লোকটা আমাদের গ্রামে আসার পর

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি
লিখেছেন পান্থ রহমান রেজা (তারিখ: মঙ্গল, ২৪/০৩/২০০৯ - ৩:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লোকটা আসলেই একটা পাগল!

মানিকের এ কথায় আশ্চর্য নিরবতা নেমে আসে বৈষ্টমী পাড়ায়। বিদ্যুৎ চলে গেলে হঠাৎ পাওয়ার লুম বন্ধ হলে যেমন নিরবতা নেমে আসে, অনেকটা তেমন। কারো মুখে কোনো কথা জোটে না। লোকটা পাগল হলে রাজাকার আলতাফের যে জয় হয়, তা কেউ-ই মেনে নিতে পারছিল না আসলে। রাজাকার আলতাফ কে তা একটু পরেই জানা যাবে। তার আগে যে লোকটাকে নিয়ে বৈষ্টমী পাড়ার হৈচৈ তা একটু জেনে আসি, কী বলেন?

প্রথমে বলে রাখি, বৈষ্টমী পাড়া বলে আমাদের তামাই গ্রামে কোনো পাড়া নেই। এটা আমাদের দেয়া একটা নাম। আমরা একদল আড্ডাবাজ তরুণ এই নামটা দিয়েছি। আপনি কখনো যদি তামাই’তে যান, তাহলে বাজার থেকে ছামান হাজীর বাড়ি হয়ে যে রাস্তাটা পশ্চিম দিকে গেছে, সেটা ধরে ৫০০ গজের মতো আগালেই দেখবেন গোলামের দোকান। ওখানেই আমরা আড্ডা দিই। আমাদের আড্ডার সেই জায়গাটির নাম হয়েছে বৈষ্টমী পাড়া। তবে কে, কবে নামটির উদ্ভাবক তা যদি জানতে চান, তাহলে বলি, এর উত্তর আমাদের কারোরই জানা নেই। একটু চেপে ধরলে হয়তো খুঁজে দেখতে পারি। তবে আসল নামকারক কে তা খুঁজে বের করে দিতে পারবো, এমন আশ্বাসবাণী শোনাতে পারবো না। হয়তো বুলবুল, আহাম্মাদ, কাদের এদের কারো নাম আসতে পারে। অথবা নাম কে দিয়েছে তা নিয়ে আমাদের মাঝে একটা ঝগড়া হলেও হতে পারে। তবে সেটা মোটেই শোভনীয় কাজ হবে না। মাঝখান থেকে আলতাফ রাজাকারের ঘটনাপঞ্জি হারিয়ে যেতে পারে আমাদের সামনে থেকে। আমরা চাই আলতাফ রাজাকারের কথা সবাই জানুক। পাগল লোকটা আসলে পাগল কী’না সে কথাও জানুক।

লোকটা আসলেই পাগল কী’না আমরা কেউ-ই তা নিয়ে নিশ্চিত নই। কেননা, আমাদের কারো সাথেই তার দেখা হয়নি একবারের জন্য। শুধু লোকমুখে তার কথা জেনেছি। কাজেই মানিক লোকটিকে পাগল বলে মন্তব্য করলে আমাদের কারো কারো খারাপ লাগতে শুরু করে। কেউ কেউ প্রসঙ্গ পাল্টাতে চেষ্টা করে। বস্তুত, আমাদের আড্ডায় কখনো পাগল নিয়ে আলাপ হয় না। আমরা হাসিনা-খালেদার রাজনীতি নিয়ে আলাপ করি। বাংলা সিনেমার অশ্লীলতা উপভোগ করি। আর রহম ফকিরকে পুলিশ জেলে দিলো ক্যানো, তার মুন্ডুপাত করি। বলে রাখি, রহম ফকির আমাদের কেরু’র ওয়ান অ্যান্ড অনলি সাপ্লাইয়ার।

যেহেতু রহম ফকির জেলে, তাই আমাদের পাগলামী করার কারণ নেই। তা সত্ত্বেও পাগল বিষয়ক আলাপ আমাদের আড্ডায় এসেছে। বুলবুল যদিও লোকটাকে পাগল ভাবতে নারাজ। তার মনে হয়েছে, সে এক আশ্চর্য অদ্ভুত মানুষ! তো যাই হোক, সে কিভাবে আমাদের গ্রামের মানুষের আলাপে, চায়ের কাপে ঝড় তুলতে, আমাদের আড্ডার বিষয়বস্তু হতে এলো, তার কারণ জানা যায় কী’না, তা জানতে একটু কান পাতি মোবারকের ভাঁপা পিঠার দোকানে।

সেদিন খুব কুয়াশা ছিল। এক হাত দূরের কিছুও দেখা যায় না। মোবারক চুলায় আগুন দিয়ে চালের গুঁড়া নাড়ছে। হঠাৎ-ই কুয়াশা ভেদ করে লম্বা দাঁড়িগোঁফসমেত একজন লোক মুখ ঝুঁকিয়ে জিজ্ঞেস করে ‘কতদূর’।

মোবারক ঠিক ঠাহর করতে পারে না শুরুতে। কী ‘কতদূর’ জানতে চায় লোকটি। লোকটিকে আগে কখনো দেখেনি মোবারক। লোকটির গায়ের চাদর ময়লাপড়া। একটা উৎকট গন্ধও আছে কি, নেই তা অবশ্য পাটালি গুড়ের ঘ্রাণ ডিঙিয়ে তার নাকে আসে না। তখনো অন্য কোনো কাস্টমার আসেনি। সকালের প্রথম কাস্টমার। কিন্তু কাস্টমারের ব্যাপারটা সে শুরুতেই ধরতে পারে না। লোকটি এবার আরো গম্ভীর গলায় বলে, ‘পিঠা হতে আর কত সময় লাগবো?’

মোবারক এবার ব্যাপারটা বোঝে। বুঝে একটা লাজুক হাসি দেয়। ‘পানি এহনো গরম হয়নি, এলা সবুর করেন। আগুনের তাপে ওম নেন। ততক্ষণে পিঠা অয়া যাইবো।’ মোবারক বলে লোকটির দিকে একবার তাকায়। লোকটির চোখে অন্যরকম একটা দ্যুতি দেখে। লোকটি হঠাৎ-ই বলে, ‘আপনার পায়ের নিচের মাটি তো পুড়ত্যাছে।’

লোকটির কথায় মোবারক চমকে উঠে। টুলের উপর বসে ছিল সে। পায়ে রূপসা কোম্পানির স্যান্ডেল। সেই স্যান্ডেল গলিয়ে আগুনের আঁচ টের পায় না মোবারক। একবার পায়ের নিচের দিকে তাকায়। ধুসর মাটি। সে এবার মুখ তুলে সামনের লোকটির দিকে তাকায়। লোকটি নেই। তাজ্জব মনে হয় পুরো ব্যাপারটি। মোবারক তখন আপন মনে বিড় বিড় করতে করতে বলে, ‘ইসা পাগলের সাথে বাজারে আর এক পাগল আইলো।’

ইসা পাগলের একজন সঙ্গী জুটুক আর যাই হোক, সকালে মোবারকের ভাঁপা পিঠা দোকানের ঘটনাটা বেলা গড়ালে কারো জানতে আর বাকি থাকে না। যদিও সে পাগলকে আর কোথাও দেখা যায় না সেদিন। দেখা না গেলেও লোক মুখে তার নাম আগুন পাগলা হয়ে যায়। আর আমিরুলের চায়ের দোকানে আগুন পাগলের ডিটেইল নিয়ে আলাপ শুরু হয়। সে আলাপের সূত্রেই উত্তরপাড়ার করিম দোকানদার যুদ্ধের বছরে পাক বাহিনীর তামাই বাজার পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ আনে। আর বাজার পুড়িয়ে দেয়ার হোতা যে আলতাফ রাজাকার তা আমি আপনি সবাই জানি। কিন্তু যুদ্ধের বছরে বাজার পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনার সাথে মোবারকের দোকানের সেই পাগলের কী সম্পর্ক তা কেউ খুঁজে বের করতে পারে না। তবে এই যোগসূত্র আবিস্কার করতে না পেরে লোকটি কী পাগল, না রহস্যময় কেউ সে বিষয়ে আমাদের কনফিউশন আরো বাড়ে।

আলতাফ যে রাজাকার আমরা তা ভুলেই গিয়েছিলাম। লোকটি একাত্তরে তামাই বাজার পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় জড়িত, তা আমাদের মনে পড়ে। বাজার পুড়িয়ে দেয়ার বিস্তারিত আমরা স্কুলে থাকতে সরোয়ার স্যারের মুখে অনেকবার শুনেছি। এতোদিন আমরা আলতাফ রাজাকারকে ভুলে গিয়েছিলাম আসলে আফরোজার প্রেমে পড়ে। ওহ্ হো, আপনাদের আফরোজার কথা বলা হয়নি। আফরোজা আলতাফ রাজাকারের নাতনি। বেলকুচি কলেজে কর্মাসে পড়ছে। এইতো, বোষ্টমী পাড়ার সামনে থেকে প্রতিদিন রিক্সা করে কলেজে যায়। আমরা গোলামের দোকানের সামনে বসে তার সৌন্দর্য দেখি, ফিগারের মাপ নিয়ে ঝগড়া করি।

আমাদের বয়সটা তখন তো প্রেমে পড়ার। এ সময় আমরা সবকিছু ভুলে গিয়ে যে কারো প্রেমে পড়তে পারি। পড়ছেও তো কেউ কেউ। রাজীব শম্পার প্রেমে পড়েছে। ওদিকে সাব্বির আখিঁর প্রেমে মজেছে। আর রায়হান মুনিরাকে প্রেম নিবেদন করতে গিয়ে মুনিরার মা ফ্যামিলি প্ল্যানিং আপার কাছে বিরাট বকা খেয়েছে তামাই অগ্রণী সংসদের সামনের মাঠে। তবে যে যার প্রেমেই পড়–ক, আফরোজার জন্য আমরা সব ছেড়ে দিতে রাজি আছি। বলে রাখি, আফরোজার যেমন সৌন্দর্য, তেমনটাই অসাধারণ ফিগার। আমরা তার জন্য আলতাফের রাজাকারগিরি ভুলে যেতে পারি। কিন্তু অদ্ভুত লোকটি এসে আমাদের এলোমেলো করে দেয়। আফরোজাকে আমাদের ঘৃণা করা শিখায়। আফরোজার কলেজ যাত্রা পথে তাই আমরা ঘৃণার দৃষ্টি ছুঁড়ে মারি। আমাদের এমন আচরণে আসাদুল বলে একদিন, ‘ওর দোষ কি, ওর দাদার দোষের দায়ভার ও বইবে ক্যানো?’

বস্তুত, আসাদুলের এমন কথায়, এক ধরনের নিরাসক্তি নেমে আসে আমাদের মাঝে। ওই নিরাসক্তির মাঝে দেখি মিন্টুর চোখ বেয়ে অশ্রু নামছে। চিকচিক করে সে অশ্রু একবার জ্বলে ওঠে অন্ধকারের মাঝে। আপনারা জানেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মিন্টুর কাকাকে পাক বাহিনীরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর ফিরে এসেছিল পঙ্গু হয়ে। আমরা দেখি, মিন্টুর চোখের পানিতে আবার আর্দ্র হয়ে উঠে হুরাসাগরের তীর।

মিন্টুর ইকবাল কাকার ছিল মাছ ধরার শখ। কাজের মাঝ থেকে একটু সময় বের করতে পারলেই চলে যেতেন ছিপ-বড়শি নিয়ে। তখন যুদ্ধ চলছে। হাতে তেমন কাজ কর্ম নেই। গেলেন হুরাসাগরে মাছ ধরতে। এদিকে মুক্তিদের কাছে খবর ছিল, হুরাসাগর দিয়ে একটি অস্ত্রের চালান যাবে পাবনার দিকে। মুক্তিরা তাই পজিশন নিয়ে বসে আছে। কিন্তু দেখা নেই পাকবাহিনীর। এদিকে মুক্তিরা ছিল দু’দিনের না খাওয়া। তাই ইকবালকে তারা বলে, কিছু শুকনো খাবার এনে দিতে। ইকবাল বাড়ি এসে খিচুড়ি রেঁধে নিয়ে গিয়েছিল তাদের জন্য। সেবার হুরাসাগরের যুদ্ধে পাকবাহিনীর দু’টি স্পিড বোট ডুবে যায়। মারা যায় তিন পাক সৈন্য। এ কথা বাড়ি ফিরে বেশ গর্ব করেই প্রচার করেছিল ইকবাল। আলতাফ রাজাকার শুনেছিল তা। তার দেয়া ইনফর্মেই পাক বাহিনী ধরে নিয়ে গিয়ে পঙ্গু করে দেয় তাকে।

হায় ইকবাল কাকা! আপনার পঙ্গুত্বের বিনিময়ে আমরা রাজাকার নাতনি আফরোজাকে পুজো করি। পদতলে মন-প্রাণ জলাঞ্জলি দিই!

ইকবাল কাকার জন্য যখন আমাদের বেদনাবোধ বাড়ে, সে সময়ে আবার লোকটিকে দেখা যায় তামাই কবরস্থানে। মধ্য পাড়ার ইসমাইলের দাদা আজিজ মন্ডলের কবর কাটার সময়ে।

মুক্তিযোদ্ধা আজিজ মন্ডল মারা যান শুক্রবার ভোরে। সবেমাত্র ফজরের আজান হয়েছে। তিনি নামাজ পড়বেন বলে বিছানায় উঠে বসেছেন। হঠাৎ-ই বুকে ব্যথা করে তার। ইসমাইলের মা কুলসুম বেগমের কাছে এক গ্লাস পানি খেতে চান। পানি খেতে খেতে বলেন, ‘বউমা, আমি মনে অয় আর বাঁচমু না। রোকন হাফেজকে ডাক দেও, কলেমা পড়ি।’ রোকন হাফেজ দৌঁড়ে এসে কলেমা পড়ায়। কলেমা পড়েই আজিজ মন্ডল চোখ বোজেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমরা বাদ জুমা মুক্তিযোদ্ধা আজিজ মন্ডলের জানাযায় শরিক হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতে করতে কবরস্থানের ঘটনা শুনি।

কবর কাটা প্রায় শেষ। এমন সময় হঠাৎ সেই লোকটি কবরের পাশে এসে দাঁড়ায়। কবরে নেমে সোলেমান হুজুর মাটি সমান করছিল। লোকটি সোলেমান হুজুরকে উপরে উঠে আসতে বলে। লোকটার চোখে মুখে এমন একটা কিছু ছিল যা দেখে সোলেমান আর কোনো কথা বলতে পারে না। সে আস্তে করে কবরের ভেতরে থেকে উঠে আসে। সোলেমান উঠে পড়লে লোকটি কবরে নামে। কবরের চারদিকে একবার চক্কর দিয়ে নেয়। চোখে মুখে সতর্ক দৃষ্টি তার। এবার চাদরের নিচ থেকে লম্বামতন একটা কাঠ বের করে। সেটা রাইফেলের মতো করে বাগিয়ে মাথা নিচু করে কবরের ভিতরে পজিশন নেয়। খানিকক্ষণ সেভাবেই তীক্ষ্ন দৃষ্টি মেলে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে। এরপর মুখ থেকে গুলি বের করার ঠা-ঠা-ঠা-ঠা শব্দ করে। গুলি শেষে লোকটির চোখে মুখে সন্তুষ্টির হাসি দেখা যায়। লোকটি কবর থেকে উঠে সোলেমানের পিঠ চাপড়ে দিয়ে পুকুর পাড়ের দিকে হাঁটতে থাকে। তারপর আর লোকটির খোঁজ পাওয়া যায় না।

আমরা জানাযার নামাজ পড়তে এসে লোকটির গল্প শুনি। তখন ইসমাইল তার দাদার যুদ্ধদিনের একটি ঘটনা বলে। উল্লাপাড়ায় যুদ্ধ হচ্ছে। তুমুল সে যুদ্ধ। পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে মুক্তিবাহিনী। আজিজ মন্ডলরা দক্ষিণ পাশ দিয়ে আক্রমণ করেছে। আক্রমণ করে একটু একটু করে সামনের দিকে আগাচ্ছে তারা। এভাবে আগাতে আগাতে সামনে একটা গোরস্থান পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা কবরের গর্তে নেমে পজিশন নেয়। ইসমাইলের দাদাকে একটি শিশুর কবরের মধ্যে নেমে পজিশন নিতে হয়েছিল সেবার।

ইসমাইলের দাদার গল্প শুনতে শুনতে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে লোকটি আসলেই রহস্যময়। আমাদের মনে হয়, তাকে খুঁজে বের করা দরকার। তখন সাব্বির একটি খবর নিয়ে আসে। বলে, ‘যারে তোরা রহস্যময় বলছিস, ও তো একটা পাগল। ভুয়াপুরে বাড়ি। পাবনা পাগল গারদ থেকে পলা আইছে।’ আমাদের মনে পড়ে বছর কয়েক আগে এরকম এক পাগল এসেছিল আমাদের গ্রামে। সেও নাকি পাবনা পাগলা গারদ থেকে পালিয়ে এসেছিল। পরে তার আত্নীয় স্বজন খবর পেয়ে তাকে নিয়ে যায়। তবে সে পাগল শুধু রাস্তায় এক পা এগিয়ে গুনে গুনে তিন পা পিছিয়ে যেতো। তাছাড়া তার আর কোনো পাগলামি ছিল না। কিন্তু এ লোকটি দেখছি অন্যরকম। সে তো আমাদের অনেক জানা-অজানা তথ্য উন্মোচন করে দিচ্ছে। তাই সাব্বিরের ভাষ্যে আমাদের খটকা লাগে। আমরা ওকে চেপে ধরি। সাব্বিরের কাছ থেকেই জানা যায়, আলতাফ রাজাকারের ভাতিজা লাবুর কাছ থেকে সে এ কথা শুনেছে। তখন আমাদের আর জানতে বাকি থাকে না, লোকটিকে পাগল বানাতে পারলে আলতাফ রাজাকারের কী লাভ!

আলতাফ রাজাকারের কথায় আমরা কান দিই না। তবে তার কলেজ পড়ুয়া নাতনি আফরোজার কলেজে যাওয়ার পথে ঠিকই দেখি। তার ফিজিক নিয়ে কেউ কেউ অংক কষি। অংক কষতে কষতে ইসমাইলের বাপ আমাদের একটা ঘটনা বলে। বুঝতেই পারছেন, মুক্তিযোদ্ধা আজিজ মন্ডলের ছেলে একটা ঘটনা বলবে, তা তো মুক্তিযুদ্ধেরই হবে। তো ইসমাইলের বাপ আমাদের ডেকে নিয়ে গলার স্বর যতটা সম্ভব নিচে নামিয়ে বলে, ‘ওই লোকটি পাগল-টাগল নয়। উনি মুক্তিযোদ্ধা সেলিম ভাই। যুদ্ধের সময় তার বউকে আলতাফ রাজাকাররা তুইল্যা নিয়া গেছিল। যুদ্ধ শ্যাষ হয়া গ্যালেও বউকে আর ফিরা পায়নি। এহানে-ওহানে খুঁজছে ম্যালা। বউ না পাইয়া পাগল হইয়া গ্যাছে। হেরপর থাইক্যা সে নিরুদ্দেশ। এখন আবার ফিরা আইছে।’

ইসমাইলের বাপের কথা শুনে আমাদের দীর্ঘশ্বাস বাড়ে। আমাদের দীর্ঘশ্বাস কাটাতে রহম ফকির কেরু’র বোতল এগিয়ে দেয়। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, রহম ফকির জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। কেরু’র বোতলে চুমুক দিতে দিতে দেখি, লোকটা সূবর্ণসাড়ার সড়ক ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। লম্বা দাঁড়ি-গোঁফ। গায়ে ময়লা একখানা চাদর। তবে, মাতাল থাকায় উনি নিরুদ্দেশ মুক্তিযোদ্ধা সেলিম কী’না তা আমরা কেউ-ই ঠাহর করতে পারি না!


মন্তব্য

নিবিড় এর ছবি

পান্থদা আপনার লেখার স্টাইল মনে হয় পুরা চেঞ্জ হয়ে গেছে কিন্তু দারুন লাগছে এই স্টাইল টা চলুক সব ঘটনাই আবছায়ায় মোড়া কিন্তু তারপরেও পরিষ্কার। এইভাবে চললে আপনার বই বের হওয়ার আর বেশী দেরী নেই পান্থদা হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

কী যে কও না মিয়া! পুস্তক বের করবো আমি! যে আলস্যা আমি, একযুগেরও পারবো কী'না সন্দ হয়!

কীর্তিনাশা এর ছবি

গল্পটা বড় হইলেও লেখার ঢং-এর কারণে কখন পড়ে ফেলছি টের পাই নাই।

দারুন পান্থ, চালিয়ে যান চলুক

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

অ, বুঝতে পারছি, নাশুদা চাবাইয়া পড়েন নাই, গিলে খেয়েছেন এইজন্য বুঝি টের পান নাই। দেঁতো হাসি

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

চলুক

........................................................

শাহেনশাহ সিমন

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ধন্যবাদ ,লম্বু ভাইয়া।

সুমন সুপান্থ এর ছবি

ভালো লাগলো পান্থ...
বিশেষত তোমার গদ্য যে নতুন স্বর পাচ্ছে, এই গল্পে সেটা টের মিললো ।

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

নতুন স্বর পাচ্ছে কী'না জানি না। তবে নিজের একটা রাস্তা খুঁজতেছি। হাসি

মাল্যবান এর ছবি

পান্থ, দারুণ গল্প হয়েছে । খুব ভাল । লেখার ধরণটা এমন যে কোথাও শ্লথ হয়নি। কথকতার ভঙ্গিমা টেনে নিয়ে গিয়েছে। লক্ষ্য করেছেন কি , লেখাটি অল্প পরিসরে প্রায় উপন্যাসের মত চরিত্র পেয়েছে ?
দু'একটি কথা -
কিন্তু আমি বুঝিনি যে ইসমাইলের বাপ কেন 'নীচু স্বরে' ডেকে নিয়ে বলেন যে 'উনি মুক্তিযোদ্ধা সেলিম ভাই'। ঠিক ওই জায়গাটা গল্পে খুব প্রয়োজনীয় ছিলো না বলে আমার মনে হয় । পাগলটির আইডেনটিটি সম্পর্কে রহস্যময়তায় থেকে পুনরায় 'আফরোজা' 'রহম ফকির' 'কেরু' তে যেমন ফিরে গেছেন তেমন থাকলে ছোট গল্পের 'শেষ হইয়াও হইলো না শেষ' বিষয়টি বজায় থাকতে পারতো। অবশ্য এ আমার ব্যক্তিগত মতামত ।
আবার বলি, গল্পটির টানা কথকতার ভঙ্গিমা বেশ লেগেছে। আপনার আরো গল্প পড়বার আশায় রইলাম ।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

হয়তোবা আপনার কথাই ঠিক। তবে গল্প করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছিল পাগলটার একটা পরিচয় উন্মোচন করা দরকার। সেটা মনে করেই এমন ক্রাফটিং করেছি।

বাউলিয়ানা এর ছবি

অসাধারন পান্থদা...
গল্প বলার ঢংটা দারুন..
একটানে পড়ে ফেল্লাম।
হাসি

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

তাই বুঝি, বাউল দাদা।

কনফুসিয়াস এর ছবি

খুব ভাল লাগলো গল্পটা। গল্পের ভেতরে অনেকগুলো গল্প, বয়ানটা সুন্দর, ক্লান্তি আসে না একদম।

-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

কন কী কনফু দা। ইয়া বড় পোস্ট, পড়তে আমার নিজেরই ক্লান্তি লাগে। দেঁতো হাসি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আপনি তো তুখোড় গল্পবাজ হয়ে যাচ্ছেন, পান্থ ! অ্যাঁ
আসোলেই স্টাইলটা ভালো লাগছে।
চমৎকার লাগলো।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

কিন্তু আমি যে জোতিষীবাজ হতে চাই! চোখ টিপি

নাজনীন খলিল এর ছবি

অসাধারণ একটি গল্প! অভিনন্দন পান্থ।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ধন্যবাদ নাজনীন আপা।

সৌরভ এর ছবি

এক নিঃশ্বাসে পড়লাম। দূর্দান্ত।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

সেদিন আপনার ব্লগবাড়ি ঘুরে এলাম। পুরানো অনেক দূর্দান্ত সব লেখা পড়ে এলাম। অসম্ভব সুন্দর সব কথামালা দিয়ে সাজিয়ে রেখেছেন আপনার ব্লগবাড়ি।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

ভালো লাগলো। বলার ঢং কিছুটা সৈয়দ শামসুল হক প্রভাবিত বলে মনে হলো। এতে খারাপ কিছুই নেই কিন্তু। হবহু অনুকরণ না করলেই হলো।

‘ওর দোষ কি, ওর দাদার দোষের দায়ভার ও বইবে ক্যানো?’

এই প্রসঙ্গে মনে পড়লো আমার এক সহপাঠীর জীবনের ঘটনা।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

সৈয়দ হক প্রভাবিত? হতে পারে হয়তো। কতজনের লেখা পড়েই তো প্রভাবিত হই। একটা তথ্য দিই সন্ন্যাসী দা', সৈয়দ শামসুল হকের পৈত্রিকভিটা কিন্তু আমার গল্পের এই তামাই-তেই।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অভিনন্দন পান্থ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

হৈ মিয়া, আপনের বউ সচল থেকে একশ' হাত দূরে থাকতে কইছে। আর উনি কী'না এসে কমেন্ট দিতাইছেন। এটা কিন্তু ঠিক না।

জেবতিক রাজিব হক এর ছবি

চমৎকার ষ্টাইল। আপনাকে অভিনন্দন। আগামীতে আরো গল্পের অপেক্ষায়।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

হাসি

তানবীরা এর ছবি

পান্থ সামনের বইমেলায় তোমার বই দেখার আশা রাখছি। দশটা গল্প হয়েছে না সচলে ?

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

হাহাহাহা কী যে বলেন! নাহ্, এখনো মনে হয় হয়নি।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

এক কথায় অসাধারণ লাগলো। হ্যাটস অফ - পান্থ...

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ধন্যবাদ শিমুল ভাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।