বইয়ের প্রচ্ছদ
বইটি পড়ে ছিল দেরাজে। কিছুটা অযত্নে। কবিতায় তেমন বুঝি না বলে হাত বাড়িয়ে তা চেখে দেখা হয়নি। বইটির স্রষ্টা দেয়ার সময় বলেছিলেন, একটু পড়ে জানায়েন কেমন লাগলো। বইয়ের স্রষ্টার সাথে প্রতিদিনই দেখা হয়, নানা বিষয় নিয়ে ভাবনার লেনদেন হয়। কিন্তু তার বই নিয়ে বলা হয় না কিছু। কারণ ওই যে ভয়, কবিতা না বোঝার। তাই পড়া হয়নি। এই সেদিন কী মনে করে ধুলির তরঙ্গ মুছে ফেলে হাতে নিই একবার। পাতা উল্টাই, পড়ি। এক অদ্ভুত মুগ্ধতা নিয়ে নয়নার মুখোমুখি হই।
১.নয়না বলেছিল আর জোছনার জলে ভেসেছিলো
রাজদীঘিপাড়- পদ্মগুলো ডুবেছিলো হঠাৎ
অতল চিতলের পিঠে, কবেকার কথা আজও
কিংবদন্তি হাঁটে শ্যাওলা শয্যায়।
(নয়নার মুখোমুখি)
২.ব্যারাকে ব্যারাকে হত্যার ময়দানে
রাইফেল হাতে যারা উৎসর্গিত
হাস্যোজ্জ্বল স্তনের আলিঙ্গনে তারা কবুতর;
ভালোবাসার বিনম্র বাহুডোরে ডিগবাজি খাক।
( স্তন- ১)
৩.আসুন এবার খুঁজে দেখি
সেই গল্পটার মতো
হাতির বর্ণনা দেই; দেশের বর্ণনা দেই!
(অন্ধনামা)
মুগ্ধ এই কবিতা ও কবিতা বইয়ের স্রষ্টা কবি মূর্তালা রামাত। গেল বইমেলায় প্রকাশিত মূর্তালার এই কবিতা বইয়ের নাম কষ্টালজিয়া। মূর্তালা সম্পর্কে কিছু বলতে যাওয়া আমার জন্য কিঞ্চিত বিব্রতকর বটে। কারণ আমরা একই অফিসে চাকরি করি। আমাদের পরস্পরের ভাবনার অনেক কিছু নিয়েই শেয়ার করি। তর্ক ও বিতর্ক করি। আবার আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ও ব্যাচমেট। তাই তার বই নিয়ে কিছু বলতে যাওয়া পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে যায়। আবার খানিকটা তা প্রোপাগাণ্ডার মতোও দেখায়। এই অস্বস্তি নিয়েও বলি- মূর্তালা তার কবিতায় নতুন নতুন শব্দ তৈরির প্রচেষ্টা সত্যি প্রশংসাযোগ্য। এই শব্দ, শব্দবন্ধ টিকবে কী’না তা মহাকাল বলবে। কিন্তু সাহ্যিতিক মাত্রই যে প্রচলিত শব্দ ও শব্দবন্ধের পাশাপাশি নতুন নতুন আনকোড়া শব্দ ও শব্দবন্ধ সৃষ্টি করবেন, এমনটাই স্বাভাবিক। কষ্টালজিয়া, তুইপিডিয়া, বিলাইপনা, ভালোবাসাতো ভাই, মায়ামিঠাই এরকম আরো নতুন নতুন শব্দের সমাহার মূর্তালার কবিতা বইজুড়ে।
বইয়ের স্ল্যাপে কবি ও প্রাবন্ধিক বিশ্বজিৎ ঘোষ মূর্তালাকে বিশ্বায়ন যুগের কবি বলে অভিহিত করেছেন। এ কথা সত্যি বিশ্বায়ন যুগের অনেক অনুষঙ্গ মূর্তালা রামাতের অনেক কবিতারই মূল বিষয়বস্তু। বিশ্বায়নের ধাক্কা তার কবিতা শরীরজুড়ে স্পষ্ট প্রতীয়মান। তবে বিশ্বায়নের এই তীব্র গতির মাঝেও কোথাও যেন স্নিগ্ধ সুষমার সন্ধান পাওয়া যায়-
লতাদির বুকে অবুঝ কৈশোর, হয়তো স্তন নয়- হৃদয়ে
বিদ্ধ হয়েছিলো চাপা অভিলাষ মারে তোরে কতোদিন
দেহিনা আর নদীডার কতা খুব মনে পড়ে; সকালের
বাসে চেপে নিরুদ্দেশ হয় কুয়াশার রং
কুয়াশার রং মেখে আমি নতুন এক মূর্তালাকে দেখি। যার ভেতরে বিশ্বায়নের ধাক্কা সামলিয়েও তুমুল মানবিক হয়ে উঠার প্রচেষ্টার দেখি।
মন্তব্য
দারুণ।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
...... এখনো নারী মানে তুমি কত রাধিকা ফুরালো.
---------------------------------------
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
সুন্দর!
পদ্য-বই-টা যেমন সাহসী সুন্দর (বই প'ড়েই বলছি), এই পর্যালোচনাও তেমনি গদ্যসুন্দর বিনয়-সাবলীল।
যাও মূর্তালা, পান্থ! আরেকজন সহকর্মী হয়ে আমিও তোমাদের প্রপাগান্ডায় নাম লেখালাম।
_ সাইফুল আকবর খান
'তবু ও নদীর মানে স্নিগ্ধ শুশ্রুষার জল...'
কি অসম্ভব প্রিয় ছিল এই লাইনগুলো ।
পুরো কবিতাটা কি দেয়া যায়? @ পান্থ?
আর কষ্টালজিয়ার কবি মুর্তালা রামাত, সামান্য পাঠকের অভিনন্দন গ্রহন করুন ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
জীবনানন্দের এই কবিতাটা এই মুহূর্তে কাছে নাই, আশা করি অচিরেই দিতে পারবো।
একটু অনাহুতের কাজ করি পান্থ রেজা ভাই। জীবনানন্দের এই কবিতাটা যতদূর জানি -
তোমার সৌন্দর্য নারি, অতীতের দানের মতন
মধ্যসাগরের কালো তরঙ্গের থেকে
ধর্মাশোকের স্পষ্ট আহবানের মত
আমাদের নিয়ে যায় ডেকে শান্তির সংঘের দিকে- ধর্মে নির্বাণে,
তোমার মুখের স্নিগ্ধ প্রতিভার পানে।
অনেক সমুদ্র ঘুরে ক্ষয়ে অন্ধকারে
দেখেছি আলো হাতে নিয়ে তুমি
সময়ের শতকের মৃত্যু হলে তবু
দাঁড়িয়ে রয়েছে শ্রেয়তর বেলাভূমি।
যা হয়েছে, যা হতেছে এখুনি যা হবে
তার স্নিগ্ধ মালতী-সৌরভে.
মানুষের সভ্যতার মর্মে ক্লান্তি আসে
বড় বড় নগরীর বুকভরা ব্যাথা
ক্রমেই হারিয়ে ফেলে তারা সব সংকল্প- স্বপ্নের
উদ্যমের অমূল্য স্পষ্টতা।
তবুও নদীর মানে স্নিগ্ধ শুশ্রুষার জল, সূর্য মানে আলো
এখনো নারী মানে তুমি, কত রাধিকা ফুরালো।
(মিতভাষণ- জীবনানন্দ দাশ)
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
ধন্যবাদ রাফি ভাই। কবিতাটা দিয়ে অনাহুত নয়, হ্যার্দিকতারই পরিচয় দিলেন।
ভালো লাগলো। কবিতাগুলো (যেটুকু এখানে পড়লাম), সাথে কবির নতুন শব্দ আর শব্দবন্ধ তৈরির প্রচেষ্টাও।
তবে পান্থ'দা, হোক না সহকর্মী+বন্ধু, হোক না সামান্য বায়াসড ওপিনিয়ন, আরেকটু মনে হয় লিখতে পারতেন
মূর্তালা রামাত নামটাই আমার চমৎকার লাগে ! উনার কিছু কবিতা যেগুলি সচলে দিয়েছিলেন কিছু পড়েছি। মন্তব্য করা হয়েছে কি না খেয়াল নেই, তবে তাদের মধ্যে কিছু যে ভালো লেগেছিলো তা স্পষ্ট খেয়াল আছে।
পান্থদা যে কবিতাগুলির খন্ডাংশ ( নাকি এগুলিই পুরো ? ) দিলেন সেগুলিও দারুন লাগলো পড়তে।
*****
আরেকটা ছোট্ট কথা,
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
কবিতাগুলো খন্ডাংশই। পুরো নয়।
হ, টাইপিং মিসটেক।
যারা বয়েসরে ফাঁকি দেয়, এরা যে পোস্টেও ফাঁকি দেয়, এই সমীকরণটা মিলে না গেলেই বোধয় ভালো হতো।
কাব্যগ্রন্থের রিভিউকে অন্যালোচনা ( অণু + আলোচনা) বানানোর বিপক্ষে অবস্থান নিলাম। আশা করি অন্য সচলরা আমার বিপক্ষে যাবেন না।
ক্ষমাপ্রার্থণাপূর্বক এটার একটা আপডেট পোস্ট দেয়া হোক।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
বয়স ফাঁকি দেয় আমাদের নজু ভাই। পান্থ না।
আসলে বইটা পড়তে গিয়ে ভালো লাগা থেকেই লেখা। সমালোচকদের মতো বই আলোচনা ছিল না। এ কারণেই মনে হয় বড়ো হয়নি।
বইটা পড়তে হবে...
মূর্তালা... পাঠকের ভালোবাসা গ্রহণ করুন।
আর পান্থ... ধন্যবাদ... সুন্দর লেখার জন্য...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ভাষাকে গতিময়, ছন্দময় করাও লেখক, কবি, সাহিত্যিকের একটা কাজ। নতুন শব্দ কয়েন করার উদ্দেশ্যও তাই।
ধন্যবাদ পান্থ রেজা।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
নতুন মন্তব্য করুন