ঈদ আবারও

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৬/১০/২০০৬ - ৪:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঈদের দিনটা বছরের সবচেয়ে নিরস দিন হয়ে গেছে সেই কৈশোরের অবসানের সাথে সাথেই, শৈশবের শেমাই ঈদের আনন্দ ছিলো রোজার মাসের প্রতিটা দিনের তিলতিল করে জমানো উত্তেজনার চুড়ান্ত সমাপ্তি, সেই ভোর বেলা নদীর পাড় ধরে হেঁটে চলা একদল শিশুর ভেতরের ক্ষুদ্্র ক্ষুদ্্র আকাংক্ষা পুরন হয়ে যাবে এমন সব পেয়েছির দিন ছিলো ঈদ। যদিও তেমন স্বচ্ছলতা ছিলো না তাই একেবারে রোজার শেষের দিকে পাওয়া একটা কাপড় কিংবা একটা স্যান্ডেলের মুল্য ছিলো অনেক অনেক বেশী। আর আমদের সবারই একই রকম অবস্থা, সবাই আশায় আশায় থাকি, সবাই সবার বাবার ইচ্ছার দিকে তাকিয়ে থাকতো রোজার প্রথমার্ধ, কি কি কেনা হবে, এই সবের একটা লম্বা তালিকাও তৈরি হতো, প্রতিদিনের সংযোজন বিয়োজন চলতো, শেমাই ঈদ আসবে, রোজার দিন কমার সাথে সাথে তালিকা থেকে অনেক কিছুই মুছে যেতো, সবার ঈদ বোনাসের দিকে তাকিয়ে থাকা বাবারা, কিংবা আমাদের শ্রমজীবি পিতার বন্ধুরা সবাই একটা সময় যখন আশাহত তখন একদিন বাবাদের ইচ্ছা হতো, সেইসব সুখি বন্ধুরা যাওয়ার আগে একছুটে বলে যেতো যাচ্ছি ঈদের বাজারে। তখনও মার্কেটিংয়ে যাওয়ার প্রচলন হয় নি, আমাদের ঈদের কেনাকাটা করতে যাওয়া বন্ধুর সৌভাগ্যে ইর্ষাকতর হয়ে যাওয়াই আমাদের সেই দিনের রীতি ছিলো, 24-25-26-27শে রোজা, এক একজন বন্ধুরা যেতো ঈদের কেনাকাটা করতে, আমাদের অবশিষ্ঠাংহসের পরিমান কমতে কমতে একজন দুইজন অবিশিষ্ট থাকতো। অবশেষে 27 এ রোজার পর ঈদ বোনাস হলো আমাদের ঈদের কেনাকাটার দিন আসতো।
এই সারাবছরের প্রতিক্ষা আবার হতো পরের বছর, এইভাবেই একেএকে শৈশব শেষ হলো। আমাদের কৈশোর চলে আসলো, আমাদের ঈদের রংও গেলো বদলে। সেই সময়ের ঈদের আমেজ আলাদা, আমাদের নিজেদের ঈদের বাজেট হয়েছিলো সেইসব দিনে, আমাদের নির্দিষ্ট বাজেটের সাথে দোকানের কাপড়ের দামের বিষমানুপাতিক সম্পর্কের মাঝেও আমাদের বন্ধু নিয়ে মার্কেটে যাওয়া। সেখানের কাঁচের আড়াল থেকে দেখা শার্ট প্যান্ট, মাঝে মাঝে অনেক আবদার করে একটা জুতা মিলতো, সেইসব কৃচ্ছতার দিনের পর হঠাৎ কৈশোর অবসান, আমাদের প্রিয় মেয়েদের বাসার সামনে গিয়ে একটু আশার নয়ন মেলে রাখা, কখন কোন ফাঁকে এক ঝলক দেখা যাবে, কখন একটু হাসি উপহার দিয়ে যাবে তারা, কখনও একটা চিঠি, এই একটা আশা আর আকাংক্ষায় দিনটা কেটে যেতো উত্তেজনা।
কৈশোর শেষ হওয়ার পর আর সেই রকম উত্তেজনার ঈদ আসে নি, আর বিশ্বিদ্যালয় জীবনের প্রথম থেকেই শেমাই ঈদ মানেই একটা যন্ত্রনা, বাসা ফেরার জন্য একটা পর একটা বাসের কাউন্টারে সামনে যুদ্ধ, এর মাঝে 2 বার বাসায় যাই নি শুধু এই রাগে, অযথা ধাককা খেয়ে অপমানের জ্বালায় ধুর শালা যাবোই না বাসায়, এই বলে বাসায় একটা ছোটো ফোন করে দেওয়া, আসছি না।
এখন প্রবাসে আরও খারাপ লাগে ঈদের দিনটাতে। অস্থির লাগে, এইটুকুই, মন খারাপ নেই কোনো, কষ্ট নেই, শুধু একটা অস্থিরতা, ফোনও করা হয়, বাসার মানুষের কথা শুনতে পাই, ছোটো ভাই বোনের গলা শুনতে পাই, সবাই একবার করে বলে কবে আসবা। আমিও বলি এই আসছি, হুট করে চলে আসবো একদিন। অথচ সেই রকম করে কখনই টাকা জমানো হয় না। এখানের যান্ত্রিক হিসাবী জিবনের সাথে খাপ খাওয়াতে না পারা আমি কখনই সেই বাংলাদেশের স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে পারি নি, আমার কাছে এখনও ঈদের বাড়ী ফেরা মানে যাওয়ার আগের দিন হুট করে বাসটার্মিনালে গিয়ে জোর করে নিজেকে বাসের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে বাসার পথে ধঁকতে ধুঁকতে রওনা দেওয়া, এইখানের ষান্মাসিক পরিকল্পনা করতে পারলাম না বলেই যাবো যাবো করেও এখনও যেতে পারলাম না, তবে যাবো, হাতে একটু টাকা জমলেই আগামি কোরবানীর ঈদে চলে যাবো বাংলাদেশে, ঈদের সাথে এখানের সেমিস্টারের ছুটি মিলবে সেই সময়।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।