আজ অনেকদিন পর বুয়েটের সোনালী ব্যাংকে যাওয়া হলো। পাশ করে গেছি বছর দুয়েকের বেশি হচ্ছে।
ধরেই নিয়েছিলাম অন্তত ঘন্টাখানেক লাগবে। তো গিয়েই তব্দা খেয়ে গেলাম। নতুন এক পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।
যেখানে অনেক উচ্চমার্গীয় ব্যাংক এবং সেবা প্রতিষ্ঠানের মত টোকেন নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে।
খুবই ভাল লেগেছে বিষয়টি। পরে জেনে আরও ভাল লেগেছে যে পুরো পদ্ধতিটা স্কুল জীবনের এক বন্ধুর করা, পরে এক সাথে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়।
যাই হোক, কাজের কথায় যাই। পদ্ধতি পরিবর্তনের ফলে সেবার মানের কি পরিবর্তন তা হারে হারে টের পেলাম। দীর্ঘ এক ঘন্টা অপেক্ষার পর দেখা গেল অবস্থায় এই।
আমার আগে ছিল মাত্র ৮৪ জন, আমার সিরিয়াল ১১৯ এবং এক ঘন্টা পর চলমান ৫১! দীর্ঘ এক ঘন্টায় ৭টা কাউন্টারের মধ্যে কর্মরত ৩টিতে ঘন্টায় গড়ে ৬ জন সেবা নিয়েছে।
সেবাদানকারী কর্মচারীদের মুখের বিরক্তি এবং আচরণ বুঝিয়ে দেয় সময় কাটানো তাদের কতটা দায় এবং তারা কর্মদিবস শুরু হবার ২ ঘণ্টার মাঝে কি পরিমাণ ক্লান্ত।
যদিও এসির বাতাসের তেজ যথেষ্ট এবং পাশে বসার সোফা বিদ্যমান।
মূল কথা হলো, পদ্ধতি যতই বদলানো হোক না কেন, গায়ে জমা তেল আর আলস্য না ছাড়ানো পর্যন্ত দীর্ঘসূত্রিতার শেষ হবে না। মানুষের বিড়ম্বনা দেখে আজকে আসলেই কষ্ট লাগছে।
যাই হোক এক ঘন্টা পর, ভি আই পি (শিক্ষক) এক বন্ধুর উদয় আমাকে উদ্ধার করলো। ওয়ান স্টপ সেবা যাকে বলে।
এবং ফেরার পথে মনে মনে ভাবতেছিলাম, পদ্ধতি বদলায়, শালার সোনালী ব্যাংক বুয়েট শাখা কেন বদলায় না? অন্য ব্যাংক আসতে ক্ষতি কি?
মন্তব্য
ঐখানে এক লোক ছিলেন, যার চাইতে একজন মুদি দোকানদারও দ্রুত টাকা গুনতে পারত বলে মনে হয়। মুদি দোকানদারকে ছোট করছি না, বরং বলছি ঐখানে এমন কিছু লোক ছিল যারা তাদের নিজের কাজে অপটু। কিভাবে এত ধীরে কাজ করা যায় সেটা একটা গবেষণার বিষয়। তার উপর লাঞ্চ ব্রেকের ধাক্কা!
সবারতো আর আপনার মত 'ভিআইপি' বন্ধু নেই
আমারে হেল্প করার পর ভিয়াইপি বন্ধুর অপেক্ষা করতে হইছে। ওর অন্য কাজ ছিল। ঐ কাজের দীর্ঘসূত্রিতা আর ভয়াবহ, দুই তিন দিন যাইতে হয়।
অলস সময়
একজন টেলার একজন মুদি দোকানদারের চেয়ে দ্রুত টাকা গুণতে সক্ষম হবেনই- এইরম নিশ্চিত ভাবনার কারণ কি, মেঘলা?
দুজনেই টাকা গুনে, কিন্তু পদ্ধতিতে বিস্তর ফারাক আছে মনে হয়!
তবে লাঞ্চ ব্রেকের ধাক্কায় পিষ্ট হয়নি, এমন গ্রাহক কমই আছে!
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
একই কাজ বার বার করার কারণে ঐ কাজে দক্ষতা আসার কথা। একজন মুদি দোকানদার হয়ত দিনে ৩-৪ হাজার টাকা গোনেন, সেখানে একজন টেলার লাখখানেক টাকা গোনেন -তার গতি বেশি হবার কথা। পদ্ধতিতে অবশ্যই ফারাক আছে, আর টেলারের পদ্ধতিই বেশি 'ইফিশিয়েন্ট' হবার কথা। প্রয়োজনে বড় বান্ডিল গোনার জন্য তারা কারেন্সি কাউন্টিং মেশিনের সাহায্যও নিতে পারেন। পেশাগত দক্ষতার কারণে একজন পেশাদার মুদ্রাক্ষরিক আমার চেয়ে দ্রুত টাইপ করতে পারেন বলেই মনে হয়।
অন্য অনেক লোককেই টাকা গুনতে দেখেছি বিভিন্ন ব্যাংকে, ঐ লোকের মত ধীরগতির কাউকে দেখিনি বলেই মন্তব্যটা করা।
শুভেচ্ছা আপনাকে, দীনহিন
দেশথেকে ভিআইপি কালচার দূর না হলেও কোনো লাভ নাই।
এই মেশিনে দেখি অফিশিয়ালি টিচাররা ভিআইপি হয়ে গেছে। নানান দেশ বিদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানেই ঘোরার সুযোগ হয়েছে। এইরকম কোথাও দেখিনি। বাকি দুনিয়ায় মুত্রত্যাগ থেকে লিফটে ওঠা, সবকিছুর জন্যই সবাইকে একই সাথে লাইন দিতে হয়।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আমি জীবনে নগদ গ্রহণ আর নগদ প্রদান -এই দুই জিনিসের মধ্যে কোনটাতে যাওয়া দরকার সেটা বের করতে হিমশিম খেতাম। অনেক বেসরকারি ব্যাংকের একই কাউন্টারে রাধা+চুল বাঁধা সিস্টেমটা ভালো লাগে। একটা সরকারি ব্যাংকে ঢুকলে ৩০-৪০ জনকে দেখা যায় টেবিল নিয়ে ফাইলের পাহাড়ের নিচে বসে থাকতে, আমি ঠিক জানি না তাঁরা ঠিক কি করেন (অথচ বেসরকারি ব্যাংকে এত বেশি লোকবল থাকে না।)
বুয়েট সোনালি ব্যাংকে আমার একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা আছে।
লেভেল-২ টার্ম-১ এর দিকেই সম্ভবত সবার কাছে সরকারি বৃত্তির টাকা আসে, যেটা তোলার জন্য ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই বিশাল লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ মনে হলো প্রায় মিনিট দশেক ধরে আমার সামনে লাইনে একদমই এগুচ্ছে না। লাইন ছেড়ে একটু সামনে এগিয়ে যেই দৃশ্য দেখলাম, তা আজ অবধি আমার জীবনে দেখা অ্যাবসার্ডতম দৃশ্যের মধ্যে একটা- ব্যাংকার ভদ্রলোক তার সামনে এক সমুদ্র ক্লায়েন্ট দণ্ডায়মান রেখে, নিশ্চিন্তে তার টেবিলের ড্রয়ারের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে এক মুঠো মুড়ি বের করে এনে মুখে ঢুকিয়ে ধীরে সুস্থে চিবুচ্ছেন। তার সামনে স্থানুর মতো নিশ্চল, হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছাত্রের দল।
এমন না যে মুড়ির প্রতি আমি বিদ্বিষ্ট, কিংবা কর্মক্ষেত্রে খাওয়ার ব্যাপারেও আমার আপত্তি আছে। কিন্তু দিনে দুপুরে, প্রায় অর্ধশতাধিক লোককে সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে মুড়ি খেতে যে মনযোগ, যোগীর মতো নিবিষ্টচিত্ত লাগে, সে ব্যাপারে ভাবতেই আমি হতবাক হয়ে যাই- এই আর কী।
অলমিতি বিস্তারেণ
এর পেছনে নিবিড় অর্থ আছে - এর মানে কাস্টমারদের বলা হচ্ছে তোমরাও দূরে গিয়ে মুড়ি খাও।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
বিকেলবেলা ধীরে সুস্থে মুড়ি চিবোতে চিবোতে এই মন্তব্য পড়তে গিয়ে আমি হাসতে হাসতে রীতিমত বিষম খেলাম
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আপনি বুয়েটের সোনালী ব্যাংক দেখেছেন, কপাল ভালো আগ্রাবাদের রূপালী ব্যাংক দেখেন নাই। তাহলে আপনার সোনালি দুঃখ জীবনের তরে ঘুচে যেতো। রূপালী ব্যাংকের আলস্যের জমিদারি নিয়ে একটা আস্তে পোষ্ট লেখা যাবে বলে এখানে আর বিস্তারিত বললাম না।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আস্ত পোস্টই আসুক না।
একবার এক টেলার ভদ্রলোককে দেখলাম দাবার চাল দেয়ার মত করে একেকটা কীপ্রেস করছেন। দুইটা কী চাপার মাঝের সেই অপেক্ষার প্রহর, ভাবতে এখনো ঘুম পেয়ে যায়।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আগে জানতাম দুইটা-আড়াইটার দিকে গেলে ফাঁকা পাব, আর এখন ওই সময়ে গেলে ২০০-৩০০ পরে সিরিয়াল আসে।
সেদিন ভাবলাম, সকাল ১০ টায় ব্যাংক খোলার সাথে সাথেই গিয়া লেনদেন মিটাবো। গিয়া দেখি, টোকেনের কাগজ মেশিনে ঢুকাইতে ঢুকাইতে সাড়ে ১০টা, স্লিপ নিয়া কাউন্টারের সামনে দাঁড়াইতে না দাঁড়াইতেই দেখি, সবাই আরামসে সিঙ্গারা খাওয়া শুরু করে দিছে। সকালে কি উনারা বাসা থেকে খেয়ে আসে না নাকি? তারপরেও আরও কিছু সময়ের অপেক্ষা, কেননা ক্যাশের চাচাজান কিবোর্ড চাপতে পারেননা, পাশের চেয়ারের যিনি ওটা করে দেন, এখনো এসে পৌঁছান নাই।
এভাবেই চলছে বুয়েটের সোনালি ব্যাংক। আর এটিএম বুথের কথা কিইবা বলার আছে নতুন করে। জোক আছে একটা নিয়া, মেশিনে কার্ড ঢুকাইলে ব্যাংকের ভিতর থেকে মানুষ এসে টাকা দিয়ে যায়।
-এটা কি সত্যি?
একবার বৃত্তির টাকা তুলতে গেলাম, চেক দিলাম। কাউন্টারের টেলার মামা পাশের জনের সাথে গল্প শুরু করলেন, দুই লাইন স্থির হয়ে দাঁড়ায়ে আছে। এরপর লাঞ্চ আওয়ার শুরু হলো, কমবেশি সারাদিনই মাটি।
জীবন কতোটুকু সুন্দর হতে পারে বুঝার জন্য বুয়েট সোনালী ব্যাংক হলো সর্বোত্তম জায়গা।
----------------------------------------------------------------
''বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!''-সুকান্ত ভট্টাচার্য
আমাদের এক সহপাঠী বন্ধুর বাবা ছিলেন সোনালী ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। আমরা তাই ব্যাঙ্কে গেলেই ওকে নিয়ে যেতাম
নতুন মন্তব্য করুন