খামারবাড়ির দেয়ালের উপর শরৎকালে সার বেঁধে কিছু পরিযায়ী পাখি বসে থাকত। যদিও তারা নিজেদের মধ্যে কিচিরমিচির করে নানারকম গল্পগুজব করত, কিন্তু সবসময় গ্রীষ্ম, দক্ষিণের দেশ, চলমান শরৎকাল আর উত্তুরে হাওয়া কবে শুরু হবে সেটাই ছিল তাদের মূল ভাবনার বিষয়। একদিন ঠিক ঠিক তারা উধাও হয়ে গেল এবং খামারের সব হাঁস-মুরগীরা এই সব পরিযায়ী পাখিদের নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠল।
এসব দেখে একদিন খামারের একটি মুরগী ঘোষণা করল -“আগামী শীতে আমিও দক্ষিণের দেশে যাব।”
বছর ঘুরতেই পরিযায়ী পাখিরা ফিরে আসল। তারা যথারীতি দেয়ালে সার বেঁধে বসা শুরু করল, সেইসাথে কিচিরমিচির করে গল্পগুজব। শীতকাল আসার আগে আগে খামারের হাঁস-মুরগীরা গত বছর যে মুরগীটি পরের শীতে দক্ষিণে যাত্রা করবে বলেছিল তাকে নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু করল।
এরকমই কোন এক সকালে পরযায়ী পাখিরা উত্তুরে বাতাসের আভাস পেয়ে আবার তাদের ডানা মেলে ধরল দক্ষিণের পথে। মানুষের কল্পনাতীত শক্তি তাদের ডানায় ভর করল। শহরের ধোঁয়া আর বাড়ি ঘরের ছাঁদ কে নিচে ফেলে তারা উঁচু থেকে উঁচুতে উঠে গেল; একটা সময় তাদের দেখা মিলল প্রকাণ্ড এবং সীমানাহীন সমুদ্রের এবং তারা সমুদ্রের দক্ষিণমুখি ধূসর স্রোতের পথ ধরে উড়ে চলল। ঘন কুয়াশা ভেদ করে মাথা উঁচিয়ে থাকা সুপরিচিত দ্বীপগুলিকে পাশ কাটিয়ে, ধীর গতির ছোট জাহাজগুলির এদিক সেদিক ঘুরোঘুরি আর মুক্তার খোঁজে ডুবুরিদের সমুদ্রের জলে উধাও হয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে তারা উড়ে চলল যতক্ষন পর্যন্ত না তাদের সুপরিচিত পর্বতমালার সন্ধান পাওয়া যায়। অবশেষে দক্ষিণের উপত্যাকা ধরে তারা নিচে নেমে গেল।
আর এইদিকে খামারে একদিন সেই মুরগীটি “আমার মনে হয় শীতের বাতাস আসা শুরু করেছে” বলে তার পাখা মেলে ধরে খামার থেকে দৌড়ে বের হয়ে গেল। ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে সে রাস্তা ধরে দৌড়াতে লাগল যতক্ষন না সে একটা বাগানে এসে পৌঁছল।
সেদিনই সন্ধ্যায় হাঁপাতে হাঁপাতে সে আবার খামারে ফিরে আসল।
খামারের সব হাঁস-মুরগীর কাছে সে গল্প করে বেড়াতে লাগল এই বলে যে সে কিভাবে দক্ষিণের পথে বড় রাস্তা যতদূর যায় ততদূরই ঘুরে এসেছে, আরও কত কত গাড়ি বাড়ি, আলুর ক্ষেত যে সে দেখেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। এবং সবশেষে সে একটা বাগান পেয়েছে যেখানে দারুণ সব ফুলের গাছ! আর আছে গোলাপ। সেখানে বাগানের মালী সবসময় পাহারায় বসে থাকে।
হাঁস-মুরগীরা সব অবাক হয়ে সমস্বরে বলে উঠল-“অসাধারণ! আর কী দারুণ সব বর্ণনা তোমার !”
তারপর শীতকাল চলে গিয়ে বসন্ত আসল, আর পরিযায়ী পাখিরাও ফিরে আসল। তারা বলল-“আমরা সমুদ্র পেরিয়ে দক্ষিণের উপত্যকায় গিয়েছিলাম।”
হাঁস-মুরগীর দল তাদের কথা বিশ্বাস করল না। কারণ তারা মুরগীর কাছে আগেই শুনে জেনেছে(!) দক্ষিণে কোন সমুদ্র নেই। পাখিদের তারা বলল-“আমাদের মুরগীর কাছে তোমাদের শোনা উচিৎ।”
নোটঃ গল্পটি লর্ড ডানসেনি’র ‘ফিফটি ওয়ান টেলস্’ বই এর ‘দ্য হেন’ এর অনুবাদ।
মন্তব্য
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
কেনু কেনু কেনু?
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
ইন্টারেস্টিং প্লট , ফডুশপ করে পাহাড় জয় টাইপ।
facebook
অণুর উপমাতো দারুণ!
এব্রিতিং ইজ এচিবেবল..
আফনেরা খালি সন্দ করেন।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
'মুরগীর কাছে' শুনি বলেই আমরা সত্য আর মিথ্যার মাঝে তফাৎ করতে পারি না।
গল্প ভালো লেগেছে।
শুভেচ্ছা
ধন্যবাদ আপনাকে।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
গল্পের বিষয়টা সেইরাম
প্রথম অনুবাদ আপনার? প্রথম হিসেবে ভালুই কিন্তু
আরো অনুবাদ আসুক। ডুব দিয়েছিলেন কোথায়?
মুরগিটার মত দক্ষিণে নাকি
উহু। প্রথম নয়, দ্বিতীয়। দ্বিতীয় হিসেবে তবে কি মন্দ??
ডুব আসলেই দিয়েছিলাম। কই ডুব দিয়েছিলাম সেটা কিছুদিন পর সারপ্রাইজ হিসেবে প্রকাশ করব।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
হ্যাঁ, 'মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত' কথাটার মানে হাতে কলমে বুজিয়ে দিলেন।
'মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত'
আসলেই। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
হে হে, গল্প বাছাইটা দুর্দান্ত হইচ্চে!
ভাষায় সামান্য আড়ষ্টতা লেগেছে। ওটা তেমন বড় কিছু না। অনুবাদ চালাতে থাকুন, আস্তে আস্তে স্বচ্ছন্দ হয়ে উঠবে।
পরের অনুবাদের অপেক্ষায় থাকলাম।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আড়ষ্টতা কাটানোর চেষ্টায় আছি।
ধইন্যা আপনাকে।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
ভালো লেগেছে
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
প্রথম অনুবাদ?
তবে অনুবাদের ভাষা থমকে গেছে বলে মনে হয়েছে। কয়েক জায়গায় আরোপিত লাগলো। আপনি মনে হয় আক্ষরিক অনুবাদের দিকে গেছেন। বরং মূল বক্তব্য ঠিক রেখে নিজের মত করে লিখুন (রূপান্তর), অনেক ভালো লাগবে।
চলুক অনুবাদ।
____________________________
পড়া এবং পরামর্শ, দুটোর জন্যই ধন্যবাদ প্রফেসর সাব।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
'সমুদ্র পেরিয়ে দক্ষিণের উপত্যকা' একটা ভ্রান্ত ধারমা মাত্র, মুরগীই ঠিক।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মুরগীর ধারমা মিছা হতে পারে না! বাকি সব ধারমা মিছা।
অট: এটাই আমার কোন পোস্টে আমার পোস্ট নিয়ে করা আপনার প্রথম কমেন্ট।
উল্লেখ করলাম এই কারণে যে যাদের লেখা এবং কমেন্ট আমাকে আরোও অনেক অনেক বেশি পড়ার এবং জানার আগ্রহী করে তোলে, আপনি তাঁদের মধ্যে প্রথম সারির একজন। আপনার পোস্ট এবং বিভিন্ন পোস্টে করা কমেন্ট অনেক আগ্রহ নিয়ে পড়ার চেষ্টা করি, কারণ যুক্তি এবং তথ্যবহুল সেসব লেখা থেকে জানার থাকে অনেক কিছুই। সত্যি বলতে কি, সাম্প্রতিক মন্তব্য সেকশনে আপনার নাম দেখে প্রথমে ভড়কে গিয়েছিলাম যে কোন গুরুতর ভুল লিখলাম কিনা!
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়, প্রিয় পাণ্ডব দা।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
ওই সাগর-টাগর সব মিডিয়ার সৃষ্টি। মুরগিই সাচ্চা আদমি।
অনুবাদ ভালো হয়েছে
সাগর কি?
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
উপত্যকা-সাগর-টাগর সব মিডিয়ার সৃষ্টি বলতে গিয়ে, ১ম শব্দটা উড়ে গেছে, এখন দেখি সম্পাদনাও করতেত পারছি না
পুরানো গল্প, নতুন প্রাসঙ্গিকতা
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হ
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
কে বলেছে? আমাদের মুরগী বলেছে, এটা কি আর মিথ্যে হতে পারে? এভাবেই তো চলে আর এভাবেই চলছে সবকিছু। দারুন প্রাসঙ্গিক একটা অনুবাদ, ভালোলেগেছে।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
ধইন্যা মাস ভাই।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
এই সময়ে যেন এরকম একটা গল্পের অনুবাদের দরকার ছিল
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ধন্যবাদ।
হুম, মিলে গেছে একদম।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
গল্পের টাইমিংয়ের সাথে আর একটা জিনিসের তুলনা করা চলে,
শেষ বলে যখন ৫ রান দরকার, আর বাংলাদেশি টেল এন্ডারটা যখন ছক্কা মেরে দেয় -সেটার।
ঠিক সময়ে, ঠিক গল্প।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
আমাদের মুরগি সব জানে!!
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
বুঝেনই তো.. মুরগি বলে কথা ....
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
চমৎকার লাগল গল্পটা।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
দারুণ গল্প। ভাগ্যিস মুরগীটা ৭ই মার্চের জনসভায় হাজির ছিলো না, নাকি ছিলো?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
মুরগীটা ৭ মার্চে জামাতীগো গোপন কোন মজলিশে উপস্থিত হইছিল মনে হয়!! তাই এট্টু উলটাপালটা শুনছে।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
নতুন মন্তব্য করুন