটা সংশয় তৈরি হয়েছে নোবেল শান্তিপুরস্কার প্রদানের রাজনৈতিক বিষয়টা ঘিরে, গত কয়েক বছরে নোবেল শান্তি পুরস্কারের পদক পাওয়াটা কিছুটা লজ্জাজনক বিষয় হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দাতা গোষ্ঠির চাপে প্রকৃত মানুষদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে না এমনটাই দাবি জানাচ্ছে অনেকেই, 2001 সালে আফগানিস্তান যুদ্ধ থামাতে ব্যার্থ হলো জাতিসংঘ, এমন কি ইরাকে আগ্রাসন চালানোর বিরোধিতা করছিলো জাতিসংঘ, তাদের একটা শান্তিপুরস্কার দিয়ে দেওয়া হলো, ইরানের একজনকে দিয়ে দেওয়া হলো শান্তি পুরস্কার, শান্তিপুস্কার পেলো আফ্রিকার একজন, সবাই বিশ্বে শান্তি ও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছে। মুহাম্মদ ইউনুসের গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অবদান ঠিক কোন খানে আমি জানি না। তার প্রতইষ্ঠান গনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান একটা? তবে আমি মানুষ খারাপ সবখানে শুধু গন্ধ খুঁজে পাই। একটা গনতন্ত্রের মডেল সাপ্লাই দেওয়া হচ্ছে, গনতন্ত্রের বিশ্বায়ন ঘটছে এখন, শতকরা 30 ভাগ নারীর প্রতিনিধিত্ব থাকবে যেকোনো পর্যায়ের গনতান্ত্রিক ব্যাবস্থায়। এমন একটা অনুপাত নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, নারীর ক্ষমতায়নের বুলি চালাচালি হচ্ছে চারপাশে, এবং বাংলাদেশের প্রথম আলো এবং ডেইলিস্টার পত্রিকাদ্্বয় চলমান রাজনৈতিক দলগুলোকে অগনতান্ত্রিক, জনগনের স্বার্থ বিরোধি এমন একটা প্রচারনা চালাচ্ছে অনেক দিন ধরে, তারা সুশীল সমাজ বলে একটা মনিটরিং কমিটি চালানোর দাবি জানাচ্ছে, একটা দেশ একটা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের মতো, এর দক্ষ ব্যাবস্থাপক প্রয়োজন, তাই একটা চেম্বার করা হবে সুশীল জনতাকে নিয়ে তারা দেশের উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিবেন।মুহাম্মদ ইউনুস এই সিভিল সোসাইটি মুভমেন্টের সাথেও জড়িত। আমাদের বৈদেশিক বিনিয়োগকে আরও বাড়িয়ে তোলার জন্য হয়তো এমন অস্থির রাজনৈতিক ব্যাবস্থার অবসান প্রয়োজন। এমন একটা চিত্র ফুটিয়ে তোলার সাথে সাথে জনমতও এমনটাই হয়ে যাচ্ছে। এখানেই আমার সংশয় গাঢ় হচ্ছে। আমরা জনপ্রতিনিধিত্ব মূলক একটা ব্যাবস্থা তৈরি করতে চাচ্ছি, যেখানে সুশীল সমাজের অংশ হিসেবে উচ্ছ মধ্যবিত্ত একদল মানুষ আমাদের দেশের শাসনভার গ্রহন করবেন, তারা সংস্কৃতিবান, তারা শান্তিপুর্ন আলোচনা করবেন এবং তারা হরতাল ভাংচুরের রাজনীতি করবেন না।এতসব ভালো প্রস্তাব থাকলেও আমার কাছে বিষয়টা এক ধরনের আই ওয়াশ মনে হয়। এটা পুঁজিবাদের বিশ্বায়নের একটা ধারা। এই মিডিয়া দিয়ে জনগনকে শোষন করা এবং দমিয়ে রাখার বিষয়টায় আমেরিকা সফল, একই সাফল্যের ধারা বাহিত হচ্ছে ভারতে। সেখানেও এখনও কিছু দুর্বিনীত মানুষ ভাংচুড় জ্বালাও পোড়াও করলেও তাদের টিভি দিয়ে বশ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ভারতের অনুসরন করে, বাংলাদেশেও মিডিয়া দিয়ে জনগন শোষন করার ব্যাবস্থা তৈরি হচ্ছে। আমাদের ভবিষ্যত হলো-আমরা টিভিতে দেখবো কোটিপতি হওয়ার অনুষ্ঠান, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত লটারি থাকবে, গরীব মানুষের সাথে রাষ্ট্রের সংযোগ হবে এই লটারি ব্যাবস্থায়। 10টাকার বিনিময়ে 10 লক্ষ টাকা পাওয়ার একটা লোভ থাকবে, এভাবে কেউ বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখবে, এভাবেই জনগনের ভোট নেওয়া হবে, পরবর্তি তারকা তৈরি হবে, এবং আমাদের সুশীল সমাজ আমাদের দেশের শাসনভার গ্রহন করে এসব গরীব মানুষের জন্য ফ্যান্সি কিছু শব্দ তৈরি করবেন। গরীব মানুষের জীবনযাত্রার মান কি আসলেই উন্নত হবে। আমাদের 12 কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব কারী কেউ যদি নাই থাকে। সেইসব সুশীল মানুষেরা যারা দেশের কয়েক লক্ষ উচ্চ মধ্যবিত্তের প্রতিনিধিত্ব করে তারা কি আসলেই 12 কোটি মানুষের জীবনযাপনের মান বদলে দিতে পারবেন, যেভাবে ইউনুস ভাই বলছেন, তারা কি সার্বিক উন্নয়নের নামে এরশাদের মতো কাঠামো ভিত্তিক উন্নয়ন করবেন, সেসব উন্নয়নের চিত্র প্রচারিত হবে মিডিয়া, আর করিমন, সমিরন সবাই পেটে পাথর বেঁধে এই উন্নয়ন খাবে চোখ দিয়ে, নাকি আসলেই দেশের বার্ষিক আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে এই 12 কোটি মানুষের নিজস্ব আয় দিয়ে তারা পেটে ভাতে না থেকে সামন্য নিজস্ব বিনোদনের সুযোগ পাবে। এখন বাংলাদেশের 13 কোটি মানুষের প্রধান বিনোদন সঙ্গম, আমাদের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে তারা কি এই বিনোদনের ধারাটা বদলাতে পারবেন?তবে বাঙালি উচ্ছাস সম্পর্কে আমার ধারনা মিথ্যে না হলে ,আর কয় দিনের মধ্যেই মুহাম্মদ ইউনুস বানীগুচ্ছ আসবে বাজারে, তিনি বলেছেন বলেই ওটা বেদবাক্য হয়ে যাবে। এর পরও মুহাম্মদ ইউনুসকে অভিনন্দন তার সাফল্যের জন্য।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন