অবৈধ স্থাপনা ভাঙবার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেখানে দম্ভের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো র্যাংগস ভবন। ২২ তলা এই ভবনের মাথা ছেঁটে ফেলে আসলেই আইনের হাত সবজায়গায় পৌঁচেছে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব?
প্রথান ইস্যু ছিলো ভবনটার অনুমতি নেওয়ার সময় সেখানে ৬ তলা ভবন স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিলো রাজউক থেকে, তবে রাজউকের অনুমোদিত ৬তলার উপরে আরও ১৬ তলা উঠিয়ে দেওয়া হলো যখন তখনও কি রাজউক কতৃপক্ষের চোখে এটা পড়ে নি? এই ১৬ তলা অবৈধ স্থাপনায় দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা অফিস কিনেছিলো, এখন প্রশ্ন হলো অবৈধ এই অফিস স্পেস বিক্রির জন্য কি র্যাংগসের কাছে ক্ষতিপুরণ চাইতে পারবে েই সংশ্লিষ্ঠ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো?
কিংবা এখন যেভাবে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের জোয়ার চলছে সেখানে অবৈধ সম্পদ রাখবার দায়ে অনেকের জরিমানা ও কারাবাস হচ্ছে সেখানে এই অবৈধ সম্পত্তি ক্রয় এবং তা দখলে রাখবার জন্য কি এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত করা যাবে?
দুর্নীতি কোনো নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ থাকে না এটা ডালপালা ছড়ায়, বিভিন্ন দিকে শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে এটা ভয়াবহ আকার ধারণ করে, এই এক রাজউক কতৃপক্ষ কতশত দুর্নীতির জন্ম দিচ্ছে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে এটা বিবেচনা করা যায় এখানে- রাজউকের এই দুর্নীতির স্পর্শে কলুষিত হয়েছে দেশের সব কয়টা শীর্ষ পর্যায়ের নির্মান সংস্থা, সবাই বিতর্কিত সম্পত্তির উপরে স্থাপনা তুলেছে রাজউকের অনুমতি নিয়ে-
বিতর্কিত সম্পত্তিতে স্থাপনা নির্মাণের আইনগত নিষেধাজ্ঞাকরে অবজ্ঞা করে এই নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো স্থাপনা নির্মানে পেশীশক্তির ব্যবহার করেছে- অর্থ্যাৎ রাজউক একটা প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার ফলে একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যা দুর্নীতিপ্রবন তকে সহযোগিতা করা হলো
এখানে এই স্থাপনায় যতজন বিনিয়োগ করলো তাদের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সাম্ভাব্য সুযোগটা তৈরি হলো- এবং এই বিতর্কিত সম্পত্তি দখল করবার জন্য ভাড়াটে সন্ত্রাসীর ব্যবহার অন্য একটা সামাজিক অব্যবস্থা তৈরি করলো- এই সম্পত্তির মালিকদের কেউ কেউ খুন হয়েছেন, কেউ কেউ প্রাণভয়ে চুপ থেকেছেন এবং নিজেদের উপরে করা এই অবিচার মেনে নিয়েছেন- ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন
বড় বড় ব্যবসায়ীরা সন্ত্ড়াসের পৃষ্টপোষকতা করেন এবং এরাই রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার অংশীদার, ক্রস ফায়ারে দাগী সন্ত্রাসী এদের অবৈধ কার্যকলাপের দলিল বুকে নিয়ে মরে যায়- আরও একটা রাষ্ট্রীয় অন্যায়ে রাজউক পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে-
এই অবৈধ কিংবা বিতর্কিত স্থাপনা আবার শীর্ষপর্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্থ আমলাদের কালো টাকা সাদা করবার কাজে ব্যবহৃত হয়- স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ সরকারী কর্মকর্তাদের অংশগ্রহন সম্প্রতিক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে প্রকাশিত হয়েছে
একই সাথে এটা ঢাকা শহরের পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যাকেও বাড়িয়ে দেয়- জলাভুমি ও প্রাকৃতিক খাল ভরাট করে উঠে দাড়ানো বিজেএমসি ভবন অবৈধ হলেও এখনও সেটার বিপক্ষে তেমন শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া পরিস্থিতি তৈরি হয় নি
মতিঝিল কিংবা বনানী কিংবা গুলশান কিংবা বুড়িগঙ্গা কিংবা তুরাগের পার কিংবা মোহাম্মদপুর, কিংবা ঢাকা শহরের নদীতীরবর্তী অংশে সব খানেই অপরিকল্পিত এবং অবৈধ স্থাপনা নির্মানের ফলে ঢাকায় জলাবদ্ধতা বেড়েছে- বরং বলা যায় দেশের প্রতিটা জেলায় এমন অনেক নিদর্শন পাওয়া যাবে -তবে ঢাকা শহরের জন্য সত্য হলো এখানে এইসব জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করতে এমন স্থাপনাগুলোর অনুমতি দিয়েছে রাজউক-
চিত্রটা আকর্ষনীয় নয়, তবে এ রকম যেকোনো একটি দুর্নীতিপ্রবন সংস্থা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে অসংখ্য দুর্নীতির জন্ম দেয়- ঢাকা শহরের বহুতল বাড়ীগুলোতে অনেক ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছে সন্ত্রাসীরা- কথা হলো এটা কি উপঢৌকন ছিলো, না কি এরা চাঁদাবাজীর টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছে-
এই বহুতল বাসা আর অফিস নির্মাণের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা অকার্যকর কিংবা খুবই নাজুক হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে বলেই এখানে বিনিয়োগে উৎসাহী বিদেশী প্রতিষ্ঠান আসছে বাংলাদেশে। তারা বেশ কয়েক বছর ধরেই বেসরকারী পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করছে০
বরং এটাই বলা ভালো উঁচু ভবনের পাশের বস্তিও একটা সময় উজার হয়ে যায়= সেখানেও সাইনবোর্ড থাকে *** স্থাপনার নির্ধারিত স্থান- বুকিংএর জন্য যোগাযোগ করুন।
ঢাকা শহরের অবৈধ স্থাপনা ভাঙা এবং ফুটপাত উচ্ছেদের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া মানুষদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ হয়তো র্যাংগস ভবনের ১৬ তলার অবৈধ মানুষদের সম্পদের সমান হবে না- তবে এই ফুটপাত এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ ১০ থেকে ২৫ লক্ষ মানুষ- অপরিকল্পিত এবং অপরিনামদর্শী আচরণে ক্ষতিগ্রস্থ বাংলাদেশের প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষের পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা কি করতে পারবে সরকার?
কলমের কয়েকটা খোঁচায় খুলনার ৪টা পাটকলের সাথে সংশ্লিষ্ঠ লক্ষাধিক মানুষ কোনোভাবেই ফিরে আসতে পারবে না সাম্প্রতিক দৈন্য দশা থেকে, তাদের চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে তবে এর চেয়ে ভয়াবহ হলো তাদের গত কয়েক মাসের বকেয়া বেতন গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরির আশ্বাসের পরেও জায়গা মতো পৌছাতে পারে নি এখনও- অবশ্য এইনানুগত্যতা কিংবা বিবেচনাহীনতার যত নিদর্শন এই ৬ মাসে সরকার দেখাতে পরেছে এক র্যাংগস ভবন ভেঙে সেটার পরিশোধ হবে না-
ঘটা করে সারাদিন প্রচারিত হয়েছে র্যাংগস ভবন ভাঙবাদ দৃশ্য- তবে আদালতের নির্দেশের কাগজ না পৌঁছানোর আগেই সেখানে মাইকিং করে সবাইকে সকল সম্পদ সরিয়ে নেওয়ার জন্য মাত্র ৮ ঘন্টার সময় দেওয়া এটা কি আসলেই যৌক্তিক ছিলো? বরং উৎকট আগ্রহ মনে হয়েছে দেখে।
তবে এর সাথে যায় এমন দৃশ্য হলো স্থাপনা ভাঙবার কাজে নিযুক্ত শ্রমিকদের চপা উল্লাস।
এদেরই কেউ কেউ অভাবে মৃতপ্রায়- এরাই হয়তো ফুটপাতের খুচরা ব্যবসায়ী ছিলো- এরাই হাতুড়ীর বাড়িতে অবৈধ স্থাপনা ভাঙছে- হয়তো এভাবেই তারা শ্রদ্ধা জানাচ্ছে গুলিস্তানে গাড়ী চাপা পড়ে নিহত হওয়া ২জন ছিন্নমূল ব্যবসায়ীকে-
গুলিস্তানে নিহত ২জন মানুষকে হত্যার দায় নিবে না এই সামরিক সমর্থিত সরকার- খুলনার পাট কলগুলোর বেতন না পাওয়া শ্রমিকদের ঘরে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করা মানুষগুলোকে হত্যার দায়ও নিবে না এই সরকার- তারা লে অফ ঘোষণা করে পাটকল বন্ধ করে দিতেই পারে- তাদের আসলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাই শুধু আছে- প্রতিটা সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া কি হবে এটা বিবেচনা করবার বোধ নেই- বোধশক্তিহীন- মানবতাহীন একটা সরকারকে সমর্থনের দাবী জানাচ্ছেন উপদেষ্টারা- তাদের বক্তব্য এই সরকার ব্যর্থ হওয়ার সম্ভবনা থাকলেও এই ব্যর্থতা আসলে জনগণের ব্যর্থতা হবে-
অসংখ্য মানুষকে ধীরে ধীরে খুন করে এরা যখন সংবাদপত্র ও সংবাদ মাধ্যমের সামনে নিজেদের জন্য সমর্থন চাইতে থাকেন তখন আমার নিজের লজ্জা লাগে-
আমি সবার হাতেই ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত পড়তে দেখি-
এই রক্ত পড়ছে পাটকলের পতিতা হয়ে যাওয়া কিশোরী আর মাতাদের যোনী থেকে-
বিনা চিকিৎসায় মরে যাওয়া সব মানুষের পোষ্ট মর্টেম টেবিল থেকে-
আর সেই রক্তে পা ডুবিয়ে ছপ ছপ হেঁটে যাচ্ছে বাংলাদেশ মিলেনিয়াম স্বপ্ন পুরণে এক বিংশ শতাব্দীর পথে ।
মন্তব্য
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
নতুন মন্তব্য করুন