বেশ আগে, কয় বছর হবে মনে নাই, মুক্তকন্ঠের খোলাজানালায় কবি কমল মমিনের একটি লেখা পড়েছিলাম। আত্নীয়সভা নামে। কলকাতায় সুনীলদের এ রকম একটি সভা আছে। কবি সাহিত্যিকদের কেউ বিপদে পড়লে সবাই মিলে এগিয়ে আসে। পাশে এসে বাড়িয়ে দেয় আত্নীয়তার হাত। ঢাকায় এ রকম কিছু নাই। এই ছিল কমল মমিনের লেখার প্রতিপাদ্য। গতকাল আজিজ মার্কেটের টুটুল ভাইয়ের ওখান থেকে ফিরতে ফিরতে আমার হঠাত্-ই কমল মমিনের এ লেখাটির কথা মনে পড়ে। টুটুল ভাই মানে আমাদের সচল ব্লগার আহমেদুর রশীদ। এমনি পরিচিত হতে গিয়েছিলাম সেখানে। তারো দিন দু'য়েক আগে মাহবুব লীলেন ভাই ফোন করেছিলেন। 'সময় পেলে একটু আইসেন, পরিচিত হওয়া যাবে'। এমন আন্তরিকতা মাখানো আত্নার আত্নীয়তার আহবান কার সাধ্য এড়িয়ে যায়। টুটুল ভাইয়ের সাথে কথা হয়। এর ওর নানা কথা জানাও যায়। না দেখা হাজারো সচলের ইতিকথা লেখা হয়ে যায় হৃদয়ের খাতায়। পথে নেমে মনে মনে আমি হৃদয়ের এই খাতাটি একমনে উল্টিয়ে যাই। আর সচলের স্বজনদের ইতিকথা পড়ি। আচ্ছা, সচলে যাদের সাথে দেখা সাক্ষাত নাই, শুধু লেখা পড়ে উপলদ্ধির বোধে স্থান দেয়া- এদের নিয়ে একটি আত্নীয়সভা গড়লে কেমন হয়। সবাই তো আমরা আত্নার আত্নীয়ই।
সচলে কে নয় আমার আত্নার আত্নীয়। কার শব্দের মুর্চ্ছনায় আচ্ছন্ন হই না আমি। মনে আছে, একসময় হাসান মোরশেদ সীমান্তের ওপারের পাহাড় থেকে মেঘের গায়ে লিখে পাঠাতেন। সে মেঘ এসে আমাদের পাফো পাতায় অবিরল বৃষ্টিধারায় ভিজিয়ে যেত। আর অপার মুগ্ধতায় আমরা সে বৃষ্টির ফোঁটা কুড়িয়ে শব্দের মালা গাঁথতাম। গল্প সাজাতাম। আহ্ সেই গল্প... সেইসব দিন। সেইসব দিনে আরো একজনের লেখা এ রকম বৃষ্টিধারার অনুভব তৈরি করতো। তিনি সুমন সুপান্থ। আমার বেড়ে উঠার দিনের আত্নার স্বজন। আরিফ জেবতিককে সবসময় গুরু বলেই জেনে এসেছি আমি। অবসরের সেই মাইক্রোস্কোপ কলামের মুগ্ধ পাঠক আমি। চোখ বুজলে এখনো সেই মুগ্ধতা ঠিকই পাই।
অমিত আহমেদের সাথে পরিচয় বইমেলায়। সাংবাদিক, রম্য লেখক আহসান কবির পরিচয় করিয়ে দেন। সেদিন থেকে তাকে জেনেছি আত্নার স্বজন বলে। মৃদুল ভাই আর সৈয়দ আখতার ভাই, দু'জনেই আমার এক্স কলিগ। দু'জনের কাছেই কতোদিন যে স্নেহের উত্তাপ পেয়েছি! একদিন ফেসবুকে আমার এক বন্ধুর পেজে দেখি মুশফিকা হোসাইনকে। তার প্রোফাইলে আনব্যান সচলায়তনের ছবি। মেসেজ পাঠাই, আপনি কি সচলের মুশফিকা মুমু? মুমু তড়িত্ জবাব দিয়ে অ্যাড করেন বন্ধু লিস্টে। ভার্চুয়াল বন্ধুত্বের সীমারেখা ছাড়িয়ে আমরা এখন আত্নার বন্ধু। কী বলেন মুমু? একা একা এলোমেলো হেঁটে বেড়ানো আমার স্বভাব। এ নিয়ে একদিন লিখিও সচলে। ক্যামেলিয়া আলম কমেন্টে লেখেন, তিনিও এমন। হাঁটতে ভালোবাসেন। হাঁটতে হাঁটতে এক বিকেলে আমরা সচলের আত্নীয় সভায় চলে যাই। গিয়ে দেখি, ওখানে আমাদের অপেক্ষায় বসে আছেন জুলিয়ান সিদ্দিকী, রায়হান আবীর, সৌরভ, তীরন্দাজ, কীর্তিনাশা, ধ্রুব হাসান, স্নিগ্ধা, ধুসর গোধুলি, কিংকর্তব্যবিমুঢ়, তানবীরা তালুকদার, মুহম্মদ জুবায়ের, পলাশ দত্ত, রানা মেহের, নজমুল আলবাব, রেজওয়ান, সংসারে এক সন্ন্যাসী, অমিত, শিমুল, পুতুল, অরুপ কামাল'রা।
ফারুক ওয়াসিফ, সুমন চৌধুরী, খেকশিয়াল, সবুজ বাঘ এদের চারজনকেই চিনেছি আমার সাবেক কলিগ সাফায়েত ভাইয়ের মাধ্যমে। অল্প হোক, সেই চেনার মাঝে এতটুকুও খাঁদ নেই। জেনেছি, তারা আমাদের বিপদ-আপদের দিনের পরম বন্ধু বলে। অভিজিত্ রায় আর বন্যা আহমেদের সাথে পরিচয় বছর দু'য়েক আগে। উত্তরার একটি ফ্ল্যাটে। সেদিনই দেখেছি দু'জনের হৃদয়ের বিশালতার ব্যাপ্তি। যেখানে পরম আত্নীয় হয়ে নিদ্বির্ধায় ঠাঁয় পাতা যায়। হিমু'কে আমি পাফো'র আকরাম হোসেন হিমু ভেবে বসেছিলাম অনেকদিন। পরে জেনেছি, আত্নার এ স্বজনটি অন্য আরেক হিমু। এস এম মাহবুব মোর্শেদ'কেও আমি গল্পকার মাহবুব মোর্শেদ ভেবেছিলাম। তিনিও তো আমার আরেক স্বজন।
বাংলাদেশ থেকে যখন সচলে ঢোকা যাচ্ছিল না, তখন ফেসবুকে চ্যাটে ইশতিয়াক রউফ জানিয়ে দেন, প্রক্সিতে সচলে ঢোকার বিদ্যা। সেদিন থেকেই তাকে আমার দুর্দিনের বন্ধু বলে জেনেছি। দিনকয়েক আগে নীললোহিত পড়ছিলাম। আর নীলকা'র সাথে ঘুরে বেড়িয়েছিলাম কলকাতার অলিগলি। শ্যাজাদি, আমার আত্নার আত্নীয়, আসছি তোমার কলকাতায়। গল্প, কবিতার দেখা অচেনা কলকাতাকে চিনে নিতে। নজরুল ভাই, যাবেন নি আমার সাথে কলকাতায়- রেসের মাঠে কিংবা কফি হাউজে কিছুক্ষণ শ্যাজাদি'র সাথে আড্ডা পেটাতে। সচলের যেকোনো বিষয় নিয়ে যার সাথে আমি প্রথম কথা বলি, সে হলো আমার সহকর্মী কবি মূর্তালা রামাত। সেও তো আমার ভাবনার সচল সঙ্গী।
এইসব চেনা অচেনা সচলদের নিয়েই তো আমার সচল নিবাস। আমার আত্নীয়সভা।
মন্তব্য
রেজা আপনার লেখা পড়ে বুকটা ফুলে উঠেছে এক হাত। সত্যিই তো আমার এত এত স্বজন আছে এখানে। তাদের আমি চোখে দেখিনা। কিন্তু তারা আমায় ঘিরে থাকে সব সময়। আমার অনুভবে তাদের বিচরন টের পাই সারাক্ষন।
----------------------------
সচল আছি, থাকবো সচল!!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
কীর্তি'দা, এই যে আপনার অনুভব, এইগুলো নিয়েও তো কিছুকাল বেঁচে থাকা যায়। কী বলেন আপনি?
ঠিক
-------------------------
সচল আছি, থাকবো সচল!!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
দুনিয়াটা জুড়ে যে শুধুই গিয়ানজাম না, সেটা এখানে এলে বুঝি।
রাজাকার রাজা কার?
এক ভাগ তুমি আর তিন ভাগ আমার!
একদম হাঁছা কথা ইশতি ভাই। এখানে এলে এক আত্নীয়তার পরশ সবসময় চারপাশ ঘিরে থাকে।
হে হে।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
খুব ভালো লেখা লিখেছেন। পড়তে পড়তে অচেনা মানুষগুলোকেও খুব চেনা মনে হলো।
মূর্তালা রামাত
মূর্তালা, কতজনের সাথেই তো ব্যক্তিগত পরিচয় নাই, কিন্তু সচলে তাদের লেখা পড়তে পড়তে কতো আপন যে মনে হয়!
ঠিক হ্যায়।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
হু, ঠিকাছে পলাশ দা।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
কনফু'দা, আপনার অভিবাদন ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম আপনার মতো করেই। কিন্তু থামসআপ কিভাবে দেয়, সেটাই তো জানি না। তবে সেটা না জানি, কনফু'দা আপনাকে ঠিকই কিন্তু হৃদয়ে ধরে রাখি একজন পরম আত্নীয় ভেবেই। ভালো থাকবেন আপনি।
(×চলুক×)
ক্রসগুলো তুলে দিবেন।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
খাইছে! তুমি এত লোকরে এত কাছে থিকা চিন মিয়া! আমি তো চিরকাল গর্তের ভিতর ডুব মারা ব্যাঙ, আমার তো কতজনের লগে দেখাই হয় নাই আজতক... তবে হ্যাঁ, এরা বড় আপন... সম্পর্ক তো আর ভার্চুয়াল মিউচুয়াল মানে না... অনুভূতির ভাষা চিরকালই এক, শুধু মাধ্যমটা বদলে যায় সময়ের সঙ্গে! আমি কোনোদিন কোনো ব্লগে লেখালেখি করি নাই, তোমার মনে আছে কিনা, তুমিই আমারে সচলায়তনের খোঁজ দিছিলা... আজকের এই লেখায় তোমারে সেই কৃতজ্ঞতা না জানায়া যাই কই... ভালো থাইকো মিয়া...
ভালো কথা... ভূমিকম্প বিষয়ক লেখায় দেখলাম দ্বিজেন শর্মার সমাজতন্ত্র বইটা পড়তাছ, তাইলে কি সাইবারবাণী বইটা পড়া শেষ? এইবার নিশ্চয় দিবা আমারে...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
মৃদুল ভাই, সচলের খোঁজ আমিই দিয়েছিলাম বুঝি!
সাইবারবানী পড়া শেষ হয় নাই। একটু কঠিন লাগতেছে, তাই আপাতত স্টপ রাখছি। কথা যখন দিয়েছি, তখন অবশ্যই আপনাকে বইটা ধার দেবো। না দিয়া যাইবো আর কই। ভালো থাইকেন আপনি।
সামনা সামনি এর চেয়ে ব্লগের পরিচয় অনেক কাছের মনে হয় আমার কাছে...
---------------------------------
জানিনা জানবোনা... কোন স্কেলে গাইছে কোকিল
গুনিনা আমি গুনিনা...কার গালে কটা আছে তিল
সেটাই তো ঠিক রায়হান আবীর, এখানে যে সখ্যতা গড়ে উঠে লেখার সূত্র ধরে। যেখানে লেখার হাত ধরে লেখকের প্রতি অনুরাগটুকুই প্রকাশ পায়। ব্যক্তি লেখক যে যাই হোক।
আসলেই অদ্ভুত এক আত্মীয়তায় জড়িয়ে আছি আমরা সবাই। তবে জনাব, শিমুল বলিলে কিলিয়ার বলিতে হইবে ইহা আ.সা.শিমুল, নাকি সু.পা.শিমুল।
নাইলে বুঝতারি না আমারে বাদ দিছেন বইলা সেন্টু খামু কি খামু না।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
মহাশয়া, আমি সুলতানা পারভীন শিমুলের নামই নিয়েছিলাম। আপনার কথায় মনে পড়ে গেল আনোয়ার সাদাত শিমুলের কথা। তার নামও এখন নিলাম। এইবার হলো তো। তো এইবার বলেন, সেন্টু জিনিসটা কী? খায় না পেন্দে?
অবশ্যই অবশ্যই, আসলেই সামনা সামনি না চিনেও যে অনেক কে আপন বোনের মত, ভাইয়ের মত, বন্ধুর মত আপন মনে হতে পারে তা এখানে না আসলে বুঝতে পারতাম না
সুন্দর লিখেছেন।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
এই অনুভুতিটা একবার হইছিল পাফো করার সময়। অনেকদিন পর সচলে এসে আবার মনে হইতেছে।
প্রশংসার জন্য ব্যাপক ধন্যবাদ।
এই জন্যেই আমার বলতে ইচ্ছে করে, "আপন-হয়ে-ওঠা প্রিয় ভার্চুয়াল মুখগুলি"।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
সন্ন্যাসী দা খুবই সত্যি কথা বলেছেন।
সাফায়াত মানে "অঞ্জন"?
লেখায় (বিপ্লব)
ঈশ্বরাসিদ্ধে:
অজ্ঞাতবাস
জ্বী, সুমন ভাই। একসময়ের দূর্দান্ত বাম, এখন পণ্য বেচার ক্যানভাসার সাফায়েত ভাইয়ের ডাক নাম অঞ্জন হলেও আমাদের কাছে তিনি সাফায়েত নামের পরিচিত।
লেখাটা পড়ে বিহ্বল হয়ে রইলো চরাচর ! সে ছিলো এক আশ্চর্য স্মৃতিপীঠ-ই বটে !!
---------------------------------------------------------
আমার কোন ঘর নেই !
আছে শুধু ঘরের দিকে যাওয়া
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
সুপান্থ দা, স্মৃতি আমাকে একটু বেশিই টানে। প্রায়ই স্মৃতিতে বুঁদ হয়ে যাই। মন যে কেমন করে উঠে। তবে সেই স্মৃতিপীঠ-এ আপনাদের অভিজ্ঞতা একটু বেশিই বৈকি। সেখানকার কিছু স্মৃতি সচলে আমাদের সাথে ভাগাভাগি করেন না একটু!
খাতির জমায়া সব নাম লয়া গেলেন!
আবার আসলে লিস্টটা বড় করা যাবে।
---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
টুটুল ভাই, খালি খাতির জমানোটা দেখলেন? আর কিছু দেখলেন না। যান, আপনি একটা... কইলাম না!
একদম আড়াইশো ভাগ একমত!!
আপনি অভি আর বন্যার আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন কোন একসময়? আর তারপরও এই আত্মীয়তার ব্লগ? নাহহ, আপনি মানুষটা বেশ ভালোই ....
অভিজিত্ রায় আর বন্যা আহমেদের বাসায় আমার দাওয়াত ছিল না। ছিল আসিফ ভাইয়ের। কিন্তু, উনি উত্তরায় গিয়ে কিভাবে বাসা খুঁজে বের করবেন। সেই চিন্তায় অস্থির। বললেন সাথে যেতে। অগত্যা তার সাথে যাওয়া। তবে অভিজিত্ রায়ের সাথে পরিচয় হয়েছিল তারো আগে, সায়েন্স ওয়ার্ল্ড পত্রিকার অফিসে। বেশ ভালো মানুষ উনারা দু'জন। আমার সালাম স্নিগ্ধাদি' একটু পৌঁছে দিয়েন।
নতুন মন্তব্য করুন