আমাদের গণমাধ্যম গনসচেতনতা গড়ে তুলতে ভীষণভাবে ব্যর্থ, তাদের কাছে প্রত্যাশিত দায়িত্বশীলতা এবং দায়বদ্ধতার প্রত্যাশা তারা পূরণ করতে পারে নি- ব্যবসায়িক ধারণা থেকে পরিচালিত জনসচেতনতামূলককার্যক্রম আমাদের সামান্য আনন্দ দিলেও সেটা আসলে একধরনের আই ওয়াশ- তেমন ভাবেই বাণিজ্যিকতা আচ্ছন্ন শব্দ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা- ১০ জন লেখকের বই ঘেঁটে গত ১০ বছরে ধরে একই ঘটনার বর্ণনা চলছে- প্রতিবছর সংবাদ পত্র আসছে বাজারে- এ বছর মার্চ- ডিসেম্বর ফেব্রুয়ারীতে প্রকাশিত প্রবন্ধ নিবন্ধের কাটিং জমিয়ে অন্তত ২ যুগ স্বাধীনতার সাংবাদিকতা করা যাবে-
মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে কিংবা এ রকম যত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কলাম সেখানে ইতিহাস বিশ্লেষণের কোনো স্থান নেই- ইতিহাস মানুষের স্মৃতিকথায় থাকে- মানুষ নিজে ইতিহাস আর ঐতিহ্য বহন করে চলে - দুঃখজনক হলেও সত্য এমন অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিক এখন অমাবসয়ার চাঁদ-
যেহেতু ইতিহাসবিশ্লেষণ অনুপস্থিত তাই আমাদের গণজাগরণ কিংবা ৪৮ থেকে ধাপে ধাপে ৭১ এর জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠার প্রক্রিয়াটাও আমাদের সামনে আসে না- ফলে যুদ্ধ একটা হৈ হৈ রৈ রৈ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়- এলাম দেখলাম জয় করলাম এমন কোনো কিছুই ছিলো না ৭১ এ- অনেক রকম বিরুদ্ধ স্রোত আর ভাঙ্গনের ইতিহাস লুকিয়ে আছে এখানে- অনেক পক্ষ পরিবর্তন- স্বার্থ সচেতনতার গল্প লুকিয়ে আছে- চিহ্নিত স্বাধীনতার শত্রুদের বাইরেও অনেক মানুষই আছে যারা ভেক বদল করে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে পরিচিত হয়েছে-
আমরা আসলে কোনোভাবেই জানতে পারি না জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন কিংবা এন এস এফ এর গুন্ডারা কিভাবে জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলো- কিভাবে তারাই আবার ৭০ এর উত্তাল সময়ে কট্টর জাতীয়তাবাদী হয়ে উঠলো কিভাবে কখন একজন নাজিম কামরাণ চৌধুরী মতাদর্শ বদলে জাতীয়তাবাদী পোশাক পড়ে ফেললো- আসলেই কি এসব আদর্শবিচ্যুতি নাকি একটা কৌশল এসব আমরা জানতে পারি না- এ পালা বদল, মতাদর্শ বদলডিগবাজী এবং স্বরূপ গোপনের ফলে প্রাক স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা পরবর্তী কালে এই সব মানুষের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হওয়া উচিত ছিলো- আমরা এভাবেই হয়তো চিহ্নিত করতে পারতাম কে আসলে প্রকৃত অর্থে দেশপ্রেমিক আর কে স্বার্থের কারণে পোশাকে ধারণ করেছে দেশপ্রেম।
স্বাধীনতার বিরোধী আসলে দুপক্ষই -যারা পোশাকী দেশপ্রেমিক এবং যারা দেশ বিরোধী আমরা দেশবিরোধীর তালিকা তৈরি করছি- শান্তিকমিটি- রাজাকার এসবের তালিকাও তৈরি করছি- তবে তথাকথিত দেশপ্রেমিকদের ভেতরে রাজাকারদের সহযোগীদের তালিকা আমরা তৈরি করতে পারি নি বলেই হয়তো আবারও বাংলাদেশের ভেতরে পাকিস্তানের আবহ দেখতে হচ্ছে আমাদের।
আমরা সবাই কোনো না কোনো সময়ে এসব দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়েছে- ১৯৭১এর পর বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী, কিছু পরিমাণ আদিবাসী বাদ দিয়ে , যে রাষ্ট্র গঠন করলো এই রাষ্ট্রীয় বাস্তবতায় কোনো ধর্মাবলম্বি রাজনৈতিক দলের উত্থান নীতিগত ভাবেই অপ্রয়োজনীয় ছিলো- দেশের শাসনতন্ত্র ইসলামভাবাপন্নতার দাবী ১৯৫৪ এ গৃহীত পাকিস্তানের সংবিধান তঐরি সময়ে উত্থাপিত হলেও সেটা নিয়ে তেমন রাজনৈতিক আন্দোলন সংগঠিত করার সাহস কিংবা জনসমর্থন ছিলো না ৪টা ইসলাম ভিত্তিক দলের কারোই-
নীতিগত ভাবে ইসলামই পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির মূল কারণ হলেও রাষ্ট্রের প্রথম সংবিধান, রাষ্ট্রপতি পদে বাধ্যতামূলক ভাবে একজন মুসলিম হওয়ার বিধান রাখা ব্যতীত ধর্মনিরপেক্ষ আবহে ঢাকা ছিলো- তবে পাকিস্তান সৃষ্টির পর এই ইসলামী উচ্ছ্বাস কমে যেতেও সময় লাগে নি- অন্তত ৪ বার সরকারী উদ্যোগে দাঙ্গা বাধানোর পরও ধর্মীয় উগ্রতা ঝেড়ে ফেলে পরধর্মসহনশীল একটা মনস্তাত্বিক কাঠামো তৈরি হয়েছিলো ২৪ বছরে- তবে কেনো বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির ৬ বছরের মাথায় কোনো এক অবোধ্য প্রয়োজনে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা উদ্ভুত হলো এটার ব্যাখ্যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের একাডেমিক বিশ্লেষণের এলাকা থেকে বের হয়ে আসলে গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমাদের সকল মানুষের কাছে পৌঁছানোর একটা প্রয়োজনীয়তা ছিলো।
হয়তো সচেতন মানুষ ব্যতীত অনেকেই জানে না যে ৬ দফা প্রস্তাব পেশ করার সময় নেজামে ইসলামী, জামাতে ইসলামী এবং মুসলিম লীগ উপস্থিত ছিলো আওয়ামী লীগের সাথে- এবং এই প্রস্তাবে সবাই হতকচিত হয়েছিলো-
অনেকের অনেক রকম ভূমিকা এবং পক্ষ বিপক্ষ নির্ধারণে ভুল অসঙ্গতি থাকলেও- সাম্প্রদায়িতা পুরোপুরি মূছে না গেলেও বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে- এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটা সৃষ্টি হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পকে বিলীন করেই- তবে কেনো সাম্প্রদায়িতার প্রচার এবং প্রসার ঘটলো বাংলাদেশে- ইসলামী উম্মাহের যে দাবী পাকিস্তানপন্থিরা নানা সময়ে করেছে সে দাবি বাংলাদেশে কেনো কোন প্রেক্ষিতে উত্থাপিত হলো-
এইসব ধারাবাহিকতায় সংবাদপত্র কর্মিদের অবহেলা এবং দায়িত্বহীনতাও সমান ভাবে প্রকাশিত- এসব দায় স্খলনের কোনো সুযোগ আপাতত তাদের নেই- বরং তারা এখন সব পেছনে ফেলে অতীতের ভুলগুলোকে আবারও পূনারাবৃত্তি করছে-
সামরিক মদদপুষ্ট সরকারকে সহায়তা করার মাধ্যমে আসলে উগ্রবাদীদের পরোক্ষ সহায়তা দিচ্ছে তারা- হয়তো এভাবেই জনঅসম্পৃক্ততার কারণে ইসলামী বলয়ে ঢুকে যাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন