বাংলাদেশ যখন ধারাবাহিক ভাবে বিশ্বনিন্দিত হলো দূর্ন ীতিগ্রস্থ দেশ হিসেবে, বিশ্বের প্রথম 10টি দূর্ন ীতিপ্রবন দেশের উপরের সারিতে বাংলাদেশের নাম দেখার পর সরকারী দল নাখোশ ছিলো। তবে দাতা দেশগুলোর চাপে পড়ে একটা স্বাধীন দূর্ন ীতি দমন কমিশন গঠন করতে বাধ্য হলো। অবশ্য বিকলাঙ্গ এই প্রতিষ্ঠানের রূপরেখা কিংবা নীতিমালা কোনো ভাবেই তাকে স্বয়ংসম্পূর্ন কোনো প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহি্নত করতে পারে নি এবং বাস্তবতা হলো এটা কোনো অর্থেই সফল কোনো প্রতিষ্ঠান ছিলো না।
দূর্ন ীতিদমন কমিশনকরে পুনর্গঠন করা হচ্ছে, তাদের ক্ষমতা বাড়ানো হবে, তাদের অর্থব্যাবস্থাপনার দায়িত্বও তাদের দেওয়া হবে, সুপারিশ আছে তাদের জরুরী ভিত্তিতে লোক নিয়োগের ব্যাবস্থা করতে হবে। সর্ষের ভেতরের ভুত তাড়ানোর জন্য এর চেয়ে ভালো উপায় আর নেই।
তবে যদি আমরা জালিয়াতিকে দূর্ন ীতি বলি তবে আমাদের 99% শিক্ষিত মানুষ সীমিত পর্যায়ে দূর্ন ীতিপ্রবন। জন্মনিবন্ধনের কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম না থাকায় এবং এই বিষয়ে আমরা সম্মিলিত ভাবেই উদাসীন জন্মনিবন্ধন বিষয়ে তাই আমাদের অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষের প্রকৃত জন্ম তারিখ এবং সার্টিফিকেট জন্ম তারিখ আলাদা। 1 থেকে 2 বছর কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা প্রতিষ্ঠিত জালিয়াতি তবে এটা আমাদের দূর্ন ীতিপ্রবন দেশ হিসেবে চিহি্নত করে নি।
পরবর্তি জালিয়াতি আসলে আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থার গলদ। শিক্ষার্থ ীর মেধা কিংবা মননশীলতা বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই এখানে- বরং সবাই এক একজন দক্ষ ফটোকপি ম্যাশিন হয়ে জগতে বিচরন করছে। শিক্ষা মূলত ব্যাবহারিক শিল্প। কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে জেনে তার আলোকে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি স্বপ্রণোদিত ভাবে আবিস্কার করতে সহায়তা করবে শিক্ষা।
যদি পঠিত বিষয় নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবতে না হয় তাহলে আসলে বিজ্ঞান- কলা0 বানিজ্য বিভাজন অর্থহীন। প্রায় সবাই আকাট মুর্খ হয়েই শিক্ষাঙ্গন ত্যাগ করে কোনো রকম যোগ্যতা ছাড়াই। যে বিজ্ঞান পড়েছে, বিজ্ঞানের নিয়মনিষ্ঠতার, বৈজ্ঞানিক চিন্তনের কোনো ব্যাবহার না করে অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্্বারা প্রস্তুত নোট কিনছে- কখনও বাজার থেকে সীমিত মূল্যে, কখনও গৃহ শিক্ষকের কাছে অপেক্ষাকৃত উচ্চমূল্যে। সেটার একটা প্রতিচ্ছবি ধারন করছে মস্তিস্কে- এবং তার প্রায় অবিকল একটা প্রতিরূপ ছেড়ে আসছে পরীক্ষার খাতায়। যে শিক্ষা মানুষকে তার চার পাশের জগত সম্পর্কে প্রশ্ন করতে শেখায় না- যে শিক্ষা মানুষকে ভিন্ন একটা দর্শন দিতে ব্যর্থ সে শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ ছাপকল। অর্ধ শিক্ষিত কিংবা অপশিক্ষিত মানুষ নিজস্ব অপরাধপ্রবনতার কাছে জিম্মি- তারা ফাঁক ফোকর খুঁজে শিক্ষাকে নিজস্ব অপরাধ সম্পাদনের কাজে ব্যাবহার করে।
এবং এর জন্য অনেকাংশে শিক্ষা ব্যাবস্থা দায়ীখলেও অন্তত সামান্য দায় বর্তাবে গনমাধ্যমের কাঁধে। তারাও একটা সেলিব্রিটি সংঘ বানানোর চেষ্টা করছে গত 20 বছর যাবত। বোর্ডস্ট্যান্ড করা- জিপি এ 5- গোলডেন জিপি এ 5- এসব শ্রেনীবিভাজন করে তারা শিক্ষার উদ্দেশ্য ব্যাহত করছেন, বাধাগ্রস্থ করছেন। উচ্চ নম্বর পাওয়া কোনো ভাবেই প্রকৃত শিক্ষার পরিচায়ক না- আমি অনেক মানুষকে চিনি যাদের নম্বর পত্র তাদের শিক্ষার মানের পরিচায়ক নয়।
গবেষনা কাজে অন্য কারো তথ্য বেমালুম আত্মসাতের পরিনাম ভয়ংকর। ঘৃন্য এ প্রবনতা বাংলাদেশেও আছে- বছর খানেক আগে এমন জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত একজনের সংবাদ জেনে মনে হলো আমাদের মননহীন শিক্ষা ব্যাবস্থা এদের উৎকৃষ্ট উৎপাদন ক্ষেত্র। সেই 1ম শ্রেনী থেকেই আদতে শুর হচ্ছে এ প্রবনতার- গৃহ শিক্ষক নোট লিখছেন- গলধকরন - বমন- এভাবেই সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে একটা পর্যায়ে সম্পূর্ন পরীক্ষা পদ্ধতিটা আসলে কে কত দ্্রুত কমি করতে পারে- কতটা অবিকৃত বমন সম্ভব তার একটা স্থুল প্রতিযোগিতা। এবং এদের এই জালিয়াতি নিন্দনীয় হলেও দূর্ন ীতিপ্রবন দেশ হিসাবে চিহি্নত হওয়ার পেছনে এটারও কোনো ভুমিকা নেই।
পরশ্র ী কাতরতা, পরস্ত্র ীকাতরতা, কামার্ততা কিংবা এ জাতীয় যাবতিয় মানবিক অনুভুতির বিক্ষেপ বা বিচু্যতি আমলে আনলে প্রায় সব মানুষই দূর্ন ীতিবাজ। তবে আমাদের যেসব বিষয়কে দূর্ন ীতি আখ্যা দেওয়া হয় তার সাথে অর্থনীতি প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত। প্রত্যক্ষ অর্থনৈতিক সুবিধাবাদের জন্য নীতিহীনতাকেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দূর্ন ীতি বলা হচ্ছে কিংবা এ সকল অব্যাবস্থাকে আমলে এনেই আমাদের জাতি হিসেবে দুর্ন ীতিবাজ বলা হচ্ছে। আমি নিশ্চিত ভাবে বলটে পারি বাংলাদেশের শতকরা 90 জন মানুষ দুর্ন ীতির সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। কোনো ভাবেই এরা দূর্ন ীতির সাথে সম্পর্ক রাখে না।
কায়িক শ্রমে কায়ে ক্লেশে জীবন যাপন করা সব কটা মানুষ সৎ। এরাই বাংলাদেশ গঠন করেছে। তবে নীতিনির্ধারনে বা দূর্ন ীতি বা নীতিহীনতার কর্মসূচিতে এদের কোনো অবদান বা অংশগ্রহন নেই। বাকী 10 শতাংশ মানুষ এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে এটাকে যে আমরা সম্পূর্নজাতিই লাঞ্ছিত হচ্ছি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হেনেস্থা হচ্ছি। 10 শতাংশ দূর্ন ীতিগ্রস্থ মানুষের অধিকাংশই শিক্ষিত। আমাদের কুশিক্ষিত- অপশিক্ষিত- অর্ধশিক্ষিত জনগনই প্রধানত দুর্ন ীতিবাজ। দায়টা আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থারও হতে পারে কিংবা এটা একটা ভূমিকা রাখতে পারে।
দেশ জুড়ে অভিযান চলছে- বিভিন্ন গুদাম থেকে খাবার অযোগ্য খাদ্য জব্দ হচ্ছে- মামলা হচ্ছে- খাদ্যে ভেজাল দেখে আতংকিত হয়ে মানুষ যে বড় বড় শপিং মল এ ছুটবে তারও উপায় নেই- পি কিউ এস কিংবা আগোরা কিংবা এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো মেয়াদউত্তীর্ণ সামগ্রি রাখছে। বাজারের ছোটোখাটো দোকানেও ভেজাল খাদ্য- মিষ্টির দোকানে স্যাকারিন দেওয়ার অভিযোগ আছে- এখন নষ্ট পঁচা ভেজাল ছানা দিটেও মিষ্টি বানানো হচ্ছে- কাঁচা সবজিতে বিষাক্ত রাসায়নিক যৌগ ব্যাবহৃত হচ্ছে পচন এড়াতে। শুকনো খাদ্যে ভেজাল- তাজা সবজিতে ভেজাল- এই সম্পূর্ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করছে যারা তারা তাদের মুনাফার জন্য নীতিহীন।
পরবর্তি দূর্ন ীতির অভিযোগ আমলাতন্ত্রের প্রতি-মদ- নারী- অর্থ এদের প্রলোভনে নীতিবিসর্জন দেওয়া আমলাতন্ত্রের মানুষগুলো সংঘবদ্ধ দূর্ন ীতি করছে। এরা দেশের প্রশাসনিক অবকাঠামো তৈরি করেছে এবং দেশটাকে একটা দূর্ন ীতিপ্রবন অবকাঠামোর দেশ হিসবে চিহি্নত করেছে। সব সময়ই যে বেআইনি পন্থায় দূর্ন ীতি হয় এটা ভুল। আইনের ফাঁক ফোকর ব্যাবহার করে দূর্ন ীতি শেখায় আইন ব্যাবসায়ীরা। অবকাঠানোর নীতিমালা- শব্দবিচু্যতি দিয়ে নিজস্ব স্বার্থ উদ্ধার সব সময়ই আইন সম্মত অপরাধ।
আইন সম্মত পন্থায় অপরাধ করা এবং বে আইনি ভাবে অপরাধ করা সকল কর্মচারীকে চিহি্নত করা অসম্ভব। চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী থেকে শুরু করে সচিব মহাসচিব সবাই এর অংশ। এদের সহায়তায় কিংবা এদের সহযোগী অপরাধী কলো রাজনীতিকে পেশা হিসেবে নেওয়া মানুষগুলো।
রাজনৈতিক নেতারা নিজস্ব প্রভাব খাটিয়ে আইনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে দূর্ন ীতি করছেন- বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার শক্ত হাতে দমন করার একটা সাধু উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। তবে এসব গ্রেফতারকৃত মানুষদের উল্লসিত চেহারা দেখে ভয় লাগছে। এরা কি আসলেই নিজেদের আইনের উর্ধে ভাবেন না কি এরা নিশ্চিত তাদের অপরাধ প্রমানিত হবে না। এর দুটাই ভয়ংকর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়। আইনের ব্যার্থতায় যখন অপরাধি নির্দোষ সব্যস্ত হয় তখন তার অপরাধকৌশল আরও পরিশীলিত হয়। এবং তারা বড় মাপের অপরাধ করতে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। তবে দূর্ন ীতি দমন কমিশন এদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিয়ে এমন আশাবাদ জানাতেই পারি। যদি দু. দ. ক এবং নির্বাচন কমিশনের ভেতবে সমন্বয় থাকে তাহলে এসব অপরাধি নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারবে না।
তবে কালো টাকার প্রভাব প্রতিপত্তি নির্বাচনী ব্যায় পরীক্ষনের মাধ্যমে নির্মূল সম্ভব না। এই বিষয়টা সহজেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দিয়ে বিকল্প উপায়ে বজায় রাখা সম্ভব। একজন ব্যাবসায়ী সমর্থক হিসেবে যদি 1 লক্ষ পোষ্টার ছাপিয়ে দেন এটা কোনো ভাবেই সেই লোকের অপরাধ হতে পারে না। টারা নির্বাচনী ব্যায়সীমা অতিক্রম না করেই তিনি নির্বাচন করতে পারবেন এসব স্বপ্রণোদিত স্বেচ্ছাসেবীর আনুকূল্যে।
ঘুষের টাকা জমিয়ে সরকারী কর্মকর্তারা বিভিন্ন নামে ফ্ল্যাট কিনেনে এবং তা কম দামে বেঁচে সম্পদ বাড়ান- এটা একটা প্রচলিত আইনসম্মত প্রথা। এমন আইনানুন দূর্ন ীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো নীতিমালা গৃহীত হলে হয়তো অনেকাংশে দূর্ন ীতি নির্মূল সম্ভব। তবে আইন প্রনয়ন নয় বরং আইনের সফল ব্যাবহার করে আসলে অপরাধ নির্মূল করা যায়। আশা করা যায় আমরা জাতিগত ভাবে আইন ব্যাবহারে দক্ষতা অর্জন করবো, আমাদের বিচার ব্যাবস্থা তেমন সাবালকত্ব অর্জন করুক এই প্রত্যাশা আমার।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন