১
বিষয়টা নতুন না। সাইকেল চালানোর প্রথম দিন থেকেই বিষয়টা টের পাচ্ছি।
সাইকেল জিনিসটাও যথেষ্ট পরিমাণে সামাজিক মর্যাদা বহন করে। অন্তত মানুষের ব্যবহারে তাই বোঝা যায়।
সাইকেল হাতে খড়ি যদিও ছোটবেলায়, প্রাধান সড়কে সাইকেল চালানোটা তখনও অকল্পনীয় এক বিষয়। বালক বয়সের শেষের দিকে দেবব্রতের সাইকেলটা কিছুদিন মাঠে চালিয়েছিলাম, তাও স্কুল ছুটির পর ৫-১০ মিনিট।
গত দু'বছর বাইরে বের হলেই সাইকেলটা নিত্যসঙ্গী। বাসা থেকে বের হয়েছি কিন্তু সাইকেল সাথে নেই এমন দিন হাতে গোনা। রিকশায় চড়লেই হিসাব করতে বসি, শেষ কবে রিকশায় উঠেছি। এমন অবস্থা সাইকেল নিচে দেখেই মানুষ বুঝতে পারে আমি বাসায় কিনা!
তো ঘটনা খুবই সহজ। যখন নিত্যদিনের সঙ্গী-স্ট্যান্ডার্ড লুঙ্গির মত কিছু হয়ে যায়, তখন লুঙ্গি পড়াটা স্বভাব বটেই। সাইকেল চালানোটাও তাই স্বভাব।
প্রথম প্রথম গাড়িচালক বা বাসচালকের তুই তোকারি তেমন পাত্তা দিতাম না। দিতাম না বড় বড় সাহেব বাবুদের মত লোকদের কথাবার্তার তোয়াক্কা। জ্যামে বসে আছে, অথচ সামনে সাইকেল দেখে সমানে হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে। এমন নয় যে বাম্পার নেই, বা আমি একদম সাইকেল নিয়ে গাড়ির সাথে লেপ্টে আছি।
ব্যাপার না এগুলো হয়।
আরো মজা লাগে মাঝে মাঝে মোটর সাইকেল আরোহীদের কাণ্ড দেখে। আজকের কথাই ধরা যাক। এক ভদ্রলোক সুন্দর মত ফোনে কথা বলতে বলতে মোটর সাইকেলে যাচ্ছে। পিছনে এক মহিলা, ভাল কথা। আমি তাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম। পান্থপথ ও মিরপুর রোডের সিগন্যাল। আমি যাব ৩২ এ। সাইকেলের মাথা সোজা।
হঠাৎ ভদ্র লোক পেছন থেকে এসে বামে কলাবাগানের দিকে মোড় নিলেন। আর একটু হলেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে। আমি বলে উঠলাম,"মিয়া দেখে চালান।"
তিনি থামলেন। এরপর শুরু করলেন তুই তোকারি এবং আমার উত্তর শুনে গালি দিয়ে চলে গেলেন।
এই প্রথম নয় এরকম। এই শেষও নয়।
সমস্যাটা হল প্রথম দিকে মনে হত সব সাইকেল আরোহীর ভাগ্যে এটা জোটে। গত এক বছরে সে ধারণারও পরিবর্তন ঘটেছে।
ঢাকার রাস্তায় এখন সাইকেল আরোহীর সংখ্যা অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষত এই যানজটের শহরে তরুণ দল হাফ ছেড়ে বাঁচতে এমন জীবনের মূল্যবান সময় বাঁচাতে মোটর সাইকেল বেছে নিত, এখনও বেছে নিচ্ছে। কিন্তু মোটর সাইকেলের উচ্চ দুর্ঘটনার হার এবং পরিবারের উদ্বিগ্নতা এই বিষয়ে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি করে। তো তার বিকল্প হচ্ছে সাইকেল।
বলছি না সাইকেলে দুর্ঘটনা হবার সম্ভাবনা কম, কিন্তু মোটর সাইকেলের মত এত নয়। অন্যের দ্বারা দুর্ঘটনা ঘটা বাদ দিলে, মোটর সাইকেলের দুর্ঘটনার সংখ্যার একটি বড় কারণ এর গতি এবং অনিয়ন্ত্রিত চালনা। সাইকেল এক্ষেত্রে কার্যকরী। চাইলেও একটি নির্দিষ্ট গতিসীমার উপরে ওঠা সম্ভব নয়।
যে কারণে সাইকেল এবং সাইকেল চালকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অনেকের মতে এটা নতুন এক স্টাইল। অনেকে আবার মনে করে কিছু করবার নেই, তাই এসব করছে।
সে যাই হোক। মূল কথায় ফিরে আসি। বাজারে এখন নামী-দামী কোম্পানির সাইকেল পাওয়া যায়। সাইকেল গাড়ির চেয়েও বেশি চকচক করে। সাথে সাইকেল আরোহীও বাহারী হেলমেট, কনুই-রক্ষা-হাঁটু-রক্ষা-কবচ সাথে বাহারী লাইট।
যার ফলে তৈরি হয়েছে নতুন এক মর্যাদা পরিমাপক।
সাইকেল চালাতে গিয়ে তাই প্রায়ই দেখি জিনিস ভেদে ব্যবহার।
২
"মাগো।"
ঠিক পাশ দিয়ে হয়ে যাওয়া ঘটনাটা একবার ফ্ল্যাসব্যাক করলাম।
যান্ত্রিক শব্দ, ব্রেকের তীব্র প্রতিবাদ, মোটর সাইকেল আরোহীর পড়ে যাওয়া, হেলমেট ঊড়ে যাওয়া, আরোহীর পায়ের উপর দিয়ে মটরসাইকেলের পেছনের চাকা চলে যাওয়া, মাইক্রোবাসের দ্রুতবেগে পলায়ন এবং অতঃপর আরোহীর "মাগো"।
সবই ঘটেছে ১০ সেকেন্ডের কম সময়ে এবং ৫ ফুট দূরত্বে।
মাইক্রোকে থামানো বৃথা চেষ্টা কয়েকজন করলেন, লাভ হল না। পলাশী থেকে ব্রিটিশ কাউন্সিল যাবার রাস্তাটা বরাবরই যানজটহীন। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। গাড়ি নিশ্চিন্ত মনে চলে গেল।
আশেপাশের মানুষজন মোটর সাইকেল আরোহীকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন।
অনেক বড় দুর্ঘটনা হতে পারতো। হেলমেট না ঠিকমত পরিধান করার কারণে। নিজেরও একটি হেলমেট দরকার, তা বুঝতে পারলাম।
রাস্তায় এধরনের দুর্ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। সমস্যা হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দোষীরা ধরা ছোঁইয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। এর একটি বড় কারণ, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সময় মত জানাতে না পারা। আবার অসচেতনতা দায়ী। ঐ মুহূর্তে মাইক্রোবাসের নম্বর দেখে রাখা উচিত ছিল।
মনে এক ভয় ঢুকে যায়। সাবধানে প্যাডেল চালাই।
হয়তো একদিন আমিও পড়ে থাকবো ঐ লোকটির মত। করার কিছু থাকবে না।
মন্তব্য
এক মিনিটের নাই ভরসা, বন্ধ হবে রঙতামাশা....
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
হ, পুরাই তামশা।
অলস সময়
পোস্টে
যাই চালান, সাবধানে চালাবেন।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ভাই, সাবধান থাকি আর নাই থাকি, মারার দরকার হইলে মাইরা দিয়া যাইবো গা
অলস সময়
বাহ। সাইকেলের দিন বদলাচ্ছে জেনে ভালো লাগলো। দুয়েকটি এনজিও দেশে এটার জন্য কাজ করত বলে জানি।
দেশের বাইরে সাইকেল রোজকার বাহন। দেশের তুলনায় এদিকে বহুগুনে বেশী লোকে সাইকেল চালায়। একটা ভালো সাইকেলের দামে একটা মধ্যম মানের গাড়ি কিনে ফেলা যায়। অনেকটা কম দামের সাইকেলও রয়েছে অবশ্য। গাড়িওয়ালাদের সাইকেল চালানো দেশে স্বাভাবিক নয় বলেই দেখেছি। কিন্তু যাদের গাড়ি রয়েছে তাদের অনেকেই সাইকেল চালায়। অনেক দূরের ভ্রমন অথবা বাজার করতে গেলে (বাজার বয়ে নিয়ে আসার জন্য) গাড়ি নিয়ে বের হয়। সাধারণ চলাফেরায় সাইকেল সঙ্গী।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
সবার সাইকেল থাকলে ভাল হইতো ঢাকাতে। তবে আবহাওয়া এক বড় বিষয়। আমি তো তেমন পরোয়া করি না ঘামা গায়েই ক্লাস, কামকারবার সব করি। মানুষজন যে কি ভাবে!
অলস সময়
সাইকেল চালানো শিখছি। কবে যে রাস্তায় চালাতে পারবো (বা আদৌ পারবো কিনা)!
ঠান্ডা মাথার মানুষ হইলে রাস্তায় চালান। আর সাবধানে, সাইকেল থাকলে এমনিতে যেকারো আগে যাবেন। সময় বাঁচে অনেক, রিকশার জন্য অপেক্ষা নাই, যানজটে বসে থাকতে হয় না। এবং যেকোন চিপাচুপায় নিয়ে যাওয়া যায়।
অলস সময়
facebook
অলস সময়
ভয়ে সাইকেলই চালাতে দিত না, মোটরসাইকেল দূরের ব্যাপার। ফলাফল, রিক্সায় চলতে ফিরতে আর ভাড়া নিয়ে কথা বলতে বলতে ত্যক্ত।
ঢাকার ছেলেদের অভ্যাসের বিবর্তন জেনে ভালো লাগলো।
-আমিনুল করিম মাসুম
আমি সাইকেল কিনতে চেয়েছিলাম, বউ কিনতে দেয় না- অবশ্য সেদিন এমন এক অ্যাকসিডেন্ট দেখলাম যে আমার কেনার ইচ্ছেটাও উবে গেছে- সাইকেলওয়ালার কোনোই দোষ ছিল না, খামাকা বেচারাকে আহত হতে হয়েছিল!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
বউয়ের কথা শুনেন, কেনার দরকার নাই। আপনাকে দেরিতে হলেও সুস্থ দেখতে চাই সবসময়।
অলস সময়
আহ সাইকেল,
কত স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন। কলেজ জীবনে বাসা থেকে ১।৫ কিলোমিটার প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে তারপর বাসে ওঠা। এখনো টুকটাক যেকোন কাজে সাইকেলই আমার প্রথম পছন্দ।
লেখায়
নির্ঝরা শ্রাবণ
চালিয়ে যান তবে সাবধানে।
অলস সময়
দুর্ঘটনা ঘটানো গাড়ির নাম্বার টুকে রাখলেও কোন লাভ হয় না, প্রতিকার হয় না। দুর্ঘটনা ঘটানো গাড়িকে চালকসহ পুলিশের কাছে দিয়ে দেখেছি পুলিশ আমার কথা শুনতে পায়নি বা আমি ফালতু গ্যাঞ্জাম পাকাচ্ছি এমন ভাব করছে। এরচেয়ে সাথে একটা গজারীর লাঠি রেখো। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে।
দেখতে যেমনই লাগুক হেলমেট, নী-গার্ড, এলবো-গার্ড এগুলো পরেই সাইকেল চালাবে। এই শহরের রাস্তা একেবারেই নিরাপদ নয়। বিশেষত পথচারী, সাইকেল চালক, রিক্শা আরোহীদের জন্য আরও না।
সাইকেল চেপে গোটা দেশটা এফোঁড়-ওফোঁড় করে ফেললে আর সেই গল্প আমাদের বললে না এটা কেমন হল! সাইকেল চেপে যশোর টু সিলেট ভ্রমণ আর পায়ে হেঁটে কক্সবাজার টু টেকনাফ ভ্রমণের গল্প পোস্টাও।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
(Y)
যাহা সত্য তাহা কহিলাম ভ্রাতা। কোনকিছুরই ঠিক নাই
অলস সময়
সে যে যানেই থাকুন না কেন পরম সত্য।
অলস সময়
ধুর ভাই, শেষের লাইনটা কি লিখলেন?
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
পান্ডব্দার সুত্রে জানলাম আরো কিছু গল্প আছে - আসুক সেগুলো।
কয়েকদিন থেকেই ভাবছি একটা সাইকেল কিনব কোন পরামর্শ?
কিনে ফেলুন, মেঘনা সাইকেল বাজারে আসছে, কম দামে ভালো সাইকেল, আগে বিদেশে যেত এখন দেশেই থাকে। বাজেট কত?
অলস সময়
পান্ডবদার সাথে আমিও গলা মেলালাম।
ভালো লাগল লেখাটা। তবে সাবধানে চালাবেন। আজকাল দুর্ঘটনা যে হারে বাড়ছে! আর পাণ্ডবদার উল্লেখ করা গল্পগুলোও শুনতে চাই।
বিডিসাইক্লিস্ট গ্রুপ তো দিন দিন বড় হচ্ছে! আমার বাসায় সাইকেল্ম্যানিয়া, অফিসেও। একজন কালকে মেঘনা গ্রুপের সাইকেল কিনে আনলো দেখলাম ৩৮ হাজার দিয়ে। ছুটির দিনে সাইকেল রাইড দেয়া তরুণ/যুবকদের সংখ্যা ঢাকা শহরে এখন হাজার দুয়েক প্লাস ।
ছোটভাই আপনার মতোই সাইকেল ম্যানিয়াক - হেলমেট প্যাড পরেও চালায়। তারপরো বড়ভাই সুলভ উদবেগ যায় না ।
হেহেহেহে।
বাংলার কোন সাধারণ ঘরের ছেলের ৩৮ হাজার টাকার সাইকেল কেনার সামর্থ্য নাই। বিডিসাইক্লিস্ট গ্রুপটাতে আছি। যদিও এক বিশেষ শ্রেণীর গ্রুপ বলিয়াই ইহা আমার কাছে প্রতিপণ্য হয়।
আর একটা জিনিস ছুটির দিনে রাইড প্লাস সবাই মিলে দিলে মানুষের মনোবল বাড়তে পারে, কিন্তু রাস্তার অবস্থা বদলায় না।
বড় ভাই হিসেবে অবশ্যই আপনার উদ্বিগ্ন থাকবার অধিকার আছে, ছোটভাইকে বলবেন সাবধানে চালাতে এবং কোথাও গেলে হাতে সময় নিয়ে বের হতে। ভালো থাকবেন।
অলস সময়
সাইকেল চালাতে পারিনা, নইলে কবেই একটা স্লিম দেখে সাইকেল কিনে ফেলতাম।
আমি প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে অফিসে আসি। বসুন্ধরার ভেতরে বাসা ও অফিস দুটোই বলে সাহস পাই। ঢাকার রাস্তায় সাইকেল চালানোর সাহস নেই।
-অয়ন
নতুন মন্তব্য করুন