সৎ মানুষের খোঁজে- সততা আসলেই দারিদ্র বয়ে আনে- ০১

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: সোম, ৩০/০৪/২০০৭ - ৬:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সব মানুষের সমান অধিকারের কথা ইশ্বর নির্মাণকারী কোনো ধর্মই বলে নি, নিরীশ্বর নৈতিকতাই সব সাম্যতার বোধের জন্ম দিয়েছে- নিরীশ্বর নৈতিকতাই সকল মানুষের সাম্যের কথা বলেছে- মানুষের অপরিমিত সম্ভবনার কথা বলেছে, বলেছে মানুষের জন্মগত যোগ্যতা আছে- এসব নীতির পেছনে কোনো শিখন্ডী ইশ্বর ছিলো না।
ইশ্বরপ্রধান ধর্মে মানুষের বর্ণাশ্রম প্রকারান্তরে মেনে নেওয়া হয়, কেউ কেউ বেশী যোগ্য হয়েই জন্ম নেয়, কেউ কেউ ক্ষীণযোগ্য হয়ে জন্ম নিবে- এটাই ইশ্বরের অভিপ্রায়= তিনি এভাবেই মানুষের পরীক্ষা নেন- এ অসমতা আসলে মানুষের ইশ্বরপ্রণততার পরীক্ষার নিমিত্তেই তৈরি করা হয়েছে। এমন একটা অর্থনৈতিক- যৌক্তিক কিংবা অযৌক্তিক অসমতাও মেনে নেওয়া হয় ইশ্বর প্রধান ধর্মে- এই মৌলিক নীতি ধর্মে প্রোথিত।
মানুষের সমান অধিকারের কথা, মানুষের শুভ্রতার কথা বলেছিলেন কনফুসিয়াস-সেখানে নীতি নির্ধারক কোনো ইশ্বর ছিলো না- ভালোর পৃষ্টপোষকতা ছিলো মন্দকে নিরূৎসাহিত করার জন্য শাস্তির বিধান ছিলো- এবং এ জন্য মানুষকে নিজের আচরণ নিয়ন্ত্রন করতে হতো কোনো জপ কিংবা মন্ত্রোচ্চারণ করতে হতো না কখনই।
মানুষের সমান অধিকারের কথা বলেছে বুদ্ধ- তার বস্তুবাদী কর্মনির্ভর নীতিতে ইশ্বর অনুপস্থিত। অনেকে অবশ্য মেনেই নিয়েছে বুদ্ধে পাখী জন্ম, পিপীলিকা জন্ম- হরিণ জন্ম এসব মানুষের পৌরাণিক নির্মাণ- বুদ্ধের কয়েক লক্ষ জন্মের কল্পনা করেছে যারা তারাও একটা ইশ্বর নির্মাণের প্রয়োজনেই করেছে এটা- এর পেছনে অন্য একটা লক্ষ্য ছিলো- বুদ্ধের বিশুদ্ধ দর্শন নিয়ে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়া বুদ্ধের শিষ্যদের ভেতরে অধিকাংশই এমন মুর্তি নির্মাণের কিংবা পোরাণিক নির্মানের পক্ষে ছিলেন- তারা বুদ্ধের উপরে অনেক অলৌকিক গুনাবলী স্থাপনে ব্রতী ছিলেন- যারা এ পন্থা পছন্দ করে নি তারা আবার এ দলের শরণ ছেড়ে অন্য ভাবে ধর্ম সংঘ গড়ে তুলেছে

ধর্ম এমনই নীতি আর মানুষের বিশ্বাসের স্থানে যেসব কাল্পনিক নির্মাণ আছে সেসব বিরোধেও ধর্মবাদীরা বিভাজিত হয়-
বৈদ্ধ সমাজের নীতি নির্ধারকের ভূমিকা নেওয়া জন্য কিংবা ক্ষমতায়নের কোনো এক ধারায় বুদ্ধকে ইশ্বর বিবেচনা করলে কিংবা বুদ্ধের অবতারত্ব প্রমাণ করলে ধর্ম প্রসারে সুবিধা হয় বিবেচনা করেই হয়তো তারা বুদ্ধকে ইশ্বরদুত বানিয়েছে-
অষ্টমার্গীয় পন্থায় আত্ম উপলব্ধি, আত=ম সচেতনতার প্রক্রিয়াটা বস্তুবাদী প্রক্রিয়া- এসব পোরাণিক উপাখ্যান হয়তো ভাববাদীদের জন্য আনন্দদায়ক হটে পারে তবে অষ্টামর্গীয় পথে চলার পথটাতে কোথাও জপ কিংবা তপস্যার কিছু নেই-এই আত্মসচেতনতায়, নিজস্ব আচারনিষ্ঠতাকে নিষ্কলংক করে তোলাটা ধারাবাহিক চর্চার বিষয়- বোধিস্বত্ত, উজ্জল আলোকবৃত্ত এসব ভক্ত মনকে প্রবোধ দেওয়ার নিমিত্তে তৈরি করা পূজারীর ছলাকলা-

শিল্প বিপ্লবের পরপরই আধুনিক সাম্যবাদের জন্ম হয়- সেসময়ই বিবর্তনবাদের জন্ম- সেটা এই ভাবধারাকে শক্তিশালী একটা ভিত্তি দিয়েছিলো-
সে সময়টা চমৎকার সময় ছিলো- বিচার ব্যবস্থা পৃথক একটা অঙ্গ হিসেবে বলিষ্ঠ হচ্ছে- শাসকের মর্জি মফিক নীতিনির্ধারণের স্বৈরাচারী ভাবধারাও বিলুপ্ত হচ্ছে-এই আইনগুলোই একটা সময় বৈশ্বিক রূপ গ্রহন করলো- বিভিন্ন দেশে এখনও অন্য দেশের আইনের রীতি আর বিধি অনুসরণ করে নতুন উন্নত বিধি প্রণয়ন করা হচ্ছে।
ইশ্বর এবং শাসকভিত্তিক বিধানের বাইরে গিয়ে নিরীশ্বর মানবিক আইন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রশ্নটাও মীমাংসিত হয়ে গেছে। রাষ্ট্র কাঠামোতে নাগরিকের ভূমিকা আর অধিকারের কথা আলোচিত হচ্ছে- সে সময়ের প্রায় ২০০ বছর পরে বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার উৎকট প্রচেষ্টা চলছে।
সম্রাটের মুখের কথাই আইন এমন বর্বর উদ্ভট প্রথা যখন প্রায় বিলুপ্ত তখনও বাংলাদেশে এ প্রথা এখনও প্রচলিত- বাংলাদেশের বাস্তবতায় মানুষের মৌলিক অধিকারের নির্ধারিত সীমানা লঙ্ঘিত হতে দেখি বারবার- তখন আবারও রাষ্ট্র আর নাগরিকের অধিকারের সীমানা নিয়ে ভাবতে হয়

স্বপ্নের বাংলাদেশ কেমন দেখতে চান- ২০২০ সালের ভেতরে মিলেনিয়াম বাংলাদেশের রূপরেখা নিয়ে ভাবনার শেষ নেই- সবাই অবশ্য একটা প্রশ্নে একই উত্তর দেয়- শোষণ বঞ্চনা মুক্ত দুর্নীতিবিহীন অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বি বাংলাদেশের চান সবাই- এসব ভাববাদী বিলাসের বাইরে গিয়ে একটা গ্রহনযোগ্য রূপরেখা তৈরি করতে হবে যে পথ অনুসরণ করলে সত্যি সত্যি এমন একটা বাংলাদেশ তৈরি হতে পারে-
শ্রমিক সমাজের অধিকার এবং ক্ষমতায়নের আলোচনা করছে মূলত বামপন্থী দলগুলো- তবে তারা কখনই নীতিনির্ধারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে নি- বাংলাদেশের ক্ষমতা এখনও মূলত উচ্চ মধ্যবিত্ত সুবিধাভোগী মানুষের কবলেই আছে- মধ্যবিত্ত সমর্থিত দলগুলোর নীতিই মধ্যবিত্তের সুবিধা চিন্তা করেই গৃহীত হয়।

আমি এমন কোনো বিদ্যাদিগগজ হয়ে উঠি নি যে ই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে ফেলবো। তবে আমার বিবেচনা বলটে পারি- যদিও সক্রিয়ভাবে কখনই অংশগ্রহন করা হয়ে উঠবে না রাজনীতিতে- পিঠ বাঁচানো মধ্যবিত্ত স্বপ্ন বিলাসী হয়েই সময় কাটাবো এবং জীবনযাপন করবো আমি তবে এসব নির্দেশনা অনেকটা দায়মোচনের সান্তনা দিবে আমাকে।
আমার নিজের ভাবনায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং নীতিনির্ধারণের প্রশ্নে অধিকাংশ মানুষের বিষয়টা বিবেচিত হবে এমনটাই বাস্তবসম্মত ও নৈতিক মনে হয়- যারা বাংলাদেশে ব্যবসা করছে তাদের নানাবিধ আপত্তি থাকবে আমার কথায়- তবে কায়েতের কোনো কথাই বিবেচনা করছি না আমি- বামুনের শুদ্রের ছায়া স্পর্শ না করেই শুদ্রবিধান দিয়ে যান-তাই বামুনের ভালো কথা বিবেচনায় আনতে পারি- আমাদের সুশীলসমাজ অনুরাগী মধ্যবিত্তের কেউ কেউ এসবে তৃপ্তি পান- যদিও এসব সুশীল সমাজের অধিকাংশের ভূমিকা হলো পয়সা দিয়ে বিভিন্ন জরিপ করা এবং এসবের পরিসংখ্যান তৈরি করার ভেতরেই সীমাবদ্ধ- সত্যিকারের সুশীল মনোভাবসম্পন্ন এরা অধিকাংশই না।

তাই এদের বিভিন্ন উপাত্তে আমরা বাংলাদেশের মানুষের শিক্ষার সুযোগ সীমিত- শিক্ষার্থী ঝরে পরার কথা পাবো- আমরা পাবো বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই দৈনিক বিশ্বনির্ধারিত বৈজ্ঞানিক ক্যালোরি হিসাবে পূর্ণ বয়স্ক মানুষের যতটা ক্যালোরি গ্রহন করার কথা ততটা ক্যালোরি গ্রহন করে না- মানুষের দারিদ্রসীমা নির্ধারণ,মানুষের অর্থনৈতিক বৈষম্যের উপাত্ত পাবো- উপাত্তে থাকবে শিশুর পুষ্টিহীনতার সংবাদ- থাকবে মাতা ও শিশুমৃত্যুর হারের অনুপাতের আলোচনা- এবং বিভিন্ন উপদেশবাক্য কিভাবে এটা রদ করা যায়-

তবে এসব চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান আসবে কোথা থেকে- মানুষের স্বাবলম্বী হয়ে উঠার বিধান দাতব্যপ্রচেষ্টার চেয়ে মানুষের নিজস্ব শ্রমের ভূমিকা এবং পারিশ্রমিকের আলোচনা থাকবে না-

এসব বিষয় আলোচনার চেষ্টা করা যায়- শ্রমিকের অধিকার নিয়ে, শ্রমিকের পরিবর্তীত সংস্কৃতি নিয়ে হয়তো বামপন্থীরা এখনও ভাবনাচিন্তা শুরু করে নি-
আমাদের বামপন্থী নেতাদের ভেতরেও এমন সব অবিবেচনা আছে- যা তাদের পরিশুদ্ধ যৌক্তিকতার বিরোধী-
হয়তো যেসব মানুষ সত্যিকারের শ্রমিকদের ভেতরে কাজ করছেন বর্তমানে তাদের কোনো স্বর বা বিবেচনা উত্থাপিত হবে নাদলের নীতিনির্ধারণী সভায়-

তাদের নিজস্ব একটা বিশ্লেষণ আছে সমাজ বিশ্লেষণের কাজটা তারা করে থাকেন উপন্যাস পড়ে- এবং পরিনত বয়েসে লেখা এসব উপন্যাসের ভেতরে বাংলাদেশী সংস্কৃতির যে পরিচয় তারা পাবেন বা তারা পাচ্ছেন তা অন্তত ৩ যুগের পুরোনো সংস্কৃতির বোধ-
আমরা এই কয়েক যুগে নতুন নতুন বস্তু ব্যভারে অভ্যস্ত হয়েছি- আমাদের অভাববোধের ভাবনাও বদলেছে- আমাদের এসব পরিবর্তিত ভাবনা- আমাদের বিলাসিটা ও প্রয়োজনীয়তার বোধের এই পরিবর্তনটা তারা অনুধাবন করেন না-
সাংস্কৃতিক অবক্ষয় নামক একটা কল্পিত বিষয় নিয়ে মাতামাতি করবেন তারা- তারা বাংলাদেশের সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে গলা ফাটাবেন- অথচ সাংস্কৃতিক বিবর্তনটা যে আসলে ব্যপক ভাবেই সরকারী উদ্যোগেই পরিচালিত হচ্ছে এ বিষয়টা তারা ভুলে থাকবেন- এবং পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে আসলে আমাদের মানুষের ভাবনাটা বদলে কোথায় যাচ্ছে- তারা আসলে কি চায় এসব কোনো বিষয়ই আলোচিত হবে না তাদের ভেতরে-
তাদের নির্দিষ্ট একটা ফর্মা আছে- এ ফর্মার ভেতরে না পড়লো কেউই শ্রমিক হিসাবে দাবী করতে পারবে না নিজেকে- আমাদের অধিকাংশ মানুষের ভেতরে শ্রমিক বলতে যে ভাবনা ফুটে উঠে তা হলো কোদাল- কিংবা কাস্টে হাতে দাঁড়িয়ে থাকা বলিষ্ঠ কিংবা হাড়জিরজিরে কাঠামোর একজন- শ্রমজীবি বা শ্রমিক অনেক পদেরই হতে পারে-
বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রম দেওয়া মানুষ থাকতে পারে আবার কায়িক শ্রম দেওয়া মানুষও থাকতে পারে- তবে একটা বিষয় সবার জন্যই সমান তা হলো এরা সবাই পরিশ্রমের পরের যে পারিশ্রমিক পান তা দিয়ে সৎ ভাবে জীবনযাপন করতে পান- এই একটা সততার ঐক্য আছে শ্রমজীবি মানুষের- শ্রমজীবি মানুষ অধিকাংশই সৎ।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।