তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জনপ্রিয়তা কমছে, গ্রাফের এই নিম্নমুখী ধারা অবশ্য অপ্রত্যাশিত নয়। প্রচারণা সংস্থার ভাষ্যমতে ওয়ান এলাভেনের মর্যাদা পাওয়া ১১) জানুয়ারীর প্রেক্ষাপটে সামরিক অধিগ্রহন মানুষকে যতটুকু স্বস্তি দিয়েছিলো এরপর নানাবিধ অপরিকল্পিত কর্মসূচির ফলে সেই জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে।
যদিও জনপ্রিয়তার জরিপে অংশগ্রহনকারিরা সমাজের সকল অংশকে প্রতিনিধিত্ব করে না তেমন ভাবে এটাও সত্য সমাজের সকল অংশ সকল সিদ্ধান্তে সমান ভাবে আক্রান্ত হয় না। নিয়মিত দৈনিক সংবাদপত্র সেবন করা লোকজন পৃথিবীকে একভাবে দেখতে শিখে আর যারা সংবাদপত্রের সংস্পর্শে থাকে না তারা বাস্তব- অবাস্তব- জনরব আর গুজবের ভেতরে বাংলাদেশ দেখে।
তপন চৌধুরীর মস্তিস্ক বিকৃতির সূচনা হয়েছিলো বানিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা হওয়ার পর তবে তথাকথিত সিন্ডিকেট বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রন করছে এমন বাক্য এখন শোভা পায় না, তারা বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ এই সত্য কোনো ভাবেই মানতে রাজী না তপন চৌধুরী- প্রাক্তন মন্ত্রী কিংবা উপমন্ত্রী বাবর যেমন বলেছিলেন, উই আর লুকিং ফর শত্রুজ- তপন চোধুরী এখন বুধো কিংবা বুধোদের খুজছেন- উদোর পিন্ডি চাপানোর জন্য- তিনি একবার বললেন সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয়- এর পর বললেন মজুতদারেরা এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী- এরপর তিনি বলেছেন আসলে মূল অপরাধটা এখন মধ্যস্বত্তচোগকারী ব্যবসায়ীদের- তারাই কৃত্রিম ভাবে বাজারে জিনিষপত্রের দাম বাড়িয়ে রেখেছে- অবস্থা এমন যে দ্রব্যমূল্য বিষয়ে তাদের অজুহাতের কমতি- দে আর রানিং আউট অফ এক্সিকিউজেস।
শাইফ সিরাজ বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে ব্যতিক্রম একজন মানুষ- তার মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানটা নিয়ে তিনি জনগনের যতটা কাছাকাছি যেতে পেরেছেন, বাংলাদেশের কৃষি আন্দোলনের রূপ পরিবর্তন করে দেওয়া এই মানুষটা অবদান বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে যতটুকু সেটুকু সচেতনতা সৃষ্টির পরও তার অনুষ্ঠানে এটা নিশ্চিত হয়েছে অধিকাংশ মানুষ,( বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিটে মূল উৎপাদক যারা) সেই কৃষকেরা আসলে তেমন সচেতন না, তারা বাজেট কৃষি ভর্তুকি এসব সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞতা রাখে না- মোট আভ্যন্তরীণ আয়ের ৫ ভাগের এক ভাগ যারা জোগান দেয় তাদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ দশমিক ২ ভাগেরও কম।
বাংলাদেশের ৫১ হাজার কোটি টাকার বাজেটে তাদের জন্য বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকারও কম। তারা বাজেটে ১০০০০ কোটি টাকার জোগান দেয়। এবং বিনিময়ে সেচের পানি, সার, কীটনাশক, এবং পরামর্শক সব সহায়তার বিনিময়ে ফেরত পাবে ১০০ কোটি টাকা।
সারের ডিলার ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে, সে ডিলার পাবে ভর্তুকির টাকা, সেচের পানির জন্য ব্যবহৃত ডেজেলে ভর্তুকি দেওয়া হবে- সেচ যন্ত্র তাও সকল কৃষকের নিজস্ব সম্পদ নয়- বরং তারা ঘন্তা হিসাবে পানি ভাড়া করে সম্পন্ন কৃষকের কাছ থেকে- ডিজেলের ভর্তুকির টাকাটাও যাবে এই অবস্থাপন্ন কৃষক কিংবা জোতদারে কাছে- সুতরাং প্রথম দুইটা খাত থেকে কৃষক সরাসরি কোনো উপকার পাবে না- যতই সরকারের সদিচ্ছা থাকুক না কেনো কৃষকদের জন্য আলাদা পরিচয়পত্র বানিয়েও প্রকৃত কৃষককে ভর্তুকির অংশীদার করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের পক্ষে।
পরামর্শক সহজলভ্য নয়, আর যারা আছে টাদের অধিকাংশের যোগ্যতা কৃষকের তুলনায় কম- মানে মাঠ পর্যায়ে কৃষির অভিজ্ঞতা আর পাঠ্যপুস্তকের অভিজ্ঞতার ফারাকটাও বিবেচনায় রাখলে আসলে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে কৃষকের কোনো উপকার হচ্ছে না।
এতসব কিছুর পরও বাংলাদেশে ভুমি জরিপের কাজ শুরু হয়েছে,ভূমি জরিপের লক্ষ্য মহান, টারা বিভিন্ন জমির গুনাগুন বিচার করে জমির ব্যবহার নির্দিষ্ট করে দিবেন- যেখানে ধান চাষ হওয়ার কথা সেখানে পুকুর হবে না- লবন ক্ষেত হবে না- হ্যাচারি হবে না- পোল্ট্রি ফার্ম হবে না।
এর সাঠে আরও একটা বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে- বাংলাদেশে জবরদখলকৃত কিংবা প্রভাবশালীদের অনয়ায়ভাবে গ্রাস করা জমির পরিমান প্রায় ৬০ লক্ষ একর কিংবা ২ কোটি বিঘার মতো- এর ভেতরে চাষযোগ্য ভুমি, বনভুমি আর জলাশয় রয়েছে- বনভুমি উজার করে নিজের নামে লিখিয়ে নেওয়া,খাস জমি দখল করা সহ নানাবিধ উপায়ে এই পরিমান জমি অন্যায় ভাবে দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা-
বাংলাদেশে ভুমিহীন কৃষক এবং মৎস্যজীবির পরিমান প্রায় ১ কোটি- এই ২ কোটি বিঘা খাস জমি সুষ্ঠু ভাবে বন্টন করা হলে প্রতিটা ভুমিহীন উৎপাদককে অন্তত ২ বিঘা করে জমি দেওয়া সম্ভব-
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকামনা করা অর্থনীতিবিদ কিংবা আমার কোনো পরামর্শ হয়তো সরকারের বধির কর্ণে প্রবেশ করবে না- ভুমি বন্টন করাও হবে না- আমরা বার্মার কাছে একর প্রতি ৪০ ডলার খরচ করে জমি লিজের ভাবনা করছি-
আজকেও মাননীয় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন-
তবে বাংলাদেশের ৬০ লাখ একর জমি যদি বাংলাদেশের নাগরিকদের ৪০ ডলার করেও লিজ দেওয়া হয় তবে বাংলাদেশ সরকার প্রায় ২৪০ মিলিয়ন ডলার কিংবা প্রায়১৭০০ কোটি টাকা সমমূল্যের জমি অনাবাদী ফেলে রেখেছে- এটা বর্গা দিয়েও ১৭০০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব- আর এই ভুমির যথাযোগ্য ব্যবহারে মাধ্যমে আভ্যন্তরীন আয় বৃদ্ধি কতটা হতে পারে তার একটা আনুমানিক হিসাব পেশ করা যায়-
যদি ধরে নেই এই ২ কোটি বিঘার ১৫০ লক্ষ বিঘা ধানি জমি তবে বিঘা প্রতি ২০ মন করে ধরলেও বাংলাদেশের ধান উৎপাদনের পরিমান বাড়বে বছরে ৩০ কোটি মন-
আর বাকি ৫০ লক্ষ বিঘা যদি জলাশয় হয় তবে বিঘা প্রতি মাছ উৎপাদন করে লাভের পরিমাণ ৬ লক্ষ হলেও প্রায় ৩০০০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক যোগান আটকে আছে-
৪০০ টাকা মন ধরলেও প্রায় ১৫০০০ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের উৎপাদন ক্ষমতা অব্যবহৃত পড়ে আছে- যা দিয়ে অন্তত ১ কোটি পরিবার উপকৃত হতো- সামগ্রিক অর্থনীতি বেগবান হতো-
এটা শুধু একমাত্রিক বিষয় না- এর সাথে বিকল্প কর্ম সংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হতো- তবে মনে হয় না এইটা কখনও বাস্তবায়িত হবে- আমাদের পররাষ্ট উপদেষ্টা সংবাদ সম্মেলন করে বর্গা নেওয়ার সাফল্য বিবৃত করবেন- দ্বিপাক্ষিক সহায়তার কথা বলবেন- এসব মেকি সাফল্যের সংবাদমূল্য আছে- একটা ভালো পদক্ষেপ নিলে সেটা কোনোভাবেই নন্দিত হবে এমনটা বলা যায় না-
রাজনৈতিক দুবৃতেরা অবৈধ দখলের সূচনা করেছে- টারা অন্যায় করেছে- তবে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা আর বিবেচনার সময় এখনও পার হয়ে যায় নি
বিভিন্ন খাতে প্রশংসনীয় সংস্কার হয়েছে- আইন বিভাগ সংস্কার তার একটা -তবে সামরিক খবরদারিতে এই সংস্কারের শুভ প্রভাব আমরা এখনও উপলব্ধি করতে পারি নি-আইনের শাসন প্রতিষ্টা করা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজতবে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা নীতিমালা তৈরি করা এবং সে নীতিমালা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সংস্কার করা যেনো কোনো সামরিক কিংবা অসামরিক খবরদারিতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন না হয়।
পূঁজিবাদী বাস্তবতায় ক্ষমটা কেন্দ্রীকরণের প্রক্রিয়াটায় অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী পক্ষ সব সময় পূঁজির উপর নিয়ন্ত্রন বজায় রাখতে চায় এবং সব সময়ই একটা গোষ্ঠিবদ্ধ মনোপলী তৈরি হয়েই যায়-এই অনিবার্য প্রক্রিয়াটা রদ করবার জন্য আসলে ভুমিহীনদের রাষ্ট্রীয় সহায়তা প্রয়োজন- তাদের শক্তিশালী করে তোলা প্রয়োজন- তাদের জন্য আইন এবং প্রশাসনিক সহায়টা সহজলভ্য করে তোলা প্রয়োজন- একটা ভুমিহীনদের পক্ষের রাষ্ট্রীয় নীতিমালা প্রাণয়ন করা প্রয়োজন-
এসব নীতিগ্বহীত হতে দেখা একটা স্বপ্নের মতো হতে পারে- তবে আইনী সংস্কারের প্রবনটায় আমাদের সুশীল সমাজের আহ্বান আমার কাছে অনৈতিক মনে হয়েছে- তাদের দাবী রাজনৈতিক অপরাধীদের তারা আইনী সহায়টা দিবে না- আইনজীবিরা তাদের পক্ষে মামলা লড়বেন না- এই অন্যায় আবদারে অনেকের সাড়া দিয়েছেন-
অপরাধী যেই হোক না কেনো তার পক্ষে বলবার একটা মানুষ প্রয়োজন-
এটা স্বাভাবিক একটা বিষয় - আইনের অপব্যবহার রদ করার একটা কার্যকরী পন্থা এটা-
আমার আশ্চর্য লাগে এটা ভাবলে যে বে্তমানে সুশীল সমাজের সাথে সখ্যতায় তারা তাদের নৈতিক দায়িত্ব বস্মৃত হয়েছেন- কিন্তু যখন মানবাধিকার লঙঘিত হয় বেসামরিক প্রশাসনের হাতে- যখন প্রশাসন নিপীড়কের ভুমিকা নিচ্ছে তখন মাননীয় সুশীল সমাজ এটা প্রতিরোধে আইনি সহায়তার আহ্বান জানান না-
পুলিশী হেফাজতে হত্য, ক্রস ফায়ার আর এনকাউন্টারে মরে যাওয়া মানুষগুলোর মৃত্যুও অনৈতিক রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড- এটার বিরুদ্ধে কেউ আদালতে মামলা করেন না- আমাদের কামাল হোসেন সাহেব অনেক ভালো মানুষ- তিনি একটা দৃষ্টান্ট স্থাপন করতে গিয়ে আবারও নতুন একটা দল গঠনে ব্রতী হয়েছেন- তবে তিনিও সংবিধানের রচয়িতা হয়েও সংবিধান বিরোধী সকল রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের বিরুদ্ধে একটা মামলাও করেন নি আদালতে-
আপনি আচারী ধর্ম পরকে শেখাও কথাটা সব সময়ই প্রযোজ্য হতে পারে- তিনি নিজে বিবেক পরিস্কারের কথা বললে তার নিজের সুশিল বিবেকের ঘরে একটু উঁকি দিয়ে দেখা প্রয়োজন তার বিবেকের ঘরে কোনো অনুশোচনার অস্তিত্ব নেই কেনো- তিনি যে মানবাদঃিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেন নি- তিনি এখন কোন বিবেচনায় জনগনের অধিকারের আর মানবাধিকারের পক্ষে একটার পর একটা বানী দিয়ে যাচ্ছেন-
যেসব আইনজীবি এখন সুশীল সখ্যতায় নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব ভুলতে বসেছেন তাদের নিজেদের কোনো সক্রিয় অংশগ্রহন ছিলো কিনা এই দুবৃত্বায়ন প্রতিরোধে?
কেনো কেউ আদালতে একটা মামলা করতে ব্যর্থ হলো যে সামরিক বাহিনী বেসামরিক কতৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে থেকে যেসব হত্যা করলো সেসবের দায়মুক্তি কোনো ভাবে সাংবিধানিক বিধিকে লঙ্ঘন করে প্রদান করা সম্ভব কি না।
হয়তো এসব আসলে সুশীল সখ্যতার চেয়েও বেশী বর্ণান্ধতা কিংবা শ্রেনী ঘৃণার প্রকাসাহ- নীতি এবং নৈতিকতা যখন এমন বর্ণান্ধতা আর শ্রেনীঘৃনায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় তখন ভালো মানুষের কাছে শুদ্ধ সংস্কারে আশা অরন্যে রোদনে পর্যবসিত হয়।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন