অতঃপর তিনিও কি বহিস্কৃত হবেন?

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: মঙ্গল, ১৬/০১/২০০৭ - ৫:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইয়াজউদ্দিন সাহেব প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন, সংবাদমাধ্যমে যেভাবে ঘটনাটা উপস্থাপিত হয়েছে তাতে সশস্ত্রবাহীনির ভুমিকা এতে প্রধান এমন একটা ধারনাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইয়াউদ্দিন যেভাবে নিজের ব্যার্থতা স্ব ীকার করেছেন গনমাধ্যমে তাতে তার অথর্ব চরিত্রটাই প্রকাশিত হয়েছে। এমনটা স্পষ্ট হয়েছে যে ব্যাপক দলীয় করনের যে অভিযোগে মহাজোট আন্দোলন করছিলো সেটা সঠিক একটা আন্দোলন ছিলো।
বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন বিষয়ে বৈদেশিক হস্তক্ষেপ কুটনৈতিক শিষ্ঠাচারের লঙ্ঘন হলেও এমন বিভিন্ন দাতাদেশের কুটনৈতিকরা নিয়ম করেই আমাদের কিভাবে দেশ চালাতে হবে এ জ্ঞান দিয়ে যান, আমাদের মেরুদন্ডহীন ইতর সাংবাদিকেরা আবার তাদের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের বিশেষজ্ঞ পরামর্শ সবাইকে জানানোর দায়িত্বটা পেয়ে বিগলিত বোধ করেন। আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়েছি? আমরা কি দাতা দেশগুলোর করদ রাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য খুবই তড়িৎ গতিতে তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন তারা কোনোভাবেই সেনাবাহিনীর এই হস্তক্ষেপের প্রক্রিয়ায় যুক্ত নন।তাদের এই মতামত আসলেই বস্তুনিষ্ঠ কিংবা সঠিক এই বিশ্বাস আমার নয়। আমাদের রাজনৈতিকরা নিয়মিতই বিভিন্ন দেশের কুটনৈতিকদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেই রাজনীতি করছেন, তাদের বিদেশনীতি সাজাচ্ছেন দাতাগোষ্ঠির পরামর্শ মেনে। এর পরও যখন যুক্তরাষ্ট্র মুসলিমপ্রধান এবং মধ্যপন্থি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের সৈন্য তাদের নেতৃত্বে ইরাকের পাঠানোর জন্য দেন দরবার করছিলো- রায় হাতে পায়ে ধরছিলো বাংলাদেশের তখন বাংলাদেশ খুবই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলো তারা শুধুমাত্র জাতিসংঘের নেতৃত্বে ইরাকে সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করবে। এমন অহংকারী সিদ্ধান্ত আমাকে মুগ্ধ করেছিলো। তুরস্ক একই সুবিধা প্রদান করে বেশ কিছু সুবিধা ভোগ করছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। আমাদের তেমন সুবিধার প্রয়োজন আছে কি নেই এই বিবেচনায় না যেয়ে বলতে পারি আমরা যেভাবে স্বাধীন হয়েছি, যতটা রক্তক্ষয় করেছি গনতন্ত্রের জন্য আমাদের নুন্যতম একটা জাত্যাভিমান থাকা উচিত। সামপ্রতিক ঘটনা প্রবাহে আমাদের সেই জাতিয়তাবদের জায়গাটা আহত হয়েছে।
আমি আশ্চর্য হয়েছি দেশে জরুরী অবস্থাকে প্রকারান্তরে সমর্থন করছে মতিউর রহমান এবং মাহফুজ আনাম। সেনাবাহিনীর প্রশাসনির হস্তক্ষেপকে সমর্থন করার কোনো কারন নেই। কোনো কারন নেই তথ্যপ্রকাশে বিধিনিষেেেধর। কোনো প্রয়োজন নেই মানুষের নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন করার। অথচ তারা এটা সমর্থন করছেন। আশ্চর্য লাগে আসলে। এর আগে যখন দেশে অবরোধ, মিছিল- এবং রাজনৈতিক হত্যাকান্ড সহ রাজনৈতিক প্রতিশোধের একটা অবস্থা তৈরি হয়েছিলো তখন ইয়াজউদ্দিন সাহেবের জরুরী অবস্থা ঘোষনাকে সমর্থন করার যতটা কারন ছিলো বর্তমান প্রেক্ষিতে তা নেই। তখন তারা এই ব্যাবস্থাকে সমর্থন করলেন না এখন কি এমন অধঃপতন হলো পরিস্থিতির যে সেনাবাহীনির এ ভূমিকাকে সমর্থন করতে হবে?
পরিস্থিতি বরং আরও ভালো হয়েছে। যদিও চারদলীয় জোটের পরিকল্পনামফিক কিছুই ঘটছে না। নির্বাচন কমিশন ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়ায় এখন আলোচিত হচ্ছে একেবারে সম্পুর্ন কাঠামোটাকেই পরিবর্তন করার ভাবনা, যেখানে একেবারে নিম্ন পর্যায়ের কর্মচারী থেকে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা সবাইকে সরিয়ে নতুন লোক নিয়োগ দেওয়ার একটা প্রক্রিয়া শুরু করার কথা ভাবছে প্রশাসন তখন চার দলীয় জোটের পরিকল্পনামফিক কিছুই হবে না এমনটা আশা করাই যায়।
বি এন পি নির্বাচন বয়কট করতে পারে একম একটা কথাও উড়ছে বাতাসে। অন্য একটা কথাও সামনে চলে এসেছে, ইয়াজউদ্দিন যেহেতু এখন কোনো ভাবেই চার দলীয় জোটের উপকারে আসবেন না তাই তাকে অবসর গ্রহনে অনুপ্রাণিত করে বি এন পি জমিরুদ্দিন সরকারকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হতে অনুরোধ করতে পারে। প্রতিরক্ষা দপ্তর জমিরুদ্দিনের হাতে থাকলেও যেভাবে সেনাবাহিনীর সপক্ষে জনমত গঠনের প্রক্রিয়া চলছে তাতে জমিরুদ্দিন প্রেসিডেন্ট হলেও সেনাবাহিনীকে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ থেকে নিরত রাখতে পারবেন এমন সম্ভবনা খুব কম।
আগামি নির্বাচন হবে কি না এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারন নেই কোনো। অবশ্যই নির্বাচন হবে, মহাজোট এবং চার দলীয় জোট নির্বাচন চায়। তারাই জনগনের মুখপত্র এখানে। তাদের দাবী অগ্রাহ্য করে নির্বাচন নিষিদ্ধ হওয়ার সুযোগ নেই এখন।
কবে হবে, কোথায় হবে, চার দলীয় জোট নিরাপদ মনে করবে কি না নির্বাচন করাটাকে, এমন অনেক হিসাব আছে। যেভাবে ভোটার তালিকা সংশোধনের কথা বলা হচ্ছে তা সম্ভবপর কি না এ নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুললেও এই একটা কাজে সেনাবাহিনীকে নিযুক্ত করা যায়। তারা বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তুলতে পারেন। জলপাই ভীতি মানুষের মনে এখনও প্রবল, তারাই এই ভীতিকে কাজে লাগিয়ে একটা গ্রহনযোগ্য ভোটার তালিকা এবং ভোটার পরিচয়পত্রের কাজ সমাপ্ত করতে পারেন।
অসম্ভব নয় আসলে। সবার আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে তা ডাটাবেজ এ সংরক্ষণ করা যায়, কোনো সন্দেহ তৈরি হলে কিংবা যারা এই প্রক্রিয়ায় জাল ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হতে চাইবেন তাদের জন্য কঠোর শাস্তর ব্যাবস্থা রেখে এমন ডাটাবেজ নিরীক্ষা করলেই সম্ভব জাল ভোটার নিবন্ধন এড়ানো।
তবে সবটাই নির্ভর করছে আন্তরিকতার উপরে, তত্ত্ববধায়ক সরকারের সম্পূর্ন কাঠামো এখন তৈরি হয়নি, অর্ধেক জনবল নিয়ে কাজ করছে তারা।
বিগত 16 বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে 4টা নির্বাচনের পর আমাদের গনতন্ত্রের প্রাপ্তি কি এ নিয়ে প্রশ্নটা ঝুলেই থাকলো। পারস্পরিক অবিশ্বাস আর অসহযোগিতামূলক মনোভাবের দৃষ্টান্ত হিসাবে সেই তত্ত্ববধায়ক সরকারের কাঠামো তৈরি হলো তার অসারতা প্রমান করলো এবার রাজনৈতিক দলগুলো। ইচ্ছা করলেই বাংলাদেশে সীমাহীন দুর্ন ীতি করেও পার পেয়ে যাওয়া যায় এটাই বাস্তব আর জাতি হিসেবে দুর্ন ীতিবাজ এমন পরিচয় আমাদের কোনো ভাবেই নিজেদের জাতিয়তাবোধটাকে শক্তিশালী কোনো প্রেরণার বিষয় ভাবতে দ্্বিধাগ্রস্থ করছে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।