আমি ভীষন লজ্জিত একজন শিক্ষকের অধঃপতনে। একজন শিক্ষকের কাছে আমাদের যেমন প্রত্যাশা ছিলো। যেভাবে শৈশবে আমাদের শেখানো হয়েছে শিক্ষক আমাদের দ্্ব ীতিয় পিতা যারা আমাদের জ্ঞান দিয়ে দ্্ব ীতিয় জন্ম দেন পৃথিবীর বুকে, সেই আশৈশব বিশ্বাসের ক্ষয় দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা, যারা আমাদের শিক্ষার ভিত্তি তৈরি করেন তাদের আন্দোলনে তিনি নিরব থাকেন। কোন সহমর্মিতার বাণী আমরা পাই না তার কাছে। অবশ্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। অনেক উচ্চ শিক্ষিত, ভালো ছাত্র হিসেবে বিস্তর সুনামও ছিলো তার একদা। এহেন ভালো মানুষটা হঠাৎ করেই অধঃপতিত হলেন- সত্য আসলে এমন বজ্রাঘাতের মতো অমোঘ নয়, পতন হয়তো সেই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সূচনা থেকেই।1973 এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসন প্রদান করা হলো তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা রাজনীতির অবাধ অধিকার লাভ করলেন।
রাজনীতি করে লাভবান হওয়া যায়। আমাদের দেশের অনেকেই রাজনীতি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের বোসাতি আছে, এই প্রবনতা হয়তো পেটের দায়ে।যখন পেটে ক্ষুধা তখন নৈতিকতা অহেতুক বিলাস।নৈতিকতা গিলে খায় আমাদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ।আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বর লাল নীল সাদা গোলাপি শিক্ষকে বিভাজিত হয়। এবং অতঃপর তারা পরস্পর দ্্বন্দ্বযুদ্ধে লিপ্ত হন।
ক্ষমতার লিপ্সা বা ক্ষাত্রেয় মনোভাব এবং আমরা সকল ছাত্র নেহায়েত ক্রীড়ানক। তাদের এই রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ পরিকল্পনায় অনিচ্ছুক অংশ গ্রহন করি। এদের কেউ কেউ আদর্শচু্যত হয়, যখন ভালো ছাত্র কিংবা ভালো শিক্ষকের কদর নেই তখন ছাত্রের বিবেক কর্জন আর নৈতিকতা অবক্ষয়ের প্রথম ধাপটা শুরু হয়ে যায়। আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক নিয়োগ পান না, নিয়োগ পান সিনেটের ভোটার। রাজনৈতিক পরিচয়ে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।
আমার বেশ ক জন পরিচিত শুধুমাত্র রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ঠতা বিহীন কিংবা চিন্ন মতের রাজনীতির সমর্থক বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পায় নি। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা যাদের রাজনৈতিক পরিচয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের তুলনায় বেশী। তবে শিক্ষক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নেই বিধায় তারা বঞ্চিত। এমন অনেক শিক্ষককে আমি চিনি যাদের বিশ্ববিদ্যালয় কেনো কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়েও শিক্ষকতার যোগ্যতা নেই। এমন অযোগ্য শিক্ষক যারা রাজনৈতিক পরিচয়ের জোরে নিয়োগ পেয়েছেন এরাই কোনো রকম গবেষণা না করেই অধ্যাপক হয়ে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হওয়ার জন্য নুন্যতম কিছু গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করতে হয়। দৈনিক পত্রিকায় লিখিত বিবৃতি কোনো ভাবেই গবেষণা নিবন্ধ না হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই এইসব দেখিয়ে অধ্যাপনা করছেন। অনেকেই কোনো সময়ই গবেষণা করেন নি। গবেষক হিসেবে তাদের কোনো যোগ্যতা তৈরি হয় নি। মুখস্ত বিদ্যার জোরে কিংবা সেই সত্তর দশকের জ্ঞান নিয়েই তারা সন্তুষ্ঠ। তাদের জ্ঞানস্পৃহা নেই-নতুন গবেষণা ক্ষেত্রের সাথে যোগাযোগ নেই- তারা পঠনবিমুখ, এমন একদল শিক্ষক কিভাবে তার ছাত্রদের অনুপ্রাণিত করবেন জ্ঞান চর্চায়?
আমাদের রাজনৈতিক সুবিধাভোগী শিক্ষকদের অনুসরণ করে অনেকই পড়াশোনা বাদ দিয়ে সক্রিয় রাজনীতি করছে, রাজনৈতিক দলের লেজুর হয়ে ঘুরছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া সরকারী চাকুরির তুলনায় নিরাপদ। অন্তত 40 বছরের জন্য নিয়মিত মাসোহারার বন্দোবস্ত হয়ে যায়। একটা আবাসস্থল পাওয়া যায়। এর সাথে কিছু সম্মানও জুটে যায়( তবে এই সম্মানের পরিমান ইদানিং কমে যাচ্ছে) আরও কিছু সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধাও পাওয়া যায় উপরি হিসেবে। তবে রাজনৈতিক ক্ষমতাবলয়ে ঢুকে যেতে পারাটাই সবচেয়ে বড় অর্জন। আমাদের শিক্ষকেরা শ্রেনিকক্ষে কিংবা তাদের গবেষণাগারে যতটা সময় কাটান তার তুলনায় বেশী সময় কাটান দলীয় নেতানেত্রির সাথে। আধ হাত জিহবা ঝুলিয়ে অনুগ্রহ ভিক্ষা করেন।
তেমন ভালো মানের শিক্ষক যাদের দেখলে এখনও সম্মানে মাথা নুয়ে আসে তেমন শিক্ষকের সংখ্যা হয়তো 50 জন হবে। তবে সংখ্যাটা আরও কমও হতে পারে।
আমাদের রাষ্ট্রপতি ইয়াজুদ্দিনের সবচেয়ে বড় সাফল্য তিনি রাজনীতিবিদদের পদলেহন করে রাষ্ট্রপতি হতে পেরেছেন। রাজনীতি করে তিনি দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধারী একজন হয়েছেন। এ সাফল্যে তার মস্তিস্ক বিকৃতি ঘটেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই এখন। যখন চার সপ্তাহ আগে সেনা মোতায়নের আচমকা সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি তখন 10 জন উপদেষ্টার প্রচেষ্টায় সেই ঘোষনা রদ করা হলো। জলপাই রংএর অনুপ্রবেশ ঘটবে এমন অনুমান সবারই থাকলেও সেটা সবাই আশা করেছিলো নির্বাচনের কয়েক দিন আগে ঘটবে। যে সময়টাতে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হবে এর পর আইন শৃঙখলা নিয়ন্ত্রনের জন্য সব ভোটদানের জায়গায় এদের নিয়োজিত করা হবে। কিন্তু এই তত্ত্ববধায়ক সরকারের মাঝ সময়ে নিয়োজিত করা হবে এমনটা জনতার পছন্দ না। সেনাবাহীনি মোতায়েনের যেকোনো সিদ্ধান্তই সামরিক শাসনের যন্ত্রনা মনে করিয়ে দেয় বলেই হয়তো। এরপরও তাকে নিজস্ব দলীয় মনোভাব সংশোধনের বিভিন্ন সুযোগ ও সময় দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ অকারনে তিনি 3 জন বিতর্কিত ব্যাক্তিকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দিলেন। 10 জন উপদেষ্টা যখন একত্রে চেষ্টা করছেন সংকট নিরসনের এই বুড়ো ভাম, রাজাকারদের সামনে ল্যাজ দোলানো কুকুর নির্বোধ রাজনৈতিক পা চাটা মানুষটা সংকটকে জিইয়ে রাখছে একাগ্র প্রচেষ্টায়। এই নির্বোধের এক একটা উটকো সিদ্ধান্ত সংকট সমাধানের প্রচেষ্টাকে ভেস্তে দিচ্ছে।
আজিজ নামক উন্মাদকে তিনি অনেক আগেই নিরস্ত করতে পারতেন- তিনি অযথা সময় নষ্ট করলেন। এরপর সম্পূর্ণ অকারণে নির্বাচন তফশিল ঘোষনা করলেন। একটা সুন্দর কথা আছে- বেকুবের হাতে মশাল দিলে সে বাসা জ্বালিয়ে ছারখার করে।
এই নির্বোধ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটাকে নষ্ট করতে বদ্ধপরিকর। এই লোক নিঃসন্দেহে উন্মাদ একজন মানুষ। যখন আবার একবার সংকট সমাধানের সম্ভবনা তৈরি হলো তিনি নির্বাচন কমিশনের চিহি্নত সচিব স ম জাকারিয়াকে বদলি না করার নির্দেশ দিলেন, 10 উপদেষ্টার পরিকল্পনায় ছিলো এই জাকারিয়াকে নির্বাচন কমিশন থেকে বদলে দিয়ে পুনঃ গঠন হবে নির্বাচন কমিশন, তিনি বললেন এই লোকটাকে রেখেই যা পরিবর্তন তা করতে হবে। তাকে রেখে সংকট নিরসন সম্ভব না। এটা তিনি ভালোই বুঝেন কিংবা তার কান্ড-অকান্ড জ্ঞান লোপ পেয়েছে, কোনো উন্মাদ দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারেন না। তাই তাকে বাদ দিয়ে নতুন কোনো প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়োগ দেওয়া হোক।
আজ মধ্যরাতে সংকট আরও বাড়িয়ে তুলতে তিনি বাংলাদেশে সেনাবাহীনি মোতায়নের সিদ্ধান্ত নিলেন, এই নির্বোধ মানুষটার জন্য এখন ঘৃণা ছাড়া অন্য কিছু অবশিষ্ট নেই।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন