০১.
এই সপ্তাহটা খুবই বিচ্ছিরি কাটছে। কোনো কাজই ঠিকমতো হচ্ছে না। গেলো সপ্তাহ শেষে যে যে প্ল্যান করেছিলাম, তার একটাও করতে পারিনি ঠিকমতো। কোনোটা শুরু করলেও শেষ করতে পারিনি। মাঝ পথে আটকে গেছে। এমনকি সপ্তাহান্তে যে বোনের বাসায় যাই, দুই বোনঝি’র সাথে খুনসুটি করতে, এ সপ্তাহে তাও হয়ে উঠেনি। প্রায়ই ফোনে বোনঝি’র ভাঙ্গা ভাঙ্গা কণ্ঠে নানা আবদারের ফিরিস্তি শুনি।
০২.
এমবিএ পরীক্ষা শেষ সেই রোজাতেই। তখন থেকেই সিরিয়াসলি ভাবছি নাটক লিখবো। গল্প মাথায়। মাঝে মাঝে সেটা একটু এদিক-সেদিক নাড়িয়ে দেখি, প্লট সাজাই। গল্পে জন্য মুল চরিত্রে কে পারফেক্ট হতে পারে তাও মনে মনে নির্বাচন করি। এইসব কথাবার্তা বন্ধুস্থানীয় মিজান ভাইকে বলি। মিজান ভাই গল্প শোনেন। তার মনে ধরে। তিনি শেয়ার ব্যবসা করে সম্প্রতি ভালোই টাকা পয়সা করেছেন। বলেন, এই নাটক বানাতেন কত লাগবে। আমি এর-ওর কাছে জিজ্ঞেস করে আইডিয়া নিয়ে তাকে জানাই, এই লাখ দেড়েক। মিজান ভাই কাছা মেরে বলেন, আমিই এই নাটকটির প্রসিউসার। আপনি স্ক্রিপ্ট মাথা থেকে কাগজে নিয়ে আসেন। এই সময় আমাদের সাথে যোগ দেয় আরেক বন্ধুস্থানীয় তরুণ লোবন। লোবন তানভীর মোকাম্মেলের কাছে ডিরেক্টিং শিখেছে। আমি জোরেসোরে স্ক্রিপ্ট-এ নামি। এক মাস যায়, স্ক্রিপ্ট মাঝ পথে গিয়ে থেমে থাকে। রাত-বিরেতে মিজান ভাই ফোন দেন, কি মিয়া, স্ক্রিপ্ট কতদূর আগালো। আমি বলি, হইত্যাছে। আমার সময় কিন্তু পুরো অক্টোবর মাস। আমি মনে মনে বলি, অক্টোবর মাস শেষ হতে আর একদিন বাকি।
০৩.
মূর্তালা রামাত রাত-বিরেতে ফোন দেন না। তবে সকালে অফিসে ঢুকেই তাগাদা, কই মিঃ পান্থ, আমার লেখা কই। আমি বিপন্ন হই। মূর্তালা ওর লিটলম্যাগের জন্য একটি লেখা চেয়েছে। কথা দিয়েছি, এই সপ্তাহেই দেবো। ই-মেইলে সবার লেখা আসে। মূর্তালা আমাকে দেখান। আর আমার লেখার তাড়া দেন। মূর্তালার তাগাদার মাঝেই সাপ্তাহিক পত্রিকার সহকারী সম্পাদক জব্বার ভাইয়ের ফোন আসে। রাশি সংখ্যার লেখা দেয়া হয়নি। টাইমলাইন পার হয়ে গেছে ২৫ অক্টোবর। সময় এক সপ্তাহ বাড়িয়ে নিয়েছি। তারপরও লেখা হয়ে উঠেনি।
০৪.
কয়েকদিন আগে নাটক নাটক করতেছিলাম বলে সিনিয়র কলিগ সাগর ভাই ফিল্ম ও মিডিয়ার উপর বেশ কয়েকটি ই-বুক দিলেন। পড়বো পড়বো করে একটাও পড়া হয়ে উঠেনি। বেশ কয়েকটি ঈদসংখ্যা পড়ে আছে। উল্টে-পাল্টে দেখা হয়েছে শুধু, কিন্তু পড়া হয়ে উঠেনি। তেমনি পড়া হচ্ছে না, আমার প্রিয় একজন লেখক সুমন সুপান্থের গল্প: অন্ধরাতের ধারাবিবরণী। অফিসে দৌড়ের ওপর অতো বড়ো গল্প পড়ার সময় হয়ে উঠেনি বলে, সবগুলো পর্ব প্রিন্ট আউট নিয়েছি, রাতে রুমে আয়েশ করে পড়বো বলে। আজো পড়া হয়ে উঠেনি।
০৫.
দিন কয়েক আগে এক বন্ধু বললো, ইন্ডয়ান আইডল দেখিস। আমি বললাম, ওসব দেখি নারে। ইশ! তুই যদি তুলিকাকে দেখতিস। দেখার কি আছে? গান তো শোনার। চেহারাটা যা কুল, আর হাসিটাও... মামা, আমি তো তুলিকার প্রেমে পড়ে গেছি। ভাবছি, শুনবো না, দেখবো একবার তুলিকাকে। কলিকাতার মেয়ে। আনু মালিক গানের চেয়ে নাকি তার রূপের বেশি ভক্ত। তুলিকাকে অবশ্য এখনো দেখা হয়ে উঠেনি গুগল মামায় সার্চ দিয়ে।
০৬.
স্কুলবেলার এক বন্ধু এসেছে। ঢাকায় তাঁতবোর্ডের কী একটা টেন্ডারের কাজে। আমার হলেই উঠেছে। রাতে দু’জনের কত স্মৃতি রোমন্থন। এই রোমন্থনের মাঝেই রাত যায়। সকালে অফিসে এসে ফেসবুকে দেখি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টসহ আরো কিছু অ্যাপ্লিকেশন রিকোয়েস্ট। এইসব হাজারো রিকোয়েস্টের কারণেই ফেসবুকে বিরক্তি আমার। কয়েকদিন আগেই একগাদা রিকোয়েস্ট চোখ বুজে ইগ্নর করেছি। তবে ফেসবুক নিয়ে এই বিরক্তিটা থাকলেও কিছু সুবিধাও আছে। পুরানো অনেককেই দেখা মিলছে এখানে। আবার যোগাযোগ হচ্ছে। এই যেমন আজকের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টকারী জয়দীপ দে শাপলু। আমার পাফো’র সময়কালের এক নক্ষত্র। তারপর কতোশতো স্মৃতির রোমন্থন। শাপলুদা এখন চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায়। থাকেন আমার হলের পাশেই- কাঁটাবনে। কয়েকদিন ধরে ভাবতেছি, অফিস ফেরতা পথে ঢুঁ মারবো তার ঢেরায়। হয়ে উঠছে না তা। একদিন শাপলুদা আমাকে নিয়ে লিখেছিলেন, “পান্থ-টা লেখে ভালো, তবে মানে পেজগি। পুরানের কথা নিয়ে বাক্যের তেজ কি।”
০৭.
বাক্যের তেজ বুঝি ফুরিয়ে গেছে আমার। তাই কোনোটাই ঠিকমতো করতে পারছি না। তবে কী আমার বালকবয়স বাধর্ক্যে পৌঁছালো!
মন্তব্য
পান্থ,
শুভেচ্ছা।
আপনার স্মরণ শক্তি ভালো। অন্তত আমার মতো দূতিহীন নক্ষত্র'(!) কে মনে রেখে তা প্রমাণ করেছেন। তবে আপনাকে নিয়ে কাটা ছড়াটায় সামান্য গড়বড় হয়ে গেছে।
আপনি লিখেছেন_
“পান্থ-টা লেখে ভালো, তবে মানে পেজগি।
পুরানের কথা নিয়ে বাক্যের তেজ কি।”
আসলে তা হবে_
“পান্থ-টা লেখে ভালো, তবে মারে পেঁজগি।
পুরাণের কথা নিয়ে বাক্যের তেজ কি।”
আর আপনার লেখার তেজ কমেছে নি:সন্দেহে। তবে এতে লাভই হয়েছে। আপনার লেখা অনেক বেশি উপাদয়ে হয়েছে। অনেক বেশি চৌকস।
আশা করি যোগাযোগটা রাখবেন।
একদিন আসেন না, দেখে যাবেন চিড়িয়া-বাজারের পাশে এই অদ্ভূত চিড়িয়াটা কেমন আছে।
ভালো থাকবেন-
শাপলু
শাপলু দা, ছড়ার উদ্ধৃতি আসলে টাইপিং ভুল। মারে লিখতে গিয়ে মানে হয়ে গেছে।
হুম বাক্যের তেজ তো কমেই গেছে। আর যাবোনে একদিন আপনার ওইখানে। আগামী দুইদিন ছুটি তো। যোগাযোগ করার একটা সর্বাত্নক চেষ্টা চালাবো।
ফেসবুক ভালো লাগে না? কমেন্ট কইরা ভাসাইয়া ফেলছেন, কয়া দিমু কিন্তু।
ক্যামনে কী? আলমগীর ভাই এতো কিছু জানে!!!
আমারতো সেই ছোটকালে দেখা বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ে গেল- ঘরের কথা পরে জানলো কেমনে?
শাপলুর ছড়াটি ভুল হয়েছে একটা শব্দ ।
আসলে ছিল " পান্থটা লেখে ভালো , তবে মারে পেঁজগি /
পুরানের কথা দিয়ে , বাক্যের তেজ কী ।"
ধুর মিয়া , তোমরা যদি এমন ম্যান্দা মারা লেখা লেখে বুড়া বুড়া ভাব নেও , তাহলে আমরা কোন চুলোয় গিয়ে মরি ।
শাপলুকেও ব্লগানিতে উস্কানি দিয়ে এনেছি ।
সামহোয়্যারে রেজিষ্ট্রেশন করেছে দেখলাম ।
আরিফ ভাই, ভুলের কথা শাপলু ভাইয়ের মন্তব্যের উত্তরে একবার বলেছি- টাইপিং মিসটেক।
আমিও শাপলু ভাইকে সচলে ব্লগরব্লগর করতে বলেছি। এখন অপেক্ষা করতেছি তার লেখা দেখার।
বেড়ে হয়েছে....
---------------------------------------------------------
আমরা যারা শিখিনি চাষবাস,ফসলের গীত
গুলালিতে পাখি হত্যা
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
জ্বী, আচ্ছা।
জন্মদিনের খানা-খাদ্য কই?
খালি লেখায় তো আর পেট ভরে না।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
কীর্তিনাশা দা' আপনার মতো লেখক পাঠকের কথা ভেবেই তো একখানা লেখা দিলাম যাতে পেট পূর্ণমাত্রায় ভরে। আর এখন কী কন।
এইরকম দিনে শুকনা কথায় চিড়া ভিজানোর অপচেষ্টা।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
তা-ও তো একটা বেশ ভালো ব্লগরব্লগর হ'লো সময়ের ফাঁক গ'লে। আমার তো তা-ও হয় না।
সময় কেবল ছুটছে, পোড়-খাওয়া হরিণের চেয়েও জোরে, ইলেকট্রিক রেলের মতো।
একটা কাজ হ'লো, বরং অকাজ বলা উচিততর!
তুলিকা কিংবা ইন্ডিয়ান আইডল-জাতীয় খবর-বেখবরের কবলে ইদানিং পড়িই অনেক কম। তোমার লেখায় তুলিকার গল্প প'ড়ে আমি কিন্তু এই কমেন্ট করার আগে একবার গুগল মামার অ্যালবাম থেকে দেখে নিয়েছি তুলিকাকে। টাইটেল দেখলাম গাঙ্গুলী। শব্দগত মিলের জন্যই কি না জানি না- আমার কাছে ভারতের 'গাঙ্গুলী'দেরকেই সবচেয়ে বেশি বাঙালী লাগে। তবে, না, প্রেমে পড়ি নাই। আমার মনে হয়ে গ্যালো অন্য শোক। ইন্ডিয়ান আইডল- ১-এর একদম প্রথম রাউন্ডের সবচেয়ে দেখতে-কঠ্ঠিন মেয়েটা ওই প্রথম রাউন্ডেই বাদ প'ড়ে গিয়েছিল, আমার চোখে পড়ার ১৫ মিনিটের মাথায়। যথেষ্টই দিওয়ানা হয়েছিলাম ওই ছোট্ট হ'লেও বড়-অলক্ষুণে ক্ষণেই। সে-ও ছিল অমিত ট্যান্ডন-এর পার্টনার, প্রথম রাউন্ডের ডুয়েট পারফরম্যান্সে।
ঈমানে বলছি, এই মুহূর্তে ওর জন্য মন কেমন করছে।
মানুষের জীবনে কতো অদ্ভুত ধরনের দুঃখ-কষ্ট থাকে! (হুমায়ূন আহমেদের সংলাপই চ'লে এল শেষে দুঃখের ঠ্যালায়। দাঁড়াও, একটা কোটেশন মার্ক দিই। "মানুষের জীবনে কতো অদ্ভুত ধরনের দুঃখ-কষ্ট থাকে!")
লেখা ভালো হয়েছে তোমার, সব সময়ের মতোই। অন্যদের মন্তব্যও পড়লাম। ভালো লেগেছে।
সময়ের নতুন সাজন হোক, তোমার হোক সাধন- এই শুভকামনায়-
বেটার লেট দ্যান নেভার।
_ সাইফুল আকবর খান
পান্থ ভাই, ফিল্ম ও মিডিয়ার উপর ই-বুক গুলো আপলোড করে দেন না, একটু পড়ি।
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
দেবুদা' আপনার ইমেইল দেন, পাঠিয়ে দিচ্ছি।
- আপনার নাটকের জন্য কেবল এবং কেবল মাত্র একজনই পারফেক্ট পারফমারের নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে!
তিনি হচ্ছেন আপনাদের সবার পরিচিত মাননীয়, সম্মানিত ধুসর গোধূলি।
পয়সা পাতি কেমন দিবেন সেইটা বিবেচ্য থাকবে যদি বিপরীতে ভালুকা না আলুকা (কি জানি বললেন নামটা, ঐযে কলকাতার মেয়ে)'র মতো তথাকথিত প্লাস্টিক কেউ থাকে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বস, আপনে পারেন-ও!
নায়কের সাথে কিছু চ্যালা-চামুন্ডা ঘোরে যে... অথবা বন্ধু থাকে, যে নায়কের দুঃখের সময় (নায়িকার ছ্যাঁকা খাওয়ার পর) দাঁতভাঙ্গা সব ডায়লগ দেয়... আমারে ওইরকম একটা পার্ট দিলেও হবে
ধূগোদা এবং অতন্দ্র প্রহরী দাদা,
একটা মহাকাব্যিক নাটক লিখতেছি। ওইখানে আপনাগো পাট রাখছি। ঈমানে কইতেছি, ইতিমধ্যে খসড়া হয়ে গেছে। খসড়াটা চাইলে দেখতে পারেন: http://www.sachalayatan.com/pantha_rahman_reza/17130
তুলিকা মেয়েটা আসলেই সুইট... তবে একটু ভ্যাম্পায়ারের মতো দাঁত বের হয়ে থাকে এক সাইডে...
ই-বুক গুলো অধমকেও পাঠানো যায় কষ্ট করে? ঝরঝরে লেখাটা আগে কীভাবে চোখে পড়েনি ভাবছি। ভালৈছে।
পচুর গিয়ানজাম মাথার উপর নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেখে আমোদ লাগলো।
=============================
হুমম! কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ আরকি।
নতুন মন্তব্য করুন