সামপ্রতিক আলোচনা

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: রবি, ১১/০২/২০০৭ - ১০:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের জাতীয় সমস্যা বোধ হয় অহেতুক উলম্ফন। দেশ জুড়ে রাজনীতিবিদ আটক করার প্রক্রিয়া চলছে, তারা দূর্ন ীতিবাজ, এ কথাটাও মিথ্যা নয়, তাদের আটক করাই উচিত। তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অনেক রকম অন্যায়ের পৃষ্টপোষকতা করেন। তবে তারা নিজস্ব প্রচেষ্টায় এসব করতে পারেন না। তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়, এবং এই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় প্রশাসন। আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজনীতিবিদদের দূর্ন ীতি প্রবাহিত হয় দেশের ভেতরে। এসব আমলাদের যারা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়ার কাজটাও শুরু করা দরকার ছিলো।
ফৌজদারী আইনের একটা ধারা যা আমাদের সংবিধানেও সংযুক্ত তা হলো আটক করার সর্বোচ্চ 24 ঘন্টার ভেতরে আটক ব্যক্তিকে নিকটস্থ ময়াজিস্ট্রেট কিংবা বিচার বিভাগের দায়িতপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার কাছে ন্যাস্ত করতে হবে। সেই কর্মকর্তা তাকে তার অপরাধ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করবেন এবং প্রয়োজনে তাকে আইনি সহায়তা দিবেন।
প্রথম দিনে গ্রেফতারকৃত রাজনৈতিকদের 38 ঘন্টা পর আদালতে নেওয়া হয়েছে। এবং এমন ঘটনা ঘটলে তাকে সসম্মানে মুক্তি দিতে হবে। প্রচলিত আইনে এমন সব মুক্তির দৃষ্টান্ত আছে। অর্থ্যাৎ বজ্র আটুনি ফস্কা গেরোর প্রভাবে হয়তো প্রথম দিনে আটককৃত লোকজনদের ছেড়ে দিতে হবে।
জরুরি অবস্থা ঘোষনার সময় সকল রকম রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। তবে আমাদের সুশীল সমাজের নয়নের মনি ড. মুহাম্মদ ইউনুস এর ভেতরেই রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। জরুরি অবস্থার বিধি অনুসারে তাকে জামিন অযোগ্য কারাদন্ড দেওয়ার কথা। তিনি রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাচ্ছেন, তার এই আগ্রহ বা ভীমরতির বিষয়ে আমার আগ্রহ সম্ভবত এ কারনেই যে তিনি এমন একটা পরিস্থিতিতে এ কর্মকান্ড শুরু করেছেন যে সময়ে এসব কর্মকান্ড একেবারে নিষিদ্ধ, এবং সংবাদ পত্রে ব্যাপক প্রচারণা সত্ত্বেও তাকে গ্রেফতার করার কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইনের শাসনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাচ্ছেন এবং ব্যক্তি ইউনুস সেই আইন মান্য করছেন না কোনো ভাবেই। তাকে যদি গ্রেফতার করা হয় তাহলেই এই সরকারের আইনের প্রতি ন্যাস্ততা সুপ্রমানিত হবে।
রাজনৈতিকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে- তারা নিজস্ব প্রভাব খাটিয়ে কিছু অন্যায় করছেন, কিছু অন্যায়কে সমর্থন করছেন- ড. মুহাম্মদ ইউনুস সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য- তিনিও তার প্রভাব আছে বিধায় এই অন্যায় করেও পার পেয়ে যাবেন।
যদি অন্য সকল রাজনৈতিক দলদের নিজস্ব কর্মকান্ড অব্যাহত রাখার কোনো সুযোগ না দেওয়া হয় তবে ব্যক্তি ইউনুসের প্রতি এই পক্ষপাতিত্ব কেনো?
চট্রগ্রাম বন্দরকে বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেওয়ার একটা দাবী অনেকদিন থেকেই ছিলো। অবশেষে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেটা পুরণের পদক্ষেপ নিচ্ছেন। চট্টগ্রাম বন্দরের প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রচন্ড এবং এর দক্ষ ব্যাবস্থাপনা বাংলাদেশের আয় উন্নতি করবে। এটাকে বেসরকারী খাতে ছেড়ে দিয়ে পক্ষান্তরে বাংলাদেশ সরকারের অযোগ্যতা স্ব ীকার করার সৎসাহস দেখিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আমাদের আমলাগুলো যে আসলে অদক্ষ এটা আমরা অনেক আগে থেকেই অবহিত ছিলাম তবে সরকার প্রধানের কাছ থেকে এমন স্ব ীকৃতি আমরা পাই নি। আমরা যদি বেসরকারী খাতে চট্টগ্রাম বন্দরকে ছেড়ে দিয়ে লাভবান হতে পারি তবে সরকার কেনো সেখানের ব্যাবস্থাপনার উন্নতি ঘটাচ্ছেন না। সেখানের নীতিমালা নির্দিষ্ট করে শক্ত হাতে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রশাসনিক কার্যক্রম চালান সরকার। বেসরকারী ব্যাবস্থাপনায় থাকলে যে পরিমান লাভ পাবে বাংলাদেশ সরকার এর চেয়ে বেশী লাভবান হবে যদি বাংলাদেশ সরকার নিজে চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যাবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহন করেন। তবে মাথামোটা বিশ্বব্যাংকের সোনার ছেলে ফখরুদ্দিন এবং সার্বক্ষনিক বৈদেশিক সংযোগ বজায় রাখা 10 উপদেষ্টার মোটা মাথায় এ চিন্তা আসবে না সংগত কারনেই। তাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলো আসলে বাংলাদেশের উন্নতির পক্ষে যাচ্ছে কি না এ বিষয়ে এখন স্পষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করা উচিত।
এশিয়া এনার্জির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলো যেই নুরুজ্জামান তাকে যৌথ বাহিনী গ্রেফতার করেছে, এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে বেসরকারী করনের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার- এই দুটো সমীকরণ এক করলে আমরা এদের চরিত্র স্পষ্ট বুঝতে পারবো।
এশিয়া এনার্জির সাথে আবারও চুক্তির পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে- এমনটা আলোচিত হচ্ছে। তাহলে ফুলবাড়িয়ায় আন্দোলন, এবং এখানে অংশগ্রহন করা সুশীল সমাজের অশীল অংশেরা আবারও কি একই রকম আন্দোলন গড়ে তুলবেন? ভারতের সাথে চুক্তি করার কথা আলোচিত হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের উদ্ধৃত বিদ্যুত নিবে বাংলাদেশ- এবং এর দাম যা হবে তা বাংলাদেশের বিদু্যত মুল্যের বেশী। এশিয়ান ডেভোলপমেন্ট ব্যাংক তার টেনে দিবে- সেই তারে পশ্চিম বঙ্গের বিদু্যত আসবে বাংলাদেশে- দাম একটু বেশী হবে তবে যদি নিজস্বমাটিতে বিদু্যত উৎপাদনের ব্যাবস্থা করা যায়- বার্জ মাউন্টেড বিদু্যত উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সময় লাগবে 10 মাস- এবং এই বিদু্যত বাংলাদেশে আসতে লাগবে 6 মাস-
আমরা নিজস্ব বিদু্যত ব্যাবস্থাপনা এবং নিজস্ব বিদু্যত উৎপাদন প্রকল্প শুরু করতে পারি। আমাদের সিলেটের গ্যাস ব্যাবহার করে আমরা বিদু্যত উৎপাদন করতেই পারি। প্রতিদিন 60 মিলিয়ন কিউবিক ফুট গ্যাস বের হচ্ছে এর সবটকুই বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে অন্য কোথাও পাঠানোর বদলে আমাদের গ্যাস আমাদের বিদু্যত সমস্যার সমাধান করতে পারে।
ভারতের আসাম মেঘালয় এসব অঞ্চলে বিদু্যত সমস্যা প্রকট- তবে তারা নিজেদের বিদু্যত বাংলাদেশে বিক্রি করতে আগ্রহী বিষয়টা ঠিক ভালো লাগে না আমার।
তবে আমাদের 11 জন উপদেষ্টার দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলার কিছু নেই। মাননীয় তপন চৌধুরি বলেছেন চুক্তির শর্ত সবাইকে জানানো হবে- এতে কোনো রাখঢাক থাকবে না- তবে চুক্তি সম্পাদনের আগেই আমাদের জানালে আমরা সেই মতো বিবেচনা করে আমাদের সমর্থন -অসমর্থন জানাতে পারতাম।
চট্টগ্রাম বন্দর বাদ দিয়ে ডিপ সি পোর্ট তৈরির একটা প্রকল্পের কথাও শোনা যাচ্ছে- এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আসলেই কি চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ কোনো ভুমিকা রাখতে পারবে?
আমি আশা করবো 2006 সালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী পুরস্কার গ্রহন করে কোলকাতা থেকে ফেরার পর ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে তার সামপ্রতিক রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য কোনো রকম ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং আমাদের সংশয় দুর করার জন্য আরও বেশী স্বচ্ছতার প্রমান রাখবেন তারা।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।