চলতি পথে পাওয়া - ৪,৫,৬,৭ এর ভূমিকা তে লিখেছিলাম “ ‘চলতি পথে পাওয়া’ সিরিজ টা নিয়ে একটু বলি আগে। নাম শুনে মনে হতেই পারে যে এটা হয়ত পথ চলতে গিয়ে দেখা বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা। হুম, হতে পারে। তবে তার চেয়েও বেশি হচ্ছে চলার পথে বসে থাকার সময় কতক বিচ্ছিন্ন ঘটনা দেখে বা এমনিতেই মনের ভেতর বিভিন্ন এলোমেলো চিন্তা ঘুরপাক খায়, তাদের বর্ণনা। লেখার ধরণ সাইকোডেলিক, অ্যাবস্ট্রাকটিভ, ম্যাজিক রিয়ালিস্টিক, স্যুরিয়ালিস্টিক আবার খুব সাধারণ বর্ণনাও হতে পারে।”
আজকের এই পর্বগুলোতে থাকবে ঘটনার বর্ণনা এবং অবশ্যই ঘটনাগুলো চলতি পথেই পাওয়া। দুটি ঘটনাই দুঃখজনক হলেও বেশ চমকপ্রদ! বিশেষ করে যারা ঢাকা শহরে নিয়মিত বাসে বা লোকাল বাসে যাতায়াত করেন তাদের সচেতনতার জন্য জানা প্রয়োজন মনে হয়েছে আমার কাছে। তবে চলুন, এখন পথে নামি...
১১.
চাকরির সুবাদে আমাকে প্রতিদিন-ই (ছুটি বাদে) অনেক দীর্ঘ রাস্তা বাসে যাতায়াত করতে হয়। সেদিন হাসপাতাল থেকে দুপুরের দিকে ফিরছিলাম কাজ শেষে। বাসে মোটামুটি গাদাগাদি ভীড়। আমি একদম পেছনের সিটে বসে আছি। হঠাৎ দাড়িয়ে থাকা একজন লোক হুড়মুড় করে আরেকজনের সিটের উপর পড়ে গিয়ে জানালা দিয়ে মুখ বের করে দিল। সিটে বসা লোক রেগে গিয়ে "এই এই কি করেন" বলতে বলতেই দাড়িয়ে থাকা আরেকজন উত্তেজিত গলায় "বমি করবে, বমি করবে" বলে উচ্চকিত হয়ে উঠলেন। হুড়োহুড়ির মধ্যে একজনের ধাক্কা লেগে পাশের জন হুড়মুড় করে নিচে পড়ে গেল বাসের ভিতরে। পরক্ষণেই লাফ দিয়ে উঠে যার সাথে ধাক্কা লেগেছিল তার কলার চেপে ধরল। তার সাথে সংগ দিল আরেকজন। আক্রান্ত লোকটি যতই বলে সে ধাক্কা দেয়নি আক্রমণকারী দুইজনের হম্বিতম্বি তত বাড়ে। ফোকাসে তখন আর বমি করনেওয়ালা নেই। সবার দৃষ্টি এই উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্যের দিকে। এই উত্তেজক দৃশ্যের কাছে ম্যাড়ম্যাড়ে বমি করার দৃশ্য বড়ই পানসে! আশেপাশের লোকজনের হস্তক্ষেপে অবশেষে রক্ষা পেল সেই আক্রান্ত ব্যাক্তি। গলা আর ঘারে হাত বুলাতে বুলাতে মন খারাপ করে, আশেপাশের লোকজনের 'আহা উহু' সঙ্গে করে নিয়ে সদ্যই খালি হওয়া পেছনের দিকে সিটে এসে বসে হঠাৎ তার প্যান্টের পকেট হাতরে আর্তনাদ করে উঠল-"আমার মোবাইল!!!"
বাস একটা স্টপেজে এসে থেমেছে কেবলমাত্র। তবে ততক্ষণে সেই বমি করনেওয়ালা আর আক্রমণকারী দুই ব্যাক্তি ভোজবাজির মত হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে।
১২.
এই ঘটনাটা বি আর টি সি দোতলা বাসের। দোতলায় উঠে সামনের দিকে একটা সিটে বসেছি। খুব বেশি যাত্রী নেই দোতলায়, বেশ কিছু সিট খালি। কিছুক্ষণ পর-ই বাসের কন্ট্র্যাক্টর ভাড়ার খোঁজে এল। পেছনের দিকে বসা যাত্রীদের মধ্যে থেকে কে যেন একজন বলে উঠল -"আগের কন্ট্র্যাক্টর কই? এর আগে না আরেকজন কাটল ভাড়া?"
আমি খুব একটা গুরুত্ব দিলাম না এই কথায়। কারণ, এমন এর আগেও দেখেছি যে মাঝেমধ্যে নিচের কন্ট্র্যাক্টরও উপরে ভাড়া নিতে আসে। তবে, কি মনে করে ভাড়াও দিলাম না তখন 'পরে দিবনে' চিন্তা করে। কয়েকজন ভাড়া দিলেন। পেছনের সেই যাত্রী আরও কয়েকবার গাঁইগুঁই করলেন "আগের জন কই" বলে। কিন্তুক কন্ট্র্যাক্টর কোন উত্তর না দিয়ে ভাড়া নিতে নিতে পেছনের সিঁড়ির দিকে চলে গেল। আমার পাশের সারিতে বসা একটা ছেলে (একটু আগেই সে ভাড়া দিয়েছে) হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে কন্ট্র্যাক্টর কে ডাক দিল। সে ততক্ষণে সিঁড়ির অর্ধেকটা নেমে গিয়েছে। ছেলেটা সিট ছেড়ে উঠে পেছনে ধেয়ে গেল। আমি জানালা দিয়ে বাইরে নিচে সিঁড়ির মুখের দিকে তাকালাম। চলন্ত বাস (গতি মন্থর ছিল) থেকে সেই কন্ট্র্যাক্টর পরিচয় দেয়া লোকটাকে লাফিয়ে নেমে দৌড়ে রাস্তার পাশের গলিতে অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখলাম!
চলতি পথে পাওয়া-১,২,৩
চলতি পথে পাওয়া-৪,৫,৬,৭
চলতি পথে পাওয়া - ৮,৯,১০
মন্তব্য
শেষের ঘটনাটায় মজা পেয়েছি। কেমন যেন সৃজনশীলতার একটা ছোঁয়া পেলাম বলে মনে হল।
গোঁসাইবাবু
হ... ক্রিয়েটিভ চোর।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
বাসের ঘটনা (বা দুর্ঘটানা) গুলো অদ্ভুত হয়।
কয়েকবার (২ বার) এরকম হয়েছে যে, কোন স্পেজে থামার পর পুলিশের তাড়া খেয়ে বাস ড্রাইভার জোরসে টান দিয়েছে, কিন্তু কন্ডাক্টর বেচারা উঠতে পারেনি -কারণ সে একটু দূরে হাঁকাহাকিতে ব্যস্ত ছিল।
১৫ বছর বা তার আগের একটা ঘটনা: টেম্পোতে একবার ড্রাইভার বলেছিল, "আপনারা কেউ ভাড়া কাইটা দেন, হেলপার খাইতে গেছে"
সবার নামার ড্রাইভের এসে দরজায় আমার কাছে সবার ভাড়া চাইছে, তার ধারণা আমার কাছে সব টাকা! আসল ঘটনা হল, যে লোক ভাড়া তুলেছিল, সে ভুলে নেমেই হেঁটে চলে গিয়েছিল। কিছুক্ষণের ভেতর অবশ্য সে ফেরত এসে টাকা দিয়ে গিয়েছিল ড্রাইভারকে।
১৫ বছর বা তার আগের একটা ঘটনা: টেম্পোতে একবার ড্রাইভার বলেছিল, "আপনারা কেউ ভাড়া কাইটা দেন, হেলপার খাইতে গেছে"
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
হুমম - সবখানেই সৃজনশীলতা বাড়ছে!!
____________________________
হুম... আশঙ্কাজনকভাবে ...
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
নতুন মন্তব্য করুন