ইউনুস সাহেন ঢাকঢোল পিটিয়ে রাজনীতিতে আসছেন। চলতি মাসের শেষে তিনি দলগঠনের ঘোষণা দিবেন। অবশ্য চাইলেই তিনি দল গঠন করতে পারবেন না। জরুরি অবস্থার নীতিমালার লঙ্ঘন করে তার দলগঠনের প্রক্রিয়াকে সহজসাধ্য করার জন্য হয়তো আগামি মাসের প্রথম দিকে জরুরি অবস্থা শিথিল করা হবে। দেশের রাজনীতিঅঙ্গন সচল হবে সীমিত পর্যায়ে।
বিউটেনিস আগামি মাসে অবকাশে যাচ্ছেন। নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদুত হয়তো নতুন কোনো নির্দেশনা নিয়ে আসবেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীন বিষয়ে পররাষ্ট্রের খবরদারী কুটনৈতিক শিষ্ঠাচারঅতিরিক্ত হয়ে গেছে। সবাই আমাদের শেখাতে উদগ্র ীব কিভাবে দেশ শাসন করতে হবে।
তৃতীয় শক্তি হিসেবে একটা পৃথক দলের ভাবনা মোটেও নতুন কোনো ধারনা নয়। সামপ্রদায়িক দলগুলো কখনই সেই তৃতীয় শক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলো না। বরং নির্বাচনী ফলাফল বিচারে তৃতীয় শক্তি হিসেবে দাবীদার হওয়ার পথে জাতীয় পার্টি সামান্য এগিয়ে। বিকল্প ধারা সেই তৃতীয় শক্তি হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে জন্ম নিলেও সাংগঠনিক ক্ষমতা বিচারে এখনও বিকল্প ধারা পঞ্চম সারির দল।
সংবাদপত্র প্রচারণার মাধ্যমে সুশীল সমাজকে রাষ্ট্রবিবে হিসেবে পরিচিত করে ফেলেছেন। ইউনুস সাহেবের ল্যাজ ধরে হয়তো সেই সুশীল সমাজ রাজনীতিতে আগমন করবেন। ইউনুস সাহেব এবং এই সুশীল সভ্য রাজনৈতিক দল কি তবে ভবিষ্যত তৃতীয় শক্তি হিসেবে চিহি্নত হবে? আগামি নির্বাচন সেটা নির্ধারণ করবে। তবে ইউনুস সাহেবের রাজনীতিতে আগমন আমাকে টেমন ভাবে আশাবাদী করে তুলছে না। প্রতিটা নাগরিকের নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারের এবং রাজনৈতিক দল গঠনের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে । ইউনুস রাজনীতি করতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়ার কেউ নেই। বরং তিনি প্রচার মাধ্যমের আনুকল্য পাবেন প্রচুর। ইউনুস সাহেবের ভবিষ্যত নির্বাচনী ইশটেহারের কয়েকটা ধারা সম্পর্কে প্রায় নিশ্চিত ভাবেই ভবিষ্যত বানী করা যায়।
দারিদ্্রমুক্ত সাবলম্বি ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বাংলাদেশ গঠন, রাজনীতিতে শুদ্ধ ও আলোকিত মানুষ, সবার জন্য শিক্ষা ও সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা। দূর্ন ীতিমুক্ত বাংলাদেশ ও সবার জন্য ক্ষুদ্্র ঋণের সংস্থান। বিরাষ্ট্রিকরনের সপক্ষে শক্ত যুক্তি থাকবে সেই নির্বাচনী ইশথোরে।
শ্লোগান হিসেবে গালভরা হলেও আমার ইউনুস সাহেবকে বিশ্বাসযোগ্য চরিত্র মনে হয় না।তাকে মহান ত্রাতা হিসেবে মেনে নিতে পারছি না আমি। আমি তার সাম্ভাব্য রাষ্ট্রনীতি কল্পনা করে তার সাথে একমত হতেও পারছি না।
হয়তো তার রাজনৈতিক দলের নেতাদের স্বচ্ছতা বেশী হবে, তবে একেবারে নতুন রক্ত আসছে না রাজনীতিতে, বরং ইউনুস সাহেবের কল্যানে সংসদ বৃদ্ধাশ্রম চরিত্র ধারন করতে পারে। সংশোধনবাদী বামপন্থি আর মধ্যপন্থি বিবেচিত কিছু মানুষ ইউনুস সাহেবের সাথে রাজনীতিতে আসবেন। তারা নিজস্ব জগতে প্রতিষ্ঠিত এবং তাদের কর্মজগতে তাদের অবদান, তাদের যোগ্যতা প্রশ্নাতীত। তারা হয়তো দেশের অমূল্য সম্পদ, তবে তাদের নেতৃত্বগুন সম্পর্কে আমি দ্্বিধামুক্ত না।
ইউনুস সাহবের দল যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় যায় বা ক্ষমতার অংশীদার হয় তবে রাষ্ট্র ক্ষুদ্্রঋণ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিবে, হয়তো সমবায় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রশাসনের ইউনুসের প্রস্তাবনাও গৃহীত হবে। ইউনুস সাহেবের নিশ্চিত বিশ্বাস ক্ষুদ্্র ঋণ প্রকল্পই দারিদ্্রবিমোচনের অন্যতম পরীক্ষিত পন্থা।এভাবেই সাবলম্বি, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। এবং তার নির্বাচনী প্রচারণার মূল ভিত্তি হবে তার নোবেল মেডেল। সেই মেডেলের ঝলকানিতে তিনি জনগনকে উদ্্বুদ্ধ করার প্রচেষ্টা রবেন।
সংশয়ী মধ্যবিত্তের একাংশ তাকে তীব্র সমর্থন জানাবে এবং অন্য অংশটা তাকে স্পষ্ট উপেক্ষা করবে। দুষ্ট লোকে রাজনীতিঅঙ্গন ভরে গেছে, চোর ছ্যাচ্চোর, বাটপারে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গন ভর্টি, তিনি এসব মানুষের বিরুদ্ধে ক্রুসেড ঘোষনা করবেন।
তিনি মুক্ত বাার অর্থনীতির গোড়া সমর্থক তিনি বিরাষ্ট্র ীকরনের সপক্ষে। তার ধারনা বাজার উন্মুক্ত করে দিলেই এখানে পুঁজির বন্যা বইবে। আমাদের শ্রম সস্তা বলেই বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি এখানে কারখানা খুলে পন্য উৎপাদন করছে। তবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদান যৎসামান্য। মূলত আমাদের শ্রমিকদের পারিশ্রমিকটাই টাদের অবদান বাংলাদেশের অর্থনীতিতে।
দেশে শিল্পায়নের প্রয়োজন বা চাহিদা পূরন করবে কুটির শিল্প, এন জিও ভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন মডেলে এসব ক্ষুদ্্র উৎপাদকদের ক্ষমতায়নের বিষয়টা চলে আসে। আমরা যাদৃচ্ছিক উৎপাদন করে যেতে পারি না। উৎপাদিত পন্যের বিপননের ব্যবস্থা নিশ্চিত না করা পর্যন্তউৎপাদন বৃদ্ধি একটা ভুল পদক্ষেপ।
আমাদের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর মূল ভূমিকা ছিলো কৃষির, যেহেতু অর্থকরী ফসল কাঁচামাল হিসেবে ব্যাবহৃত হচ্ছে না তাই আমাদের কৃষকেরা এখন পাট, তুলা কিংবা আখ উৎপাদন করছে না, অর্থকরী ফসলের মধ্যে এখনও তামাকের উৎপাদন বাড়ছে। আমাদের পাট শিল্প, চিনি শিল্প কিংবা আমাদের বস্ত্রশিল্পের ভবিষ্যত নেই। আমাদের পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আসে বিদেশ থেকে। আমরা আসলে এসব কাঁচামালের যোগান দিতে পারি না স্থানীয় ভাবে। তাই আমাদের কৃষকেরা উৎপাদনে বা অর্থনৈতিক চক্রে সরাসরি অংশগ্রহন করছে না।
আমাদের অন্যতম অর্থনৈতিক ভিত্তি আসলে আমাদের শ্রমজীবি মানুষ। তারা সস্তা শ্রম দিয়ে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করছেন, তারা বিভিন্ন দেশে শ্রম বেচে আমাদের বৈদেশিক মুদ্্রা পাঠাচ্ছেন। পোশাক শিল্পের অবহেলিত মানুষ যাদের শ্রমঘন্টার পারিশ্রমিক 5 থেকে 10 টাকা তারাই আমাদের দেশে বিদেশী বিনিয়োগের মূল আকর্ষণ।
আমাদের বাংলাদেশে নতুন সম্ভবনার ক্ষেত্র হচ্ছে ঔষদ শিল্প। বাংলাদেশে উৎপাদিত ঔষধের কোটার ব্যাবস্থা হয়েছে বিশ্ব বাজারে। 2015 পর্যন্ত এই কোটা ব্যাবস্থা চালু থাকবে। তবে ইউনুস সাহেবের কিংবা বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ব্যাবস্থায় এই ঔষধ শিল্পায়নের কাজটা মূলত হবে ব্যক্তি পর্যায়ে। রাষ্ট্রিয় পর্যায়ে একটা বড় মাপের ঔষধ শিল্প কারখানা তৈরি করবে না বাংলাদেশ। আমাদের বস্ত্রকলগুলো অকেজো থাকবে এবং আমাদের আনিসুল সদরুল সাহেবেরা গার্মেন্টস দিয়ে শ্রমশোষণ করে যাবেন। তারা 5টা 10টাকা ঘন্টায় শ্রমিক কিনতে পারছেন যখন তখন রাষ্ট্রকে অনবরত তারা চাপ দিতেই থাকবেন যেনো রাষ্ট্র নু্যনতমশর্্রমঘন্টার পারিশ্রমিক নির্ধরন করে তাদের শোষনের সহযোগী ভূমিকা পালন করে।
এন জিও ভিত্তিক উন্নয়ন মডেলে ধরেই নেওয়া হয় আমাদের ক্রেতা অসীম। ভোক্তা আছেই শুধু উৎপাদন বাড়িয়ে যাও। ভোক্তার শ্রেনী চরিত্র নির্ধান, ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা এবং ভোক্তার প্রয়োজনীয়তার সীমা নির্ধারনের কোনো সমিক্ষা নেই। এবং এ বিষয়ক কোনো পরিকল্পনা নেই আপাতত। আমাদের ইউনুস সাহেব বলেছেন আদর্শ গ্রম ভিত্তিক উন্নয়ন ব্যাবস্থা গৃহীত হবে। তার গ্রামীন ব্যাংকের আদর্শ গ্রম বলে কিছু একটা আছে। যেখানের শতভাগ মানুষ দারিদ্্রমুক্ত বলে বিবেচিত। এই কুমির ছানা সব খানেই দেখানো সম্ভব না। আর উন্মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে এমন অসীম সংখ্যক গ্রম তৈরির প্রক্রিয়াটাও সম্ভব না।
দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহন এবং উৎপাদন বাড়ানো এবং পন্য বিপননের রাষ্ট্রিয় উদ্যোগ গ্রহন আসলে একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটাকে চর্চা করতে হবে। আমাদের আদর্শ গ্রাম ব্যাবস্থায় মুদ্্রাসঞ্চালন কিভাবে হবে, কিভাবে একটা স্বয়ংসম্পুর্ন গ্রামের অর্থনীতির চাকা ঘুরে এটাও বিবেচনা করতে হবে। আমাদের চাহিদাগুলো পুরণের জন্য বিনিময় প্রথাটাও নির্ধারিত হতে হবে।
আমাদের আদর্শ গ্রামে যখন উৎপাদন প্রয়োজন অতিরিক্ত হয়ে যাবে তখন তা অন্য অনাদর্শ গ্রামে পাঠানোর সুযোগ আছে। কিন্তু সবগুলো গ্রাম যখন আদর্শ হয়ে যাবে তখন উৎপাদন অতিরিক্ত পন্য ব্যাবস্থাপনার দায়িত্ব কে নিবে?
হয়তো এন জিও ভিত্তিক উৎপাদন মডেলের কোন এক অন্ধ গলিতে এ সম্পর্কিত ধারনা লুকিয়ে আছে। আমরা চাইলেই রাষ্ট্রিয় পরিকল্পনা গ্রহন করে আমাদের ডিনের দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা 1 কোটিতে নিয়ে যেতে পারি। আমরা বাৎসরিক ভাবে 20 কোটি কেজি প্রাণীজ আমিষ উৎপাদনের ব্যাবস্থা নিতে পারি। তবে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে উন্মুক্ত বাজারে আমাদের মূল প্রতিদন্ডি ভারত এবং চীন শিল্প অকাঠামোতে এমন পরিবেশ তৈরি করেছে যে তাদের প্রয়োজন অতিরিক্ত পন্যের াজার খুজচে তারা বিশ্বব্যাপী।যন্ত্রযুগে পন্যের উৎপাদন ব্যায় কমছে প্রতিদিন এবং উৎপাদন হার বাড়ছে। তাই তারা রাষ্ট্রিয় ভাবেই এসব পন্য বিপননের উদ্যোগ নিচ্ছে। আমাদের কুটির শিল্পভিত্তিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত বস্তুগুলো এদের সাথে টিকে থাকতে পারবে কি না এটাও বিবেচনার বিষয়। আমাদের শিল্পায়নের প্রক্রিয়াটা যদি ক্ষুদ্্রউদোক্তা ভিত্তিক হয় তাহলে তাদের পৃষ্টপোষকতার জন্য রাষ্ট্রিয় উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।
আমাদের কুটনৈতিক পরিকল্পনা, আমাদের নতুন বাজার খোঁজার প্রক্রিয়া এবং আমাদের পন্যের বিপননের প্রক্রিয়া গ্রহন করবে রাষ্ট্র? মনে হয় না। ইউনুস সাহেব নিজেও এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ধারনা রাখেন না, স্পষ্ট ধারনা নেই সম্ভবত আমাদের দেবপ্রিয় সাহেবের। আমাদের রেহমান সোবহান সাহেবের প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক সংস্কার পাঠ আমার নেই। তাই বলতে পারছি না তারা ঠিক কি ভাবে এই মুক্ত বাজার অর্থনীতি এবং আমাদের দুর্বল শিল্প অবকাঠামোকে শক্তিশালী করার মধ্যপন্থা উদ্ভাবন করেছেন।
আমাদের শিল্পায়নের গোড়া কেটে উপর দিয়ে জল ঢালার কোনো অর্থ নেই। এন জিও ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় যেভাবে সবাইকে উৎপাদক বানিয়ে ফেলার পায়তারা চলছে তাতে অসংখ্য পন্য উৎপাদিত হয়ে যাবে সত্য তবে ক্রেতা বিহীন উৎপাদিত পন্য আসলে অতিরিক্ত সেচ দিয়ে ফসলের গোড়া পচিয়ে ফেলার মতো একটা বাজে অবস্থা সৃষ্টি করবে।
ইউনুস সাহেবের বিরাষ্ট্র ীকরনের ঘোর বিরোধি আমি। আমি তার মুক্তবাজার অর্থনীতেকে অন্ধভাবে সমর্থনের বিরোধিতা করি। আমি তার ক্ষুদ্্রঋণই বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বিকরে তুলতে পারে এই মত ধারন করি না। আমি এখনও নিশ্চিত নই যে আমি এতক্ষন যে প্রলাপ বললাম ইউনুস সাহেব এমনই একটা রাষ্ট্রনীতি গ্রহন করবেন, তবে আমার মনে হচ্ছে এসব প্রক্রিয়াই তিনি গ্রহন করবেন তাই পুর্বাহ্নেই আমি তার রাজনীতিতে আগমন এবং তার রাজনীতিতে খবরদারীর বিরোধিতা করছি।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন