বিষন্ন সন্ধ্যার কথামালা

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি
লিখেছেন পান্থ রহমান রেজা (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৪/১২/২০০৮ - ১০:১৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সময় কত দ্রুত বয়ে যায়। কেএফসিতে বসে মোরগের রানে কামড় দিতে দিতে তোমার সত্যি সত্যি মনে হয়, সময়টা আসলেই দ্রুত চলে গেছে। তুমি কিছুতেই বুঝতে পারোনি। এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে তোমার মনে পড়বে বিজ্ঞানী সুদর্শনের কথা। মনে পড়বে অ্যারো অব টাইমের কথা। মনে পড়বে ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইমের কথা। এসব তোমার মাথার মধ্যে ভজঘট পাকায়। যদিও তোমার সাথে আসিফ ভাই আছে। ভজঘটের জট খুলে দিতে পারবে। আসিফ ভাই পেশাদার বিজ্ঞান বক্তা। একটু বোহেমিয়ান টাইপের মানুষ। তোমার সাথে তার কিছুতেই পড়বে না। তাই আসিফ ভাই টাইম নিয়ে একটি দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়ে যখন বলবে, চলো পান্থ, তেঁতুলিয়া যাই, কিংবা সন্দীপ যাই, এক জনপদ কিভাবে নিশ্চিহ্ন হয় সমুদ্রের গ্রাসে, অথবা মহেশখালী যাই, দেখে আসি পৃথিবীর নির্জনতা। তখন তুমি বিপন্নবোধ করবে। কারণ তোমার বাঁধা চাকরি। সকাল সন্ধ্যা ডিউটি। তুমি কিভাবে যাবে। তখন তোমার মনে হবে, সময়টা আসলেই দ্রুত চলে যায়। এই যেমন, এখন মোরগের রানে সস মিশিয়ে খেতে খেতে মনে পড়ছে। তখন কেএফসি’র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আক্কু চৌধুরি ফ্লোর ভিজিট করতে এসে তোমাকে দেখবে, স্বভাবসুলভ মৃদু হাসবে। দেখবে তুমি একা একা খাচ্ছো। তোমার সাথে আগের দিনকার মতো রোমানা নাই। তখন বুঝবে, তোমার সময় চলে গেছে। তারপরে রোজকার মতো আক্কু চৌধুরি বলবে, কি হে বালক। আর তুমি পাশে থাকা বালিকাকে হারিয়ে স্ট্যাটাস লিখবে, এগেইন সিঙ্গেল।

আচ্ছা মানুষ কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে? এটা ভাবতে ভাবতেই তোমার মনে পড়বে, বন্ধু বুলবুলের কথা। সেই স্কুলবেলাতেই বুলবুল ধারালো ব্লেড দিয়ে আঙুল কেটে চিঠি লিখেছিল তনুকে। তনুও তোমাদের ক্লাসের বান্ধবী। তো বুলবুল রক্তের অক্ষরে লিখেছিল, এক জীবনে কাউকে যদি নিজের চেয়ে বেশি ভালোবেসে থাকি, সে হলো তুমি। তনু তুমিই আমার ধ্যানজ্ঞান। তুমিই আমার দিবসরজনী। সেই বালক বয়সেই বুলবুলের এই কথাগুলো তোমাদের আত্নায় গেথে গিয়েছিল। এক বিস্ময়বোধে আক্রান্ত করেছিল। এই বিস্ময়বোধ নিয়েই তোমাদের পাড়ায় আসে একুশে টিভি। তারও কিছুদিন পরে তুমি প্রেমে পড়ো অগ্নিলার। অগ্নিলা তখন একুশে টিভিতে একটা নাটক করেই হিট। তো সেই নায়িকার প্রেমে তোমার হৃদয় তোলপাড়। এক মায়াবি বিভ্রমে বন্দি। তুমি তার প্রেমে পড়ে আবিস্কার করো একুশে বইমেলায় প্রকাশিত শিল্পী সৈয়দ ইকবালের শিশুতোষ বই ‘অগ্নিলার বাবার হাড্ডিগুড্ডি’। এও দেখো অগ্নিলা তার বাবার হাড্ডিগুড্ডি নিয়ে কানাডা প্রবাসী। কত দূরের দেশ কানাডা। এসব ভাবতে ভাবতে তুমিও একদিন স্নিগ্ধ গ্রাম ছেড়ে ইট পাথরের শহর ঢাকায় পা রাখো। আর এ শহরে পা দিয়েই তুমি বুঝে যাও, মানুষ আসলে নিজেকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।

ভালোবাসতে বাসতে ফতুর করে দেবো বলে কবি ত্রিবিদ দস্তিদার পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে। আর তোমার প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ ছিলো ভালোবাসার কাঙ্গাল। বেচারার একবিন্দু ভালোবাসা জোটেনি ঘরের মানুষটির কাছে। কেমন নিস্পৃহ থেকে গেছে চিরকাল। জীবনানন্দ দাশ মারা যাওয়ার পর বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে কবির বাসায় গেলে লাবন্য দাশের মনে হয় জীবনানন্দ দাশ বুঝি একজন বড়ো কবিই ছিলেন। নইলে বুদ্ধদেবের মতো এতো বড়ো কবি কেন এসেছেন চিতায় আগুন দিতে। এইসব ভাবতে ভাবতে তোমার মনে পড়বে প্রথম প্রেমের মানুষটির কথা। কেমন করে না জানিয়ে একদিন বিয়ে করে বসে তোমাদেরই এক পাড়াতো বড়োভাইকে। তুমি শুধুই তাকিয়ে দেখলে ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর। তখন তোমার আর কিছুই করার থাকে না শুধু বিষন্নতা পোহানো ছাড়া। আর বিষন্নতা পোহাতে পোহাতেই দেখো, তোমার প্রথম প্রেমের সাক্ষী শিমুল গাছটি এক বিকালে সরকারি রাস্তার কাছে বিক্রি হয়ে যায়। তারপর তরতর করে পাকা হয়ে যায় গায়ে ঢোকার একমাত্র রাস্তাটি। আর এই রাস্তা দিয়েই তোমার ঘরে ঢোকে মাধুরী দীক্ষিত, সনি, স্টারপ্লাস। সনি আর স্টারপ্লাসের উজ্জ্বল আলোয় তুমি দেখো, জীবনানন্দীয় গাঢ় সন্ধ্যাটি কেমন বিষন্ন হতে হতে তোমাকে গিলে ফেলে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।