সৎ মানুষের খোঁজে- আজ আমাদের শ্রমিকদের নিয়ে আলোচনা দিবস

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: বুধ, ০২/০৫/২০০৭ - ৫:৩৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ মহান মে দিবস, সারাদিন শ্রমিক শ্রেনীর স্বার্থ রক্ষা বিষয়ে নানাবিধ বক্তব্য আসবে, সেমিনার হবে- সভা হবে- আমাদের মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত মানুষের ভীড়ে নগন্য কয়েকজন শ্রমিকের মুখপত্র আসবেন তাদের কথা বলবেন, আমাদের মধ্যবিত্ত কবলিত শাসন ব্যাবস্থা থেকে তাদের নানাবিধ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে।
এই রীতিটা এত বেশী প্রতিষ্ঠিত যে এর অকার্যকরতা এবং উন্নাসিকতা বিষয়ে সবাই অবগত। আজও তেমনটাই হয়েছে- এর ভেতরে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্য রেখেছেন- লক্ষ্য অবশ্য গার্মেন্টস কর্মীরা- বুঝলাম আমাদের পোশাক শিল্পে অধিকাংশ শ্রমিকই নারী- এটা নারী অধিকারেরও বক্তব্য হতে পারে তবে আমাদের উন্নয়নভিত্তিক পেশাজীবি সমিতি যারা বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের দরিদ্র অবস্থাকে পুঁজি করে নানবিধ জনকল্যানমূলক কার্যক্রমে অর্থ সাহায্য এবং বৈদেশিক বিচ্ছিন্ন দাতাগোষ্ঠিকে আকর্ষণ করেন তাদের জন্য হয়তো বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকারে সপক্ষে কিছু বলা হলে সেখানে পোশাকশিল্প কর্মীদের কথা আসবে।
বড়ই আশ্চর্য দেশ আমাদের। আমি অবাক হই, আনন্দিত হই- এবং যুগপত বিরক্ত হই- শ্রমিকের কথা বলতে গিয়ে যখন হিসাব করে দেখি পোশাক শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকের সংখ্যা বাংলাদেশের মোট শ্রমিক শ্রেনীর ৫ শতাংশেরও কম মতো তখন বড়ই অবাক হয়ে যাই।
আমার মনে হয় অন্যের জমিটে বর্গা খাটা কৃষি শ্রমিক- এবং বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ফসল বপন আর ফসল কাটার সময় যেসব শ্রমিকের কর্ম সংস্থান হয় তাদের তুলনায় আমাদের গেরোস্থালী শ্রমিকের সংখ্যা বোধ হয় বেশী।

গেরোস্থালী শ্রমিক বলতে এখানে যাদের বুঝানো হচ্ছে তারা ঘরের পরিচর্যার কাজ করে- গৃহ পরিচারিকা- ঘরের শোভা বর্ধন কিংবা গৃহপালিত পশুর পরিচর্যাকারী সবাইকেই সম্মিলিত ভাবে ধরলে এই গেরোস্থালী শ্রমিকের সংখ্যা শ্রমিক শ্রেনীর ভেতরে সবচেয়ে বড় হবে। এটা আমার বিবেচনা-
সমস্ত বাংলাদেশ কাজের মেয়ে- কাজের মহিলা এবং কাজে নিয়োজিত শিশুশ্রমিকের সংখ্যা সম্ভবত ৫০ লক্ষের বেশী হবে- আমি যতজনকে চিনি এবং যাদের অবস্থান মধ্যবিত্ত পর্যায়ে তাদের সবাই এক কিংবা দুইজন গৃহ পরিচারিকা নিয়ে গেরোস্থালী কাজ সম্পন্ন করে-
কারো ২৪ ঘন্টার গৃহে অবস্থিত কাজের মেয়ে আছে- কারো ঠিকে ঝি আছে- তবে অধিকাংশ বাসায় এক কিংবা দুই জন কাজের ছেলে মেয়ে আছে- শিশু শ্রম নিষিদ্ধ করা হলেও বোধ হয় হোটেলের পানি নিয়ে আসা এবং ধোয়ামোছা আর ঘরের ফুটফরমাস খাটার কাজে সবচেয়ে বেশী নিয়োগ পাচ্ছে শিশুরা-

আমাদের শিশুরা শিক্ষা পাচ্ছে না- যদিও সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলেছে রাষ্ট্র তবে সেটা সম্ভব হচ্ছে না- সম্ভব হচ্ছে না কারণ দারিদ্র- তবে এখানেও আমাদের ব্যবসা বুদ্ধি কাজে লাগছে- ঢাকা শহরে ছিন্নমূল আর গৃহপরিচারিকাদের শিক্ষিত করার জন্য বেশ অনেকগুলো এন জিও কর্মরত- তারা বিভিন্ন শিক্ষা দিয়ে থাকে এইসব শিশুদের- এন জি ও সেবাধর্মী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান- যার অধিকাংশের মালিক অবশ্য আমাদের সুশীল সমাজী গৃহিনী বা সুশীল সমাজীরা- এরা ছিন্ন মুলদের জন্য বাংলা মাধ্যমে শিক্ষা আর বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করে এবং নিজেদের এবং নিজেদের সমগোত্রীয় অন্যদের জন্য ইংলিশ মিডিয়াল স্কুল খুলে বসে- অধিকাংশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের প্রধানদের সামাজিক অবস্থান খতিয়ে দেখলে আরও ভালো ভাবে বোঝা যাবে এটা।

শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম- আমাদের ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে ঋণের জালে বেঁধে ফেলা ইউনুস সাহেবও শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন- তিনিও তার দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্নে বলেছেন যাদের শিশুরা স্কুলে শিক্ষা পায় এবং যাদের ঘরে স্যানিটারী ল্যাট্রিন আছে তারা দারিদ্ড় সীমার উপরে উঠে যায়- এটাই অর্থনৈতিক দারিদ্র মতবাদে বলা হয়েছে- তবে যাদের ক্ষুদ্ড় ঋণ দেওয়া হয় তাদের বাসায় ছেলে মেয়েরা স্কুলে যায় না কিংবা যেতে থাকলেও আবার গেরোষ্থালী শ্রমিক হয়ে যায়- জোহরা গ্রামের নসিমন করিমন একটা বিজ্ঞাপনী সাইনবোর্ড হয়ে থাকে- সেখানে সবাই যায়- সাজিয়ে রাখা দারিদ্ড় মুক্ত বাংলাদেশ দেখে আনন্দে বগল বাজাতে বাজাতে বিদেশীরা ফিরে যায় দেশে-

শ্রমিকের সংখ্যা নির্ণয়ে বলতে হবে আমাদের ১৪ কোটি মানুষের দেশে অন্তত ৭ কোটি মানুষ বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিত- এদের ভেতরে চাষী পরিবারের সংখ্যা যদি ১ কোটি ধরে নেই- এর বাইরে যে ৬ কোটি মানুষ তারা মূলত বিভিন্ন ঘারানার শ্রমিক- এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা- যদি আরও ১ কোটি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাও ধরে নেই আমারা তাহলে প্রায় ৫ কোটি শ্রমিক এখনও বাংলাদেশে আছে- চিংড়ী ঘেরে কাজ করা শ্রমিক- জমিতে কাজ করা শ্রমিক- কায়িক শ্রমে নিয়োজিত শ্রমিক- গেরোস্থালী শ্রমিক- হোটেল শ্রমিক- নির্মাণ শ্রমিক- পোশাক শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিক-
তবে পোশাক শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা ১৫ লক্ষের বেশী হবে না কোনো ভাবেই-
বাংলাদেশের আনাচে কানাচে যত হোটেল আর ছোটো চায়ের দোকান আছে সেখানে নিয়োজিত শিশু শ্রমিকের সংখ্যা আসলে কত হতে পারে আনুমানিক?

আমাদের দেশেই শুধু না অন্য যেকোনো দেশেই শ্রমিকের হাট বসে- এখানে দিন,সপ্তাহ কিংবা মাস হিসাবে মানুষের শ্রম কেনা হয়- দৈনিক নিজেদের বেঁচতে আসে কত মানুষ?
এরা উদ্বাস্তু শ্রমিক- এদের রোজ ৭০ থেকে ১৫০ টাকা- প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বুঝে- আমিও ঘরামি ভাড়া করে এনেছি কয়েক বার- ঘরামী বলতে একজন মানুষ যে বাঁশের ঘর তৈরি করে- ঘরের চাটাই বেড়া লাগানো- বিভিন্ন বেড়া মেরামতের কাজ করে- আমি যখন শ্রম কিনতে আসতাম তখন এসব শ্রমিকের শ্রমদিন ছিলো ৪০ কিংবা ৫০ টাকা- এখন প্রায় ১৪ বছর পরে সেটা ৭০ থেকে ১৫০ এ উঠা নামাক রে- সম্ভবত ঘরামীর ভাড়া এখনও ১০০ টাকার কম।

রিকশা চালায় যারা তারা অধিকাংশই রিকশা মালিক নয়- এরাই নয়োজিত শ্রমিক- এদের সংখ্যাও ২০ লক্ষের কম হবে না- আমাদের প্রতিটা শহর কিংবা মফস্বলে এখনও অনেক জাতের খাওয়ার দোকান আছে- কনফেকশনারী কিংবা লেদ মেশিনের কারখানা আছে- আছে সাইলের সারাই কারখানা- আছে জাল কাপড় তৈরির কারখানা- এসব ব্যক্তিগত উদ্যোগে চলে- সরকরী উদ্যোগে অনেক কারখানাই চলছে- ওদের আবার সরকার নির্ধারিত পারিশ্রমিক আছে-

আমাদের সরকারী ব্যবস্থাপনায় চলা কল কারখানা সংখ্যা কমছে- সরকারের অব্যস্থাপনায় কল বন্ধ হচ্ছে- অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- লে অফ ঘোষিত হচ্ছে- এদের সবগুলোই আরও কিছু মানুষের সরবরাহ বাড়াচ্ছে শ্রম বাজারে-
আমাদের জলভূমি নিধনের ফলে এখন সেখানে নিয়োজিত মৎস্যজীবিরা হয় চুরি করছে সেই মহালে মাছ কিংবা তারা বেকার কিংবা তারা কায়িক শ্রম বেচার জন্য শ্রমিকের হাটে আসছে-

রাতারাতি জনকল্যানমুখী রাষ্ট্র নির্মিত হয়ে যাবে এমন দুরাশা আমি করি না- আমি প্রথমে মানবিক কাজের পরিবেশ আর মানবিক মজুরির দাবি জানাতে পারি-আমি শিশু শ্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবী জানাতে পারি- আমি দাবি জানাতে পারি এই গেরোস্থালী শিশুশ্রমিক নির্যাতনের যত খবর প্রকাশিত হয় এসব দেখাশোনা করার জন্য কিংবা এই সব বর্বর মানুষকে শিশু শ্রম কেনো গৃহপরিচারিকা পাওয়া থেকে নিরত রখার জন্য কোনো না কোনো সরকারী উদ্যোগ থাকবে-
যারা ঘরের কাজের মেয়ে কিংবা কাজের শিশু পেটায় তাদের মতো মর্ষকামী নিষ্ঠুর মানুষ বোধ হয় আর পাওয়া যাবে না- আর তারা যেসব ছুতায় নিজেদের অবদমিত কাম কিংবা মর্ষ কাম চরিতার্থ করে এদের আইনী শাস্তির বিধানটাও তেমন শক্ত হওয়া দরকার-

আজ আর ন্যুনতম মজুরি কি কিব বিষয় বিবেচনা করে নির্ধারণ করা দরকার এ সংক্রান্ত কোনো আলোচনা বাদ দেই- আমার জন্য আজ সুখের দিন- গত কাল বার্মা থকে ফিরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন বাংলাদেশ প্রয়োজনে বার্মায় জমি লীজ নিয়ে চাষাবাদ করবে- এ জন্য একর প্রতি তারা ২৫ থেকে ৪০ ডলার নিবে বাৎসরিক-

আমরা এগিয়ে যাচ্ছি আমাদের অগ্রগতি হচ্ছে আমরা মগের মুল্লুকে বর্গী সেজে যাচ্ছি


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।