তত্ত্ববধায়ক সরকারের তত্ত্ববধান করবে কে?

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৮/০১/২০০৭ - ৭:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া অবশেষে শুরু হলো। রায় ঘোষিত হওয়ার 7 বছর অতিবাহিত হওয়ার পর এটা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেয় নি নির্বাচিত সংসদ। প্রথম দফায় আওয়ামী লীগ এবং এর পরে চার দলীয় জোট এই বিচার বিভাগকে পৃথক করার সৎসাহস অর্জন করেন নি। 2001এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই একটা বিষয়ে 2 নেত্রি সহমত ছিলেন, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এই রায় বাস্তবায়ন না করার অনুরোধ করে বলেছিলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের এটা বাস্তবায়নের সুযোগ দেওয়া হোক।অবশ্য এর পরও নোটিশ এবং সময় প্রর্থনা চলছিলো বিধিমতো। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই রায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন।
যদিও বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে এই প্রশ্নটা থেকেই গেলো। পুলিশের ভূমিকা কি হবে? তাদের কি বিচার বিভাগের হাতে ন্যাস্ত করা হবে? এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট প্রজ্ঞাপন অনুপস্থিত। বিচার বিভাগের নির্বাহীদের বেতন কাঠামো তৈরী, নিয়োগ এবং বরখাস্ত করার আমলাটান্ত্রিক নীতিমালা গৃহীত হয়েছে।
এখন আইন প্রণয়ন ব্যাবস্থা গ্রহন করবে নির্বাচিত সংসদ এবং সেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাবস্থা গ্রহন করবে বিচার বিভাগ। তবে আইনের শাসন বাস্তবায়নের জন্য, নিরপেক্ষতা বিচারে পুলিশ প্রশাসনকে যে বিচার বিভাগের আওতায় নিয়ে আসা দরকার এটার কোনো নীতিমালা না দেখে সম্পূর্ন আশ্বস্ত হতে পারছি না।
বলা হচ্ছে সম্পূর্ন ব্যাবস্থা সম্পন্ন হতে নুন্যতম 2 বছর সময় প্রয়োজন। এই তত্ত্ববধায়ক সরকারের শাসনকাল কি তবে 2 বছর হবে। বিভিন্ন রকম সংশয় মানুষের ভেতরে, অনেকেই অনুমান করছেন যেহেতু কোনো স্পষ্ট সময়সীমা নির্ধারিত নেই এই নবগঠিত তত্ত্ববধায়ক সরকারের শাসনকাল দীর্ঘ হতে পারে। তবে দাতা দেশগোষ্ঠি যারা বিভিন্ন রকম ভাবে আমাদের বিভিন্ন রাষ্ট্রিয় বিধিগ্রহনের নেপথ্যে কলকাঠি নাড়েন তাদের শালীন বিজ্ঞাপনী নাম দেওয়া হয়েছে, উন্নয়ন সহযোগীদেশ, এরা চাইছে আগামী জুনের ভেতরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা শাসনভার গ্রহন করুক. তবে তত্ত্ববধায়ক সরকার বলছে নির্বাচনী তফশীল ঘোষনায় আগে বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন হতে হবে, সেসব কাজ সুসম্পন্ন হলেই নির্বাচনের সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এই সুষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টিতে ঠিক কত সময় লাগবে এ বিষয়ে কোনো স্পষ্টতা নেই তাদের।শেষ পর্যন্ত কি তবে এই তত্তববধায়ক সরকারকে অকর্যকর করতে বিবাদমান 2টা জোট রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষনা করবে। এবং তাদের বাধ্য করবে পদত্যাগ করতে? আগামী 3 মাস অর্থ্যাৎ আগামী এপ্রিল পর্যন্ত যে নির্বাচন হবে না এটা স্পষ্ট এখন।
সামনে বাজেট ঘোষনার দিন আসছে, দেশের অর্থব্যাবস্থাপনা, বৈদেশিক বিনিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালা এসব রাষ্ট্রিয় গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত কি তবে 10 সদস্যের শরিয়া বোর্ড গ্রহন করবে? টাটার সাথে বানিজ্য চুক্তি সম্পাদনের যে বৈদেশিক চাপ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের উপরে তা কি এই তত্ত্ববধায়ক সরকার গ্রহন করতে বা ব্জন করতে পারবেন? আসলে রাজনৈতিক গোলোযোগে এই সার্বজনীন কাঠামোটা ধ্বসে গেছে। অনেকগুলো অনিশ্চয়তার জায়গা তৈরি হয়েছে।
আমি তত্ত্ববধায়ক সরকারে যারা আছে তাদের যোগ্যতা বা আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না। প্রশ্ন করছি তাদের হেফাজতে থাকা সমস্ত মন্ত্রনালয় এবং প্রায় 15 কোটি নাগরিকের ভবিষ্যতের ভারপ্রাপ্ত এসব মন্ত্রনালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন সিদ্ধান্ত গ্রহনের বিষয়গুলো কিভাবে নির্ধারিত হবে। আমাদের আমলারা তাদের যোগ্যতা দিয়ে এসব আপদ কালীন সময়ে দেশ চালাবেন। তত্ত্ববধায়ক সরকার কোনো রাষ্ট্র নীতিতে পরিবর্তন আনতে পারবেন না, কোনো নতুন আইন প্রণয়নের অধিকার তাদের নেই, বরং রাষ্ট্রপতি বিশেষ ক্ষমতাবলে বিভিন্ন অধ্যাদেশ জারী করতে পারবেন এবং নির্বাচিত সরকারের অনুপস্থিতিতে এই অধ্যাদেশ সমুহ সম্পুরক আইন হিসেব ব্যাবহৃত হবে।
যেসব প্রশ্ন মনে জমা হয়েছে তার একটা গ্রহনযোগ্য সমাধানের জন্য একটা সংস্কার প্রকল্প গ্রহনের কথা বিবেচনাধীন রয়েছে।
আমাদের উচ্চ আদালতের রাজনৈতিক চরিত্র শোধনের জন্য কি আমাদের বিচারপতি ও আইনজীবিদের প্রকাশ্য রাজনীতিতে অংশগ্রহন নিষিদ্ধ হতে পারে?
যেসব বিচারপতি নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনা ছিলো টাদের নিয়োগ কি বাতিল হয়ে যাবে?
নিম্ন পর্যায়ের আদালতের দুরাবস্থা নিরসনের কোনোপ্রকল্প কি নেওয়া হবে?
বিচারপতিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধাগ্রহনের অভিযোগ আচে, টারা কি এই চরিত্র বর্জন করবেন কখোনো?
যদিও অভ্যাসে পরিনত হওয়া এই নীতিহীনতার প্রকোপ কমানোর জন্য কোনো শক্ত বিধির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধ হচ্ছে েই সংস্কার প্রকল্প ঠিক কি কি পরামর্শ দেওয়া হবে টা না দেখে আসলে বলা সম্ভব না বিচার বিভাগ সম্পুর্ন স্বাধীন হতে পেরেছে।
যদি দুর্ন ীতি কমানো সম্ভব না হয়, যদি রাজনৈতিক বিবেচনা আবারও বিচার বিভাগকে কলুষিত করে তাবে স্বাধীন বিচার বিভাগের কোনো সুফল পাওয়া যাবে না।
পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশিতদন্ত হলে অভিযুক্ত পুলিশকে যে রকম শাস্তি দেওয়া হয় তা পক্ষান্তরে তাকে উৎসাহিত করে অন্যায় আচরন করতে, বিচারপতিদের বিরুদ্ধে গৃহীত বিচারবিভাগীয় তদন্তের রায় কি তাদের এমন অনিতিকতাতে উৎসাহিত করবে?
জাতিত ভাবে দুর্ন ীতিবাজ উপাধি পেয়ে যাওয়ার পেছনে যেসব প্রশাসনিক অস্বচ্ছতার ভূমিকা আছে তা রাটারাতি বদলে যাবে না, তবে ঠিক মতো পরিকল্পনা গৃহীত হলে অন্তত অস্বচ্ছতার জায়গাগুলো দুর করে দুর্ন ীতি ঠেকানো সম্ভব।
তবে েই কার্যসম্পাদনের জন্য একজন দক্ষ নেটা প্রয়োজন যে এই সংস্কার কাজটাকে দেশপ্রেমিক একাগ্রতা দিয়ে সম্পন্ন করবেন। দেশের জনগন একটা ত্রুটিপূর্ন ব্যাবস্থার গ্যাঁড়াকলে পরে গেলো। পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারনে বিচ্ছিন্ন 2টা রাজনৈতিক জোটের অরাজকতার জায়গাটাতে এই ত্রুটিপূর্ন ব্যাবস্থাপনা সম্পুরক ভূমিকা রাখতে পারবে না। স্বাধীন বিচার বিভাগের দায়িত্ব এই অসম্ভব একটা সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ন। 10 জন উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার সমন্বয়ে গড়া একটা ব্যাবস্থার বিবেচনার কাছে আমরা ভয়ংকর ভাবে জিম্মি হয়ে গেলাম। সারাদেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে সীমিত ভাবে হলেও,সংবাদপত্রের স্বাধীনতারও একটা সীমান নির্ধারণ করে দেওয়া আছে, ইচ্ছা করলেই এই 12জন দায়িত্ববান মানুষ সম্মিলিত ভাবে আমাদের অধিকার খর্ব করটে পারেন।
এই ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা যাবে না- আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধিতা করে কোনো মিছিল মিটিং করতে পারবে না, অর্থ্যাৎ তাদের বিপক্ষে যাওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। আমাদের আন্তরিক বিশ্বাস তারা বিবেচক মানুষ, তারা আমাদের অধিকার নষ্ট করবেন না।
তবে বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর অন্য যে প্রশ্নটা মাথায় ঘুরছে তা ধর্ম ীয় রাজনৈতিক দলগুলোর বৈধ্যতা নিয়ে। যেহেতু আদালতের রায়ে চতুর্থ সংশোধনী বেআইনী তাই এর পূর্বে বিশেষ ক্ষমতাবলে জারি করা সকল অধ্যাদেশ বাতিল বিবেচিত হবে। সংবিধানকে আইনের প্রামান্য দলিল হিসেবে ধরে নিলেও সংবিধান সংশোধনের জন্য আদালতের দারস্থ হওয়া যায়।
এক্ষেত্রে তাই হয়েছে। আদালত সংবিধানের পুনঃসংস্কারের পক্ষে রায় দিয়েছে। তাই রাহে লিল্লাহ অবস্থা থেকে আমরা শীঘ্রই মুক্তি পাবো। সংবিধানে বিশেষক্ষমতা বলে ধর্ম ীয় রাজনীতির বৈধ্যতা তখন অবৈধ্য বিবেচিত হবে। নাগরিকের অধিকার সংক্রান্ত নীতিমালার সংশোধনও অগ্রাহ্য হবে, ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। অনেকগুলো ভালো ভালো ঘটনা ঘটবে যদি এই রায় বাস্তবায়িত হয়।

বি এন পি এখন প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক শক্তি, 71এর পরবর্তি সময়ে আওয়ামি লীগের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তানপন্থিরা ঢুকে গিয়েছিলো বি এনপিতে এবং সেখান ঠেকে একাংশ গিয়েছে জাতিয় পার্টিতে। তবুও েই পাকিস্তানপন্থিদের একটা বড় অংশ বি এন পির রাজনীতির সাথে যুক্ত। যদি জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় তবে তাদের রাজনৈতিক কর্মিরা কোথায় আশ্রয় গ্রহন করবে? ইসলামী শাসনতন্ত্র, খেলাফতে মজলিসএদের রাজনৈতিক বৈধ্যতাও থাকবে না। থাকবে না বিভিন্ন উগ্র ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের রাজনীতির বৈধ্যতা।
আওয়ামী লিগ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের একাংশ এবং খেলাফত মজলিসের সাথে রাজনৈতিক ঐক্য করেছে। এমন কি এই চতুর্থ সংশোধনী বাতিল রায় গৃহীত হলে এরশাদের ক্ষমতাগ্রহনও অনৈতিক হয়ে যাবে। এবং অবৈধ্য বিবেচিত হবে। তখন বর্তমান 2 রাজনৈতিক জোটই অবৈধ্য রাজনৈতিক জোট হয়ে যাবে।
রাজনৈতিক ভুল পদক্ষেপ গুলো ধোধনের জন্যযেহেতু 30 বছর পিছিয়ে যাওয়া কিংবা সেখান থেকে পুনরায় শুরু করার কোনো বাস্তব ব্যাবস্থা নেই তাই আরও একটা জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হতে যাচ্ছে হয়তো ভবিষ্যতে। যদি বিচার বিভাগ ঘোষিত রায় বাস্তবায়নের চাপ দেয়, উপদেষ্টামন্ডলী কি করবেন?
যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র নিজের স্বার্থেই মৌলবাদী পুষতে চায় তাই যুক্তরাষ্ট্র কি এটা মেনে নিবে? কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করার যে প্রবনতা তাদের 2য় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তি সময়ে ছিলো সেই প্রবনতাকে কি তারা এখন বাধা দিবে?
আমার সামনে অসংখ্য অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে যার কোনো সমাধান নেই সাম্ভাব্য অনুমান আছে কিছু। সেই সব অনুমানের ভিত্তিতে সাম্ভাব্য রাজনৈতিক ভবিষ্যত বানী করা যায় সীমিত পর্যায়ে।
প্রথম এবং শক্ত অনুমান হচ্ছে- চতুর্থ সংশোধনী অবৈধ্য এ রায় বাস্তবায়ন করবে না বিচার বিভাগ এবং উপদেষ্টা মন্ডলি। অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত থাকবে এটা- পরিনতি কোনো সংঘাত তৈরি হবে না। বাংলাদেশের মৌলবাদী এবং ধর্মিয় রাজনৈতিক দলের নির্বোধ অনুসারীদের পেশীশক্তি বেশি, তাদের নিয়ন্ত্রনের জন্য একটা সামগ্রিক শোধন ব্যাবস্থার হ্যাপা নিতে হবে প্রশাসনকে। যা আরও নাজুক করে তুলবে পরিস্থিতি। এ বিবেচনায় আসলে এই রায় বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে না।
এবং এর বিপরীত অনুমান হচ্ছে -এই রায় বাস্তবায়নের চেষ্টা হবে- বি এন পির শরীকদলগুলো তীব্রপ্রতিক্রিয়া দেখাবে- বি এন পি এদের চাপে আন্দোলনে যাবে এবং মহাজোটের এরশাদ এবং এর সমর্থক সহ ইসলামীভাবাপন্ন দলগুলো আওয়ামী লীগকেও আন্দোলনে যাওয়ার চাপ দিবে- আওয়ামী লিগ সম্ভবত আন্দোলনে যাবে না এবং এই হিসাব নিকাশের ভিত্তিতে নতুন একটা মহাজোট গঠিত হবে।
সংবিধান সংবিধান করে 2 দলের ভেতরে একটা সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে এবং এই অবসরে সেনাবাহিনী প্রশাসনের ভার গ্রহন করবে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।