সুন্দর মিথ্যা

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: বুধ, ২৮/০৩/২০০৭ - ৪:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জগতের সব প্রানীই নিজের বুদ্ধিতে জীবনযাপণ করে তবে কতিপয় নির্বোধের কপালে বুদ্ধিজীবির তকমা জোটে। বিষয়টা অনেক আগে থেকেই মনে হতো তবে ইদানিং আরও হতাশ লাগে। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি বিষয়ে এত নিচু ধারণা পোষণ করেন তারা মানে আমাদের বর্তমান সামরিক সরকারের তত্ত্বাবধানে চলা ফখরুদ্দিন সরকার আমার নিজের জন্য করুণা হয়।

রাব একটা নির্দিষ্ট ফর্মা তৈরি করে নিয়েছে, তারা নিয়মিত মানুষকে ক্রস ফায়ারের নামে হত্যা করে এবং সাথে সাথে একটা প্রেস রিলিজ আসে, ওত পেঁতে থাকা সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়, সেখানে কখনও কখনও কয়েক রাউন্ড গুলিও পাওয়া যায়, পাওয়া যায় কিছু বন্দুক কিংবা পাইপ গান। তবে হাত পা বাঁধা সন্ত্রাসী কালা ফারুক, ধলা মিলন ওরা এটই নির্বোধ যে সেই অবস্থায় গাড়ী থেকে লাফিয়ে পড়ে লাইন ওফ ফায়ারে।
এই রকম বিচার বিহীন হত্যার বিপক্ষে মানুষজন কোনো কথা বলে না। তাদের অভিমত এই রকম অন্যায়ের ফলে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে প্রতিদিন গড়ে 2 জনকে আইনি হেফাজতে হত্যা করা যদি আইন শৃঙ্খলার উন্নয়ন হয় তবে আমার এমন কোনো আইন উন্নয়ন প্রয়োজন নেই। অপরাধীর অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগে কিংবা অপরাধ সংঘটনের কারণ কিংবা উদ্দেশ্য প্রকাশিত হওয়ার আগে কাউকে অপরাধী ধরে নিয়ে বিচার করে ফেলানো রীতিমতো বরবর্তা, তবে আমাদের যেভাবে বোঝানো হয় আমরা সেভাবেই বুঝি।
মুরগি মিলন, কালা ইমন এরা প্রশাসনের প্রশ্রয় না পেলে এমন বুক ফুলিয়ে ঘুরতে পারতো না। এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের আগে সে খবর পৌঁছে যায় ছাত্র নেতাদের কাছে। কারা দেয় এই খবর? পুলিশ কিংবা প্রশাসন। সষের্র ভেতরে ভুত রেখে আমরা ভুত তাড়ানোর চেষ্টা করছি।

বিষয়টা আরও খারাপ লাগলো খবর পড়ে যে বাংলাদেশের জরুরী আইনের বিধিমালায় জামিন সংক্রান্ত বিষয়টা আবারও পরিবর্তিত হয়েছে। মূল বক্তব্য হলো আইন হত্যা করে কেউ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। অথচ বিচার বিভাগ স্বাধীন বলে উচ্চবাক্য করা হলেও বিচার বিভাগ এখনও পরাধীন। এর আগে তা ছিলো রাজনৈতিক দলের হাতে বন্দি এখন বন্দী সামরিক কর্মকর্তাদের হাতে।
বিচারের নামে প্রহসন চলছে সেখান। এটাই রীতি হয়ে গেছে, যৌথ বাহিনী কাউকে আটক করে নিয়ে যাবে আদালতে, আদালত কোনো রকমে তার রায় দিবে, এক মাসের আটকাদেশ সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে। যুক্তির কোনো প্রয়োজন নেই। যৌথ বাহিনী নিয়ে এসেছে তারা 1 মাসের আটকাদেশ দেওয়ার অনুরোধ করেছে তাই দিয়ে দাও। রিমান্ডের জন্যও একই আইন। যদিও আইনে স্পষ্ট বলা আছে কোনো রকম নির্যাতন কিংবা ভয়ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না, তবে রিমান্ডের ভবিষ্যত সব সময়ই নির্যাতন। পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধেও বোধ হয় জরুরী আইন বিধিমালায় সবুজ সংকেত আছে।
কথাগুলো বলছি কারন হাই কোর্ট আটকাদেশ অবৈধ ঘোষণা দিয়েছে। কেনো তাদের জামিন নামঞ্জুর হবে এটার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। প্রশাসন সুপ্রীম কোর্ট থেকে বিশেষ বিধি নিয়ে এসে সেই শুনানী আরও 1 মাস পিছিয়ে দিলেন। দুদকের বিশেষ আদালতে 45 দিনে বিচার সমাপ্ত করে রায় দেওয়া নীতিমালা তৈরি করলেন। সেই আইন অনুমোদিত হয়েছে, হয়তো সামান্য সংশোধিত হবে। তবে এই আদালত কোনো ভাবেই সুষ্ঠ বিচার করতে পারবে এমন বিশ্বাস আমার না।
একই ঘটনায় যখন ছোটো আদালত একটি রায় দেয় এবং হাইকোর্ট অন্য একটা বিধান দেয় তখন বুঝতে হবে তাদের যে কেউ ভুল। হাই কোটের্র দায়িত্ব এখন অনেক বেশি। তাদের হাতেই এতগুলো মানুষের সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার বিষ্যটা নিভর্র করছে।
যৌথ বাহিনীর হাতে ধৃত মানুষগুলো যাদের 1 মাসের আটকাদেশ দেওয়া হয়েছে ক্রমাগত তাদের আটকাদেশ অবৈধ এমন ঘোষণা আসবে। এই যে ভুল রায় দিলো যে আদালতের ময়াজিস্ট্রেট তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। টাদের বিচার কিংবা রায় যেহেতু অন্য কোনো ঘটনার প্রভাবে প্রভাবিত হয় তারা সুষ্ঠ বিচারের জন্য আদর্শ নয়।
সামরিক আদালতের বিষয় আলাদা, তাদের রীতি নীতি আলাদ। তবে আমাদের সাধারণ মানুষের জন্য যেসব সাধারন আদালত আছে সেখানে অন্তত কোনো রকম প্রভাববিহীন বিচার কার্য সম্পন্ন হবে এমনটাই আশা করা উচিত। কিন্তু সেটা ঘটছে না বলেই এত উদ্বেগ।
এর পরে একজনকে আদালটের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে আটক করা হয়েছে। হাইকোর্ট থেকে 2 মাসের অন্তবর্র্তীকালীন জামিন পেলেও তাকে আটক করে যৌথ বাহিনী। প্রথম আলোর সম্পদক, ডেইলি স্টারের সম্পাদক এমন অগ্রীম জামিন নিয়ে চলাফেরা করতে পারলেও এখন যৌথ বাহিনীর সময়ে এই সব আদালতের বিধান অগ্রাহ্য করে আইনকে কাঁচকলা দেখিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার যেসব দাবি উঠছে সেটা দেখে আমার পুরো আইনিশাসন ব্যবস্থার প্রতি ঘৃনা জন্মে যাচ্ছে।

মইন ইউ আহমেদ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান বলেছেন রাজনীতি বাংলাদেশকে গতকয়েক বছর কিছুই দিতে পারে নি। আর সামরিক বাহিনী প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রন করছে না। আসলেই কি বিষয়টা এমন?
তাহলে কেনো আদালতের রায় আর যৌথ বাহিনীর হাতে আটক ব্যাক্তিদের
আদালতে নিয়ে যাওয়ার পরের রায় আলাদা? কোনো রকম সামরিক প্রভাব খাটানোর চেষ্টা না থাকলে কেনো বার বার শুনানির তারিখ পেছানো হচ্ছে?


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।