১.
মন্ত্রী বলেছেন-“পরিস্থিতি ভালো, অবশ্যই ভালো।”
প্রথমে দেখে রেগেমেগে দুই চার কথা লিখে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দিলাম। একটু পর মাথা একটু ঠান্ডা হলে ভেবে দেখলাম- নাহ্, ঠিকই তো, পরিস্থিতি আর খারাপ কি হয়েছে? দুই পক্ষের মারামারি নাই। একদল স্বসস্ত্র খুনি এসে কয়েকজন নিরীহ মানুষকে কুপিয়ে চলে গেছে। তাও আবার তারা ব্লগার! কোন ট্যা ফো নেই, আওয়াজ নেই, কারও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তাহলে পরিস্থিতিটা আসলে খারাপ হলো কোথায়?
অধিকাংশ মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হবে যেন “ও, ব্লগার কোপাইছে? এটা তো নিয়মিত ঘটনা। এইটা নিয়ে এত হাউকাউ করার কি আছে!” অথবা “শালাদের মারাই উচিৎ, খালি সব উলটাপালটা লিখে ব্লগে!” জিজ্ঞেস করুন-“ব্লগ পড়েছেন?” উত্তর আসবে-“আরে ধুর, এইসব উলটাপালটা জিনিস পড়ি না।”
-“না পড়লে জানলেন কিভাবে যে উলটাপালটা জিনিস লিখে?”
-“আরে জানি জানি, ওইসব জানি।”
বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এইসব লোকেরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ! তো তাদের কাছে এইসব “ব্লগার ফগার” কোপানি কোন ব্যাপার না। বরং তারা খুশিই হয়! তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হলো কোথায়?
“পরিস্থিতি ভালো, অবশ্যই ভালো!!!”
২.
আরেকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা-
‘রবীন্দ্রকে ওরা মারছিল। তার পোয়াতি বউটা এসে তাকে বাঁচাতে চাইলে তার পেটেও লাত্থি মারলো। আমাদের মেয়েটা আর কোনওদিন মা হতে পারবে না। আমরা কী এমন দোষ করেছি বাপু, এদেশটা কি তাহলে শুধুই ওদের, আমাদের না?’ স্থানীয় ভাষায় এ কথাগুলোই আর্ত কণ্ঠে বলেন ফেনীর মাথিয়ারা জেলেপাড়ার নির্মম নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার বাদী জহর লাল দাস।
গর্ভের সন্তান মারা গেছে। মেয়েটা আর কোনদিন মা হতে পারবে না। খুনিরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বেজন্মার বাচ্চাগুলো কি জানে একটা সন্তান ধারণ করতে, গর্ভে লালন করতে একটা মায়ের কত কষ্ট হয়? কতটা স্বপ্ন আর আনন্দের তীব্রতায় একটা মা সেই অকল্পনীয় কষ্টকে সহ্য করে নেয়!!
এটি আরেকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। নির্যাতনের শিকার যেহেতু হিন্দু ধর্মাবলম্বী, ফেসবুকে কোন হ্যাশট্যাগ নাই। এই দেশে হিন্দুরা মানুষ নাকি?
৩.
এইদেশে কাউকে মারতে চাইলে তাকে মেরে নামের আগে ব্লগার শব্দটা লটকে দিন। তারপর নিশ্চিন্তে গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়ান।
৪.
সাংবাদিকদের ব্যাপারে কিছু বলার নাই। মৃত্যুপথযাত্রী মানুষকে অপারেশান থিয়েটারে ঢোকানোর পথ আটকে ছবি তোলাটা তাদের কাছে বেশি জরুরী! শোকে বিহবল স্বজনের কান্নাভেজা চোখের ক্লোজ শট তাদের বিক্রির পণ্য! ডিমান্ড বেশি! পাবলিক খায়!!
৫.
ভিন্ন মতের, মুক্তমনের মানুষদের মাথার উপরই মৌলবাদীদের যত রাগ। মাথাতেই যে মগজ থাকে। সেই মগজই যে প্রশ্ন তৈরি হয়। প্রশ্নকেই তাদের যত ভয়!!
৬.
একটি জিজ্ঞাসা-
জন্মেরও কয়েক বছর পর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নজনের কাছ থেকে পাওয়া ‘জ্ঞান’ ব্যবহার করে আপনারা হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, ইহুদি, খৃস্টান আরও কতশত মতালম্বী হয়ে যেতে পারেন; আর জন্মসূত্রে মায়ের গর্ভেই পাওয়া ব্রেইনের সামান্য ব্যবহার, আই রিপিট, সামান্য ব্যাবহার করে আপনারা কি তার আগে একটু মানুষ হতে পারেন না?
[গতকাল থেকে মাথার ভিতর হাজার হাজার কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। লিখতে পারিনাই। আজ লিখতে গিয়ে কিছুই খুঁজে পেলাম না। সব এলোমেলো।]
মন্তব্য
সবাই যখন চোখ বুজে ফেলেছে অন্যায় কে শুধু ঢাকাচাপা দেয়ার চেষ্টায় মত্ত। কঠিন দুঃসময়।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
কথা শ্যাষ।
ব্লগাররাই তো তেলগ্যাসপানিহীন বঙ্গদেশের সবচেয়ে বড় হুমকি, তাদের একের পর এক গরুছাগলের মতো কুপিয়ে, জবাই করে ফেলে যায়। অতো দূরের দেশ ফিলিস্তিনে বোমা পড়লে হ্যাশট্যাগের মচ্ছবে ভাসে হোমফিড, নিজের দেশের মানুষের রক্ত দেখে কেউ কিচ্ছু বলে না!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
সত্যি একটা অসহায় অবস্হার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা।
তবে দিন পালটাবে, এমনটাও বিশ্বাস করতে চাই মনেপ্রাণে।
ব্লগাররা তো মানুষ না, ভাই, দলের তো আরোই না। তাইলে ওদের মারলে কার কী আসে যায়? আর ওই দুই চারজন ব্লগার সারা সময় দেশে হাউকাউ করলে তো আমজনতা তাদের উপর এমনিই ক্ষেপে থাকবে, দেশের শান্তি নষ্ট হচ্ছে বলে কথা!
হিন্দুরাও কি এদেশের নাগরিক নাকি? সব শালা মালাউনের দল, দেশটারে অপবিত্র বানিয়েছে-মাত্র একটার সাথে এই ঘটনা দিয়ে শুরু হলো কেবল। এখন চলবে, চলতেই থাকবে।
এদেশটা কার-ভেবে পাই না। চারপাশটা অসহ্য হয়ে গেছে জাস্ট।
দেবদ্যুতি
আমিও এককালে এই প্রশ্ন নিয়ে ভাবতাম। সংখ্যাগরিষ্ঠের কুৎসিত মতামত দেখার পর থেকে আর ভাবি না। প্রাপ্তবয়স্ক বুঝদার মানুষ যখন এডমিরাল জেনারেল আলাদীন স্টাইলে এই প্রশ্ন এড়ায়ে যায় কিংবা আসিফ নজরুল স্টাইলে "মানুষ একটি বিমূর্ত ধারণা... ব্লা ব্লা ব্লা..." শুরু করে কিংবা পষ্ট ভাষায় অস্বীকারই করে বসে, তখন প্রথমে ভয় লাগে, তারপর মুতু চাপে।
ভাইরাসাক্রান্ত কোপবাহী এবং মানুষ হতে অস্বীকারকারীরা দিনশেষে "বিশ্বাসের ভাইরাস" লেখার ও প্রকাশ করার অপরাধে লেখক ও প্রকাশককে উভয়ার্থে কুপিয়ে পাঠকদের কাছে বিশ্বাসের ভাইরাসের উপস্থিতি প্রমাণ করে যান... অথচ, নিজেরা সেটা টেরও পাননা... কিংবা পেতে চান না...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
দেশ মানুষের পরিস্থিতি তো বেশ ভালো! ব্লগার তো মানবজাতির কেউনা।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ব্রেইনের যথেষ্ট ব্যবহার করেই তাঁরা নিজেদের স্বার্থ দেখছেন, সুচিন্তিত হিসেব করে। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ বজায় রাখতে যদি দুচারটে ব্লগার-নাস্তিক-আমজনতার প্রাণ বলি দিতে হয়, সে আর এমন কী ক্ষতি? মনুষ্যত্ব, সেটা আলাদা ব্যাপার, আশা না করাই ভাল...
সেটাই! কারও কাছ থেকে কিছু আশা না করে বরং নিজের সাথে হাঁটতে থাকাই শ্রেয়।
এসব পড়লে আর কিছুই ভালো লাগেনা।
কষ্ট হয় তবু মেনে নেই, ব্লগার মানেই গণশত্রু।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
নতুন মন্তব্য করুন