১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় জাল পড়া বাসন্তী যে একটা সাজানো নাটকের মঞ্চায়ন ছিল, সেটা আমরা এখন প্রায় সবাই জানি। বিশেষ করে সেই ছবির আলোকচিত্রি আফতাব আহমেদ খুন হওয়ার পর ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন ভাই এর এই লেখা থেকে আমরা সেই ব্যাপারে অনেক স্পষ্ট ভাবে জানতে পারি। লেখাটির ছোট্ট একটু অংশ এখানে দিচ্ছি পাঠকের সুবিধার্থে-
শেখ মুজিবের দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য শত্রুরা তাঁকে রাষ্ট্রপরিচালনায় ব্যর্থ প্রমাণ করতে আদাজল খেয়ে উঠেপড়ে লেগেছিলো। সেই ষড়যন্ত্রে শামিল ছিলো তৎকালীন হাইয়েস্ট সার্কুলেটেড পত্রিকা ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ও। মৃণাল সেনের ‘আকালের সন্ধানে’র মতো ইত্তেফাকও দুর্ভিক্ষের সন্ধানে বিশেষ এসাইনমেন্ট দিয়ে রিপোর্টার শফিকুল কবির এবং ফটোগ্রাফার আফতাব আহমেদকে পাঠিয়েছিলো রংপুরের কুড়িগ্রামে। আগে থেকেই সবকিছু নির্ধারিত ছিলো। বিশেষ একটি নৌকায় বিশেষ একজনের পথ প্রদর্শন বা গাইডেন্সে বিশেষ একটি অঞ্চলে গিয়ে একটি হতদরিদ্র পরিবারের অনাহারী মেয়ে বাসন্তীকে নগদ পঞ্চাশ টাকার বিনিময়ে রাজি করানো হয় একটি ফটোসেশনে। দরিদ্র্ বাসন্তী চকচকে পঞ্চাশ টাকার নোটটি পাবে যদি একটি ছেঁড়া জাল সে পরিধান করে মাত্র কয়েক মিনিটের জন্যে। সেই সময়, ১৯৭৪ সালে, হতদরিদ্র বাসন্তীর কাছে পঞ্চাশটি টাকা রীতিমতো স্বপ্নের ব্যাপার। বাসন্তী রাজি হয়েছিলো। শফিকুল পঞ্চাশ টাকার নোটটি বাসন্তীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। গাইড-এর দূতিয়ালীতে সংগৃহিত ছেঁড়া জালটি গায়ে জড়িয়ে কলার থোড় সংগ্রহ করছে অনাহারী বাসন্তী। তার পাশে দুর্গতি নামের ছিন্ন পোশাকের আরেকটি মেয়ে। আফতাবের ক্যামেরা সেই পূর্বপরিকল্পিত সাজানো ছবিটি ধারণ করেছিলো। রংপুর মিশন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করে ঢাকায় ফিরে এসেছিলেন ইত্তেফাকের রিপোর্টার সফিকুল আর ফটোগ্রাফার আফতাব। আফতাবের তোলা ভুয়া সেই ছবিগুলোর একটি ছাপা হয়েছিলো ইত্তেফাকের প্রথম পাতায়। আমেরিকার বিশ্বস্তঅনুচর আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আর ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনরা সেটা ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় লীড ফটো হিশেবে ছাপিয়ে বিশ্বব্যাপী শেখ মুজিবকে চরম ব্যর্থ একজন শাসক হিশেবে প্রমাণ করে মুজিবকে উৎখাত কিংবা হত্যার প্রেক্ষাপট নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। দেশে তো বটেই, আন্তর্জাতিক অঙ্গণেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো ছবিটি। এর এক বছরের মাথায় ১৯৭৫এর ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছিলো নৃশংসভাবে, সপরিবারে।
ক্যাডেট কলেজ ব্লগে রাজীব ভাইয়ের এই পোস্টও অনেক তথ্য সমৃদ্ধ। সেখান থেকেও কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি-
সেই ছবি তোলার প্রত্যক্ষদর্শী হলেন, রাজো বালা।তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলেন। প্রকৃত দৃশ্য বর্ণনা করতে চান না। এখনো ভয় পান। তার মতে,এসব বললে ক্ষতি হতে পারে। যা হবার তা তো হয়েই গেছে বলে আর লাভ কি। পরে অনেক আলাপ-আলোচনার পর রাজো বালা বর্ণনা করেন সেই দৃশ্য। ছলছল চোখে আনমনা হয়ে কথা বলেন তিনি। তার বর্ণনা থেকে জানা যায়, ৭৪-এ যখন বাসন্তী-দুর্গাতিদের ছবি তোলা হয়, তখন ছিল বর্ষাকাল। চারদিকে পানি আর পানি। এমনকি প্রেক্ষাপটে তিনজন লোক আসেন বাসন্তীদের বাড়িতে। এদের মধ্যে একজন ছিল তৎকালীন স্থানীয় রিলিফ চেয়ারম্যান তার নাম আনছার। অপর দুজনকে রাজো বালা চিনতে পারেনি। বাসন্তী-দুর্গতিদেরকে একটি কলা গাছের ভেলায় করে বাড়ি থেকে বের করা হয়। আর অন্য একটি ভেলায় রেখে তাদের ছবি নেয়া হয়। এ সময় পাশের একটি পাট ক্ষেতে ছিলেন রাজো বালা। ছবি তোলার আগে আগন্তুকরা বাসন্তীদের মুখে কাঁচা পাটের ডগা দিয়ে বলে এগুলো খেতে থাকো। এর বেশি আর কিছু জানাতে পারেননি রাজো বালা। বাসন্তীর কাকা বুদুরাম দাসের কাছে সেই ছবি তোলার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কাঁচুমাচু করেন। এক পর্যায়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে বর্ণনা করেন সেই ছবি তোলার নেপথ্য কাহিনী। শেষ পর্যায়ে তিনি ঐ ঘটনাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং প্রতিকার চান।’
"সঠিক ভাবে দিন-তারিখ মনে নেই। একদিন বাসন্তী ও তাঁর কাকাতো বোন দুর্গাতিসহ পরিবারের আরও কয়েকজন মিলে ব্রহ্মপুত্র নদের বাঁধের ওপর বসেছিলেন। তখন দুপুর গড়িয়েছে। এমন সময় ইউপি চেয়ারম্যান আনসার আলি বেপারি(এক সময়ের মুসলিম লীগ ও পরে আওয়ামীলীগের মাঠ পর্যায়ের নেতা) কয়েকজন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ একজন সাংবাদিককে (আফতাব আহমেদ, আলোকচিত্রি, দৈনিক ইত্তেফাক) নিয়ে আসেন মাঝি পাড়ায়। তারা বাসন্তী ও দুর্গাতির ছবি তুলতে চান। এ সময় তারা বাঁধের ওপর মাঝিদের রোদে শুকোতে দেয়া জাল তুলে এনে তা বাসন্তীর ছেঁড়া শাড়ির ওপর পরিয়ে ছবি (১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় এই ছবি দু’টি ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয়। সুত্রঃ ‘চিলমারীর এক যুগ’ – মোনাজাত উদ্দিন) তোলেন। বুদুরাম এভাবে ছবি তুলতে আপত্তি জানিয়ে নিষেধ করেছিলেন। তবুও তারা শোনেননি। এ প্রসঙ্গে বুদুরাম দাশ তার ভাষায় জানায়, ‘চেয়ারম্যান সাব ছেঁড়া হউক আর ফারা হউক একনাতো শাড়ি আছে উয়ার উপরত ফির জাল খান ক্যা পরান, ইয়ার মানে কি? (চেয়ারম্যান সাহেব। ছেঁড়া হোক একটা শাড়ি তো আছে, তার ওপর জাল কেন পরান; এর কারণ কি? তখন সাইবদের মইদ্যে একজন কয় ইয়ার পরোত আরো কত কিছু হইবে….’’ তখন একজন সাহেব জানায় এরপর আরো অনেক কিছু হবে…..)।
তবে সেই ছবি তোলার সঙ্গে চেয়ারম্যান আনসার আলি বেপারি ছাড়া আর যারা ছিলেন বুদুরাম দাশ তাদের পরিচয় জানাতে পারেননি। তবে তাঁরা কেউই স্থানীয় ছিলেন না। সেই সময় বাসন্তী কিশোরী। একই সঙ্গে অপুষ্টির শিকার তার কাকাতো বোন দুর্গতি নামে অপর এক প্রতিবেশী কিশোরীর জীর্ণ বস্ত্র শীর্ণ দেহের একটি ছবিও তোলা হয়েছিল। সেই ছবি ’৭৪-এর দুর্ভিক্ষের ট্রাজেডি হিসেবে দেশে-বিদেশে কাঁপন জাগিয়েছিল। শোনা গেছে দুর্গতি পরিবার-পরিজনসহ দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী ভারতে চলে গেছে সেই থেকে তার আর কোনো খোঁজ নেই।
যাই হোক, এই লেখার মুল আলোচ্য বিষয় বাসন্তী নাটক নয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবে নাটকের ধরণ একই। কিছুদিন আগে ( ২২ ডিসেম্বর '২০১৪) প্রথম আলো পত্রিকার প্রথম পাতায় নিচের এই ছবিটি প্রকাশিত হয়।
ছবিটি এবং ছবিটির ক্যাপশন দেখলে মনে হবে “কি নিদারুণ দারিদ্র্যের জাঁতাকলে পিষ্ট, কত দূর্দশায় আছে এখন আমদের দেশ”, “কি পেলাম দেশ স্বাধীন হয়ে” , “জালিম বাকশালী সরকার সব চুষে চুষে খাচ্ছে” “ঠিক যেন ’৭৪ এর জাল পড়া বাসন্তীর অবস্থা”... ইত্যাদি ইত্যাদি…
কথা সত্য। ঠিক যেন জাল পড়া বাসন্তী নাটকই এটা। এই ভিডিওটি দেখলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। পাঁকা দেয়ালের টিন শেড বাড়ি এবং দামী দুটি বিদেশী গরুর মালিক আজিজার রহমান ঠিক কী কারণে এই ছবির নাটকের কুশীলব হলেন? গ্রামের মানুষেরা তো বলছে এর আগে কখনই তাকে এমন করতে দেখা যায়নি।
হে আলু (প্রথম আলো), কত ডলার পাইলা???
মন্তব্য
এই হলো আলু পত্রিকার বদলে যাও বদলে দাও! শেয়ার দিলাম, খুলে দেওয়া হোক মতি চোরার মুখোশ
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
পাঠককে যেন ভিডিও দেখার জন্য আবার ফেসবুকে যেতে না হয়, সে জন্য এখানে এম্বেড করে দিলাম:
বগুড়ার কৃষক: ছবি আর বাস্তবতা এক নয়!
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
চামচাদের বেতন দিতে না পেরে মতি ভাইয়া নিজের পাছু নিজে চুলকাচ্ছেন, এরকম একটি ছবি দিয়েও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার করুণ দশা তুলে ধরা যেতে পারে।
হে হে হে। এইরাম টাইপের?
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
ছবিটি যে স্বাভাবিক নয় তা কুশীলবদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এবং আরও কিছু প্রাসঙ্গিক আলামত দেখে সহজেই অনুমান করা যায়ঃ
১। জমিটি দেখে বুঝা যায় লম্বালম্বি লাঙ্গল দেয়া শেষ করে তাতে আড়াআড়ি লাঙ্গল দেয়া হচ্ছে। এখন ঐ তিনজন যদি লাঙ্গল দেয়ার কাজটি করে থাকেন তবে তাদের চেহারা এরকম থাকার কথা নয়। তাদের শরীর এবং কাপড়চোপড় কাঁদায় একাকার হয়ে যাবার কথা।
২। ক্যাপশন মোতাবেক ২২শে ডিসেম্বর দুপুরের ছবি এটি। ঐ দিন দুপুরে বগুড়াতে তাপমাত্রা এবং বাতাসের আদ্রতা যা ছিল তাতে এরকম পরিশ্রমের কাজ আধাঘন্টা করলেই অংশগ্রহনকারীবৃন্দ ঘেমে একাকার হয়ে যাবার কথা। আজ যুক্তরাজ্যে যখন ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের ফুটবল খেলা চলছিল তখন এখানকার তাপমাত্রা ছিল সাকুল্যে ৩/৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস আর বাতাসের আদ্রতা ছিল নিঃসন্দেহে বগড়ার চেয়ে কম। তবুও খেলোয়ারবৃন্দ কিভাবে ঘর্মাক্ত হয়েছেন তা দেখলেই অবস্থাটা কিছুটা আঁচ করা যায়। কিন্তু আলোচ্য ছবির কুশীলবদের কিন্তু তেমন কোন ঘামের নমুনা দৃশ্যমান নয়।
৩। যারা গরুর বদলে মানুষ দিয়ে লাঙ্গল টানার দৃশ্য বাস্তবে দেখেছেন তারা সহজেই বুঝে থাকবেন যে তিনজনের একজনকে দেখলেও মনে হয়না যে তার লাঙ্গল টানছেন। মনে হয় তার ছবির জন্য পোজ দিচ্ছেন।
সুক্ষ্মভাবে লক্ষ্য করলে এরকম আরও অনেক অসঙ্গতিই চোখে পড়ে যা ছবিটির স্বাভাবিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
- পামাআলে
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
আলু যে আরও কত কি দেখাবে!!!
অবাক আমি
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
নতুন মন্তব্য করুন