হয়তো...

নীলকান্ত এর ছবি
লিখেছেন নীলকান্ত (তারিখ: মঙ্গল, ২৩/১০/২০১২ - ১:২৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সবাই আশা করে তার সন্তানরা তাকে বৃদ্ধ বয়সে দেখবে একটু কথা বলবে, একটু যত্ন নিবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কথাটা পুরোপুরি সত্য।

আর সন্তানরা কি আশা করে?

প্রশ্নটা করা হয় না যদিও। মা-বাবা তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন, তারা খেয়ে না খেয়ে পড়ালেখার টাকা যোগাড় করেন। সকল সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করেন। বেড়ে উঠবার পথ সুগম করেন। সে এক লম্বা লাইন।
আর কি করেন?
তাদের চাওয়ার এক বিশাল ফদ্দ হাতে ধরিয়ে দেন। নে বাবা, আমরা এই এই করেছি, তুই এগুলো করবি। এগুলো এগুলো তো মাস্ট।

সমস্যা করাতে নয়, দেওয়াতেও নয়। বাবা-মা'র জন্য কিছু করতে কার না ভাল লাগে! সমস্যা হল সেই চাহিদার কখনো কি কোন লাগাম থাকে? কখনো কি তাদের মতে সন্তানদের কোন কাজ পারফেক্ট হয়?

গত দু-তিন মাসের কাজের অভিজ্ঞতা বলে, " না, হয় না।" অভিভাবকরা ছেলেমেয়ের জন্য করে যাচ্ছেন এই আশায় তারা সবাই এক একজন বিশাল মানব সম্পদ হবে, তাদের নাম উজ্জ্বল করবে, তাদের বিষয় সম্পত্তি দ্বি-ত্রি গুণ করে ফেলবে।

আজ হঠাৎ করেই এক বন্ধুকে দেখলাম। বাসা ছেড়ে দিতে। হঠাৎ করেই। বাবা-মা'র চাওয়া আর না পাওয়ার হিসাবে ছেলেটা একেবারে শেষ। পরিবারের কারণে আজ নিজের ভবিষ্যৎ জলাঞ্জলি দিয়ে চাকরি করা, মাসে মাসে সংসারের ঘানি টানা।

আগে কিন্তু দিব্যি চলছিল সংসার। হয়তো মাঝে মাঝে পা পিছলে যেত, কিন্তু মুখ থুবড়ে পড়তো না। আর এখন সারাক্ষণই এই নেই সেই নেই। বাসায় ঢুকলেই শুধু নেই আর নেই।

কাল রাতে অনেক দেরি হয় বাসায় ফিরতে। খেতে বসেই শুনতে হয় এই জিনিসটা নেই, ঐ জিনিসটা নেই। কিছু বলে না সে। চুপ করে থাকে। একটু পর বাবা বের হয়ে আসে। এসে বলেন, তোকে যে ৩২০০০ টাকা ধার দিয়েছিলাম, ওটা কবে দিতে পারবি।

ও আকাশ থেকে পড়ে। টাকা?বাবা, আমাকে ধার?
হ্যাঁ, নেবার সময় মনে থাকে না। একটা সাবান কিনতে গেলেও তো আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যেতি। ব্যাংকে বিল দেবার টাকা জমা দেবার জন্য বললে ভাংতি রেখে দিতি।

ও কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। হাসবে না কাঁদবে, কি করবে ও?

ও খাওয়া বাদ দিয়ে রুমে চলে যায়। আজই বেতন পেয়েছে। অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে জানা ছিলই। ৩২০০০ টাকা আর আগামী মাসের বাড়ি ভাড়া পুরোটা লিখে চেক দিয়ে দেয় বাবাকে। বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

সকালে অফিসে ইস্তফা দিয়ে বাসে চেপে এক কাপড়ে ঢাকা। সারাদিন অনেক চেষ্টার পর দেখা হয় ঢাবি'র মধুতে। শুনি সব কথা।

ও এখন ঘুমুচ্ছে। ওকে এখন অনেক নির্ভার লাগছে।
ওর একটা কথা খুব কানে বাজতেছে, "টাকা গেলে টাকা পাবো, এই সময় গেলে আর পাবো। কি হবে অন্যদের জন্য করে?খুবলে খুবলে খাবে সবাই। হয়তো একটু একটু করে অথবা একবারেই।"

শুয়ে থাকা এক মুক্ত মানুষকে দেখছি এখন।

হয়তো ও ফিরে যাবে, হয়তো বা না। হয়তো আর কোনদিন ও কাউকে জবাব দিবে না। ও আজ থেকে হয়তো মুক্ত, হয়তো...


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

একেবারে সত্যি কথা। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আমি এই সত্যটি প্রতিনিয়ত অনুভব করি। আমি নিজে চলতে পারি বা না পারি, সবার চাহিদা মেটাতে হবেই সে যে করেই হোক।

মুশফিকুর রহমান

রু এর ছবি

আহারে! আপনার বন্ধুর বাবা কিংবা মা যদি পারত এভাবে বাচ্চাদের হাতে হাজারটা টাকা গুজে দিয়ে অন্যের বাসায় আরাম করে ঘুমাতে! কিছু মনে করেন না, লেখার লজিকটা একেবারেই ভালো লাগেনি। আমরা যারা এখন কর্মক্ষম তারা অনেক সময় ভুলে যাই যে অন্যদের দয়া মায়া ভালবাসার কারণেই এই পর্যায়ে এসেছি। বাপ মাকে খুবলে নেইনি, তারা না চাইতেই সাধ্যের বাইরে করে দিয়েছে, এমনকি বুঝতে পর্যন্ত দেয়নি।

আইলসা এর ছবি

হয়তো প্রকাশভঙ্গিটা ভালো হযনি তবে পলাশ'দার অনূভুতিটা আমি ধরতে পারছি। প্রিয় রু বাবা-মা আমাদের জন‌্য প্রচুর কষ্ট করছে কোন প্রশ্ন নাই।
আমাদের কাছে তাদের আশাটা/চাহিদাটা ও অনেক। কিন্তু বাবা-মা যেটা একদম বুঝতে চান না- তাদের জীবনে ছেলে-মেয়ে সব হলে, ছেলে-মেয়ের জীবনে আর অনেক কিছু আছে। তার বন্ধু আছে, আ্ড্ডা আছে, ক্যারিয়ার আছে, ‌ব্যাক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছা আছে। বাবা-মা যতটা ভালোবাসা থেকে ছেলে-মেয়ে আকড়ে ধরে তার থেকে বেশি বোধহয় নিরাপত্তাহীনতা।

আপনি সদ্য বিবাহিত যে কোন মধ্যবিত্ত তরুনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে আলোচনা করলেই, জানতে পারবেন বাবা-মা'র চাহিদা কোন অকল্পনীয় পর্যায়ে যেতে পারে।

ধুসর জলছবি এর ছবি

চলুক

নীলকান্ত এর ছবি

কিছু মনে করার কিছু নেই এখানে। সব লজিক গায়ে লটকাতে হবে এমন কথা নেই। হাসি

বাবা-মা ঘুমাতে পারে না! তা হয়তো পারে না,কিন্তু এখন আমার মনে হইতেছে, না ঘুমানোর মত কি কিছু হয়?পরিবারের খাবার জোটে না এরকম অবস্থা হলে অন্য কথা। বলছি না তাদের কথা যারা নিজের কথা খালি ভাবে, মা-বাপকে অনাহারে রেখে নিজে মাস্তি করে বেড়ায়। বলছি তাদের কথা যারা করতে চায়, কিছু করে পরিবারের জন্য। পরিবার কি বোঝে সেটা?পরিবার বাদই দিলাম মা-বাবা?? অন্যদের দয়া মায়ার কথা বলছেন, হয়তো এই ছেলেটাই বাবা-মা'র কষ্ট হবে ভেবে খুব ছোট থাকতেই কোন কাজ বা টিউশনি করে নিজের পড়া, কোচিং এর খরচ চালাতো। হয়তো বাবা-মা সংসার নিয়ে এত ব্যস্ত, যে জানতেও পারেনি কি হয়েছে। জিজ্ঞেস করলে ছেলে বলেছে, বৃত্তি পেয়েছি। তাদের নিজেদের প্রয়াস কখনো সামনে আসে না, আসবে না। তারা দশ টাকা বাঁচানোর জন্য বাসা থেকে কলেজ ১০ মাইল বাসা থেকে টাকা দিতে চাওয়া সত্ত্বেও হেঁটে যেত।

আরও অনেক কিছু বলা যায়। লজিক হচ্ছে আমার, পরিবারের অনেক অবদান থাকতে পারে আমাদের পেছনে। তাই বলে এমন নয় যে, আমরা কিছু করিনি বা করবো না। তাদের অবদান স্বীকার করতে পারলে, আমাদের ভূমিকাকে স্বীকার করতে দোষ কোথায়?

একজন ৫ বছরের পথশিশু নিজে নিজে, হ্যাঁ নিজে নিজে এক কারখানার মালিক হতে পারে। পরিবার লাগে না। তার যদি দুই হাত আর মাথা ঠিক থাকে, তবে ঐ যে বললেন অন্যদের দয়া মায়া ঐটা আর লাগে না।
আর কিছু বলার নেই। আপনার লজিকে আপনি থাকতে পারেন। হাসি


অলস সময়

অতিথি লেখক এর ছবি

অন্যদের দয়া মায়ার কথা বলছেন, হয়তো এই ছেলেটাই বাবা-মা'র কষ্ট হবে ভেবে খুব ছোট থাকতেই কোন কাজ বা টিউশনি করে নিজের পড়া, কোচিং এর খরচ চালাতো। হয়তো বাবা-মা সংসার নিয়ে এত ব্যস্ত, যে জানতেও পারেনি কি হয়েছে। জিজ্ঞেস করলে ছেলে বলেছে, বৃত্তি পেয়েছি। তাদের নিজেদের প্রয়াস কখনো সামনে আসে না, আসবে না। তারা দশ টাকা বাঁচানোর জন্য বাসা থেকে কলেজ ১০ মাইল বাসা থেকে টাকা দিতে চাওয়া সত্ত্বেও হেঁটে যেত।
কথাগুলোর সাথে নিজের জীবনের মিল খুজে পেলাম
মুশফিকুর রহমান

ঘুমকুমার এর ছবি

ঘটনা অনেকটাই সত্য। সম্ভবত সবার জন্যই। তবে আমার মনে হয় একটু চেষ্টা করলেই ব্যপারগুলোকে সামলানো যায়। সম্ভবত চারপাশের পারিপার্শিকতার কারণে তাঁরাও সবসময় নিরাপত্তাহীণতায় ভোগেন।
একটা সমস্যা হল, অনেকক্ষেত্রেই বাবা/মা কে বুঝাতে গিয়ে রেগে যাই। রেগে না গিয়ে যদি যুক্তি দিয়ে বুঝানো হয় তাঁরা ঠিকই বুঝবেন।
আর বুঝানোতে কাজ না হলে পেছনের দরজাতো আছেই। যেমন মেডিকেলের পরীক্ষার সময় ইচ্ছা করে ভুল-ভাল উত্তর দিয়ে এসেছিলাম খাইছে

ধুসর জলছবি এর ছবি

একটু অন্যরকম ইস্যু। চলুক আমি নিজে বেশ কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম এ ব্যাপারে লিখব। কিন্তু সময় পাচ্ছিনা, সাহসও করে উঠতে পারিনি। বাবা মা সন্তানের জন্য যা করে সেটা সন্তান পুরোপুরি কখনই প্রতিদান দিতে পারবে না, স্নেহ সবসময়ই নিম্নগামী। কিন্তু আমাদের সমাজে বাবা মা অনেক সময় নিজেদের সপ্ন, নিজেদের ইচ্ছে , নিজেদের সম্মান এসব নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করে যে সন্তান বেচারা নিজের আলাদা অস্তিত্ব খুঁজে পায় না।
একটা ছেলেকে চিনি যে বাবা মার উচ্চাশা পূরণ করতে না পেরে, উঠতে বসতে খোঁটা শুনে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল, পরে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। আমাকে জন্ম দেয়ার জন্য আমি অবশ্যই কৃতজ্ঞ , ভালবাসা দিয়ে বড় করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানোর ধৃষ্টতাও আমার নেই, কিন্তু আমিতো একটা আলাদা মানুষ। আমার নিজের অস্তিত্ব, নিজের সপ্ন আছে। আমি অবশ্যই চাইব আমার বাবা মা কে খুশি করতে,তাদের জন্য সম্মান বয়ে আনতে, তাদের সুনাম বাড়াতে , কিন্তু আমি যদি ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই আমার বাবা মা কে খুশি করতে আমাকে ডাক্তারই কেন হতে হবে, অথবা এর উল্টোটা? আমার আসে পাশে এসব আচরন খুব ভয়ানক ভাবে দেখি।
অনেক সন্তান মেনে নেয়, অনেকে মানে না, অনেকে কষ্ট পায় আর কিছু আছে যারা এসব নিয়ে ভুগে অসুস্থ হয়ে যায়। আমার নিজের এক কাজিন বুয়েটে চান্স না পাওয়ার জন্য উঠতে বসতে তার নিজের বাবা মায়ের কাছ থেকে শুনেছে টাকার খোঁটা, কত টাকা তার পিছনে খরচ হয়েছে। এসবই বাস্তবতা। শুনতে খারাপ শুনায় কিন্তু বাস্তব।
আর ছেলে বিয়ে করালে তো অবস্থা আরও খারাপ হয়। চারপাশের অবস্থা এমন যে মনে হয় মধ্যবিত্ত ছেলেদের বিয়েই করা উচিৎ না, আর কোন মেয়েরও উচিৎ না মধ্যবিত্ত কোন ছেলেকে বিয়ে করার। কোন কারন ছাড়াই সে নতুন বাড়িতে গিয়ে শত্রুপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত হবে। আর ছেলের ক্ষেত্রে বাবা মায়ের অবুঝ চাহিদা তো আছেই,( হটাত করেই তারা অবুঝ হয়ে যাবে, বুঝিয়ে বলার পরও বুঝবে না এবং নিজের ছেলেকে অবিশ্বাস করবে, মিথ্যেবাদী ভাববে, ইত্যাদি ইত্যাদি, আমি এরকম অন্তত কয়েক ডজন ঘটনা দেখেছি) ওসবও যদি বাদ দেই, সবচেয়ে বড় সমস্যা তারা ছেলের ব্যক্তিগত জীবনটা বুঝতে চাইবে না। সে সন্তান ঠিকাছে কিন্তু বিয়ের পর সে এখন একজন স্বামীও এ ব্যাপারটা অজস্র বাবা মা বুঝতে চান না, এ ব্যপারে মায়েরা অগ্রগণ্য। তারা নিজেরা যা করেছে তার সাথে ছেলেকে মিলাবে। যেমন ছেলের মা হয়ত গৃহিণী ছিল, ছেলের বউ হয়ত জব করে, এদের দুজনের জীবন জাপনের স্টাইল কখনই তো এক হবে না। কিন্তু তারা ছেলে ছেলের বউ এর কাছ থেকে তাদের মত হতে আসা করবে । যেমন শাশুড়ি হয়ত বিয়ের পর সকালে উঠে নাস্তা বানিয়ে সবাইকে খাইয়েছে, যে ছেলের বউ জব করে, সকাল ৭ টায় বাসা থেকে বের হয়ে যায় তার পক্ষে সেটা কঠিন, এবং ইচ্ছে করলেই একটা অল্টারনেট ব্যবস্থা করা যায়, কিন্তু তবুও তারা এটা নিয়ে জিদ করবে। এটা আমি বানিয়ে বলছি না , এরকম ঘটনা অজস্র দেখেছি। আমি বেশ কিছু ঘটনা দেখলাম গত কয়েক বছরে শুধু বাবা মায়ের এইসব পাগলামি, কোনভাবেই না বুঝতে চাওয়া, বুঝাতে যাওয়ার পর আরও উল্টো বেশী বেশী করা এসবের কারণে অনেক স্বামী স্ত্রী বিয়ের পর সুন্দর একটা সম্পর্ক তৈরি করতে পারে না, প্রচুর ভুল বুঝাবুঝির তৈরি হয় । বেশ কিছু বিয়ে ভেঙ্গে যেতে দেখেছি। আমার এক আপুর শাশুড়িকে চিনি যে আপু হাসপাতালে থাকার সময় আপুর ছেলেকে বলেছে " তোর মা তোর আপন মা না, নাহলে কি তোকে ছেড়ে বাইরে থাকত। " বাচ্চাটা মা বাসায় ফেরার পর কথাটা রিপিট করেছে। এর চাইতে অদ্ভুত আর কি হতে পারে। সেই শাশুরির নিজেরই তো সন্তানের সন্তান!
এসব ঘটনার তো শেষ নেই, লিখতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে। আর এসব হয় ভাল মানুষ সন্তান টার সাথেই। কারন যে সমস্ত কুলাঙ্গার, অমানুষ বাবা মাকে পাত্তাই দেয় না, তাদের নিজেদের সুখ ছাড়া কিছু বুঝে না, চূড়ান্ত অবহেলা দেখায় তাদের বাবা মারা কিন্তু এসব করে না, করার সুযোগই পায় না।
অনেক বাবা মা দেখলাম মেয়ে দেখতে সুন্দর না বলে মেয়েকে কথা শুনায়, ভাল ছাত্রী না বলে কথা শুনায়, অমুকের ছেলে এটা করেছে তুই কেন পারলি না, এই ধরনের অভিযোগ করা আমাদের বাবা মাদের সবচেয়ে কমন আচরন। এর চাইতে দুঃখজনক আর কি হতে পারে?
আমরা এসব নিয়ে কথা বলি না, বললে আমাদের সবাই খারাপ সন্তান ভাববে বলে। না বলে বলে এসব ঘটনা আরও বাড়াচ্ছি। নিজেরা যখন বাবা মা হই এরকম হয়ে যাই। বছরের পর বছর এটাই হয়ে আসছে।
উচিৎ সত্যি টা স্বীকার করা। অন্য যে কোন কাজের মত বাবা মা হওয়ার জন্যও কিছু নুন্নতম যোগ্যতা থাকা উচিৎ, সন্তান লালন পালনের জন্য থাকা উচিৎ কিছু মাপকাঠি। শুধু সন্তান জন্ম দিয়েই বাবা মা হওয়া যায় না। কিভাবে সন্তান বড় করব, মানুষ করব,সন্তানের আলাদা অস্তিত্ব স্বীকার করব সে ব্যপারে শিক্ষার ব্যবস্থা থাকা উচিৎ।
এ ধরনের লেখা আরও বেশী বেশী আসুক। আরও বিশ্লেষণী , আরও গোছানো ভাবে। আপনাকে ধন্যবাদ লেখাটার জন্য। চলুক

ঘুমকুমার এর ছবি

আপনার মন্তব্যের অনেক কিছুই মিলে গেল নিজের চারপাশের অভিজ্ঞতার সাথে। কিন্তু তারপরও বলব তাঁদের ছেড়ে আলাদা হয়ে যাওয়াটা সমাধান নয়। অবশ্যই একটা মাপকাঠি থাকা উচিৎ সন্তান পালনের। কিন্তু মাপকাঠিটা ঠিক করবে কে?
আর সমস্যাটা কিন্তু এই যে তাঁরা অবসরে যাওয়ার পর তাঁদের দেখার কিন্তু কেউ নেই। আমাদের দেশে সরকার তাঁদের দায়িত্ব নেবে না। ভালো মানের বৃদ্ধাশ্রমও অপ্রতুল। ব্যপারটা নিরাপত্তাহীণতার।
হিন্দী সিরিয়ালের শাশুড়ি টাইপের মা রা যে নেই তা নয়। কিন্তু তাঁরাই একমাত্র মা/বাবা নন। প্রতিদ্বন্দীতার সম্পর্ক তৈরি না করে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুললেই সমস্যাগুলো অনেকাংশে সমাধান হয়ে যায়। আর এখানে বাবা মাদের দায়িত্ব যেমন আছে, সন্তানেরও আছে।

কষ্টে থাকা ভালো ছেলে এর ছবি

ধূসর জলছবি, প্লিজ লিখুন। বিয়ের পর, আমি এত অসংখ্য সমস্যায় পড়ছি যে বলার মত নয়। আমি আমার বৌ দু'জনেই চাকুরিজীবি হওয়াতে শুক্রবার একটু বেলা করে ঘুমাতাম- হঠা্ৎ একদিন আম্মুর চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গলো। খুব বিচ্ছিরি অবস্থা। তারপর পরের শুক্রবার আমার বৌ নাস্তা বানাতে গেলে, আম্মু আবার চিৎকার শুরু করে। আমার বৌ ও শুরু চিৎকার- মাঝখানে আমি পড়ি গাড্ডায়।

আমার বৌয়ের কর্মস্থল উত্তরা হওয়াতে আমি মগবাজার থেকে আলাদা বাসা নিয়ে থাকার চেষ্টা করলে ও, আম্মুর কান্নাকাটি আর আব্বুর মানসিক প্রেসারে একসময় আবার ফিরে আসি। কিন্তু এখানে না আমি শান্তিতে আছি না আমার বৌ- আমি নিশ্চিত আবার হঠাৎ ঝামেলা লাগলো বলে। প্রতিদিন টেনশন, দু:শ্চিন্তায় আমি অসুস্থ। আমার বাবা-মা যদি একটু বুঝতো, আমি তাদের অবহেলা করছি না, শুধু একটু স্বাধীণভাবে একটা আলাদা ফ্লাটে নিজের মত করে থাকতে চাচ্ছি...

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

আর এসব হয় ভাল মানুষ সন্তান টার সাথেই। কারন যে সমস্ত কুলাঙ্গার, অমানুষ বাবা মাকে পাত্তাই দেয় না, তাদের নিজেদের সুখ ছাড়া কিছু বুঝে না, চূড়ান্ত অবহেলা দেখায় তাদের বাবা মারা কিন্তু এসব করে না, করার সুযোগই পায় না।

চলুক চলুক চলুক

মেঘ্রং এর ছবি

আর এসব হয় ভাল মানুষ সন্তান টার সাথেই। কারন যে সমস্ত কুলাঙ্গার, অমানুষ বাবা মাকে পাত্তাই দেয় না, তাদের নিজেদের সুখ ছাড়া কিছু বুঝে না, চূড়ান্ত অবহেলা দেখায় তাদের বাবা মারা কিন্তু এসব করে না, করার সুযোগই পায় না।

সহমত

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

কি লিখব বুঝতে পারছি না। কেন যেন মনে হচ্ছে ব্যাপারটা শুধু মান অভিমান নিরাপত্তাহীনতা নয়, সবল আর দুর্বলের এ এক চিরন্তন লড়াই। সংসারে যে ভালোমানুষ, যে দুর্বল সেই সবসময় আক্রান্ত হয়। এমন অনেক বাবা মা'র কথা জানি যারা সন্তানের জন্য সবটুকু উজাড় করে দিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়ে এখন ধুঁকে মরছেন, ছেলে ভালো আছে এবং খোঁজ করার গরজটাও তার নেই। আবার এমন অনেক ঘটনা দেখেছি যেখানে ছেলে-মেয়ে শেষ হয়ে গেছে বাবা মার খামখেয়ালীতে। নিজেদের দূরত্ব বাড়িয়ে নেবার চাইতে অনেক ভালো সমাধান থাকা উচিৎ এই সমস্যার, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এক পক্ষের একগুঁয়েমিতে কেউ না কেউ হার মেনে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত। সহনশীলতা আর যুক্তিবোধের চর্চা মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে থাকে যাবে আরও বহুদিন।

আপনার বন্ধুর জন্য সমবেদনা।

স্যাম এর ছবি

সংসারে যে ভালোমানুষ, যে দুর্বল সেই সবসময় আক্রান্ত হয়। এমন অনেক বাবা মা'র কথা জানি যারা সন্তানের জন্য সবটুকু উজাড় করে দিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়ে এখন ধুঁকে মরছেন, ছেলে ভালো আছে এবং খোঁজ করার গরজটাও তার নেই। আবার এমন অনেক ঘটনা দেখেছি যেখানে ছেলে-মেয়ে শেষ হয়ে গেছে বাবা মার খামখেয়ালীতে।

নি এর ছবি

পুরোপুরি অবাক। মনে হচ্ছে যেন আমার নিজের জিবনের চিত্রপট গুলো ভেসে উঠেছে। বিয়ের পর আমি হাজার বার বাবা মাকে বুঝাবার চেষ্টা করেছি। কোন কাজ হয়নি। আমার মায়ের একগুয়েমি, হিংসা আর তার সাথে সাথে বাবার খারাপ ব্যবহারে অবস্হা এমন হয়েছিল যে গলায় দড়ি দিেয় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করি। প্রতি পদে পদে আমার বউ এর দোষ খুজতে ব্যস্ত আমার মা। ও যা করে তাতেই দোষ। রান্না করলেও দোষ না করলেও দোষ, হাটায় দোষ, খাওয়াতে দোষ, উঠতে দোষ, বসতে দোষ।খালি দোষ আর দোষ। এমন কি বিয়ের এক মাসও পেরোয়নি, আমার শশুড় বাড়িতে গিয়ে মনের ইচ্ছামত ওনাদের সামনে নিজের ছেলের বউ এর বদনাম বলে আসছেন। উনাদের খামখেয়ালিপনার এই শেষ না, আমার বউ এর পড়াশুনা পর্যন্ত বন্ধ করতে চেয়েছেন। প্রতিবাদ করায় আমিও বাদ যাইনি কিছুতে! আমি নাকি আগে এমন ছিলাম না, এখন আমি অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছি। প্রতি পদে পদে আমাকে স্বরণ করিয়ে দেয়া হয়, আমার পেছনে কত টাক প‌য়সা উনারা খরচ করেছেন। বিয়ের সময় মার কাছ থেকে কত টাকা ধার করেছি। আমার বোন আমার বিয়েতে কত টাকা খরচ করেছে! অবাক হয়ে যাই মায়ের আচারন দেখে যখন উনি আমাকে আর আমার বউকে বাদ দিয়ে আর সবার জন্য ভাত রান্না করেন। খুব কষ্ট হয় এসব মেনে নিতে। খুউব!

অ এর ছবি

বিয়ে পরে শুধু বলছেন কেন ?? বিয়ের আগে কি একগুয়েমি মা-বাবা রা করেন না। আমি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে একটা ভাল চাকরি করতাম, থাকতাম ও নিজের কর্মস্থলে, ওই সময় একটা মেয়েকে আমার পছন্দ হয়। দুইজনই আমরা খুব ভাল ছিলাম, আমরা বিয়ে করার কথা চিন্তা করতেছিলাম। কিন্তু যেই না বাসায় মা কে জানালাম, পুরা দুনিয়াটা বদলে গেল। মা-বাবা সবাই এত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল যে বলার না। তাদের মতে মেয়ে ভাল না, খারাপ তা না হলে তাদের কে লুকিয়ে আমার সাথে রিলেশনশিপ গড়ে তুলতো না আর মেয়ের শিক্ষা, রূপ তাদের ঊচ্চশিক্ষিত ছেলের যোগ্য না । আমার পছন্দ, ভাললাগার কোন গুরুত্ব-ই নাই। বিয়ে করতে হলে তাদের পছন্দমত করতে হবে। এমন না যে আমার বাবা-মা আমার ইনকামের উপর নির্ভরশীল ছিল কোনদিন। আমি আমার মা-বাবা কে যতই বুঝায় আমি বড় হয়ছি, আমার জীবন আমার মত করে চলতে দাও কিন্তু কে শোনে কার কথা। বাবার বিস্তর রাজনেতিক প্রভাব আর ক্ষমতা ছিল, যখন মেয়েটাকে মেরে ফেলার হুমকি দিল, তখন আর কোন কথা বলতে পারি নাই। তখন বাবার মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ালাম, তখন পরিবারের সবাই ছি-ছি করে উঠল, সব দোষ গিয়া পড়ল ওই মেয়েটার উপর। ছেলেকে নষ্ট করে দিছে, মাথা বিগড়ায়ে দিছে। কিন্তু পরিবারের প্রতি কোন কর্তব্যই আজ পর্যন্ত করি নাই এমন না। এমন না আমি আমার বাবা-মা এর কষ্ট, ত্যাগ ভুলে গেছি কিন্তু তাদের চাওয়ার সাথে নিজেকে আর কোনদিন মেলাতে পারি নাই।

নি এর ছবি

আমার সাথে এতো মিল কিভাবে? বিয়ের আগে আমারও ঠিক এমন একটা পরিস্থিতি হয়েছিল। অবশেষে, বাবা-মা'র পছন্দেই বিয়ে করলাম। কৈ তাও তো আমার সাথে ভালো কিছু হলনা। অনেকেই ভাবেন বাবা-মা'র পছন্দ মত বিয়ে করলে হয়ত সংসারে সুখ থাকবে। একদম ভুল ধারনা।

আসলে কি জানেন? বড়রা আজকাল আর বড়দের মত আচরন করছেন না। যা দেখে ছোটরা ভাল কিছু শিখতে পারে। স্বেচ্ছাচারিতা, খামখেলিয়াপনা আর শুধু চাওয়া পাওয়ার হিসেব মিলানো ছাড়া তাদের কাছে যেন আর কিছু নেই। যৌক্তিকার তোয়াক্কাও করেন না উনারা। নিজেরা যা ভাল মনে করেন সন্তানদের সাথে তাই করেন। কে জানে আমরাও যখন বাবা মা হব এমনই হয়ত করব! এভাবেই কি চলতে থাকবে তাহলে?

অ এর ছবি

না আমরা যখন বাবা মা হব, তখন এই রকম নিশ্চয় করব না। ভাল-মন্দ বলব কিন্তু তাদেরকে স্বাধীনভাবে নিজের জীবনের সিধান্ত নিতে সাহায্য করব, সিধান্ত একতরফা ভাবে চাপায়ে দিব না।

জুন এর ছবি

আমার বাবা মারা গেছেন আমি ছোট থাকতেই। মা এখনো আছেন। বড় বোন এবং ভাইয়েরা আছেন। এমন নয় যে আমার মা বা ভাই-বোনেরা কেউ আমার উপর নির্ভরশীল। আমিই বরঞ্চ অনেক অত্যাচারী এবং জেদী স্বভাবের। তাঁদের জন্য কিছু করার মতো সামর্থ্য আমার ছিলনা কোনদিনই। মাঝে মাঝে হয়তো কোথাও কিছু দেখে ভাল লেগে গেলে; নিজের ভাল লাগা থেকেই মা-বোন-ভাইদের জন্য সেটা কিনে আনতাম। কিন্তু, জীবনে নিজের রোজগারের প্রথম টাকা দিয়ে মার জন্য কিনে নেয়া চায়ের মগ থেকে আজ পর্যন্ত একটা কোনও জিনিসও কেন যেন তাঁদের ব্যবহারযোগ্য মনে হয়নি। আমার পছন্দ করা কোনও কিছুই ভাল হয়না। বৌতো অবশ্যই না। তারপরেও সুখের কথা যে এখনও একসাথে থাকার সৌভাগ্য হচ্ছে এবং এখনও আমি বোধহয় পাগল হয়ে যাইনি।

যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।