গতকালের ঘটনা। সোবহানবাগে প্লাজা এ আরে সময় প্রকাশনীর একটা শো-রুম আছে। সেখানে বসে আছি। গেছিলাম বিজ্ঞান বক্তা ও লেখক আসিফ ভাইয়ের সাথে। উনি একটা পাণ্ডুলিপি দিবেন। সময়ের মালিক ফরিদ ভাই সেদিন আবার ল্যাপটপ নিয়ে যাননি। এদিকে শো-রুমে কোনো কম্পিউটারও নেই। অগত্যা ফরিদ ভাই আসিফ ভাইকে নিয়ে চললেন পাশের প্রিন্স প্লাজায়। ওইখানে সময়ের ডিজাইন-প্রিন্টিং অফিস। বাইরে শীত রাত্রির ভয়ে আমি শো রুমে থেকেই যাই। তাছাড়া এত্তো এত্তো বই একটু নেড়ে চেড়ে দেখার সুযোগও আমাকে আটকে রাখে। পাক্কা দেড় ঘণ্টা বইয়ের দোকানে বসেছিলাম। একজন পাঠকও ঢুঁ মারেন নি সেখানে (বের হওয়ার সময় একজোড়া যুগল ঢুকবো ঢুকবো করছিল)। মার্কেটে কিন্তু লোকের অভাব ছিল না। বিষয়টা খানিকটা ভাবালো। আলাপ জুড়ে দিলাম বিক্রয়কর্মী মনির ভাইয়ের সাথে। মনির ভাই জানালেন, দিনে গড়ে ৩-৪টা বই বিক্রি হয়।
মাত্র ৩-৪টা! চলে আপনাদের!
আমার কথায় মনির ভাই হাসেন। কথার পিঠে শুধু বলেন, মাসে সার্ভিস চার্জ দিতে হয় সাড়ে ছয় হাজার টাকা!
দোকান ভাড়া, বিক্রয়কর্মীর বেতন... আমি আর কথা বাড়াই না।
শুধু ভাবি, ধানমণ্ডির মতো এরকম জায়গায় একটা অত্যাধুনিক মার্কেটে ফরিদ ভাই নিশ্চয় দোকানটি নিয়েছিলেন মধ্যবিত্তদের হাতের নাগালে বই নিয়ে যেতে। মধ্যবিত্ত নাগরিকরা দরকারি জিনিসপত্র কিনে হয়তো বাসায় যাওয়ার পথে একটা বই কিনে বাসায় ফিরবেন।
জানি না, ফরিদ ভাইয়ের এরকম স্বপ্ন ছিল কি না! তার সাথে কোনো কথা হয় নি। কথা হলে নিশ্চয় জানা যেত!
কয়েকদিন আগে আরেক প্রকাশক (শুদ্ধস্বরের টুটুল ভাই) একটা তথ্য দিয়েছিলেন। একসময় প্রকাশকরা যেকোনো বই-ই ২ হাজার ২৫০ কপি ছাপতেন। এখন সেটা এসে ঠেকেছে ২০০-৩০০ কপিতে। ৫০০ কপিতে ছাপাতে প্রকাশকের কপালে ভাঁজ পড়ে। এটার জন্য দায়ী কে, তা নিয়ে আছে নানামুখী বিতর্ক। বিতর্কটা নিয়ে সচলেই বেশ কয়বার কথা হয়েছে। সেখানে অনেক কিছুই উঠে এসেছে। এখন একটু জানা দরকার বাঙালি মধ্যবিত্তের কাছে বই ক্যানো এত অনাদর পাচ্ছে। আশা করি, অনেকে কলম ধরবেন। নিজেদের পর্যবেক্ষণ শেয়ার করবেন।
কেবল রমণ করছে আর খবরের কাগজ পড়ছে, এমন একটি জীব হলো আধুনিক মানুষ। এ কথা ক্যামু’র। ক্যামুর কথার সূত্র ধরে আরো ভিতরে গেলে দেখা যায়, রমণ আর কাগজ পড়া দুটিই যান্ত্রিক ব্যাপার। প্রতিদিনের অভ্যস্ততা। এখানে মনও নেই, প্রাণও নেই। পুঁজিবাদী সমাজে মানুষের এটাই না কি চূড়ান্ত পরিণতি! পুঁজির যুগে মেট্রোপলিশ সাজতে গিয়ে নাগরিক বাঙালিকে অহর্নিশ ছুটতে হচ্ছে। আর ছুটতে গিয়ে মন প্রাণ হারিয়ে সে আশ্রয় নিয়েছে বিপণন-বিজ্ঞাপন ব্যবস্থার। এখন তার সামনে হাজার রকমের জিনিসের হাতছানি। এ বলে এটা নাও, তোমাকে যা জোশ লাগবে না! আরেকজন বলে, স্ট্যাটাস বাড়াতে চান, তাহলে `এইটাই’ আপনার দরকার। আর এই স্ট্যাটাস বাড়াতে বাঙালি এখন পারলে তার বাঙালিত্ব-ই বিসর্জন দেয়। এখন তার ফ্যাশনবোধ তৈরি করে দেয় হিন্দি সিনেমা। খাওয়া-দাওয়ার পার্টও পিজা হাট, কেএফসি, ফ্ল্যামবিদের দখলে। ঐতিহ্য-কাতরতা নিয়ে প্যানপ্যানি কবেই ছেড়েছে। তাই যে বাঙালি মধ্যবিত্ত একসময় বইকে পবিত্র ভাবতো, অসাবধানে বইয়ে পা লাগলে জিব কেটে চুমু খেত। তাদের কাছে বইয়ের সেই পবিত্রতা মনে হয় আরো বেড়ে গেছে। তাই স্পর্শে অপবিত্র হয়ে যাক, সেই ভয়ে তারা বই কেনা ছেড়েই দিয়েছে!
তাহলে এই মেট্রোপলিশ বাঙালির ড্রয়িং রুমে কি করে বই ঢুকবে! অনেকেই বলেন, এর জন্য দরকার মার্কেটিং। মানে পাঠকদের হাতের নাগালে বই নিয়ে যাওয়া। অভিযোগ আছে, ঢাকার বাইরে কাঙ্খিত বই পাওয়া যায় না। তাই, ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবস্থা গড়ে তুলে সারাদেশে বই পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তবে, এটাই সব নয়। এতে যে বই বিক্রি বাড়বে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। সময় শুরুর দিকে দোকানটির পরিচিতির জন্য নিয়মিত মেলা করতো। মেলার প্রচার কাজ চালানো হতো। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, হুমায়ুন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হকরা উপস্থিত থাকতেন। তারপরও সময়ের দিনে গড়ে বিক্রি ৩-৪টি বই। তাই, মার্কেটিং এবং ডিস্ট্রিবিউশনের পাশাপাশি বইয়ের ক্রেতা তৈরির দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। বই পড়ার বেনিফিটটা বড় করে দেখাতে হবে। এক্ষেত্রে আরো একটি বিষয় বিবেচনা করা দরকার। মানুষ বই পড়ে তার অবসর সময়ে। অবসরটা সে টিভি-সিনেমা দেখে, খেলাধুলা করে পার করে। টিভি বিনোদন, খেলাধুলাও এখানে এদিক দিয়ে বইয়ের প্রতিযোগী। তাই বইটা কিভাবে ইন্টারেস্টিং ক’রে পাঠকের কাছে পৌছানো যায়, সেটাও দেখতে হবে।সবমিলিয়ে প্রকাশক-লেখক-পাঠকদের একটি সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার, যার মাধ্যমে বাঙালি মধ্যবিত্তের ড্রয়িং রুমে বইয়ের প্রবেশ অবারিত হবে।
মন্তব্য
পান্থ ভাই, আমাদের নতুন দিনের বাবা মা, শিশুদের Harry Potter পড়ান। বাংলা বই পড়লে যদি status কমে!!!
আমাই খুব অবাক হই যখন দেখি ক্লাস টু তে পড়ে আমার কাজিন আমাকে ফেসবুক বন্ধু আহবান জানায়!!!
আথচ আমার সময়ে আমি জুল্ভান এর সমগ্র পড়েছি।
লেখাটা খুব ভাল্লাগলো, ভাইয়া। কিন্তু এইসব লেখা পড়লেই বাংগালী হিসেবে নিজেদের গালি দিতে ইচ্ছা হয়।
টিপিক্যাল বাংগালী ১০০ বছর আগে যেই খ্যাত ছিলো, এখনো সেই খ্যাত রয়ে গেছে। আগে না হয় এদের হাতে পয়সা ছিল না, তাই বুই কিনতে পারতো না। এখন এদের পয়সা হইসে, কিন্তু বই কেনার অভ্যাস হয় নাই। হইসে খালি কেএফসি, বিএফসি তে খাওয়ার অভ্যাস।
---আশফাক আহমেদ
লেখা ভাল কিন্তু পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল।
আহসানুল হাকিম
নির্মম সত্যি কথা। বন্ধুদেরকে কয়েকশত টাকা খরচ করে খাওয়ানোর চেয়ে এর চেয়ে কমদামে বই কিনে দিলে যে আরো খুশি করা যায় এটাই আমরা বুঝিনা।
পড়াচোর
ধানমণ্ডি মাঠের কাছে একটা 'এআরএ সেন্টার' আছে না? আবার সোবহানবাগেও 'প্লাজা এআরএ'?
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বস, এ আর এ সেন্টারও আছে। ওইটা ধানমণ্ডি ৬-এ বোধহয়।
কুটুমবাড়ি
হই হই রই রই
বইয়ের পাঠক গেল কই ???
বাংলা বইয়ের প্রকাশকদের থেকে হতভাগা ব্যবসায়ী বোধ হয় আর নাই। ক্রেতা কম হওয়াতে বইয়ের দ্ম বেড়ে যাচ্ছে হু হু করে।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আগে মহল্লাভিত্তিক পাঠাগার ছিল। এখন বোধহয় খুব বেশি নেই।
একটা বই কেনার চাইতে গোটা দুয়েক হিন্দি সিনেমার ডিভিডি কেনা উত্তম কাজ।
খুবই ভুল অ্যানালিসিস। আসল ব্যাপার হচ্ছে মানুষের মনোযোগ কে টানছে? সারাদিন চাকুরি করে এসে রিমোট গুঁতালেই হরেক রকম চ্যানেল। পড়ার মত কষ্টও করতে হচ্ছে না। ব্রেইনও খাটাতে হচ্ছে না। সড়াৎ করে ঢুকে যাচ্ছ মাথায়।
মানুষকে তাই পাঠমুখী করতে পশ্চিমেও প্রচুর গবেষণা হচ্ছে। ইন্টানেট ভিত্তিক পড়ার ডিভাইস কিন্ডল আবিষ্কার করা হয়েছে। সেই পড়া পড়তেও হবে না কম্পিউটার সেটা পড়ে শুনিয়ে দিবে। তারপরও মানুষ টানতে কষ্ট হচ্ছে।
তাই আপনার পুরোনো এপ্রোচের কোনোটাই তেমন কার্যকরী হবে না। ইন্টারনেট ভিত্তিক না হোক লোকাল নেটওয়ার্ক বা কিয়স্ক ভিত্তিক কম্পিটার কেন্দ্রিক পাঠাগার করতে হবে। মিনিমাল খরচে পাঠের ব্যবস্থা করতে হবে। একটা বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে থাকল।
মুর্শেদ ভাই, আমি মনে হয় সেই ব্যাপারটা খানিকটা টাচ দিছি
আর হ্যাঁ, ইন্টারনেট ভিত্তিক পাঠব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত লেখা পড়ার আশায় রইলাম।
আমাদের সন্তানেরা যাতে বই পাঠে মনযোগী হয় তা নিয়ে আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবে। ইন্টারনেট ভিত্তিক পাঠ ব্যবস্থা নিয়ে লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
বাঙালি পিছিয়েছে কি না তা জানিনা ... মূল উদ্দেশ্য যদি হয় বিনোদন বা শিক্ষা তবে আর বই কেন? অন্য মাধ্যমগুলোতে অডিও ভিজুয়াল আছে, ফলে পরিশ্রম কম, বিনোদন/শিক্ষা বেশি।
আবার, পাঠ্য বইয়ের চেয়ে একটা সুন্দর ডকুমেন্টারি ভিডিও অনেক বেশি শিখাতে পারে কম সময়ে। তবে রেফারেন্স, অনুশীলন ইত্যাদির জন্য এখনও পাঠ্য বইয়ের বিকল্প দেখি না।
এছাড়া বইয়ের আরেকটা সুবিধা হল, অন্য মাধ্যমে পাঠক/দর্শককে সাধারণত ওটার গতিতে যেতে হয় কিন্তু বই পাঠের ক্ষেত্রে এখনও পাঠক নিজস্ব গতিতে এগোতে পারে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
শামীম ভাই, বইয়ের অডিও ভিজুয়াল উপস্থাপনা নিয়ে একটু লিখুন না!
কয়েকটা মন্তব্যঃ
লেখার মধ্যে আপনার আবেগের ছোঁয়াটা ভাল লাগল।
১।
২। 'কাগজে মুদ্রিত' বইয়ের ভবিষ্যত নিয়ে আমি আর তেমন আশাবাদী হতে পারছিনা। ফটোফিল্মের অবস্থা হয় কিনা কে জানে। বিপণন ভাল করে হয়ত কিছুটা সাফল্য আসতে পারে, তবে ভবিষ্যত নিয়ে কোন আশাবাদ নেই।
৩। দু'টো টার্ম – অভ্যস্ততা এবং পুঁজিবাদ। বর্তমানের প্রেক্ষাপটে দুটোই বইয়ের জন্য একই সাথে আশীর্বাদ/অভিশাপ হয়ে আছে। অভ্যস্ততার জন্য আমি বই/ম্যাগাজিনের বিশেষ সংখ্যা কিনি, সবসময় পড়া হয়ে উঠে না। অথবা এই অভ্যস্ততার জন্যই হয়ত ওয়েববেইজড বই তেমন পড়া হয়ে উঠে না (যেমন সচলায়তনের কল্যাণে ড্যান আরিয়েলির একটা বই পড়ার খুব ইচ্ছে হল – ডিজিট্যাল কপি পেলামও, কিন্তু অপেক্ষা করে আছি বইটা কিনে পড়ব বলে(ইররেশল্যাল )।
৪। মাহবুব মুর্শেদের ‘ইন্টারনেট-ভিত্তিক’ লেখাটার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
৫। আমি আপনার রেফার করা বইয়ের দোকানের হাঁটার দূরত্বে থাকি বলে এইটুকু বলতে পারি, এই বইয়ের দোকানের জায়গাটা ঠিক হয়নি।
৬। @ দ্রোহী – ডিভিডির দোকানেরও ভবিষ্যত নিয়ে তেমন আশাবাদি না...।
১. নৈষাদ্দা, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আমি এই মুহূর্তে ইন্টারনেটকে বইয়ের প্রতিযোগী মনে করি না। আমাদের দেশে বই পড়তে পারে এমন লোকের সংখ্যা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর তুলনায় ঢের বেশি। তবে, তবে ইন্টারনেটের ব্যবহার যে হারে বাড়ছে তাতে সামনের দিনগুলোতে বইয়ের প্রতিযোগী হয়ে উঠবে এতে সন্দেহ নেই।
২. কাগুজে বই নিয়ে আমিও তেমন একটা আশা দেখি না।
৩. আমি আর আপনি একই ক্যাটেগরিতে পড়ি দেখছি। কালের কণ্ঠের রাজকুটে সিনেমা নিয়ে নিয়মিত রিভিউ লিখতে হয়। এ কারণে ভাবলাম একটু সিনেমা নিয়ে পড়াশুনা করি। একগাদা ই-বুক নামালাম। একটাও এখনো পড়া হয়ে উঠেনি।
৫. ওই মার্কেটে আমি দু'চারবার গেছি। জায়গাটা নিয়ে আমার একটা পর্যবেক্ষণ হলো, দোকানটি ৪ তলায় হওয়ায় অনেকেরই চোখে পড়ে না। তাছাড়া অনেকেই ৪তলা পর্যন্ত উঠেন না। নিচতলায় হলে ভালো হতো। আপনার পর্যবেক্ষণটা কি, একটু শেয়ার করুন না।
সুন্দর উপস্থাপনা, পান্থ। অনেক কিছু বলার ছিল। কিন্তু যখন বলার সময় হবে, তখন হয়তো টপিকটা পুরানো হয়ে যাবে।
আসলে সময় অনেক কিছুই বদলে দেয়। মুজতবা আলীও কিন্তু "বই কেনা" লিখেছিলেন। তার মানে সেকালেও এমনটাই ছিল। বই যারা পড়ে তারা পড়েই যাবে, আর যারা পড়ে না, তাদের বাড়ি বাড়ি বই ফেরি করলেও তারা বিরক্ত হবে।
আমিও মুর্শেদের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
পিপিদা, সেই কারণেই বইয়ের মার্কেটিং মানে শুধু বিক্রি না, কিভাবে পাঠাভ্যাস তৈরি করা যায়, মানুষের জীবনে বইয়ের গুরুত্ব বাড়িয়ে তোলা যায়, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। আমাদের মনে হয় একটা বিহেভিয়ার চেঞ্জ ক্যাম্পেইন চালানো দরকার।
সময় যেটা করতে পারে:
১. প্রতি মাসের একটি সপ্তাহে নির্দিষ্ট একটি গ্রুপের বইয়ের ওপর মূল্যহ্রাস ঘোষণা করতে পারে।
২. প্রতি মাসের একটি দিনে একজন লেখককে নিয়ে বুক সাইনিং প্রোগ্রাম করতে পারে।
৩. প্রতি মাসের একটি নির্দিষ্ট সপ্তাহে বিশেষ কোনো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের জন্যে বড় মূল্যহ্রাস ঘোষণা করতে পারে।
৪. চারতালায় ধারেকাছে একটি ভালো আড্ডাখানা তৈরি করতে পারে, যেখানে আড্ডা আর খানা দুটোরই সুবন্দোবস্ত থাকবে।
৫. টেড টকের মতো এক এক করে গুণী ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানাতে পারে, আড্ডার আবহাওয়ায় পনেরো বিশ মিনিট কাটাতে।
৬. লোকে বইয়ের পেছনে এখন আর ঘোরে না, কাজেই বইকেই লোকের পেছনে ঘুরতে হবে। এই প্যারাডাইম শিফট অনুধাবন করতে না পারলে হবে না।
আমার মনে হয় বুক রিভিঊ করার মতো কিছু বিষয় চালু করা জেতে পারে। প্রতি মাসে অন্তুত দুটি করে বই পড়ে পাঠক জানাক তাদের মতামত। যেই বইগুলো রিভিঊ করা হবে সেইগুলোর দাম কিছুটা কম রাখা হোক। তবে এই কম দামটা পাঠক ফেরত পাবেন যখন তিনি রিভিঊ পড়বেন।
"কম দামটা পাঠক ফেরত পাবে" ... বুঝি নাই।
জিনিস টা হবে এরকম, আপনি Review টা লিখে অথবা পড়ে জমা দিতে হবে সময় এর কাছে। তারপর আপনাকে discount টাকা টা ফেরত পাবেন। আপনি সস্তায় বই পাওয়ার জন্য হলেও review লিখতে আগ্রহী হবেন। না কি হবেন না?
আরিফিন সন্ধি
ডিসকাউন্টের টাকাটা ফেরত পাবার জন্যে যে টাকা খরচ করে আবার সময়ের দোকানে যেতে হবে, সেই ভাড়াও তো উসুল হবে না ডিসকাউন্টের টাকায়। রিভিউয়ের খরচ [রিভিউ সম্মানী + অপরচুনিটি কস্ট] বাদই দিলাম।
হিমু ভাই, সময় শুরুর দিকে জনপ্রিয় ও বিখ্যাত লোকদের এনে ওইখানে নিয়মিতভাবে বইমেলার আয়োজন করতো। লেখকরা থাকতেন। পাঠকদের সাথে আড্ডা দিতেন। এখন সেটা অনেক কমে এসেছে। আগে চারতলায় সব দোকান চালু না হওয়ায় অনেক স্পেশ ছিল। এখন দোকানগুলো মোটামুটিভাবে চারূ হয়ে যাওয়ায় সেখানে এ ধরনের আয়োজন একটু ঝামেলাপূর্ণ হয়ে গেছে।
সময়ে বইয়ের ডিসকাউন্টও অন্যান্য জায়গার চেয়ে বেশি। ২৫%। সব জায়গায় সেটা ২০%।
আমি আসলে চারতলা সবদিকে ঘুরে দেখিনি। তাই, সেখানে খাবার দোকান আছে কি না বলতে পারছি না। তবে একটা আড্ডার জায়গা থাকলে ভালো হয়। যেমনটা আমরা আজিজে গেলে পাই।
পুঁজিবাদের কারণে মানুষের বই পড়া কমে যাচ্ছে, সেটা বোধহয় ঠিক না। ইওরোপ- আমেরিকা অনেক আগেই পুঁজিবাদে চলছে, কিন্তু বই প্রকাশ/ বই কেনা/ এসবও চালু ছিল।
আমার ধারণা, সামগ্রিকভাবে আমাদের সমাজে বইয়ের প্রতি/ গবেষণার প্রতি আগ্রহ কম। এটা জাতিগত অভ্যাস হতে পারে।
আর এখন পুরো পৃথিবীতেই মুদ্রিত বইয়ের বিক্রি হুমকির মুখে। ইন্টারনেট, অডিও-বুক, ই-বুক ইত্যাদি নানা বিকল্প মাধ্যমে মানুষ ঝুঁকছে, একটা ট্রানজিসন পিরিয়ড চলছে, দেখা যাক কি হয়।
বই-পড়া নিয়ে আপনার এই উদ্বেগটা ভাল লাগল।
কিন্ডল যখন আইলো, সবাই বলাবলি করছি, ব্ইয়ের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেল! এখনতরি যায় নাই। তবে যাবে না, এটারও নিশ্চয়তা নাই! দেখা যাক কি হয়।
"ঐতিহ্য-কাতরতা নিয়ে প্যানপ্যানি কবেই ছেড়েছে। তাই যে বাঙালি মধ্যবিত্ত একসময় বইকে পবিত্র ভাবতো, অসাবধানে বইয়ে পা লাগলে জিব কেটে চুমু খেত। তাদের কাছে বইয়ের সেই পবিত্রতা মনে হয় আরো বেড়ে গেছে। তাই স্পর্শে অপবিত্র হয়ে যাক, সেই ভয়ে তারা বই কেনা ছেড়েই দিয়েছে! এই বাক্য দুটো সত্যি ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দিল, মনটাও খারাপ করলো কিছুটা।
বর্তমানে ইন্টারনেটে ডাউনলোড দিয়ে দেদারছে বই নামানো যায়। এই সময়ের পাঠকগন ইন্টারনেটেই পড়ালেখা সেরে নিচ্ছে।তাই কাগুজে বইয়ের কদর হয়তো কমে গেছে। আর সাধারন বাঙ্গালী আজকাল বই কেনে বিশেষ বিশেষ 'ইভেন্টে'।
বইমেলায়। মাস ব্যাপি বইমেলায় হফতায় একদিন করে গেলেও চারবার যেতে তো হয়ই। মেলায় গিয়ে একটা দুটো বই না কিনলে কি চলে? তাই সারাবছরের কেনাকাটা বইমেলার জন্যই তুলে রাখে বোধ হয়।
আর সারাবছর ধরে বই কিনলে বইমেলায় গিয়ে কি কিনবো? বা বইমেলা থেকেই তো বই কিনলাম আবার কি কিনবো?' মানসিকতা কাজ করে।
সময়োচিত লেখা
মোহনা'
যে যা-ই বলুক, কিছু এসে যায় না তাতে। হুমায়ূন প্রবেশ করেছেন বাংলা সাহিত্যের অস্তিত্বের মর্মমূলে। ... আমার বিশ্বাস, বাংলা সাহিত্য যতদিন বেঁচে থাকবে, হুমায়ূন আহমেদও বেঁচে থাকবেন ততদিন।'
বহুমুখী সমস্যা। টিভি, ইন্টারনেট, ভিডিও গেমের সাথে বই তাল মিলায়ে চলতে পারছে না। একটা কাজ আমরা সবাই অন্তত করতে পারি সেটা হোল জন্মদিন, বিয়ে বা যেকোন ধরণের দাওয়াতে উপহার দেওয়া। বইএর গুচ্ছ হতে পারে কিংবা অন্য উপহারের সাথে অন্তত একটা বইও হতে পারে। -রু
হুম! সচলে একবার বই উপহার দিবস চালু করার চিন্তাভাবনা চলছিল। সেইটার যে কি হলো একটু খোঁজ নেয়া দরকার।
প্লাজা এ আর এ গিয়েছিলাম কাপড় চোপরের সন্ধানে, হঠাৎ সময় এর দোকানটা পেয়ে আত্মহারা হয়ে গেলাম, ৩ বছর বইমেলা মিস করার দুঃখ চলে গেল। হাতের বাকি টাকা ওখানে উড়িয়ে দিয়ে এসেছি।
একটা পর্যবেক্ষণঃ এই মার্কেটের নিচে ফোয়ারার চার পাশে প্রচুর মহিলা বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে এসে বসে (হিন্দি সিরিয়ালের) গল্প করে সময় কাটাচ্ছিলেন। এদেরকে পাঠকের দলে ভেড়ানো যায় কি? ফোয়ারার উপরে একটা চমৎকার কফির দোকান আছে। সময় প্রকাশনে যদি একটা কাফের মত আয়োজন থাকে, খাবার মুখ্য নয়, কেবল বসবার, বই নাড়াচাড়া আর কফির ব্যবস্থা, তাহলে হয়তো ঐসব অভিভাবকেরা বই এর দোকানে আসবেন।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
নিচতলায় দোকান হলে যে ভালো হতো, সেইটা নিয়ে সেদিনই কথা বলেছি। কেন না, অনেক লোকই চারতলা পর্যন্ত ওঠেন না। তারা হদিসও জানেন না, যে চারতলায় একটা বইয়ের দোকান আছে। আর ওই মহিলাদের দৃষ্টি আর্কষণ করতে নিচতলায় একটা নোটিশবোর্ড অথবা হোল্ডিং-এর মতো কিছু একটা করতে পারে সময়।
নতুন মন্তব্য করুন