সে বহুকাল আগের কথা। আফ্রিকার ঘন জঙ্গলের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে খাল। খালের পাশেই জঙ্গলের ভেতরে ছিল এক বড় গাছ। সেই গাছে বাস করত এক ছোট্ট পাখি। একদিন সকালে যখন সে বসে বসে ডিমে তাঁ দিচ্ছিল, গাছের পাশ দিয়ে একটা হাতি যাবার সময় তার গায়ের সাথে ধাক্কা লেগে নড়েচড়ে উঠলো গাছ। রাগের চোটে তেড়েফুড়ে ছুটে আসলো ছোট্ট পাখি - "বেকুব হাতি, গাছ নাড়াচ্ছো কেন? এভাবে তুমি গাছ নাড়ালে আমার ডিম গুলো ভেঙে যাবে না? ফের যদি গাছ নাড়াও তো তোমার একদিন কি আমার একদিন!! "
শুনে তো হাতি হেসেই খুন! খুব একচোট হেসে নিয়ে হাতি বললো - "তাই নাকি রে পুঁচকে পাখি? তা কি করবি আমাকে শুনি?" বলে আবার হা হা করে হাসে সে।
ছোট্ট পাখি রাগে কাঁপতে থাকে। বললো - "ফের যদি গাছ নাড়াও তো তোমাকে এমন করে বাঁধবো যে নড়ার উপায় খুঁজে পাবে না।"
শুনে হো হো করে হাসতে থাকে হাতি। সে হাসি যেন আর থামার নয়। হাসতে হাসতেই বললো - "তাই নাকি? ওমা! তাহলে তো ভয়ের কথা। হা হা হা।" মাথা দুলিয়ে হেসে বনের ভেতরে চলে গেল সে।
পাখি আবার ডিমে তাঁ দিতে বসে গেল। কিছুক্ষণ পর পানির তেষ্টা পাওয়ায় বনের পাশে খালের ধারে পানি পান করতে গেল সে। গিয়ে দেখে যেখানে সে পানি পান করে সেখানেই গা এলিয়ে শুয়ে আছে মোটাসোটা এক কুমির আর তার জন্য ঘোলা হয়ে আছে সেখানকার পানি। দেখে তো গেল পাখির মেজাজ বিগড়ে! রাগে গড়গড় করতে করতে বললো - "আমি এখান থেকে একটু টলটলে ঠান্ডা পানি খাই, সেও তোমার সহ্য হয় না? শুয়ে আছ চিৎপটাং হয়ে, আবার পানি ঘোলা করে রেখেছ! আর যদি এমন কর তাহলে তোমার একদিন কি আমার একদিন!"
শুনে কুমির তাচ্ছিল্যের সুরে বললো - "তাই নাকি রে পুঁচকে পাখি? কি করবি আমার শুনি? আর এই খাল কি কারো একার সম্পত্তি নাকি? আমার যখন খুশি শুয়ে থাকবো, পানি ঘোলা করব।"
শুনে প্রচন্ড রাগে ফুলে উঠে পাখি বললো - "তবে তোমাকেও আমি শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো! তোমাকে এমন করে বাঁধবো যে নড়তে পারবে না এতটুকু! "
শুনে 'হা হা' করে হেসে উঠে কুমির বললো - "যা ভাগ এখান থেকে। পুঁচকে পাখি কিনা আমাকে বাঁধবে! "
পাখি আর কিছু না বলে উড়ে খালের আরেক পাশ থেকে পানি খেয়ে বাসায় ফিরে এল।
পর দিন সকালে হাতি এসে হাঁক ছাড়লো জোরে - " কি রে পুঁচকে পাখি, কই তুই?" বলেই শুর দিয়ে গাছটাতে ঠুকে দিল। রাগে কাঁপতে কাঁপতে পাখি বলে উঠলো - "আজ তোমাকে এমন মজা দেখাব!"
হেসে হাতি বললো - "মজা দেখতেই তো এলাম।"
পাখি উড়ে পাশের গাছ থেকে লম্বা শক্ত এক লতা নিয়ে এসে হাতির গলায় পেঁচিয়ে দিল। হাতি ও গলা বাড়িয়ে দিয়ে হাসি হাসি মুখে বললো - "বাঁধো বাঁধো।"
হাতির গলায় লতা পেঁচিয়ে পাখি বললো - "দাঁড়াও আমি পাশের খাল থেকে পানি খেয়ে আসি, তারপর টানতে বললে টানবে। দেখব তোমার কত জোর! "
বলে সে মুখে সেই লতার আরেক প্রান্ত নিয়ে উড়ে গেল খালের ধারে। গিয়ে দেখল গতদিনের মতোই গা এলিয়ে শুয়ে আছে কুমির। "তোমাকে না বলেছিলাম এই পারে পানি না ঘোলা করতে? দাঁড়াও তোমাকে মজা দেখাব আজ! " - কুমির কে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলেই তার গলায় মুখে করে নিয়ে আসা লতা পেঁচানো শুরু করল ছোট্ট পাখি। কুমির তার ঘার এগিয়ে দিয়ে বললো - "আচ্ছা, বাঁধবি যখন ভালো করেই বাঁধ।"
বাঁধা শেষ করে পাখি বললো - "দাঁড়াও, আমি বললে তবেই টানবে।"
বলে উড়ে গেল লতা টার মাঝামাঝি। গিয়ে হাতি কে বললো - "টানো এবার, দেখি কত জোর! "
হাতি টানা শুরু করল লতা। ওদিকে গলায় টান খেয়ে কুমির ও দিল টান। হাতি ভাবে -"ব্যাপার কি? পাখির গায়ে এত জোর কোথা থেকে এল! " ওদিকে কুমির ও একই চিন্তা করে। হার তো মেনে নেয়া যায় না এই পুঁচকে পাখির কাছে, এই ভেবে সর্বশক্তি দিয়ে টানে দুজন দুজনের দিকে। অথচ কেউ জানে না উল্টো দিকে যে আসলে পাখি না, রয়েছে অন্য কেউ!
সারা সকাল ধরে এমন টানাটানি করে দুজনেরই দম বের হয়ে যাবার দশা! ওদিকে মাঝখান থেকে ছোট্ট পাখি মজা দেখে আর হাসে!
লজ্জার মাথা খেয়ে শেষমেষ কুমির বললো -"তোমার এই পুঁচকে শরীরে যে এত জোর তা তো বুঝি নি! এবারের মতো ছেড়ে দাও, আর আসব না!"
পাখি খুলে দেয় বাঁধন। কুমির চলে যায় গভীর জলে আর হাতি মাথা হেট করে বনের গভীরে।
ছোট্ট পাখি বাসায় এসে ডিমে তাঁ দেয় মনের সুখে। কয়েকদিন পর ফুটে বের হয় পাখির ছানা। সুখে বসবাস করতে থাকে সে ছানাপোনাদের নিয়ে।
মন্তব্য
ওলে আমার টুনটুনি লে!
ওইটা আপনার টুনটুনি ছিল??!!!!!
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
গল্পটা মজার। এর ভেতরে যে শিক্ষাটা রয়েছে সেটাও চমৎকার।
আমি নিজেও খানিকটা বিভ্রান্ত যে, পাখি টা ভালো নাকি সে সুযোগসন্ধানী।
শুভেচ্ছা
ধন্যবাদ।
পাখিটার পরিস্থিতি বিচারে তাকে সুযোগসন্ধানী বলা মনে হয় ঠিক হবেনা। বরং কৌশলী বলা চলে। তবে আমাদের দেশের বর্তমান (অতীতেও ছিল) 'টুনটুনিরা' কিন্তু বেশ সুযোগসন্ধানী এবং ধূর্ত!!
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
এখান থেকেই মনে হয়, বিল গেটসের জামাই ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট গল্পটার জন্ম। ঐ গল্পটাও এটার মত।
শুভেচ্ছা
" বিল গেটসের জামাই ও ওয়ার্ল্ড
ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট" গল্পটা পড়িনি। পামু কোনে?
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
এক ভদ্রলোক তাঁর পছন্দের পাত্রীর সাথে তার ছেলের বিয়ে দিতে চান। ছেলেকে এ কথা বলা হলে ছেলে বেঁকে বসলো - না, সে বিয়েই করবে না। বাবা তখন বললেন "পাত্রী বিল গেটসের মেয়ে"। শুনে ছেলে সাথে সাথে রাজী!
এবার সে ভদ্রলোক বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলেন বিল গেটসের কাছে । বিল গেটস তো হেসেই উড়িয়ে দিলেন তাঁর কথা। বাবা তখন বললেন "ছেলে কিন্তু বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট"। তাড়াতাড়ি হাসি থামিয়ে রাজী হয়ে গেলেন বিল গেটস।
বাবা তখন গেলেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের কাছে। বললেন "আমার ছেলেকে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট করুন"। কিন্তু প্রেসিডেন্ট তাতে রাজী হবেন কেন? তিনি ভদ্র ভাষায় না করে দিলেন। বাবা তখন বললেন " আমার ছেলে কিন্তু বিল গেটসের জামাই"। আর কি প্রেসিডেন্টের দ্বিধা থাকে? সাথে সাথে তিনিও রাজী হয়ে গেলেন!
____________________________
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
ভালো লেগেছে
facebook
ধন্যবাদ ...
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
দিলখুশ গল্প! এত সুন্দর গপটা কোথায় পেলেন হে? দারুণ লেগেছে আমার।
আপনার বানানে ব্যাপক উন্নতিতে ভালু লাগছে। চলুক লেখালেখি
ধইন্যা দিদি ...
বানান ই তো বানান!!!! :'(
ছুডু বেলায় এক পৃষ্ঠার বিভিন্ন যায়গায় একই শব্দের ভিন্ন ভিন্ন বানান লিখতাম আর ঝারি খাইতাম!! সচলের গুতা খেয়ে আগের চেয়ে একটু জাতে উঠছে মনে হয়!! সবই আপনাগো দুয়া!!
লেখাটা কি একটা বইতে পড়েছিলাম অনেকদিন আগে...
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
বাঃ! খুব সুন্দর গল্প।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধইন্যা ..
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
ধইন্যা ....
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
চমৎকার গল্প। খুব মজা লাগলো। যাদের গায়ের জোর নেই, তাদের জন্য রয়েছে মাথার জোর!!
কয়েকটা টাইপো ছিল:
তাঁ -> তা, শুর-> শুঁড়, হেট ->হেঁট
____________________________
ধইন্যা প্রফেসর সাব।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
ডুপ্লি ঘ্যাচাং
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
দারুন
নতুন মন্তব্য করুন