মা গ্রামে যাবে।
প্রায় বছর চারেক বাদে। বাবা মারা যাওয়ার পর আমার বা মা’র কারোই ওদিকে যাওয়া হয়নি।
সকাল ৬টার বাস।
ইদানীং আমার কি হয়েছে কে জানে, রাতে ১০টা-১১টা বাজলেই ঘুমে চোখ ডুবে যায়, কোনকিছু দিয়েই চোখের পাতা খোলা রাখতে পারি না। আর ঘুম ভেঙ্গে যায় ৩টা-৪টার দিকে।
ঘুম ভেঙ্গে গেলে মাকে ডেকে তুললাম।
সব গুছিয়ে নিয়ে বের হতে হতে পাঁচটা বেজে গেল।
শেষ এই সময়ে রাস্তায় বের হয়েছিলাম অগাস্টে। ভাবতেই অবাক লাগে কিভাবে চোখের পলকে তিনমাস চলে গেছে।
মা আর আমি যখন রাস্তায় বের হই তখন পাখির হালকা কিচির মিচির আর আমাদের পায়ের শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না। আমি সাইকেল নিয়ে বের হয়েছি। যদি মা রিকশা খুঁজে না পায় তবে সাইকেল নিয়ে মেইন রোড থেকে রিকশা ডেকে আনবো-এই চিন্তা করে সাইকেল নিয়ে বের হওয়া।
রাস্তা পুরাই পরিত্যক্ত। মাকে বললাম আমি রিকশা ডেকে আনি। মা মানা করলো। বললো ‘সময় কম তার চেয়ে একসাথে চল রাস্তার মোড়ে যাই।”
মা হাঁটছে, আমি পাশ দিয়ে ব্যাগ নিয়ে আস্তে আস্তে সাইকেল চালাচ্ছি।
ভূতের গলি মসজিদ থেকে হাঁটতে হাঁটতে সেন্ট্রাল হসপিটালের সামনে চলে আসলাম। হাসপাতালের কাছে এসে এক বয়স্ক রিকশাওয়ালাকে পেয়ে গেলাম। মা যেতে চাইলো না রিকশাওয়ালা বয়স্ক দেখে, আমি মাকে মনে করিয়ে দিলাম তোমারও একদিন বয়স হবে।
অগত্যা মা রিকশায় উঠলো। আমিও মা’র সাথে সাথে সাইকেল চালিয়ে যেতে থাকলাম।
ঢাকায় ঠাণ্ডার বিন্দুমাত্র নামগন্ধ দিনে বা রাতে অন্তত আগের কয়দিন টের পাইনি। সকালে সাইকেল চালাতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
৬নাম্বারের মাথায় পৌছানোর পর মা বললো বাসায় চলে যেতে। কেন জানি সকাল বেলা সাইকেল চালাতে ভালোই লাগছিলো। বললাম, যাই আরো কিছুদূর। রিকশাওয়ালা চাচাও বললো থাকুক যাইতে চাইতেছে যাক।
রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাঁকাই ছিল। চাচার সাথে কথা বলতে বলতে যাচ্ছি। মা একটু অবাকই হচ্ছে আমাদের কথাবার্তা শুনে।
আশেপাশে চা-সিগারেটের সব দোকানও বন্ধ। ২৭ নম্বর রাস্তাটা বড় অদ্ভূত লাগলো, একদম নির্জন। আড়ং এর সামনে দিয়ে আসাদগেট, পিছে মা’র রিকশা। আসাদগেটে এসে একটু কোলাহল দেখলাম। হকাররা সব পত্রিকা গোছানোয় ব্যস্ত। তাদের কাজ খুবই সহজ কিন্তু সময়সাপেক্ষ।
আসাদগেট পার হয়েই শ্যামলী বাস কাউন্টার। অন্তত আগে ছিল। এখন কেউ নেই, কিছু নেই, না সাইনবোর্ড না বাস।
মা’র তো মাথা খারাপ। আজ না গেলে তার যাওয়াই হবে না।
কলেজ গেটের কথা মনে হল। মা এদিকে বারবার ফোনে চেষ্টা করছে। কেউ ধরলো না।
অতপর উপায় না পেয়ে শ্যামলীর দিকে যাত্রা দিলাম। মা’র চোখ দু’পাশে শ্যামলীর সাইনবোর্ডের খোঁজে।
৬টায় বাস, বাজে পৌনে ছয়। শ্যামলী রিং রোডের কাছে গিয়ে আমারও ভয় লাগা শুরু করলো। আমি অনেক কিছুই জানি, কিন্তু কথা হইলো এই জানার মাঝে মাঝে আবার ১০০% ভুলও থাকে।
শেষ ভরসা গাবতলী।
শেষে কল্যাণপুর এসে দেখা মিললো শ্যামলী কাউন্টারের।
মা যাওয়ার আগে টাকা দিয়ে গেল।
ফেরার পথে একা একা। সাইকেলে আরও বেশি ঠাণ্ডা।
শ্যামলী রিংরোডের কাছে এসে হঠাৎ করে সাঁই করে এক মটর সাইকেল চলে গেল। মটর সাইকেল যাওয়াটা বিষয় না, বিষয় হলো লোকটা স্টান্টম্যানের মত পুরো দুই হাত আকাশে তুলে মটরসাইকেলে দাঁড়িয়ে হাওয়া খেতে খেতে যাচ্ছে। আমি রাস্তা ভুলে তার দিকে কিছুক্ষণ হা হয়ে তাকিয়ে থাকলাম।
খুব তাড়াতাড়ি বাসার কাছে এসে পড়লাম। কলাবাগানের সামনে এসে এক নাস্তার দোকানে ঢুকলাম। গরম গরম রুটি, ভাজি আর ডিম, এক কাপ চা, একটা বেনসন।
দোকান থেকে বের হয়ে আবার সাইকেলে। এবার আস্তে ধীরে হেলতে দুলতে চালানো।
বাজে মাত্র পৌনে সাত। ৮ নাম্বারের কাছে এসে দেখি মিল্ক ভিটার বড় গাড়ি। সেখান থেকে ছোট ছোট ফ্রিজভ্যানে।
সাইকেল পাশে থামিয়ে একটা ছোট প্যাকেট কিনে খেলাম।
শরীর এখন বিষণ্ন, মনও। ঘুমের উপযুক্ত অবস্থা। বাসার নিচে পৌছার পর কেন যেন মা’র কথা খুব মনে হতে লাগলো। মাকে ফোন দিলাম।
ওপাশ থেকে কোন উত্তর এল না, বাসের শব্দে হয়তো মা শুনতে পাচ্ছে না।
কাছের মানুষ দূরে গেলে মনটা কেমন কেমন করে, আর একবার বিষয়টা বুঝতে পারলাম।
০৪.১১.২০১১
মন্তব্য
এই ছেলে দেখি তামাকও খায় আবার দুধও খায়!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
পাণ্ডব'দা, মন চাইলে কি করুম?
অলস সময়
পাণ্ডব'দা মনে চাইলে কি করুম?
অলস সময়
লেখা পড়ে মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেলো পলাশদা, আমার মাকে একটুখানি ছুয়ে দেখতে খুব মন চাইছে এখুনি।
চেষ্টা করেন, অবশ্যই ছুঁতে পারবেন
অলস সময়
২৫ ডিসেম্বরে যখন কর্মক্ষেত্রের ফিরে যেতে হবে, রিকসায় উঠলাম, বাস স্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে, আমার আম্মু বারান্দায় দাড়িঁয়ে ছিল, সেই মুখটা মনে পড়ল আপনার লেখাটা পড়ে।
জীবনের প্রয়োজনেই আপনজনের কাছ থেকে আলাদা হতে হয়।
ভালো থাকবেন।
অলস সময়
ঢাকার রাস্তায় সাইকেল চালানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অনেককে অনেকবার বলেছি। অবশ্য খুবই বিপজ্জ্বনক, বাসগুলো আর ধনীর দুলালরা যেভাবে চলে। সাবধানে চালিয়েন। ঢাকার মত সমতল ছোট্ট শহরে বাইক লেন থাকলে যানবাহনের উপর থেকে অনেক চাপ কমাত।
এই কথাটা আমি অনেককেই বলি, সাইকেল দরকার। তবে গত এক বছরে আমার দুই পায়ে দাগের সংখ্যা আশংকাজনকহারে বেড়েছে।
অলস সময়
শেষবার যখন চট্টগ্রাম আসব...আব্বুর জ্বর। কিন্তু আমাকে আসতে ই হবে...অফিস যেহেতু। রাত ১১/৩০ এর তূর্ণা। আম্মা আসলো আমাকে তুলে দিতে...সেদিন বিদায়ের সময় আম্যমার দিকে তাকাতে পারতেসিলাম না আমি।
যতোটা খারাপ লাগসে...মনে হচ্ছিলো নেমে যাই...।
মনে আছে আমার আর সাম্যর রিক্সার সাথে সাথে সাইকেল চালিয়ে পুরনো ঢাকায় ঘুরাঘুরি?
সাবধানে সাইকেলবাজি কইরো মিয়া। আর মন খারাপ করার কি আছে? বেশি ক্যামনক্যামন লাগলে সন্ধ্যার পরে এইদিকে আইসা পইড়ো। আর লেখালেখি জারি থাকুক।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
হ ভাই মনে থাকবে না কেন? হেহেহে, ওই রাস্তায় সাইকেল চালানো আসলেই কাহিনী।
অলস সময়
ভালো লেগেছে পলাশ। ছুঁয়ে গেল
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
সত্যিই ছুঁয়ে গেলো। একেবারে সহজ অথচ কি অনুভূতি...
ডাকঘর | ছবিঘর
ভালৈছে
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ভালো লেগেছে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
নতুন মন্তব্য করুন