যখন আওয়ামী লীগ হঠাৎ করে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল আমার বেশ আশ্চর্য লেগেছিল, এত দিনের আন্দোলনের ধারার বিপরীতে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহনের যৌক্তিকতা নিয়ে আমি সন্দিহান ছিলাম। এটাকে আমার বড় ধরনের একটা রাজনৈতিক ভূল মনে হয়েছে। চার দলীয় জোটের রাজনৈতিক কুটচালে ভোটার তালিকা সংশোধনের মূল কাজটা সম্পন্ন হলো না। বিভিন্ন অপ্রধান ইস্যু নিয়ে কালক্ষেপন করে অবশেষে যখন নির্বাচনের তফশীল ঘোষিত হলো তখন ভোটার লিষ্টে অবৈধ ভোটারের সংখ্যা কমে নি বরং ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রহেলিকাময় পদক্ষেপ গ্রহন করা হলো।
২৬শে ডিসেম্বর কিংবা ২৭শে ডিসেম্বর দৈনিকে নির্বাচন কমিশনের একটা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়, সেখানে বলা হয়েছে ৮ই ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের এজেন্ট যাবে বাড়ী বাড়ী, সকল নাগরিককে সহযোগিতা করার অনুরোধ করা হয়েছে। এমন নির্দেশনায় নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা নিয়ে সন্দিহান হতে হয়। এর মাঝেই এরশাদ সম্পর্কিত নাটক প্রচারিত হলো পল্টন ময়দানে, তার নিরুদ্দেশ থাকা এবং ১৪ দলীয় জোটের সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষ্মা চাওয়ার পর আকস্মিক ঘোষনা নির্বাচনে যাবে মহা ঐক্য জোট। এটা কোনও রকম রাজনৈতিক বিবেচনায় সঠিক সিদ্ধান্ত মনে হয় নি আমার।
ঈদের সময় আবার শেরাটনে সংবাদ স্মমেলন করে শেখ হাসিনা ঘোষনা দিলেন মহা ঐক্য জোট নির্বাচনে যাবে না। সংবিধান নিয়ে অসাংবিধানিক দলের উল্লাস এবং কূম্ভীরাশ্রু বিসর্জন যতই জঘন্য দৃশ্য হোক না কেনো বাংলাদেশের পঙ্কিল রাজনীতিতে এটাই শোভন দৃশ্য। যদিও বিভিন্ন দেশ বারংবার নির্বাচনের গ্রহনযোগ্যতার শর্ত হিসেবে সবগুলো রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহনকে মাপকাঠি বিবেচনা করছেন এর পর নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে আওয়ামী লীগের অহেতুক অবরোধ চাপিয়ে দেওয়ার কার্যকরণ বোধগম্য হলো না আমার।
নির্বাচন হওয়া কিংবা না হওয়া এখন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইস্যু হতে পারে না। সচেতন ভাবে নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে ২২শে জানুয়ারীর নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো রাজনীতি আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে সস্তা করে ফেলে।নির্বাচন যদি মহা ঐক্য জোট বয়কট করে তাহলে যে নির্বাচন গ্রহনযোগ্য হবে না এ সত্য জানার পরও নির্বাচন বানচাল করার আগ্রহ ঠিক সুস্থ ধারার রাজনীতি নয়। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।
আওয়ামী লীগের উচিত ২২শে জানুয়ারীর নির্বাচন কোনো রকম বাধা বিপত্তি ছাড়াই অনুষ্ঠিত হতে পারে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা। বরং তাদের মনযোগ দেওয়া উচিত ভোটার তালিকা সংশোধন করার কাজে। মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের দিয়ে একটা ভোটার তালিকা তৈরি করার কাজে মনযোগ দেওয়া উচিত লীগের। কাজটা তেমন কঠিন কিছু না, প্রতিটা ওয়ার্ডের ভোটার তালিকা সংশ্লিষ্ঠ ওয়ার্ড থেকে সংগ্রহ করে কারা কারা বাদ পড়েছে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা, ভূয়া ভোটারদের নাম-তালিকা লিপিবদ্ধ করা এবং এই তালিকা সম্পূর্ণ করে তা নিজেদের কাছে রেখে দেওয়ার কাজটা হবে সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এতে তাদের হাতে সাম্ভাব্য ভোটারদের একটা তালিকা থাকবে। তারা এই তালিকা সংগ্রহ করে সবগুলো ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দিতে পারে।
আপাতত তাদের এর বেশী কিছু করার নেই। আরো কিছু দাবী নিয়ে তারা একটা আন্দোলন শুরু করতে পারে যেখানে ভোটারদের ছবি সম্বলিত কার্ডের দাবী থাকবে। যেনো কোনো ভাবেই জাল ভোটার নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলতে না পারে। যদি আওয়ামী লীগ ২২শে জানুয়ারীর নির্বাচনে কোনো বাধা না দেয় তাহলে তাদের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং তাদের ষোলো আনা লাভ। সুস্থ ধারার রাজনৈতিক দল হিসেবে একটা পরিচিতি আসবে মহা ঐক্য জোটের। এবং যেহেতু অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশগ্রহন করে নি এমন একটা নির্বাচন কোনো মতেই গনতান্ত্রিক বিবেচিত হবে না তাই খুব তাড়াতাড়ি আবার একটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবং তখন সংশোধিত একটা প্রাথমিক ভোটার তালিকা থাকবে লীগের হাতে। এবং যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তবে চার দলীয় জোট নির্বাচনে পরাজিত হবে।
এর বদলে যদি এখনকার ঘোষিত ধারাবাহিক অবরোধ কর্মসূচি বহাল থাকে তবে আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল ভোটার কমবে সময়ের সাথে।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন