ধবধবে সাদা দেয়ালের বেশ বড়সড় একটি এয়ার কন্ডিশনড রুম। আসবাব বলতে মাঝে একটি ছোট আকৃতির টি টেবিল, সেটিকে ঘিরে সোফা, একটি তিন আসনের, আর দুটি এক আসনের। একদিকের দেয়ালে বড় একটি এল ই ডি টিভি। তিন আসনের সোফাটির মাঝামাঝি লোকটি বসা। গায়ে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা, ক্লিন শেইভ করা ফর্সা চেহারার লোকটির চোখে একটি চশমা। চশমাটি একটু অদ্ভুত ধরনের! দেখতে রোদ চশমার মতো হলেও কাচের রং টা কেমন অদ্ভুত ধাতব! ঘরের মধ্যে রোদচশমা পড়ে বসে থাকার কারণও আমার কাছে ঠিক বোধগম্য হলো না।
উনার ডান দিকের এক আসনের সোফাটিতে আমি বসে আছি চুপচাপ। তিনিও। ডানদিকে মাথা ঘুরিয়ে টিভির দিকে তাকাতেই একটি দৃশ্য ভেসে উঠলো পর্দায়-
মহাসড়কের কোনো একটি বাসস্টপ মতো জায়গায় একটি বাস থেমে আছে। জায়গাটি শুনশান। দেখে মনে হচ্ছে অনেক গভীর রাত। ছোটখাটো টং দোকানের মতো যে পাঁচ-সাতটি দোকান আছে তাও বন্ধ হয়ে গেছে। পাশে ছোট ছোট কিছু ঝোপঝাড়। এমন নির্জন জায়গায় বাস থামানোর কারণ হয়ত কেউ একজন নামবে বাস থেকে। হ্যাঁ, ঠিক তাই। আমার ধারণা সত্যি করে একজন নামলেন বাস থেকে। বাসের হেলপার সহ এগিয়ে গেলেন মাল রাখার বক্সের দিকে। ঠিক এই মুহূর্তে মনে হলো ক্যামেরাটি বাসের ভিতরে। আবছা আলোয় দেখা গেল প্রায় প্রত্যেকটি যাত্রীই ঘুমিয়ে আছেন। বাসের ভিতর আর কিছু দেখা গেল না। পর্দায় আবার বাসের বাইরের ঝোপঝাড় ভেসে উঠলো। আমাকে অবাক করে দিয়ে ঝোপঝাড়গুলো একটু নড়ে উঠলো। আর কিছু উত্তেজিত ফিসফাস ভেসে আসলো ঝোপের আড়াল থেকে।
আমি মাথা ঘুড়িয়ে লোকটির দিকে তাকালাম। তিনি বেশ নির্বিকারভাবে টিভি পর্দার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি আবার মাথা ঘুরিয়ে টিভি পর্দার দিকে তাকালাম। হঠাৎ করেই ঝোপের আড়াল থেকে আলোর মতো কিছু একটি আছড়ে পড়লো বাসটির ঠিক মাঝ বরাবর জানালায়। একটি ভোঁতা আওয়াজের সাথে সাথে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো বাসের ঠিক মাঝামাঝি জায়গাটায়। আর্তচিৎকারে নিমেষেই জায়গাটির সব নির্জনতা ভঙ্গ হলো। বেশ কয়েকজন লোক জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়লো নিচে। কেউ কেউ দরজা দিয়ে হুড়মুড় করে নেমে আসলো। জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়া দুই তিনজনের জামায় আগুন লেগে যাওয়ায় তারা প্রাণপণে চেষ্টা করছিলেন আগুন নেভাতে, জামা খুলে ফেলতে, মাটিতে গড়াগড়ি দিতে...
আমি আতঙ্কে, বিহ্বলতায় কাঁপতে লাগলাম। সোফার হাতলে আমার হাতের আঙুল শক্ত হয়ে দেবে যেতে লাগলো। আমি অস্থিরভাবে মাথা ঘুড়িয়ে পাশের সোফায় বসা লোকটির দিকে তাকালাম। তিনি আগের মতোই নির্বিকার বসে আছেন। উনি আমার নড়াচড়ায় অস্থিরতাটুকু টের পেলেন বোধহয়। নিজের পাঞ্জাবির পকেট থেকে তিনি খুবই ধীরস্থিরভাবে আরেকটি চশমা বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে খুব ভাবলেশহীন ভারী কণ্ঠে বললেন- “চোখে দাও।”
আমি চশমাটি হাতে নিয়েই বুঝলাম এটি বেশ ভারী। অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম চশমাটি কাচের নয়। ফ্রেম এবং কাচের জায়গা পুরোটাই টিনের। আমি হতবাক হয়ে আবার তার দিকে তাকালাম। তিনি আবার, এবার বেশ জোরের সাথে বললেন- “চোখে দাও।”
আমি টিনের চশমাটি চোখে দিলাম এবং সাথে সাথেই একটা ঘোর আমাকে গ্রাস করলো। টিভি পর্দার সব আর্ত চিৎকার হঠাৎ উধাও হয়ে গেল। সেই সাথে পর্দার সব দৃশ্যও কালো হয়ে গেল। সেখানে রক্তলাল রঙে একটি লাইন ভেসে উঠলো- “দেশে গণতন্ত্র নাই!”
মন্তব্য
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
টিনের চশমা লাগেনা এদের। ওই চশমা বরং আমাদের পরা আছে। যারা দেখেও না দেখার ভান করে আছি। ভাব ধরে আছি। বলছি, সব ঠিকাছে।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
হ
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
দেবদ্যুতি
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
শুধু চশমায় হবে না। মুখ আর কান বন্ধ রাখতেও যন্তর লাগবে।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
এইটা যাদুর চশমা। সব বন্ধ হয়ে যায়।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
আমরা এই চশমা নিয়েই জন্মেছি।
বাঙালি হবার বাই ডিফল্ট লাভ।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
হুম।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
নতুন মন্তব্য করুন