চাঁদনি পসর রাইত
তোমাকে আগে একটা গল্প শোনাই। রাজপুত্র সিদ্ধার্থের গল্প। তুমি চাইলে গৌতম বুদ্ধের গল্পও ধরে নিতে পারো। রাজা শুদ্ধোধনের স্ত্রী রাণী মায়া এক রাতে স্বপ্ন দেখলেন- স্বর্ণের পর্বতে ভ্রমণ করছেন তিনি। এমন সময় ছয় দাঁত বিশিষ্ট একটি সাদা হাতি তার শরীরের বা পাশ দিয়ে ঢুকে পড়লো। তিনি বিন্দুমাত্র ব্যথা পেলেন না। রাণী জেগে উঠে রাজাকে স্বপ্নের কথা জানালেন। রাজা স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে ডাকলেন গণক ঠাকুরদের। ‘রাণী এমন এক পুত্রের জন্ম দিবেন যিনি জগতের সম্রাট হবেন। অথবা এমন আলেকিত মানুষ হবেন, যিনি মানবজাতির মুক্তির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবেন।’ স্বপ্নের বিবরণ শুনে গণকরা এই ভাষ্য দিলেন। ইতিহাস সাক্ষী পুর্ণিমা রাতে সিদ্ধার্থ ঘর ছেড়েছিল! আর লেখক যশোপ্রার্থী আমি পূর্ণিমার চাঁদ মাথায় নিয়ে ঘরে ফিরলাম আজ। আমার এমন ফেরায় ভেঙচি কাটছো তুমি, এ আমি ঢের জানি।
আয় আয় চাঁদমামা
কাল তোমার কপালে গোলগাল টিপ ছিল না। খেয়াল করেছি। একটা ঝাউগাছের পাতা এঁকে রেখেছিলে। তবে চাঁদ ছিল আকাশে। পথে পথে সঙ্গ দিয়েছে। তোমাকে। আমাকে। শীতরাত্রির হিম তাড়াতে আমরা আরো কাছে এসেছিলাম। তোমার উষ্ণ ছোঁয়াতেও কেন জানি ফিরে এলো আয় আয় চাঁদমামার স্নিগ্ধ ছেলেবেলা। সব দোষ ওই চাঁদের!
চাঁদের হাসি
খুব স্কুলবেলায়, একটা স্বপ্ন পুষেছিলাম আমি। অনেক রাতের একটা মাঠ। আমি লাফিয়ে লাফিয়ে চলেছি। কেউ নেই। আকাশটা দুধসাদা আলোয় উজ্জ্বল। যেন আস্ত একটা দুধের কড়াই। তাতে বলকে উঠছে জ্যোৎস্না। আর আমি একচুমুক পান করে দেখি, চারপাশটা অপররূপ হাসছে। আর নারকেল ডালে একটা ছেঁড়া ঘুড়ি ন্যাজ নাড়ছে।
চাঁদের পাহাড়
তোমাকে কি চিম্বুকের ঘটনাটা বলেছি? বলিনি বোধহয়। তাহলে শোন, সেবার খুব দ্রুত সন্ধ্যা নামছে চিম্বুকে। পাহাড়ের ঘায়ে অন্ধকার দৈত্য হয়ে উঠছে ক্রমশ। ড্রাইভার তাড়া দেয়। তাড়াতাড়ি। এক্ষুণি রওনা না দিলে বিপদ আমাদের অদূরে। গাড়িতে চড়েই দেখি, ওমা, চাঁদ আমাদের গার্ডের ভূমিকা নিচ্ছে। পাহাড়ের মাথায় চাঁদ এত কাছে! যেন এই ছুঁয়ে দেবে আমাদের এলোচুল, যেমনটা তুমি দাও!
চাঁদমুখ
বলোতো কবের ঘটনা এটা! রিক্সায় যাচ্ছি। তুমি আর আমি।
তুমি বললে, দ্যাখো, তাকাও।
আমি পূর্ণচোখে তোমার দিকে তাকাই।
গাধা, আমার দিকে বলি নাই। কি চমৎকার চাঁদ উঠেছে।
আমি চাঁদের দিকে তাকাই। চাঁদ আর তোমার মুখ আলাদা করতে পারি না। সে রাতে বিভ্রম নিয়ে আমি জ্যোৎস্নার দুধজলে স্নান করি।
চাঁদসঙ্গ
পঙতিটি লোরকার। জানো বোধহয়। কবিতার কতকিছু তোমার নখদর্পণে। ‘মৃত্যুর বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গনে চাঁদ ওঠে।’ সেবার হয়েছিল আমার এরকম। সন্ধ্যার মেঘের রঙ অন্ধকার হলে তখন বইমেলায়। তার জনক এই আমাকে যেতে হলো সমুদ্র শহরে। অফিসের প্রোগ্রামে। মন খারাপ। সমুদ্রের পাড়ে বসে আছি। পায়ের পাটাতন জুড়ে উর্মিমালার ফেনিল সম্মোহন। আর মাথার ওপর অপরূপা চাঁদ। সে রাতে আর জ্যোৎস্নাকে ফেলে তারকা হোটেলের ঠুনকো আভিজাত্যে ফেরা হয় না। নগ্ন নির্জন রাত আমাকে পাগল করে তোলে।
চাঁদের বুড়ি
দূরবীন লাগবে না। তুমি চাঁদের দিকে তাকালে দেখবে এক বুড়ি আপন মনে চরকা কেটে যাচ্ছে। ওইটা আমার আপন দাদিমা। বিশ্বাস হয় না! তাহলে একবার আমাদের জোলা বাড়িতে এসো। দেখবে, দাদিমার থেকে শিখে নিয়ে আমরা চরকায় কেমন সুতা কাটছি। তোমার পরিধানের কাপড় তৈরির জোগাড়যন্ত্র করছি।
চাঁদফুল
তুমি তো জানোই, জ্যোৎস্নার আরেকনাম চাঁদফুল। একদিন ঠিকই চাঁদফুল এনে গুঁজে দিবো তোমার খোঁপায়। চাঁদফুল তো আর অনভ্যস্ত চুমো নয় যে না করবে!
প্রিয় জীবনানন্দ
কবে পড়েছিলাম ধুসর পাণ্ডুলিপির ক্যাম্পে কবিতাটি। সুন্দরবনের চাঁদ, জ্যোৎস্না, ঘাই হরিণী, শিকারি বাঘ একাকার হয়ে গেছে। কতবার তারপরে সুন্দরবনে জ্যোৎস্নাবিহার করতে চেয়েছি। যাওয়া হয়নি। নিশ্চয় যাবো একদিন। তুমি সশরীরে না গেলেও যাবে আমার সকল ভাবনার সঙ্গী হয়ে। এ আমি দিব্যি বলতে পারি।
এবং রবীন্দ্রনাথ
পূর্ণিমা সন্ধ্যায় তোমার রজনীগন্ধায়
রূপসাগরের পারের পানে উদাসী মন ধায়।
তোমার প্রজাপতির পাখা
আমার আকাশ-চাওয়া মুগ্ধ চোখের রঙিন-স্বপন-মাথা।
তোমার চাঁদের আলোয়
মিলায় আমার দু:খসুখের সকল অবসান।
তোমার প্রতি মুগ্ধতা কতবার ঝেড়ে ফেলে দিতে চেয়েছি। একবারও পারিনি। কেন পারিনি, সেটা রবিবুড়োর চেয়ে কে এত আপন করে কবে জানতে পেরেছে!
চাঁদে পাওয়া এই আমি
মাথা প্রচণ্ড ব্যথা করছে, বলছিলে তুমি। তারপর শীত রাত্রির নীরবতা ভেঙে এককাপ কফি খেলে। কিছুটা কি মাথা ব্যথা কমলো! আমি কি জানি! তবে তুমি কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে। বাইরে তখন চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে, আলো উছলে পড়ছে। আচ্ছা, তোমার কি আলফ্রেড নোয়েজের সেই ব্যালাডের কথা মনে আছে? ওই যে ওই হাইওয়েম্যানের। ধরো, আজ এই পূর্ণিমা রাতে আমি সেই হাইওয়েম্যান। পাথুরে রাস্তা পেরিয়ে আসছি। গায়ে ঝরে পড়ছে চাঁদের আলো। তুমি জানলায় এলোচুল নামিয়ে দিয়েছো। অভিসার সেরে, ফিরে যেতে যেতে আমি বলে ফেলবো, মনে রাখবে আমি তোমার কাছে বারবার ফিরে আসবো, ঠিক তখনি যখন আকাশে চাঁদ থাকবে।
মন্তব্য
মুগ্ধ
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
ধন্যবাদ কবি!
১. "মাথা প্রচণ্ড ব্যথা করছে, বলছিলে তুমি" - অসহনীয় মাথাব্যথা নাকি?
২. এই লেখা থেকে অন্যরা কী বুঝেছেন আমি নিশ্চিত না তবে আমি বুঝতে পারছি পান্থর "জীবিত" অবস্থার অবসান ঘটানোর জন্য শুভ পরিণয় অত্যাবশকীয় হয়ে পড়েছে।
৩. চাঁদ সম্বলিত নয়টা শব্দবন্ধ দিয়ে এই লেখাটা ভালো লেগেছে। চাঁদ সিরিজ নাম দিয়ে এমন নয়টা অণুগল্প/ছোটগল্পের একটা সংকলন হতে পারে যেটা বোকা ছেলেগুলো চালাক মেয়েদের উপহার দেবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
১.পাণ্ডবদা, অসহনীয় মাথাব্যথা না! সেটা হলে তো ধরিয়ে দিবেন লিংকখানা!
২."জীবিত" অবস্থা থাক আরও কিছুকাল বেঁচে!
৩. এই তো একটা আইডিয়া মাথায় ঢুকিয়ে দিলেন! এখন তো আমার নিজেরই লিখতে ইচ্ছে করতেছে!
এতো চাঁদনীমুখর হয়ে ঊঠলেন কেনো হঠাৎ ?? ...'চাঁদমুখ' অণুগল্পটা ভালো লেগেছে।
পান্থদা অনেকদিন পর আবার নিয়মিত লিখছেন দেখে ভাল্লাগছে। একটা গল্প দ্যান আপনার, ম্যালাদিন পড়ি না।
সুহান, কালকে রাতে বাসায় ফেরার পথে দেখি, মস্ত একখানা চাঁদ মাথার ওপর ঝুলে আছে। বাসায় এসে একটানে লিখে পোস্ট করলাম।
দারুণ শিরোনামের চমৎকার একটি লেখা ...
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
শিরোনামটা সৈয়দ হকের একটি কবিতা থেকে ধার নিয়ে নিজের মতো করে নিয়েছি!
পড়া ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!
দারুন্লাগছে এক্টা পেম কর্তে হবে দেখি
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
পেম কর্তে যখন মঞ্চায়, তাইলে বেশি করে কর, এক্টা ক্যান!
ধন্যবাদ নৈষাদ দা!
বাহ্! পান্থ, খুব ভালো লাগলো তোর লেখার ধরনটা।
সুমিমা ইয়াসমিন
সুমিপা, ফোনে তো বললাই, এখন আবার মন্তব্যের ঘরে। ভাল্লাগো তোমার এই উৎসাহটা!
পান্থ বড় হয়ে গেছে।
পান্থটা আসলেই বড় হয়ে গেছে।
পান্থ'র বিয়ের বয়স হইছে।
ওরে কে আছিস, পান্থ'রে বিয়ে দিয়ে দে।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধূগোদা, বিয়ে দিয়ে পান্থকে বিপদে না ফেললেই কি নয়!
তোমারে এই চান্দের রোগে ধরল ক্যান? ছ্যাকা দিছে কেডায়?
অনেক সুন্দর লাগলো পান্থ।
এতো সুন্দর একটা গল্পের মাঝে নিজের বইয়ের লিঙ্ক দেয় কি ভালো হলো?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
শিরোনামটা খুব ভাল্লাগছে...।সুন্দর লেখা!
----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand
চমৎকার বিষয়। অসাধারণ!!!
-অতীত
বেশ রোমান্টিক।
আরেব্বাস দারুন লাগল তো।
সচলের পুরাতন পোস্টগুলো পড়তে বেশ ভাল লাগে।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
এমন দুরন্ত একটা লেখার খোঁজ দেওয়ার জন্য
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এই লেখা পড়ে আমি এখন চন্দ্রাহত।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আহ্! কৃষ্ণপক্ষের রাতে পুরোদস্তুর চন্দ্রগ্রস্ত হয়ে গেলাম!
চমৎকার
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
নতুন মন্তব্য করুন