নবীজন্ম

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: শুক্র, ১৩/০৭/২০০৭ - ৫:৫৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সভ্যতা পরিপুষ্ট হয় রক্তে এবং যুদ্ধে, নগর নির্মাণ এবং নগর ধ্বংস একই সাথে চলেছে সভ্যতার স্রোতে একই নগর কয়েক বার ধ্বংস করা হয়েছে- আবার নির্মাণ করা হয়েছে- সভ্যতার সাম্রাজ্যবাদী সম্প্রসারণের ধারাটাই এমন-
নগর ধ্বংস, নগর নির্মাণ এবং বিজিত নগরের শাসন কাঠামো নির্ধারণ করা- এইভাবে মহামান্য সম্রাট নিজে ইতিহাসের চরিত্র হয়ে উঠছেন-

তবে প্রাচীন পুরাণের রীতি অনুসরণ করলে, পুরাণ কথা বিশ্লেষণ করলে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠে- প্রাচীন গ্রীক সভ্যতা- কিংবা রোমান সভ্যতা এসব সভ্যতায় কোনো একক ইশ্বরের কতৃত্ব ছিলো না- এমনটাই সম্ভবত সত্যি যে আরব আর পারস্য থেকে ইশ্বর সমস্ত বিশ্বে রপ্তানী হয়েছে।
অন্যান্য সভ্যতাগুলোতে দেব দেবীদের যৌথ পদচারনা ছিলো-

তবে অন্য সত্যটা হলো আরব কিংবা পারস্যের ইশ্বর নামক বোধটা আবার সে অঞ্চলের আরও প্রাচীন সভ্যতাগুলো থেকে ধার করা- মিশরীয় সভ্যতা কিংবা ব্যবিলনীয় কিংবা আসিরিয় সভ্যতায় সম্রাট ইশ্বরের পদে আসীন ছিলেন- মিশরে একটা পর্যায়ে সম্রাট ইশ্বরের পূত্র হয়ে গেলেও ব্যবিলনের সভ্যতায় সম্রাট ইশ্বরতুল্য এবং পূজ্য অবস্থানে রয়েই গিয়েছিলো।

একই ধারণার ধারাবাহিকতায় সম্রাটই ইশ্বর হয়ে প্রজাদের ও রাজত্বের রক্ষণাবেক্ষণ করেন- ব্যবিলনের ধর্মীয় উপকথার সাথে আরবের ধর্মের উপকথার সাদৃশ্য নিয়ে অনেক জায়গায় আলোচনা হয়েছে- এবং পুরাতাত্ত্বিকরা বিশ্বস করেছেন আসলে বাইবেলে বর্ণিত প্রতিটা চরিত্রই আসলে ঐতিহাসিক চরিত্র এবং বাইবেলে বর্ণিত প্রতিটা নগরই আসলে কোনো না কোনো সময় উপস্থিত ছিলো পৃথিবীতে-

ব্যবিলনের ধর্মীয় উপকথার প্ররম্ভে ইশ্বর মানুষের মাঝেই বসবাস করতেন- এই একই মানবিক সত্ত্বাটা পাওয়া যায় আরবের ধর্মীয় উপকথার অতীত সময়ে- ইশ্বরতুল্য সম্রাটকে আত্মস্যাৎ করে বনী ইসরাইল ইশ্বর পূত্রকে নবীরুপ প্রদান করেছে এমনটা বোধ হয় সত্য নয়- এখানে সাম্রাজবাদের সামান্য একটা প্যাঁচ থাকবার সম্ভবনা আছে-

ইশ্বরের ক্রমশ উর্ধগমনের ধারাটা ইহুদি নবিকাহিনীতে পাওয়া যায় চমৎকার ভাবে-
মানুষের মাঝে বসবাসকারী ইশ্বরকে প্রাথমিক অবস্থায় দেখা যেতো, স্পর্শ করা যেতো- ইশ্বর স্বয়ং এসে শিক্ষা দিচ্ছেন সন্তানদের এমন বক্তব্য ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকলো- তার দুর্বিনীত যুদ্ধবাজ সন্তানদের উপর ইশ্বরের ভরসা কমে গিয়েছিলো হয়তো- হয়তো তার মনে হয়েছিলো কোনো এক দুর্বল মুহূর্তে তাকে আক্রমন করতে পারে তার সন্তানেরা- তাই তিনি জনঅন্তরালে চলে গিয়েছেন- এরপর তার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তার বক্তব্য সঞ্চালিত হলো মানুষের কাছে০

তবে পোরাণিকতা এবং রূপকরে চাদরটা খুলে যদি বিশ্লেষণ কটি আমরা অন্য একটা সত্য খুঁজে পাবো এখানে- রাজত্বের সম্প্রসারণ আর সম্রাটের ইশ্বরতুল্যতার সহজ সমীকরণ- সম্রাট রাজ্যেশ্বর- তার হাতে জীবন ও মৃত্যুর ক্ষমতা, তিনি যাকে ইচ্ছা ধনাঢ্য করতে পারেন, যাকে ইচ্ছা ধ্বংস করতে পারেন- তিনি নগর গড়তে পারেন এমন কি নগর ধ্বংসও করে দিতে পারেন তার অভিপ্রায় অনুসারে-

ইশ্বর কালের স্রোতে নিরাকার হলেও এখনও এমন সব ক্ষমতাই ধারণ করে- তবে সম্রাটের ইশ্বর হয়ে ওঠা আর নগর সভ্যতার সম্প্রসারণ এক একজন নবীকে কিংবা ইশ্বরের দুতকে সৃষ্টি করেছিলো সম্ভবত-

সম্রাট রাজ্যজয় করছেন- পুরোনো নগর দখল করেছেন- তার চিহ্ন স্থাপন করেছেন বিজিত নগরে- এবং অবধারিত ভাবে সেখানের শাসন কাঠামো পুণনির্মান করেছেন- সেখানে তার এক প্রতিনিধিকে স্থাপন করে তিনি সম্রাজ্য সম্প্রসারণের জন্য আবারও যুদ্ধ যাত্রা করেছেন-

নতুন শাসক সে নগরে অধিবাসি হতেও পারে আবার নাও হতে পারে- তবে সে নতুন রাজার অনুগত থেকে তার ঘোষিত নিয়ম সর্বত্র প্রচলনের চেষ্টা করছে- আর সম্রাটের অনুগত সেনাবাহিনী নতুন যুদ্ধযাত্রায় বের হলে সেখানের স্বাধীনতা কামী জনগন কিংবা পুরোনো রাজার অনুগত বাহিনী বিদ্রোহ করেছে-
সংঘর্ষ চলেছে হয়তো, বিজিত নগর পুনরায় দখল করে সম্রাট বিদ্রোহীদের চিরতরে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য তাদের পরিবার পরিজন সহ হত্যা করেছেন- কেউ বেঁচে নেই- এবং তার অনুগত বান্দাদের তিনি আবারও নগরের শাসনভার অর্পন করে চলে গিয়েছেন- এখানে আমরা ইশ্বর , তার ক্রোধ এবং তার নবীকে পাই-
প্রতিটা বিজিত নগরে এভাবেই নবী সৃষ্টি হয়েছে- সাম্রাজ্যবাদী সম্প্রসারণের ফলে এক এখটা রাজবংশ কয়েক প্রজন্ম ধরে বিস্তৃর্ণ অঞ্ছল শাসন করেছে- এবং সেই সম্রাজ্যে রাজার অনুগত শাসক দল সম্রাজ্যের সম্প্রসারণে সহায়তা করেছেন- এবং একটা পর্যায়ে এই সম্রাট আনুগত্য এবং সাম্রাজ্যের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ার পর আসলে সম্রাটকে যুদ্ধ জয়ে বের হতে হতো না- এমন সময় নিয়মিত করদ রাজ্যের রাজা ক্লেশ স্বীকার করে হলেও মাননীয় ইশ্বরপূত্র- ইশ্বরতুল্য সম্রাটের সাথে দেখা করেছেন- এবং সেখানে গিয়ে নতুন রীতি কিংবা সম্রাটের প্রতিনিধির পাঠানো নীতিমালা নিজ রাজ্যে সম্প্রচার করতেন- এবং এইসব ফরমান তিনি ইশ্বরের নামেই প্রচার করতেন- ফলে নগরে বাসিন্দারা কখনই ইশ্বরের দেখা পায় নি সেভাবে তবে তার নবিকে পেয়েছে যার সাথে ইশ্বর নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন তার নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে-

স্থানীয় শাসকের নবী হয়ে উঠা এবং ইতিহাসের পুরাণ হয়ে উঠবার পথে অনেকগুলো একই রকম ঘটনার নায়ক মিলেমিশে একটা কাল্পনিক চরিত্রে পরিনত হয়- এবং এরপর তার উপরে মানুষের কল্পনা আর রূপকের পলি জমে তারা একএকজন ইশ্বরের পাঠানো প্রতিনিধি হয়ে বাইবেলে স্থান পায়-


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।