হীরক রাজার দেশ-২- নিরন্ন আসলেই শোষন মানবে?

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: শনি, ২৭/০১/২০০৭ - ৪:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিগত লেখায় সংশয় প্রকাশ করেছিলাম, তত্ত্ববধায়ক সরকারের তত্ত্ববধান করবে কে? রাষ্ট্রপতি অথর্ব এবং নৈতিক যোগ্যতাহীন একটা অবস্থানে নিজেকে নিমজ্জিত করেছেন।তাই তার পক্ষে হাল ধরা সম্ভব না। এবং তার অক্ষমতা এবং অথর্বতা এবং নৈতিকতাহীনতার দায় বহন করছে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সকল নাগরিক। কিছু উন্নাসিক মানুষ অবশ্য আমার অবস্থানকে পছন্দ করবেন না। আমার ভেতরে এই তত্ত্ববধায়ক সরকার শুধুমাত্র ঋণাত্বক অনুভুতির জন্ম দিচ্ছে।
এত ফলাও করে কার্যত অকার্যকর দেশ বলে ব্যাপক প্রচারণার পর দেশকে গতিশীল এবং গনতান্ত্রিক করার জন্য এ তত্ত্ববধায়ক সরকারের অবতারনা। এবং এই তত্ত্ববধায়ক সরকার ভীষণ রকম অগনতান্ত্রিক আচরন করছেন।
গনত্নরের প্রধান দাবী স্বচ্ছতা এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহ, ইয়াহিয়া সরকার 1971 এ যে রকম কঠোর সেন্সরশীপ আরোপ করে নির্বাচিত কিছু তথ্য ব্ল্যাক আউট করতেন তেমন বর্গি আচরন এই তত্ত্ববধায়ক সরকারের কাছে আমি আশা করি না। তারা যদি গনতান্ত্রিক মানস ধারন না করেন, তারা যদি আমাদের কাছে স্বচ্ছ না হন তাহলে তাদের হাত ধরেই দেশে গনতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে এবং দুরাশা আমি করি না।তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না, তারা ভুল করলেও ব্যাঙ্গ করা যাবে না- কোনো তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। এমন কঠোরতার সাথে গনতন্ত্র সহবাস করে না। গনতন্ত্র নিজে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতার শিক্ষা দেয়, এখন এই 11 জন মানুষ যদি যুদ্ধাবস্থা ঘোষনা দিয়ে ফেলেন তাদের আচরন এবং গৃহীত সিদ্ধান্তে তাহলে প্রশ্নটা আমার ভেতরে ঘাঁই মারে- এই কল্পিত যুদ্ধাবস্থা আসলে কার বিরুদ্ধে? কোন ফ্যান্টমের বিরুদ্ধে লড়ছেন তত্ত্ববধায়ক সরকার?
তবে কি এই তত্ত্ববধায়ক সরকার রাজনৈতিক শোধনের চেষ্টা করবেন? সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিকদের দুর্ন ীতির সংবাদ আসছে।সুশীল সমাজ " রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের" প্রসঙ্গে উচ্চকণ্ঠ। আদতে তাদের এই প্রচারণার লক্ষ্য এসব রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করা। অতএব আমার ধারনা খুব শীঘ্রই এসব দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর একটা অবস্থান নিবে প্রশাসন।
তাই এই ভবিষ্যত বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্যই রাজনৈতিক নিষ্পেষনের পথটা উন্মুক্ত রাখা। সুশীল সমাজের বাছাই করা প্রতিনিধি তত্ত্ববধায়ক সরকার। এরা যে সুশীল সমাজীয় ভাবধারায় চলবে, তাদের বাঁশীর সুরে নাচবে এটা শজেই অনুমেয়। অর্থ্যাৎ অদুর ভবিষ্যতে আমরা রাজনৈতিকদের দুর্ণ ীতির ঢালাও প্রতিবেদন দেখবো দৈনিকে- তাদের গ্রেফতার করা হবে, সুশীল সমাজীয় মতে রাজনীতিকে সুস্থ করার জন্য একটা শোধনবাদ চলবে। এবং এই শোধনবাদের অনুকুল পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রচারণা করবে সুশীল সমাজ।
তবে তত্ত্ববধায়ক সরকারের যদি ভুল ধারনা থাকে যে বহুল প্রচারিত দৈনিকের তত্ত্ববধানে সুশীল সমাজের প্ররোচনায় যে রাজনৈতিক শোধনের অনুমান আমি করছি তা থেকে উদ্ভুত জনরোষকে দমাতে পারবে তারা, তবে তারা বোকার স্বর্গে বসভাস করছে। রাজনীতিতে জড়িত লোকজন সীমিত মাত্রায় দুর্ন ীতি প্রবন হবে এটা মানুষজন মেনেই নিয়েছে, এর পরও একজন তারেক জিয়া, একজন হাসিনার গ্রহনযোগ্যতা সাধারন মানুষের কাছে যেমন তেমন গ্রহনযোগ্যতা নেই তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রতিনিধিদের। আর রাজনীতিতে সৎ মানুষ আসবে এটা নিশ্চিত করার জন্য ঠিক কি কি পদক্ষেপ গৃহীত হবে তাও পরিস্কার নয় এখন।
গুটিকয়েক বিগ শটকে গ্রেফতার করে জেলে রাখা হবে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে, তাদের দ্্রুত বিচার করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে, এত সব করেও জনরোষ দমানো যাবে না। আর জোর পূর্বক দাবিয়ে রাখার যে প্রচেষ্টা করছে তা আসলে তত্ত্ববধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে।
সুশীল সমাজ চাইছে দক্ষ এবং সফল ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠানের মতো সাবলীল চলবে দেশ। তাদের আমলাতান্ত্রিক মানসে দক্ষ ব্যাবস্থাপনাকেই গুরুত্বপূর্ন উপাদান মনে হয়। তবে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের মূল শক্তি এর কর্মি, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মিদের অনুগত থাকার একটা পার্থিব প্রয়োজন আছে। দেশের সবগুলো জনগন সুশীল সমাজের আনুগত্য মানবে কেনো? তারা যদি দেশকে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান মনে করে তাহলে এই ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠান কার স্বার্থ সংরক্ষণ করবে?

সুশীল সমাজ বলে যে সামাজিক স্তরটাকে চিহি্নত করতে চাইছে প্রচার মাধ্যম তারা কয়জন? তাদের হাতে ক্ষমতা ছড়ি ধরিয়ে দিতে চাইছে কেনো প্রচার মাধ্যম? তারা পাপেট মাস্টার হয়ে সুতো টানাটানি করবে- তাদের এই ক্ষমতা লিপ্সুতা যতই শোভন ভাবে প্রকাশিত হোক না কেনো-ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধের সংশয়টা ঐতিহাসিক ভিত্তি থেকেই চলে আসে।
তবে কি এই সুশীল সমাজ নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা গ্রহন করেছেন- রাষ্ট্রের প্রতি জনগনের উদাসীনতা বড়ানোর একটা সচেতন প্রয়াস আছে সুশীল সমাজে। তোমরা ওটা বুঝবে না, আমি বড়ো বুঝদার- শিক্ষিত- এই অহংকার এবং বিচ্ছিন্নতার জায়গাটাও তারা খোলা রেখেছে। এটা একটা ঢাল তাদের। কেউ যদি নিজের ভালো না বুঝে অন্য কেউ তার ভালো মন্দ বুঝে যাবে এবং অতিমানবীয় বা অমানবীয় বিষয়াসয় ঘটে বলেও আমার বিশ্বাস নেই।
জনগনকে বিকল্প বিনোদনে নিমগ্ন রাখতে হবে,যখন সবকটা প্রচার মাধ্যমই সুশীলের করাল গ্রাসে তখন তারাই জনমানস নিয়ন্ত্রন করবে- গোয়েবলসীয় এই ধারনা সীমিত পর্যায়ে সফল হলেও বশ মানানোর প্রক্রিয়াটা বিকল্প বিনোদনে নিহিত থাকলেও সব সময়ই সফল হবে এমনটা ভাবার কোনো কারন নেই।
প্রাইম টাইম, ম্যাটিনি টাইম, রিয়ালিটি শো, সিবে ম্যাগ, তারকা তৈরির নানাবিধ টরিকা- এসবই আসলে জনগনকে বিনোদনে ব্যাস্ত রাখার কালা কৌশল, ব্ল্যাক আর্ট ভুডো ম্যাজিক- যুক্তরাষ্ট্রে কার্যত সফল এ ব্যাবস্থা। রাজনৈতিক চেতনায় সমগোত্রিয় বাংলাদেশেও হয়তো এ প্রক্রিয়া কার্যকর হবে এমন একটা ধারনা যুক্তরাষ্ট্রের পদ্ধতির প্রতি অন্ধবিশ্বাসী সুশীল সমাজের ভেতরে প্রোথিত।
তবে যুক্তরাষ্ট্র এই সুশীল বিনোদন এবং উত্তেজক শোষনের জায়গাটা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলো এবং এখনও সফল তাদের পুঁজি ব্যাবস্থাপনার জন্য। বাংলাদেশের জনকল্যানমুখী রাষ্ট্র হয়ে উঠার কোনো আশু সম্ভবনা নেই। পুস্তকে যতই সহজ মনে হোক না কেনো সবগুলো সীমিত এবং ব্যাপক জনকল্যানমুখী রাষ্ট্রের মূল শক্তি তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ। নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদ এবং শিল্প অবকাঠামো ক্রামশ বিলুপ্ত করে ফেলানোর পর আমাদের জোগান নেই- আমরা চাইলেই ভর্তুকির ব্যাবস্থা করতে পারবো না। আমরা চাইলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্্রব্যাদির মুল্যের উর্ধগতি দমাতে পারবো না। আমরা চাইলেই ক্রমশ নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার প্রবনতা রোধ করতে পারবো না- সুশীল সমাজ আশাবাদী তারা এই সব প্রবনতা রুখতে পারবেন- ইউনুস সাহেব বড় একটা ভরসার জায়গা সৃষ্টি করেছেন হয়তো তারা দারিদ্্র বিমোচন কর্মসূচির জন্য- তবে তার এই প্রকল্প আসলে দারিদ্্রবিমোচন করে ব্যাপকভোক্তা তৈরিতে সক্ষম হবে এমন বিশ্বাস আমার নেই।
প্রাকৃতিক প্রাচুর্য থাকলে বিকল্প উপার্জন ব্যাবস্থা খুঁজে নেওয়া যায়- তবে সীমিত সম্পদ যতই দক্ষভাবে বন্টন করা হোক না কেনো তার সসীমতা একটা শুন্যতা তৈরি করবে। যুক্তরাষ্ট্র সফল কারন তারা অন্তত আধপেটা রাখতে পেরেছে জনগনকে। আধপেটা মানুষ শ্বরবিশ্বাসি হয় কিন্তু নিরন্ন মানুষ ভয়াবহ শক্তি। বাংলাদেশের ইউনুস শাহী আসলে নিরন্নের নিয়মিত সরবরাহকারী।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।