সাইকেল কাহিনী-৩

নীলকান্ত এর ছবি
লিখেছেন নীলকান্ত (তারিখ: বুধ, ২৫/০৭/২০১২ - ৪:১৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সাইকেল চালাতে চালাতে অনেক কিছু মাথায় আসে। দুনিয়ার সবকিছু মনে হয়...অনেক বেশি ...

"উল্টোপুরাণ

প্রমোশন হয়েছে।আগের তিন বারের মত এবারও হলো।

কাজ করবার পরিবেশ ভাল। সবাই সবসময় সহায়তা করে। বিধবা হিসেবে সবাই অন্য চোখে দেখে না।
উর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রতিদিন প্রশংসা করেন, উৎসাহ দেয়।
আমার আত্মহত্যা করবার ইচ্ছা হয় না। জীবন যখন এত ভাল, কারই বা ইচ্ছা হয় বলুন?

সেদিন রাহেলা আপাকে বদলি করলো। আমাকে করলো না। আমি কম্পিউটারের কাজ ভাল পারি না, রাহেলা আপা পারে। তবু আমাকে বদলি করল না। আমি কাজ পারি না, তবু আমাকে এসিআরে নাম্বার বেশি দেয়। বলির পাঠা আমি হলাম না, হলো রাহেলা আপা।

আমি বসদের জন্য রান্না করে নিয়ে যাই, গিফট দেই। তাই এত কদর আমার, তাদের কাছে।
বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয় না। কাজ শেষ না হলেও বাসায় চলে যেতে পারি।

প্রমোশন হওয়াতে চাকরিটা চলে যাবে না।

শূন্যতা

রাত দুটোর একটু বেশি। যানহীন নির্জীব সড়ক।
নিশ্চুপ নয়, টপাটপ বৃষ্টি পড়ার শব্দ।
সাইকেল দুটো পাশাপাশি, দু’লেনে। সাদা দাগ বরাবর রাখবার প্রাণপণ চেষ্টা। আর একটু পরপর দমকা হাওয়ার মত হাসি।
ধানমণ্ডি ১৯ এ এসে দু’কাপ চা, এক পিস বেনসন। হাত থেকে কেড়ে নিয়ে আচমকা এক টান। এরপর কাশি, পরে দম ফাটানো হাসি। চাওয়ালা মামা’র নিদ্রাভঙ্গ।
আবাহনীর পাশ দিয়ে লেকের পাড়। ওপাড়ে আধো আলোছায়া, এপাড়ে অন্ধকার। একটু বসা, হাতে হাত রেখে ভালবাসা। জলের ভারে পাতার নুইয়ে পড়া।
আবার পথ চলা । মেঘ সরে গিয়ে চাঁদের উঁকি মারা।
আট নাম্বার ব্রিজ। ফুরফুরে বাতাস, চুলের ঘ্রাণ। পাশাপাশি দাঁড়ানো।
সময় যেন বাধাহীন স্রোত। ভোরের আলোর আভাস। বাড়ির পথে পা বাড়ানা।

সে চলে যায়। রেখে যায় এক রাতের সুখ ও শূন্যতা। আবার দেখা হবে কি বন্ধু?
সেও জানে আমিও জানি, এই শেষ। তবুতো শেষটা ...

অর্থহীন

দুনিয়ার সবকিছুই অর্থবহ হতে হবে এমন কোন কথা নেই।
বেঁচে থাকার চেষ্টা করাটা আসলে এক অযৌক্তিক প্রয়াস। ভাল থাকবার চেষ্টা প্রহসনমাত্র। খারাপ থাকাটা সুখবিলাস।

বাড়ি ফিরে মা'র লাশটার দিকে এক নজর তাকাই। নীথর এ নিয়তি আগের থেকেই জানতাম। তবু প্রহসন করে সুখবিলাসে থাকাটা খারাপ ছিল না।

শেষটানটুকু ছিন্ন হলে জীবন বলে কিছু আর রয় না। "

সিগারেটের শেষটান অনেক মধুর হয়। মনে করিয়ে দেয়, "এই টানই শেষটান, দম ভরে নে।"


মন্তব্য

সাফি এর ছবি

শেষটানটুকু ছিন্ন হলে জীবন বলে কিছু আর রয় না।

চলুক

তারেক অণু এর ছবি
সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

"দুনিয়ার সবকিছুই অর্থবহ হতে হবে এমন কোন কথা নেই।" চলুক

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

পথিক পরাণ এর ছবি

চলুক

তিথীডোর এর ছবি

দুনিয়ার সবকিছুই অর্থবহ হতে হবে এমন কোন কথা নেই।
বেঁচে থাকার চেষ্টা করাটা আসলে এক অযৌক্তিক প্রয়াস। ভাল থাকবার চেষ্টা প্রহসনমাত্র। খারাপ থাকাটা সুখবিলাস।

চলুক
এ অংশটুকু মনে থাকবে।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অরফিয়াস এর ছবি

আপনার লেখা বরাবরই ভালো লাগে। শেষের দিকে এসে আসল ধাক্কাটা দারুন।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অমি_বন্যা এর ছবি

উত্তম জাঝা! । এই নিন আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

বন্দনা এর ছবি

অনেকদিন পর লিখলেন পলাশদা। টুকরো গল্পের মাঝে কি গভীর জীবনবোধের ছোঁয়া।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলুক

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চলুক

কুঙ্গ থাঙ এর ছবি

(‌Y)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।