দেশ্চিন্তা-১

নীলকান্ত এর ছবি
লিখেছেন নীলকান্ত (তারিখ: বিষ্যুদ, ১০/০৫/২০১২ - ২:৩৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হিলারী বাংলাদেশের সাথে আড্ডা দিয়ে গেলেন। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের সাথে। আসলেই কি তাই?
হিলারী আরো অনেক আড্ডা দিছেন এবং ভুল না হয়ে থাকলে দিবেন। মনে করি, এই আড্ডাসকল হিলারীর জন্য গুরুত্বপুর্ণ না হলেও অন্য পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

হিলারী বাংলাদেশের সাথে আড্ডা দিয়ে গেলেন। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের সাথে। আসলেই কি তাই?
হিলারী আরো অনেক আড্ডা দিছেন এবং ভুল না হয়ে থাকলে দিবেন। মনে করি, এই আড্ডাসকল হিলারীর জন্য গুরুত্বপুর্ণ না হলেও অন্য পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বিএনপি ইলিয়াস নিয়ে পেরেসান। বিএনপি ইলিয়াস দাবি করবেই, এটাই স্বাভাবিক। এর মধ্যে আবার মওদুদী সাহেব দাবী করেছেন সবাই বিএনপি'র মনের কথা বলেছেন। 'সবাই' বলতে সবাই বুঝেছেন এবং তারা নাকি বুঝিয়েছেন হিলারী-প্রণবকে। আমি বুঝি অন্য। উপর নিচ দুইটা শিরোনামই যথেষ্ট।

৪০ ভাগ দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকা এক দেশে দারিদ্র্য এক মজার জিনিস। কেউ কেউ অবশ্য বলেন ৩২ ভাগ, আবার সেখানেও দাগ টেনে বলেন ১২ভাগ চরম দারিদ্র।

দারিদ্র্য আছে বলেই গ্রামের না খেতে পাওয়া দিনমজুর ঢাকায় এসে রিক্সা ধরে, তার বউ ভিক্ষা করে, ছেলে মেয়ে শহরের রাস্তায় পথশিশু হয়। বাঁচার তাগিদে, যদিও সেখানে প্রশ্ন থেকে যায়, দারিদ্র্য দুরীকরণের এত সরঞ্জাম থাকার পরও কেন এই অভিপ্রয়াণ।আবার আগে শুধু দারিদ্র্য দূর করার জন্য সরঞ্জাম ছিল। এখন, ঐ ভিক্ষা করা বউ, রাস্তায় থাকা ঐ ছেলের জন্যও কিছু আছে।

ইউনুস হয়তো আর মাঠে নামবেন না। হয়তোবা নামবেন বা নামার চেষ্টা করছেন, আমি হয়তো বুঝতে পারছি না।
আবেদও হয়তো তার সাম্রাজ্য বিস্তারেই ব্যস্ত থাকবেন। হয়তো বা মাঝে মাঝে একটু আধটু নাড়াচাড়া দিয়ে উঠবেন সাম্রাজ্যের কোথাও চুলকানি দানা বাঁধলে সরকারের কারণে। হয়তো বা তিনিও তৈরি হচ্ছেন বড় কিছুর জন্যে, আমি তাও হয়তো বুঝতে পারছি না।
কিন্তু যেটুকু বুঝতে পারছি, তা হচ্ছে পরিসরটা তৈরি হচ্ছে নতুনদের জন্য। হিলারীর সাথে বাতচিতেও দেখি সে ধরনের আলামত।

এই নব্য পুঁজিবাদ( আসলেই পুঁজিবাদ) এক নতুন রূপে দেখা দিয়েছে আমাদের সামনে।
আগের দিনে ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সামান্য মজুরির বিনিময়ে মালিকের কাজ করে দিতে হত। মালিকের বিপুল ফায়দার বিপরীতে ছিল শ্রমিকের দিনান্তে জীবন নির্বাহ করার সামান্য কিছু উপাদান। অসন্তোষ তাই দানা বাদ্ধা অমূলক ছিল না।
সময় বদলেছে। এখন এর ধারা বদলেছে, লাভ ঠিকই আগের মতই আছে। শ্রমিকের মজুরি এসে পড়েছে শূন্যের কোঠায়। আর নাম বদলে রূপ নিয়েছে সমাজসেবার।

সমাজসেবা আজকাল অনেক বড় পদবী। ব্যবসাও বটে(ব্যাখ্যা কিংবা তর্ক নিষ্প্রয়োজন মনে করছি)। অনেকেই সেটা আবার নামের পাশে কার্ডের উপরে ছোট করে লেখে। 'ছোটখাটো সমাজসেবা করি' বলে।
'এই সমাজসেবা করি'দের পেছনে দাঁড়ানো এক বড় অংশের গন্ডী এখন স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বছরের সীমায়। এই 'করি'দের বিজ্ঞাপনেও তার প্রয়োগ দেখা যায়।
আগে শীতে বস্ত্র বিতরণ কিংবা বন্যায় ত্রাণ বিতরণে স্বেচ্ছাসেবকের দল হাত বেঁধে নেমে পড়তো, এখনও নামে, ব্যাপ্তি বেড়ে গেছে এই যা। বেড়ে গেছে এর জৌলুস, বেড়ে গেছে নিজের বৃত্তান্তে সেসব বর্ণনা করার প্রয়াস। অনেকে হয়তো তার প্রমাণ পেয়েছেন বা পাচ্ছেন। না পেয়ে থাকলে অপেক্ষায় থাকুন, পাবেন।
আসলে কাজের চেয়ে তার উদ্দেশ্য এখন আগে আসে। নিজের ফায়দা কি, এই প্রশ্নের উত্তর আমরা সবাই খুঁজি এখন। তাই হয়তো হিলারীর পাশে আমাদের দেশের নব্য গজিয়ে ওঠা স্বেচ্ছাসেবী দলকে দেখি আমাদের রাজনীতির, অর্থনীতির, সমাজ পরিবর্তনের ধারা হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকতে।
প্রশ্ন করা উচিত এবং স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এই দলভুক্ত কারা?তারা কী কেউ কৃষক বা কৃষকের ছেলে মেয়ে? তারা কি কেউ শ্রমিক বা মজুরের সন্তান?নাকি রাজনীতিতে অংশগ্রহণকারী কোন তরুণ?ভাল কি মন্দ যে প্রসঙ্গে যাচ্ছি না। উদ্দেশ্যটাই যেখানে বোঝা আগে দরকার সেখানে ভাল আর মন্দের প্রশ্ন দ্বিতীয়। না বলছি না, এদেরকেই হতে হবে। কিন্তু এরা কি আছেন ঐ সারিতে।

হয়তো এক্ষেত্রে হিলারীরাও খুশি হয়, যে বীজ আবেদ আর ইউনুস লাগায় তা বৃক্ষে পরিণত হতে দেখে। বৃক্ষ ততদিনে হয়তো মহীরুহের কাজ করবে, সে আশায় হয়তো তারা আছেন।

হয়তো সেদিন খুব দূরে নয়, রাজনীতির যে অসুস্থ ধারার কথা বলে বলে আমরা তাতে আরও বেশি পচন ধরিয়ে ফেলেছি, এই নব্য সাম্রাজ্যবাদীরা জৌলুসমাখা এই দারিদ্র্যকে ঝাণ্ডা বানিয়ে সেখানেই ওড়াবেন। এবং আমরাও তাতে দূর থেকে খুশি হব, যাক দেশ অন্তত বেঁচেছে। দেশের উন্নয়ন হবে, টাকা আসবে। সঙ্গে অবশ্যই থাকবে যুক্তরাষ্ট্র !


মন্তব্য

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

হ্যাঁ।
অবশ্যই সঙ্গে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।
হাহ!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

নীলকান্ত এর ছবি

যেখানেই থাকুন সঙ্গে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র, পাকাল মাছ।


অলস সময়

রামগরুড় এর ছবি

"মার্কিন মুল্লুকেই জগতের সকল কল্যাণ নিহিত"

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

আপনি লিখেছেন বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে।
কিন্তু কথাগুলো কী আশ্চর্যরকম সত্যি আমাদের ভারতের প্রেক্ষিতেও।

এত সুন্দর করে প্রশ্নটা তুলে ধরার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ।

নীলকান্ত এর ছবি

আমরা প্রশ্ন ইদানীং খুব কম করি, বিশেষ করে যদি তা হয় নিজের প্রয়োজন ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।


অলস সময়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।