প্রথম আলো শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক এবং রাজনীতি সংশ্লিষ্ট আমলা ও কর্মচারীদের দুর্নীতির কথা প্রকাশ করছে আন্তরিকতা নিয়ে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর থেকেই তাদের এই প্রচেষ্টা ছিলো লণীয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সংবাদ পত্রের ভুমিকা নিয়ে তাদের অনেক বক্তব্য ছিলো তবে এমন তদন্ত রিপোর্টিংয়ের কোনো সুযোগ সম্ভবত ছিলো না জোট সরকার আমলে।
আমার আশা তারা যেসব দুর্নীতির কথা প্রকাশ করছে সেসব দুর্নীতিকে প্রমাণ করতে পারে এমন সব নথি তাদের কাছে আছে। ব্যক্তিগত অসুয়া চরিতার্থ করার জন্য সংবাদপত্রের ব্যবহার নিয়ে উদ্ভুত প্রশ্নের সদুত্তর দেওয়ার জন্যই এটা প্রয়োজন।
ইস্কান্দার সাহেবের এবং মীর নাছিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের প্রতিবাদ করেছেন শামীম ইস্কান্দার।যথারীতি যেমন হয়, এ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং আমার সম্মান হানীর অপচেষ্টা দিয়ে শুরু হওয়া প্রতিবাদ পত্রগুলোর ভবিষ্যত খুব একটা উন্নত না। প্রথম আলোর প্রতিবেদক হাওয়ায় ধাপকি দিয়েছেন মনে হলো। তার বিভিন্ন তথ্যসুত্রে প্রাপ্ত দুর্নীতির তথ্য প্রমাণ উপস্থিত করবার মতা সম্পর্কে আমি সন্দিহান। বিভিন্ন কর্তাব্যাক্তির মৌখিক স্বীকৃতি এবং যেহেতু বি এনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের চাচাতো ভাই এবং খালেদা জিয়ার সহোদর বিমানের কর্তা ব্যক্তি ছিলেন তাই শামীম ইস্কান্দার দুর্নীতিবাজ এই সরল সমীকরণটা ঠিক পছন্দনীয় হলো না। অপরাধ প্রমাণের জন্য নথি প্রয়োজন, প্রতিবেদক যা করেছেন তা হলো অনুমান, তবে এটা নিছক অনুমান, সরকারী নথি সাংবাদিকদের দেখানোর রীতিটা এখনও অস্বচ্ছ বাংলাদেশে শুরু হয় নি প্রবল ভাবে।
আকর্ষনীয় অনেক খবরের ভীড়ে সবচেয়ে আনন্দদায়ক ছিলো বিদু্যৎ সাশ্রয়ের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার এসি এখন 24 ডিগ্রী সেলসিয়াসে চালানো হবে- এই খবরটা। যদিও সকল বিদু্যতচালিত যন্ত্রের ভেতরে এসি সবচেয়ে বেশী বিদু্যত ব্যবহার করে তবে 20 কিংবা 22 থেকে 24 এ আনলে বড় মাপের বিদু্যত সাশ্রয়ের কোনো সম্ভবনা নেই। তবে এই তাপমাত্রা পরিবর্তনের প্রভাবে আরও উত্তপ্ত ও কঠোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে তার দপ্তর থেকে।
এটাও এক ধরনের ইতরামি। জনগনকে বোঝানো " আমিও চেষ্টা করছি বিদু্যত ব্যবহার কমানোর আপনরাও করেন।
তবে দেশের কতভাগ মানুষ বিদু্যত ব্যবহারের সুযোগ পায়। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ সন্ধ্যা 7টায় দোকান পাট বন্ধ করে যে পরিমাণ বিদু্যত সাশ্রয় হবে তার পরিমাণ মাত্র 100 মেগা ওয়াট। দৈনন্দিন বিদু্যত ঘাটতি হলো 2500 মেগা ওয়াট। আরও বাড়বে এই চাহিদা। এবং অনেকের সে সংগতি নেই যে তারা বিদু্যত ব্যবহার করে, মাইল মাইল নিবিড় বনায়নের মতো বৈদু্যতিক খুঁটি বসানো হয়েছে, হয়তো তার টানা হয়েছে কোথাও কোথাও তবে সেটাকে বিদু্যত গ্রীডের সাথে যুক্ত করা হয় নি।
আমাদের প্রধান উপদেষ্টা যদিও জানেন তার এসির তাপ মাত্রা 24এ নিয়ে আসলে তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না পরিস্থিতির তার পরও টার এই স্ট্যান্ট বাজী দেখে প্রভূত আমোদ পেলাম।
নির্মম রসিকতা করতে পারেন বিশ্বব্যাংকের চোখের মনি। নির্বাচন আইন সংশোধনের পর তারা ভোটার তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নিবেন। আমি আমার অল্প বুদ্ধিতে কিছুতেই বুঝতে পারলাম না ভোটার তালিকা তৈরির সাথে নির্বাচন আইন সংশোধনের সম্পর্ক। অবশ্য টালবাহানা দিলে অনেক রকম বাহানাই দেওয়া যায়। এমন কি পরশু দিন রাতে বৃষ্টি হয়েছিলো বলে আজ সকালে ছাতা নিয়ে রাস্তায় নামলুমও বলা যায়।
তারা আরও দীর্ঘ মেয়াদে থাকবেন এটা নিশ্চিত হওয়ার পর আমেরিকা যাওয়ার আগে আগে শেখ হাসিনা জানালেন তারা নির্বাচিত হলে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সকল কাজকে বৈধ করে দিবেন। যাই ঘটাক না কেনো তারা। যতই আইন লংঘন করুন না কেনো তারা আবারও ইনডেমিনিটি বিল পাশ হবে একটা।
সামরিক মতার মজাটাই এখানে, বিশাল পরিমান গোলাবারুদ আর সৈন্য থাকার পরও নীতিগত ভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের নিয়ন্ত্রনে থাকলেও আসলে এখানে ঘোড়া হলো সেনাবাহিনী গাড়ীটা সরকার। যদিও একটা ধারনা দেওয়ার চেষ্টা থাকে যে আসলে ঘোড়া হলো সরকার আর সেই সরকার সেনাবাহিনীর গাড়ী টানে , তবে সব সময়ই খুব আশ্চর্য হই দেখে যে গাড়ী ঘোড়াকে টানছে। যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে টানছে। প্রতিবছর বাজেটে প্রতিরা বরাদ্দ বাড়ছে। বাড়ছে সামরিক বাহিনীকে দেওয়া সুবিধার পরিমাণ।
যৌথবাহিনী প্রায় 95 হাজার মানুষকে গ্রেফতার করেছে। বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা রীবাহিনীর হেফাজতে নিহত হয়েছে 60 জন মানুষ। দৈনিক একজনকে খুন করছে তারা। আহত করছে কতজনকে এর হিসাব নেই। কতজন মানুষকে হেফাজতে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করছে কতজনকে পঙ্গু করে ফেলেছে এসব হিসাব সামনে আসবে না।
আমার অনুমান অন্তত 20 হাজার মানুষ কোনো না কোনো ভাবে আহত হয়েছে সেনাবাহিনীর হেফাজতে। গত পরশূ এক হোটেলে গিয়ে 25 জন কর্মচারীকে বেধে বেধরক পিটিয়েছে সেনাসদস্যরা। তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়েরের কোনো সুবিধা বা সুযোগ নেই এই সব মতাহীন মানুষদের।
91এর নভেম্বরে এরশাদের নিয়ন্ত্রনে ছিলো সেনাবাহিনী, তখন কোনো এক গলিতে লাথি মেরে এক কিশোরকে হত্যা করেছিলো সেনাসদস্যরা। বিষয়টা কিংবা দৃশ্যটা মর্মান্তিক ছিলো বলেই হয়তো এখনও আমার ভেতরে সেনাবাহিনীর প্রতি ঘৃনার পরিমানটা বেশী।
এমন কত মানুষ হারিয়ে যায়। পার্বত্য চট্রগ্রামের অন্তত 5 হাজার মানুষ গত 20 বছরে সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। এটা আমার মনগড়া তথ্য নয়, মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্টে এই হিসাব দাখিল করা হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা এর অনেক বেশী হবে।
কল্পনা চাকমা নামের একজন হঠাৎ করে অপহরিত হলেন, তার কোনো সংবাদ পাওয়া যায় নি অদ্যাবধি। এমন কত মানুষ হারিয়ে যায়, তাদের ঠিকানা হয় কোথায়? এমন গুজবও আছে তাদের উপর টার্গেট প্রাকটিস করে আমাদের সনাবাহিনী, মানুষের চাঁদমারিতে ল্যবস্তু হয় আদিবাসীরা। হোক তি নেই, তাদের হাতে রাষ্ট্রের সর্বময় মতা, তারা একটু নাড়াচাড়া করলে উলুখাগড়ারা দলিত মথিত হবে, তৃণের সাফল্য তৃণভোজীর ভোজন হওয়া, তৃণভোজির সাফল্য মাংশাসীর ভোজ্য হওয়া আর মাংশাসী সেনাবাহিনীর ভোগে গেলে সেটা আসলে তাদের সৌভাগ্য। দেবতার পদপ্রান্তে বলি দিয়ে যে অশেষ পুণ্যসঞ্চিত হয় সেটা কি কোনো পার্থিব আইন পুরণ করতে পারবে?
বেসরকারীকরনের যে ভুত চেপেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাথায় তার কারণেই কি না জানি না 2004 সালে যে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের 75 কোটি টাকা লুট করেছিলো তাকেই দেওয়া হলো বন্দরের কনটেইনার উঠা নামার তদারকি করার দায়িত্ব। 75 টনী ক্রেন দিবে বলে টেন্ডার নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি 50 টনের ক্রেন দেয় বন্দর কতৃপকে। এই টেন্ডারে তারা 165 কোটি টাকা বিল নিলেও এই ক্রেনগুলোর দাম 90 কোটি টাকার বেশী নয়। এ বিষয়ে একটা তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির মালিক প জোট সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তাই কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় নি তাদের বিরুদ্ধে।
অবশ্য সরকারের অঢেল টাকা- বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার সকল দিক বিবেচনা করেই তাদের এই দায়িত্ব দিয়েছেন, তাই তারা কোনো রকম দুই নাম্বারী করেছেন এমন অভিযোগ করা উচিত হবে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার পর বোধ হয় তপন চৌধুরীর মানসিক সমস্যা বেড়েছে। তার খুব দ্রুতই মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। তার বিভিন্ন বক্তব্য ও বিবৃতিতে বোঝা যাচ্ছে তার মানসিক অবস্থা মোটেও সুস্থ না। আমার এই মুহুর্তে স্কয়ারের কর্মচারীদের জন্য বেশ করূনা হচ্ছে। তাদের অনেক দিন ধরেই এই যন্ত্রনা হজম করতে হচ্ছে।
দেশের চিনি আমদানীর জন্য ঋণপত্র খোলার পরিমান বেড়েছে অন্তত 80 গুণ। দেশে সম্ভবত মিষ্টি কথার আকাল পড়েছে। তবে অন্য চিত্রটা ভয়াবহ, দর্শণা চিনিকলে উৎপাদিত চিনি মজুদ করার মতো জায়গা নেই। কেউ কিনছে না সেখান থেকে চিনি। কেনো ব্যবসায়ীরা দর্শণা চিনিকলের চিনি কিনছেন না, প্রথম কারণ মজুদবিরোধী অভিযান। কোনো স্পষ্ট নীতিমালা না থাকার জন্য ব্যবসায়ীরা চিনি কিনে কোনো গুদামে মজুত করার সাহস পাচ্ছেন না। অন্য কারণটা আমাদের দেশের চিনির মূল্য আমদানীকৃত চিনির মুল্যের তুলনায় বেশী। পরিকল্পনাহীনতার কথা বলছি আমি অনেক দিন ধরেই। আমি কান্ত এখন এই একই কথা লিখতে লিখতে। প্রতিদিন প্রায় 1000 টন চিনি জমা হচ্ছে দর্শনা চিনি কলে। আগে যেখানে প্রতিদিনি 1200 টনের মতো চিনি বিক্রি হতো এখন মজুদবিরোধি অভিযনের স্বর্ণযুগে দৈনিক চিনি বিক্রির পরিমাণ হচ্ছে 100 থেকে 200 টন। যদি টন প্রতি চিনির মুল্য ধরি 2000 টাকা তাহলে প্রতিদিন দর্শণায় 20 ল টাকার চিনি জমা হচ্ছে। এটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা অনেক। তবে আবারও বলছি সরকারের পরিকল্পনার অভাবের সাথে তার অঢেল টাকা আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বৃদ্ধির ঘোষণায় এক দর্শনা চিনি কলে দৈনিক 20 ল টাকা অপচয়ের বিষয়ে তারা উদাসীন থাকবেন।
শিল্পায়নের জন্য ব্যগ্রতা আমাদের সীমাহীন, তবে এর সাথে দুর্নীতির যোগাযোগ আরও বেশী। শুধুমাত্র কলকারখানার রাসায়নিক বজর্্য ফেলানোর জন্য ঢাকা ও এর আশেপাশের নদিগুলো বিষাক্ত হয়ে গেছে। বুড়িগঙ্গা, শীতালা নদীর পানি বিষাক্ত, পরিকল্পনাহীন এবং অনয়ায় ভাবে কলকারখানা স্থাপিত হওয়ার পর, এদের রাসায়নিক বজর্্য সম্বলিত পানি পরিশোধনের নীতিমালা থাকলেও টা যথাযথ ভাবে পালিত না হওয়ার জন্য আশুলিয়ার বিশাল জমি বন্ধ্যা হয়ে গেছে। বন্ধ্যা হয়ে গেছে নারায়ন গঞ্জের আশেপাশের কিছু জমি। সেখানে কৃষকের চাষ করছেন, বীজ বুনছেন ঠিক মতোই তবে কোনো ফসল উৎপাদিত হচ্ছে না।
আমরা মরুকরণ নিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য হাহাকার করছি। হাহাকার করছি সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাবে আমাদের কি সর্বনাশ হবে এটা নিয়ে। তবে খাদ্য শস্য উৎপাদন করতে না পারলে আমাদের কৃষকদের কি হবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না আমরা এখনও।
আশা রাখি এই গরীবমারা উচ্ছেদ অভিযান বাদ দিয়ে দরিদ্র কৃষকের চাষের জমির বন্ধ্যাকরণ প্রকল্পের বিরুদ্ধেও অভিযান শুরু হবে । আমাদের চাষযোগ্য ভুমি এবং আমাদের নদীগুলো বিষাক্ত ও বন্ধ্যা হবে না আর কতৃপরে উদাসীনতায়।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন