অনেকদিন পর সাইকেল নিয়ে বের হলাম। সাইকেলের অবস্থা যদিও খারাপ। মাসখানেকের উপরে চালানো হয় না। হাওয়া বের হয়ে গেছে।
গরমে জীবন হাঁপিয়ে উঠেছে, আমিও জীবনের বাইরের কেউ নই। এর মধ্যে সাইকেল চালানো নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেওয়ার নামান্তর মাত্র। কিন্তু ক্যাড়া উঠলে কে আর বসে থাকে বলুন। আমিও বসে থাকলাম না।
রিকশা ভাড়া করে সাইকেল নিয়ে পলাশী, সাইকেল মিস্ত্রির কাছে। চাকায় হাওয়া মারা, সবকিছু চলেয়বল আছে কিনা চেক করা, অতঃপর বংশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা। উদ্দেশ্য-সাইকেলের কিছু জিনিস পরিবর্তন করবো।
প্যাডেল মারতে মারতে চেনা অনুভূতিগুলো ফিরে আসতে থাকে। আনমনে গান গাওয়া, আশপাশের লোকজনের কাজকর্ম দেখা, রিকশাওয়ালাদের সাথে কথা বলতে বলতে পথ চলা, নিজেকে হঠাৎ হঠাৎ কিং অব দ্য রোড মনে করা
ঠাসসসসসসসসস...
নাহ, ধাক্কা খাই নাই। টায়ার ফাটছে। চিন্তার জগত থেকে বাস্তবে ফিরে আসি। নিজেকে বোঝাই, রাস্তায় ফোকাস কর, চিন্তাতে না।
আকাশ মেঘলা, সকালে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার ধারে দুটো ছেলেকে লাটিম খেলতে দেখলাম। নতুন শিখেছে হয়তো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ঘুরন্ত লাটিমের দিকে।
নবাব কাটরায় এসে পথ হারিয়ে ফেলি। আশপাশে জিজ্ঞেস করতে করতে এক সময় পৌঁছে যাই বংশাল।
দোকানে ঢুকতে না ঢুকতেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়। মনে একটু বিরক্তির উদ্রেক হয়। আমি সাইকেল পার্টস কেনায় মন দেই।
কেনা শেষে এই অসময়ের(যদিও সময়ের দাবি হয়ে উঠেছিল) বৃষ্টিতে ভেজা ঠিক হবে না ভেবে দাঁড়িয়ে থাকি দোকানের ভিতরে।
কিন্তু বাংলাদেশী দোকানীরা বড় নিষ্ঠুর। দোকানের সামনে একজন দাঁড়িয়ে থাকবে তাও আবার সাইকেল নিয়ে, এর অর্থ তাদের কাছে ব্যবসায়িক ক্ষতি।
অতঃপর আমাকে বলা , “সাইকেল ভাই অন্য কোথাও রাখেন।” আমিও আর ভিজবার তোয়াক্কা না করে বাইরে বেরিয়ে যাই। বৃষ্টিটাও ধরে এসেছে মনে হল।
কি হল কে জানে, ২-৪ মিনিটের মধ্যে দাঁপিয়ে বৃষ্টি নামা শুরু করল। মনটাও কেন জানি খুব আহ্লাদি হয়ে উঠলো। ভুলে গেলাম পিছনের ব্যাগে রাখা ৬ মাস ধরে করা থিসিসের কাগজের কথা, ভুলে গেলাম অন্যান্য বইগুলোর কথা। মনে একবারও আসলো না রাস্তার পাশে সাইকেল রেখে কোন হোটেলে বা চায়ের দোকানে ঢুকে পরার কথা।
গান গাওয়া শুরু করলাম। এ এক অদ্ভূত অনুভূতি। পুরান ঢাকার চিপা গলি দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছি আর গান গাচ্ছি গলা ছেড়ে। লোকজন হা করে তাকিয়ে আছে। আগা সাদেক রোডের মাথায় এসে দেখি এক হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা। এ বস্তু অনেকদিন পর দেখে তর সইলো না। মিনিট দুয়েকের জ্যাম বাঁধিয়ে হাওয়াই মিঠাই খেলাম।
দেখতে দেখতে চিপা গলি খতম হয়ে গেল। কামরুজ্জামান স্মরণীতে উঠে গাওয়া শুরু করলাম,
“ধীরে ধীরে বৃষ্টি পড়ে
দেখে আমি আবেশী
বয়ে যাওয়া জলস্রোতে
আমার পায়ের জলচ্ছবি”
তাকিয়ে দেখি সত্যি দেখা যাচ্ছে রাস্তার পানিতে নিজের ছবি
এর মধ্যে চোখের সামনে এক ভ্যানগাড়ি উলটে গেল। আশেপাশের দোকানগুলোতে আশ্রয় নেওয়া লোকজন হায়হায় করে ওঠে। সাইকেল থামিয়ে তাকে একটু হাত দেই। চারজনের চেষ্টায় ভ্যানটা আবার সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
ডিএমসি’র কাছে চলে আসতেই রূপার কথা মনে পড়ে। ওর খুব ইচ্ছা সাইকেল চালানোর, আর বৃষ্টিতে ভিজতে ও বরাবরই পছন্দ করে। এসএমএস করি ওকে।
মোবাইল বের করে বোতামগুলো চাপছি দেখে পাশে দাঁড়ানো ভ্যানগাড়ি চালক বলে,
-মামা, ফোন কি নষ্ট হইয়া গেছে?
-নারে মামা, ফোনেরও তো ভিজতে মন চায় মাঝে মাঝে নাকি, কন?
হেসে ওঠে মামা।
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি ওখানে, উত্তরের আশায়। কিন্তু কোন উত্তর আসে না।
উঠে পড়ি সাইকেলে।
পলাশীর মোড়ে পরিচিত চায়ের দোকানী দেখে বলে ওঠে, “করছেন কি?নির্ঘাত জ্বর আইয়া পরবো তো।”
আমি উত্তরে শুধু হাসি। জীবনে কিছু কিছু জ্বর আসা উচিত। যে জ্বরের কোন উত্তর নেই।
একবুক শান্তি আর একমুখ হাসি আর একটু উত্তরের অপেক্ষা নিয়ে বাসার পথে রওনা হই।
উত্তর আসছে রাত দশটায়ঃ ব্যালেন্স ছিল না।
তারিখঃ ৩১/০৭/২০১১
মন্তব্য
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
অলস সময়
আপনার সঙ্গী হতে পারলে বেশ হতো।
অসাধারণ হয়েছে।।
অসাধারণ।
ভীষণ লোভ হচ্ছে বৃষ্টিতে ভেজার।
এরপর আশেপাশে বৃষ্টি হলে ভিজে ফেলুন।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
অলস সময়
উদাস হইয়েন না। আমি আজ ১৫ মাইল বাইকিং করেছি, মনটা খুশি খুশি আছে...
আমি হেঁটেছি ৪ কিমি।
...........................
Every Picture Tells a Story
চমৎকার ভাই। বৃষ্টিটা কালকে অন্যরকম ছিল।
অলস সময়
আমি গাড়িতে এসি খেতে খেতে কর্মক্ষেত্রে গেছি, কর্মক্ষেত্রে গরমে গোসল হয়ে বাড়ি ফিরে আবার এসির মধ্যে ঢুকে গেছি। মন-টনের কথা জানি না। এত চ্রম গ্রম যে আর কিছু করার এনার্জি নাই, কাহিল অবস্থা। সাইকেল নিয়ে বের হলে বৃষ্টি নামবে কিনা বলো... তাইলে বের হই!
লেখাটা ভালো হয়েছে, দাঁপিয়ে > দাপিয়ে হবে, আর '১' দেখে ভালো লাগলো, আশাকরি পরের সংখ্যাগুলান আসিতেছে... আমিও একটা করবো বুঝলা, রিকশাভ্রমণ নিয়ে, রিকশায় চড়লেই আমার মাথায় দারুণ সব কথা খেলা করা শুরু করে, নামলেই সব হাওয়া... কাজেই ভালো হয় রিকশাতে চড়ে থেকেই লিখে ফেলতে পারলে...
ও! রিকশা থেকে মনে পড়লো, সেদিন রিকশয়ায় চড়ে ভিজতে ভিজতে আগারগাঁও থেকে আসাদ গেইট গিয়েছিলাম, অনেকদিন পরে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
প্রতিদিন সাইকেল নিয়ে বের হও আর এমন চমৎকার লেখা পোস্টাও
...........................
Every Picture Tells a Story
আগের অনেক কাহিনী জমে আছে মুস্তাভিজ ভাই। সময় করে লিখবো।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
অলস সময়
চালিয়ে যান। পরেরবার ২০ মেইল হওয়া চাই।
অলস সময়
আর আমি আড়াই হাজার কিলোমিটার উড়ে গেছি। তবে মন ভালো নেই ...
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভাই, কমেন্টের উত্তর দিছিলাম, কেমনে জানি নিচে গেছে গা। যাই হোক ২০ মেইল পরের বার মনে থাকে যেন
অলস সময়
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
অলস সময়
দিবার মন চাইলো দিয়া দিলাম আরকি।
অলস সময়
আমার আগের মন্তব্যটা ভুলবশত এসেছে। দুঃখিত ভাই ইস্কান্দর বরকন্দাজ। হবার কিছু নাই
অলস সময়
আমি কিছুদিন প্রতি দিনে দশ কিলোমিটার সাইক্লিং করছিলাম... পরে পায়ের ব্যথায় বাদ দিতে বাধ্য হয়েছি।
বৃষ্টিতে ভেজা খারাপ নয়, কিন্তু চশমায় ওয়াইপার না থাকলে একটুখানি সমস্যা হয়।
--স্বপ্নাদিষ্ট
=============================
যে জাতি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করে না, আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেন না।
ঐতিহাসিক লেখা নিচে একটা তারিখও দিছ দেখা যায়
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
সাইকেল চালাতে পারিনা । এসব লিখে মনে কষ্ট দেন কেন।
আমি নিজে ঠিকমত সাইকেল চালানো শিখছি ১ বছর হলো। সময় এখনো যায় নাই, শিখে ফেলেন।
অলস সময়
আপনারে না মূল্যবান টীপস দিছিলাম, তাও কাজ হয় নাই!
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
খাইছে! পুরা সাইকেলে চড়ে বৃষ্টিতে ভেজা প্রেম কাহীনি!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
হ ভাই, পুরাই। আপনার এই কথার সাথে রূপাও একমত
অলস সময়
শুভেচ্ছা- অণু
আজকে সাইকেলে অফিসে এলাম। ঝাড়আ দুই সপ্তাহ গিয়ান্জাম আবহাওয়ার পরে আজকে গ্রীষ্ম আবার ফিরে এসেছে। কিন্তু পুরাতন ঢাকার রাস্তায় বৃ্ষ্টির দিনে সাইকেলে ঘোরার আমেজটাই আলাদা।
ভাই কি দেশে??দেশে হইলে যেকোন বন্ধের দিন রওনা দিয়া দেন পুরান ঢাকার দিকে
অলস সময়
একটু না অনেক সমস্যা হয়। চশমার ওয়াইপার কোথায় পাওয়া যায়?
বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ই ভাল লাগে! সাথে সাইকেল থাকলে তো কথা ই নাই, আপনি ভাই লোকটা সুবিধার না পুরানো কথা মনে করাইয়া দিলেন... ... ...
আমার তো মনে হয় "বৃষ্টিতে না ভিজলে বৃষ্টি-র অপমান করা হয়" গত এক বছর আমি এই কাজটা করছি। তাই বৃষ্টি হলে ই মন খারাপ হয়ে যায়।
কানা
হ, রাস্তাতেই ফোকাস কইরেন আর সাবধানে চালায়েন।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
চেষ্টা তো করি ভাই, কিন্তু মন তো আর ফোকাস বোঝে না।
অলস সময়
এই বছর আমার শহরে বৃষ্টি হয়েছে হাতে গোনা তিন-চারবার ঘোরতর খরা চলছে এই মুল্লুকে। প্রতিরাত দশটায় হাঁটতে বেরুই - আর বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করি।
খুব ভালো লাগলো লেখাটা।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
দারুণ। সাইকেলের মত আজব যান আর নাই, চড়লেই মনে হয় হাওয়ায় ভাসছি।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
হাওয়ায় ভাসছি তো মনে হয় ভাই, কিন্তু সাইকেল থামাইলেই মনে হয় ঘামে ভাসতেছি।
অলস সময়
দেশে থাকতে সাইকেলে স্কুলে যেতাম। বিদেশে এসে সাইকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এইবার দেশে ফিরে কর্মস্থলের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোথাও থাকতে পারলে সাইকেলেই যাবো ঠিক করেছি।
ঢাকায় সাইকেল চালালে যানজট কত কমে যেত। মানুষের স্বাস্থ্যও ভালো থাকতো। প্রধান সড়কের পাশে সাইকেলের জন্য আলাদা রাস্তা করে সরকারের উচিত সাইকেলে যাতায়াতে উৎসাহ দেয়া।
আপনার এই সিরিজের লেখা গুলো গল্পের আনন্দের সাথে সাথে সবাইকে সাইকেলের প্রতি আগ্রহী করে তুলছে দেখে বেশি ভালো লাগছে।
বাহ্!!! নির্মল আনন্দ যাকে বলে...............খুব সুন্দর ভাই।
নতুন মন্তব্য করুন