পরীক্ষা শেষ হলে এই এক শান্তি। আরাম করে কয়েকদিন গল্পের বই পড়া যায়। আগে স্কুলে, কলেজে থাকতে পরীক্ষা শেষ হলেই গায়ের ক্লাবের লাইব্রেরি অথবা কলেজের লাইব্রেরি থেকে একগাদা বই তুলতাম। তারপর চোখ-কান বুঝে কয়েকদিন আরাম করে পড়া। ঢাবিতে ভর্তি হওয়ার পর সেমিস্টার পরীক্ষা শেষের দিনেই নীলক্ষেতে হামলে পড়ি। হালিখানেক নানান স্বাদের বই কিনে হলে ফিরি। কখনো কখনো বইয়ের সাথে সঙ্গী হয় পুরানো ঈদ কিংবা পুজোসংখ্যা। তবে ভার্সিটিতে আর একটু সিনিয়র হলে টিউশনির টাকা, আরো পরে পত্রিকায় কন্ট্রিবিউটরি করে পকেটে টাকা আসায় নতুন বই কিনতে আজিজে ছুটতাম। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিতে নিতে হলে ফিরি অদ্ভুত প্রশান্তি নিয়ে। বই কেনার এই যে ভালো লাগার অনুভূতি তা কিছুতেই বোঝানো যাবে না!
কয়েকদিন আগে শেষ হলো ইউনি লাইফের শেষ পরীক্ষা। সেদিনও ছুটলাম নীলক্ষেতে। নির্মলেন্দু গুণের ‘নির্বাচিতা’ নামের কবিতা সংকলন আর শিবনারায়ণ রায় ও শামীম রেজা সম্পাদিত ‘আফ্রিকান সাহিত্য সংগ্রহ-২’ নামে দু’খানা বই কিনি। পরেরদিন অফিস থেকে ফেরার পথে আজিজে ঢুঁ মেরে কিনি শঙ্খ ঘোষের ‘এই শহরের রাখাল’ এবং আনু মুহম্মদ অনূদিত ওরিয়ানা ফাল্লাচি’র ‘লেটার টু অ্যা চাইল্ড নেভার বর্ন’ বইটি।
রাত্রে খেয়েদেয়ে রুমে ফিরে ভাবতেছি কোন বইটি পড়া যায়। ভাবতে ভাবতে মনে হয়, এই যে নীলক্ষেত কিংবা আজিজ থেকে বই কিনি, দু’জায়গায় বই কেনার স্বাদ আসলে দু’রকম। এই দু’রকম স্বাদের মাঝে আমার কাছে নীলক্ষেতই বেশি সুস্বাদ মনে হয়। নীলক্ষেতে বই কেনার মজাই আলাদা। পুরানো বই ঘেঁটেগুটে, মহার্ঘ্য বইটি খুঁজে কিনে নেয়ার মধ্যে এক ধরনের সিরিয়াস পাঠকের হাবভাব প্রকাশ পায়। কেন জানি মনে হয়, নীলক্ষেতের পুরানো বইয়ের ক্রেতা একজন সত্যিকারের পড়ুয়া পাঠক। দেখো না কেমন খুঁজে খুঁজে দরকারী বই খরিদ করছে। যা আজিজে নতুন বই কেনার মাঝে আমি কখনো খুঁজে পাই না!
মন্তব্য
পুরোপুরি একমত হতে পারলাম না। বই এর ব্যাপারে এক-একজনের চিন্তা একেক রকমের। যেমন ধরা যাক আমার কথাই। নতুন বই এর আবেদন আমার কাছে অনেক বেশি। যেই আনন্দের বই নিউ মার্কেটের সামনে শস্তায় পাইরেটেড কপি পাওয়া যায়, সেই আনন্দের বইই আমি গলা কাটা দামে, পকেট শূন্য করে কিনি আজিজ থেকে। কারণ কী?
কারণ আর কিছুই না, নতুন বই এর গন্ধ আমার ভালো লাগে। শুধু বই এর ভেতরের লেখা না, তার প্রচ্ছদ, বাঁধাই, ফন্ট সবকিছুই আমার কাছে প্রধান হয়ে উঠে। ভেবে বসবেন না আমি টাকার সাগরে সাঁতার কাটি। আপনি যেরকম বললেন, সেই একই রকম ভাবে টিউশনির টাকা দিয়েই আমি বই কিনি। তবু কেন যেন নতুন বইয়ের গন্ধ, স্পর্শ আমাকে অনেক বেশি টানে।
তবে সবসময় কিন্তু এই পথেও হাঁটা যায় না। মাঝে মধ্যেই হয়তো অনেক পুরানো বই যেগুলো আজিজ কিংবা নিউমার্কেটে নতুন খুঁজে পাই না, কিংবা ইংরেজী কোন বই যার আজিজ কিংবা নিউমার্কেট মূল্য ৬০০-৭০০ টাকা, তাদের খোঁজে কিন্তু আমি নীলক্ষেতেই যাই। এখনো পর্যন্ত আমার কাছে রিডার্স ডাইজেস্টের একমাত্র উৎস নীলক্ষেত।
আবার আমার এক খুব প্রিয় বন্ধু আছেন, যার কাছে নীলক্ষেত খুবই প্রিয়। তাঁকে নিয়ে যখন আজিজে বই কিনতে যাই, তিনি মুখ গোঁজ করে থাকেন, আর বলেন আমার নীলক্ষেতই ভালো, কত বই কিনতে পারতাম।
পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে ব্যক্তিগত পছন্দের। শুধু মাত্র কোন দোকান থেকে বই কেনে, এই আর্গুমেন্টের আওতায় মনে হয় পাঠকশ্রেণী বিচার করা সঠিক এবং যুক্তিযুক্ত না।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
সবজান্তা, আমায় লেখায় বইকেনার স্থান দেখে আমি যদি পাঠকশ্রেণী বিচার করে থাকি, তাহলে খুবই ভুল কাজ করেছি। তবে নীলক্ষেতের পাঠকশ্রেণীকে আমার কাছে যে কারণে সিরিয়াস মনে হয়েছে তার গল্পটি বলি। আমি একসময় প্রায়ই নীলক্ষেতে ঢুঁ মারতাম। (এখন অবশ্য তেমন যাওয়া হয় না)। আর প্রায়ই একজন দাঁড়ি গোঁফে মুখ ঢাকা এক আউলা-জাউলা যুবককে দেখতাম। আজকে এ দোকানে তো কালকে সে দোকানে। খুব নিবিষ্ট মনে বই খুঁজে ফিরছেন। এদিকে বগলেও এক পাজা বই। আবার কখনো উবু হয়ে বসে বইয়ের কনটেন্ট দেখছেন। তখন থেকেই কেন যেন সিরিয়াস পাঠকের কথা মনে হলেই তার ছবিটি ভাসে।
হুম..................... আমার মতে বই এর প্রতি ভালবাসাটাই আসল হওয়া উচিত , কোন খান থেকে বই কিনলে বোদ্ধা পাঠক মনে হয় তা কোন মানদন্ড হওয়া উচিত না । তবে যত বই পড়া যায় এই নীতিতে বিশ্বাসী আমার কাছে নীলক্ষেতই স্বর্গ ।
নিবিড়
হু, সেটাই।
দরকারি বই সব জায়গা থেকেই খুজে বের করতে হয়। দরকারি বই কখনো চোখের সামনে নিজে থেকে হাজির হয় না। সেটা হোক নীলক্ষেত, হোক আজিজ সুপার মার্কেট। হোক বিশ্বের অন্য কোনো দোকান।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
জ্বী পলাশ ভাই, দরকারি বই কখনো চোখের সামনে হাজির হয় না। খুঁজে নিতে হয়। এই যেমন আমি ডেভিড ওগিলভি'র কনফেসন অব অ্যান অ্যাডভারটাইজিং ম্যান বইটি খুঁজতেছি। কোথাও পাচ্ছি না।
আমাদের হাত খরচের টাকার সংকট থাকতো সব সময়, মেয়েদেরতো বাজারে যাওয়ার উপায় নাই, তাই পয়সা মারার সুযোগ নাই, ইধার - উধার ই ভরসা। আবার শুধু বই কিনলেই চলে না, নানা রকম দুল - চুড়ির খরচও চালাতে হয়। আমাদের টার্গেট থাকতো যতো কম সাবানে যতো বেশী ফেনা তোলা যায় কারন বই পড়া, গান শোনা এইই ছিল পড়ার বাইরে একমাত্র রিক্রিয়েশন।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
তানবীরা'পু, ক্যামনে কম সাবানে বেশী ফেনা তুলেছেন তার গল্প এইবেলায় সচলে ঝেড়ে ফেলুন তো। গল্প শোনার অপেক্ষায় রইলাম।
এই কথাটার সাথে পুরোপুরি একমত। আসলেই বই কেনার অনুভূতির সাথে আর কোনকিছুরই তুলনা হয় না। তবে আমিও নিতান্ত বাধ্য না হলে সাধারণত নতুন বই কেনাই পছন্দ করি। কারণটা সবজান্তা তার মন্তব্যে সুন্দর করে গুছিয়ে বলেছেন। তাই আর রিপিট করলাম না।
_______________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
আমি ভাই বইখাদক টাইপের একজন। নীলক্ষেতে গিয়ে হাত বোঝাই বই কিনতে পারি। এ কারণেই নীলক্ষেতের প্রতি বেশি টান। তাছাড়া নীলক্ষেতে হাজারো ভীড়ের মাঝে একটি দরকারী বই খুঁজে বের করার মধ্যে রত্ন আবিস্কারেরও মজা পাই।
পুরনো বই খুজে বের করার মাঝে গুপ্তধন আবিষ্কার করার আনন্দ আছে।
পাশাপাশি পাইরেটেড বইকে ঘৃণা করি বলে আজিজ মার্কেটকে বেশি পছন্দ করি।
তাই আমার মনে হয় শুধুমাত্র পুরনো বইয়ের জন্যই নীলক্ষেতে যাওয়া যেতে পারে।
গল্প, উপন্যাস, কবিতা'র বই নয়, তবে একাডেমিক বইয়ের ক্ষেত্রে আমি সবসময়ই পাইরেডেড বই কিনেছি। ইউনি লাইফই পার করলাম পাইরেডেড বই দিয়ে।
আসলে বই এমন একটা জিনিস এবং দর্শনের নাম, তা যেখান থেকেই সংগৃহীত হোক এর মাজেজা পৃথিবীর আর কোন কিছুর সাথেই তুলনীয় নয়। নতুন বইয়ের কড়কড়া গন্ধ যেমন বাসররাতের ইন্দ্রীয়কাঁড়া ঘ্রাণ, তেমনি হঠাৎ করে পেয়ে যাওয়া পুরনো মহার্ঘ বইটিও হারানো প্রেয়সীকে নতুন করে পাওয়ার ভাবাবেগের মতোই।
সাধারণত আগে থেকে সুনির্দিষ্ট কোন বইয়ের লক্ষ্য থাকলে আজিজেই ঢু মারি আগে। আর বাড়তি সময়ে পুরনো বইয়ের দোকানগুলোতে খোঁড়াখুড়ি করি যদি কোন মানিক্যের সন্ধান পেয়ে যাই, এ আশায়।
বোদ্ধা পাঠক মাত্রেই একটু ছন্নছাড়া টাইপেরই হয়। গিন্নির দেয়া মাছ কেনার টাকা নিয়ে কখন যে বই কিনে ফেলেন, তিনিও কি তা বলতে পারেন ? যখন খেয়াল হয়, ট্রেন মিস করা অনিবার্য গন্তব্যের যাত্রীর মতো ফেল ফেল করে গাড়ির পাছার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কীই বা করার থাকে !
পাঠকের কোন বয়স নেই, পাঠকের কোন দেশ নেই, পাঠকের কোন সময় নেই। স্থান কাল পাত্র নিরপেক্ষ এই পাঠকের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটা জিনিস থাকে না, সেটা সঙ্গতি।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
তোফা বলেছেন!
নিবিড়ের সাথে একমত। ব্যক্তিগত অভিরুচি অনুসারে বই কেনার ক্ষেত্র পরিবর্তন হলেও আসল ব্যাপার হলো বইয়ের প্রতি ভালোবাসা। কোথা থেকে বই কেনা হলো, নতুন না পুরাণ তাতে কিছু আসে যায় না।
আমিও সহমত।
কলেজে থাকতে এমনকি ভার্সিটিতে এসেও প্রথমদিকে প্রচুর বই কিনতা। এরপর এলো ইন্টারনেট...বই কেনার অভ্যাটা তো গেলোই...গেলো পড়ার অভ্যাসটাও। তারপরের ছুটিতে বাসায় গেলে আয়েস করে বই পড়তাম। কেনার ক্ষেত্রে আমার আমার তেমন কোন বাছ বিচার নেই...পড়তে পারলেই হলো। তবে নতুন বইয়ের গন্ধ বেশি খুঁজতাম কলেজ লাইফে। আজিজে মাঝে মধ্যে মেজাজ খারাপ হয়...বেশিরভাগ বিক্রেতার ভাবখানা এমন যে একেকজন মস্ত বড় কবি সাহিত্যিক...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
http://biprodhar.com
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
আচ্ছা বিপ্রদা, ইন্টারনেট কী আমাদের বইবিমুখ করছে?
বইকেনার স্থান নিয়ে গল্প এবং তা নিয়ে অম্লমধুর তর্ক উপভোগ করলাম। বইয়ের ভেতরের গল্প কিছুই পেলাম না। পেলে উপকৃতও হতাম।
____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]
____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]
নতুন মন্তব্য করুন