ছোটবেলায় আমার বন্ধুদের কারো ইচ্ছে ছিল ফুটবলার হওয়ার, কারো ক্রিকেটার হওয়ার। আর আমার ইচ্ছে কবে বড়ো হবো, একটু স্বাধীন মতো চলবো। এর পেছনের কারণ আব্বার অত্যাধিক শাসন। এই করা যাবে না, সেই করা যাবে না, এই করো, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কেন পড়োনি। ইত্যাকার যতো শাসনে অতিষ্ঠ ছিলাম। তাই আমার সবসময়ের ইচ্ছে কবে বড়ো হবো, নিজের মতো করে চলবো।
এতোটুকু পড়ে যারা ভাবছেন, আমার আব্বা বুঝি খুব কঠোর একজন লোক, সেটাও কিন্তু নয়। খুবই নরম মনের মানুষ ছিলেন তিনি। আমার বোনদের তিনি অসম্ভব ভালোবাসেন। তাদের যতো আবদার সবগুলোই মেটাতে চেষ্টা করতেন। শুধু আমার বেলায় ছিল তার শাসনের বাড়াবাড়ি।
আব্বার এই শাসনের হাত থেকে মুক্ত হবার দিন একদিন এলো। ঢাকা ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেলাম। ভর্তিও হলাম। তখন আমার খুশি দেখে কে! মাথার উপর আর আব্বার শাসনের কড়াকড়ি নেই। নিজের ইচ্ছে মতো চলবো, ফিরবো।
ক্লাস শুরু হবে। বাড়ি থেকে ভার্সিটি যাচ্ছি। আব্বা গাড়িতে তুলে দিতে এলেন বাসস্টপে। বাস ছাড়ার সময় হয়। গাড়িতে উঠে বসি। দেখি আব্বার চোখে পানি টলটল করছে। একমুহূর্তে পানি চোখের কোনা দিয়ে গড়িয়ে পড়ে। আব্বা নিশ্চুপ বাসের চলে যাওয়া দেখেন। আর আমি দেখি জলে ভেজা আব্বার চোখ।
ক্লাস শুরু হয়। নতুন ক্লাস, নতুন বন্ধুদের আড্ডা আর সূর্যসেন হলের গণরুমে হঠাত্ হঠাত্ আব্বার জলে ভেজা সেই ছবি ভেসে আসে। ভালো লাগে না কিছু। দুইদিন পরেই বাড়ি ফিরে যাই। কয়েকদিন কাটিয়ে আসি আব্বার শাসনের বেড়াজালে।
এখনো বাড়ি গেলে আব্বার সেই পুরনো শাসনগুলোর দেখা মেলে। যদিও আগের মতো এতোটা না। তবে আব্বার জলে ভেজা সেই চোখের ছবি এখনো আমার চোখে ভাসে।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন