চিঠির দিন আর নাই। শেষ কবে চিঠি পেয়েছি, স্মৃতি ঘেঁটে কিছুতেই বের করতে পারলাম না আজ! তবে একসময় যেজন নিয়মিত চিঠি বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যেত, সেই ফটিক দা' কে মনে পড়ে মাঝে মধ্যেই। দেখা হয় আরো কম, কালে-ভদ্রে, ছুটি-ছাটায় বাড়ি গেলে। ফটিক দা ছিলেন আমাদের গায়ের পোস্ট অফিসের ডাকপিয়ন। তখন একটি পত্রিকার পাঠক সংগঠন করি। সেই সুবাদে নানা জায়গা থেকে চিঠি আসতো। কত আন্তরিকতা মাখানো সেইসব চিঠি। মমতা মাখানো সেই চিঠিগুলো ফটিক দা ব্যাগে পুরে বাড়িতে দিয়ে যেতেন। এবার ঈদে বাড়িতে হঠাৎ-ই দেখা হয়ে যায় ফটিক দা'র সাথে। ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করার আগেই স্বগতোক্তি'র মতো করে বলে উঠলেন ফটিক দা'- চিঠির সেই দিন আর নাই, নাহ্! মুহূর্তে অজস্র স্মৃতি ফিরে এলেও গোধূলিলগ্নে দেখলাম ফটিক দা'র ম্লান পাণ্ডুর মুখ।
আমাদের বাড়ির পাশেই ছিল পোস্ট অফিস। কয়েক মিনিটের হাঁটা পথ মাত্র। সেই পোস্ট অফিস এখনো আছে। শুধু ফুরিয়েছে আমার চিঠি আসা, প্রাপকের ঠিকানা হওয়া। কেননা, লেটারবক্স তো এখন ঘরের মধ্যেই, কম্পিউটারে, মোবাইলের মেসেজে, ফেসবুকের ইনবক্সে। মনে আছে, স্কুলে পড়ার সময় আমার এক বন্ধু চলে গেলো শহরে, আরো ভালো স্কুলে পড়তে। ওর শহরের ঠিকানায় কত যে চিঠি পাঠিয়েছি, কত কাগজ যে ফুরিয়েছি! পরস্পরের প্রতিযোগিতা চলতো কার চিঠি বড় হয়। আজ, এখন ইউকে-এ পড়তে যাওয়া বন্ধু রোমান, সবুজ, নেদারল্যান্ডের অনি সবাই সাথেই যোগাযোগ হয় জিমেইলে; কথা হয় জিটকে, ম্যাসেঞ্জারে। ছোট ছোট বার্তায় চলে ভাবের আদান-প্রদান।
একটা সময় ছিল সকালে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকা না দেখলে মেজাজ খারাপ হয়ে যেতো। দেরি হওয়ার কারণে হকার-কে কত যে গালমন্দ দিয়েছি এ জীবনে! এখন এমনও দিন যায় প্রিন্টেড পত্রিকা পড়াও হয় না। তবে খবর জেনে নিই ওয়েব সংস্করণ কিংবা ব্লগে অথবা ফেসবুকের পোস্ট লিংক আইটেম থেকে। আর মাঝে মাঝে জানা হয় মোবাইলের ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসের মাধ্যমে।
আমার এক পরিচিত বড় ভাই টিভিতে প্রোগ্রাম বানান। সেদিন হঠাৎ-ই দেখা। নানা কথায় বললেন প্রোগ্রামটি দেখে নিতে। কিন্তু আমার টিভি খুব একটা দেখা হয় না। দিনে পাঁচ মিনিটও টিভির পেছনে দিই কী'না সন্দেহ। বড় ভাইয়ের সেই প্রোগ্রামটাও দেখা হয়নি। একদিন মোবাইলে মেসেজ দিয়ে জানতে চাইলেন দেখছি কী'না। অফিসেই কাজের এক ফাঁকে ইউটিউবে সার্চ দিলাম। প্রোগ্রামের ৬ মিনিটের একটা ক্লিপ পাওয়া গেল। আমার তাই-ই সই।
বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ডিজিটাল সিটিজেনদের সংখ্যা। আমাদের হবু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ডিজিটাল বাংলাদেশের। সেই স্বপ্ন দেখেই বুঝি আমার এক বন্ধু ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখেছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ ইজ কামিং সুন! দেখছি আমার মতো কম্পুকানাকে এবার ডিজিটাল সিটিজেন হওয়ার রেসে দৌঁড়াতে হবে (আমার কম্পুজ্ঞান দেখুন এই পোস্টে-[url=http://http://www.sachalayatan.com/pantha_rahman_reza/17678])। এক জায়গায় দেখলাম, সিটিজেন ২.০ হওয়ার তরিকা হলো চিঠির বদলে ইমেইল, ম্যাসেঞ্জার; টিভির পরিবর্তে ইউটিউব, আইফোন; প্রিন্টেড পত্রিকার পরিবর্তে নিউজ ফিড; পাবের পরিবর্তে সোস্যাল নেটওয়ার্ক, ব্লগ ফোরাম-এর ব্যবহার। এসবের কোনো কোনোটি'র পরিচয় ঘটেছে ইতিমধ্যে। অ্যাই, এতো দেখছি আমিও ডিজিটাল সিটিজেন হওয়ার পথে!
মন্তব্য
আইফোন ক্যান? নকিয়া কি দোষ করল? আমি কি তাইলে আপেলের প্যাঁচে পইড়া সিটিজেন ২.০ হইতে পারুমনা?? আপেল বাদ দিলে আমি কিন্তু সিটিজেন ১.৯ হইয়া আছি...
_______________
এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।
_______________
::সহজ উবুন্টু শিক্ষা::
নীল কাকু, একজন কইছে আইফোনের কথা, আমিও তাই উদ্ধৃতি দিয়েছি। নোকিয়া কী দোষ করছে, আমি কইতে পারি না। (:-\
দেখছি আমিও ডিজিটাল সিটিজেন হওয়ার পথে!
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
পান্থ-২.০'দা, আপনাদের এই ডিজিটাল দুনিয়ায় আমি যে এখনও অ্যানালগ-ই রয়ে গেলাম!
হারিয়ে গিয়েছি, এই তো জরুরি খবর...
ক্যান রে? আমার মত খুচরা কোন ভার্সন হইয়া যাও... এই যেমন ০.৯ বা ১.২...
_______________
এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।
_______________
::সহজ উবুন্টু শিক্ষা::
এইটা একটা ভাল বুদ্ধি। ভাবতেসি "অতন্দ্র প্রহরী ০.০০৭" হয়ে যাব
হারিয়ে গিয়েছি, এই তো জরুরি খবর...
আমি অনেক চিঠি পাই
ক্রেডিট কার্ডের বিল
ইন্টারনেটের বিল
ফোনের বিল
স্কাইয়ের বিল
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
বরাবরের মতোই পান্থময় লেখা।
এইটা ভালো একদিকে। এই সবাই বলে যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি, রোবট হয়ে যাচ্ছে সবাই। এর মাঝে হাতে লেখা চিঠি লিখে ও পেয়ে খানিক যদি অন্যরকম অনুভূতি হয়
আহারে চিঠি
কত বিচিত্র আর কত দীর্ঘ চিঠি লিখতাম আর পেতাম এক সময়
গাছের পাতায় লেখা থেকে শুরু করে দীর্ঘ দশ হাত শাড়িতে লেখা চিঠিও এসেছিল আমার জানামতে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত আমার ঠিকানায়
লীলেন
সিলেট-৩১৫২
সেই চিঠিগুলো এখন আসে বিরক্তিকর আর একঘেঁয়ে ফন্টে-
কত ফারাক
অপু
দিরাই ৩০৪০
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
লীলেন্দা, দীর্ঘ দশ শাড়িতে হাতে লেখা চিঠি, কাহিনীটি শুনতে মন চাচ্ছে। তাড়াতাড়ি জানান।
শাড়ির চিঠিটা যত্নে রাখবেন, প্লীজ। যদি কখনো আপনার দেখা পাই তো ওটার ছবি তুলব।
শিরোনামটা মাক্ষী হইছে।
=============================
- আমিও ডিজিটাল ধুগো হওয়ার চেষ্টা করুম তাইলে...
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ডিজিটাল পান্থ ২.০-কে নববর্ষের শুভেচ্ছা।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ভালো বিষয়, ভালো লেখা।
তবে, ২.০-তে তো বেশিদিন চলবে না, তাড়াতাড়ি পান্থ রহমান রেজা ২.৫-এর জন্য কাজ শুরু করো। আপগ্রেডেশন ছাড়া ডিজিটাল জীবন অচল।
সচল থাকো নিরন্তর।
-----------------------------------
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
যোগাযোগ কতো সহজ এবং তাত্ক্ষণিক হয়ে পড়েছে এখন! তবু কেন যে snail mail নিয়ে এতো আকুতি, বুঝি না। প্রেরকের হস্তাক্ষর দেখতে পাওয়া ছাড়া আর কোনও প্লাস পয়েন্ট তো খুঁজে পাই না তাতে!
দেশে চিঠি পাঠালে সেটা পৌঁছোয়, ভাগ্য ভালো হলে, ১৫ দিন পর, উত্তর পেতে নিদেনপক্ষে আরও ১৫দিন - সেই যুগটা বহু আগে পার হয়ে এসেছি বলে আমার কিন্তু বড়োই তৃপ্তিবোধ হয়।
মন্তব্যটা লিখে আবার নিশ্চিত হলাম - আমি কোনওভাবেই রোমান্টিক পদবাচ্য নই
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
নতুন মন্তব্য করুন