আজকাল খুব একটা পত্রিকা পড়া হয় না। টিভিও তেমন একটা দেখা হয় না। টিভির রিমোট থাকে বউ আর বোনের হাতে। ওরা সিরিয়াল দেখে। ওদের হাত থেকে রিমোট পেলে সংবাদ চ্যানেলগুলোতে একটু ঘুরে এসে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, এইচবিও অথবা স্টার মুভিজে গিয়ে থিতু হই। গত পরশু সংবাদ চ্যানেল ঘুরতে ঘুরতে চ্যানেল২৪-এ এসে দেখি, মির্জা ফখরুল সাক্ষাত্কার দিচ্ছেন। তিনি আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র ভাবনাচিন্তার কথা বলছেন। তার বক্তব্য শুনতে থাকি। তিনি একুশ শতকের উপযোগী সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলেন। দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের কথাও বলেন। ব্যাপারটি নিয়ে বিশদ জানবো বলে টিভির দিকে গভীর মনোযোগ দিই। খুব ছোট্ট সাক্ষাত্কার। বিশদ জানা হয় না। শেষ হয়ে যায়।
পরে অনলাইন ঘেঁটে দেখলাম, খালেদা জিয়া গত ১৮ জুলাই ২০১৩ তারিখে ‘নতুন ধরনের সরকারের কথা’ প্রথম উল্লেখ করেন। স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের সাথে ইফতার পার্টিতে তিনি ঘোষণা দেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নতুন ধরনের সরকার ব্যবস্থা চালু করবে। তবে, নতুন ধরনের সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। পরে লন্ডনে এক ইফতার পার্টিতে তারেক রহমান বিষয়টি নিয়ে আরো একটু খোলাসা করেন। সেখানে তিনি বিএনপি সরকার গঠন করলে কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, পর্যটন, প্রযুক্তি, পরিবেশসহ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো কীভাবে চালাবে সেটা তুলে ধরেছেন। কেউ কেউ নতুন ধারার সরকারে ড. মুহাম্মদ ইউনুস, ফজলে হাসান আবেদ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী’র মতো ব্যক্তিদের উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদায় বিশেষ দূত হিসেবে রাখার কথা উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া নতুন ধরনের সরকারে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল অরাজনৈতিক ব্যক্তিদেরও সম্পৃক্ত করার কথাও এসেছে।
যদিও সংবাদ মাধ্যমে নতুন ধরনের সরকারের রূপরেখা পূর্ণাঙ্গভাবে এখনো আসেনি। বিএনপি’র তরফ থেকে দেয়াও হয়নি সেটা। তবে যেটুকু এসেছে, তাতে তথ্যপ্রযুক্তির এই উত্কর্ষের সময়ে নতুন ধরনের সরকারে তথ্যপ্রযুক্তিকে কীভাবে কাজে লাগানো হবে সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। বিএনপি’র নেতারা বিভিন্ন সভা সমাবেশে নতুন ধরনের সরকার নিয়ে হালকাপাতলা ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ই-গভার্নেন্স বা ই-শাসন নিয়ে তারা একটি কথাও বলেননি। অথচ গত কয়েক বছরে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার ফলশ্রুতিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ই-সেবা এসেছে। তার সুফলও পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
আওয়ামী লীগ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে অনেকের অনেক খুঁতখুঁতানি আছে। এই সরকারের আমলেই কিছু সময়ের জন্য ফেসবুক, ইউটিউব বন্ধ হয়েছে। অনলাইন নিয়ন্ত্রণে অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। ব্লগাররা গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু ছোট ছোট স্কেলে ই-শাসন [ই-গভার্নেন্স] প্রতিষ্ঠায় সরকারের সফলতা কম নয়। অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের জুলাই ২০১৩ এর বুকলেট থেকে সরকারের ই-সেবা কার্যক্রমের কিছুটা ধরছি [এটুআই এর ওয়েবসাইটে জুলাইয়ের বুকলেট এখনো আপলোড হয়নি। ফেব্রুয়ারি ২০১৩ এর বুকলেটটি পাবেন, এখানেও এ সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে]।
২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ৪.৫ কোটি মানুষ ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র থেকে সেবা নিয়েছেন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ২ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করেছেন। জেলা ই-সেবাকেন্দ্র থেকে অনলাইনে ১৩ লক্ষ নাগরিক আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে। ২৭ লক্ষ মানুষকে জমিজমার রেকর্ড (এসএ, সিএস, আরএস) এর নকল/পর্চা/খতিয়ান/সার্টিফায়েড কপি প্রদান করা হয়েছে। ২০১৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে ৬ কোটি ২৬ লক্ষ এবং মোবাইলে ৩ কোটি ৮২ লক্ষ শিক্ষার্থী তাদের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল পেয়েছেন। দেশের ২০ লক্ষ আখচাষীর কাছে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে পুর্জি তথ্য প্রেরণ করা হচ্ছে। সারাদেশের ৪৮২টি হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। ৩ লক্ষ মানুষ আয়কর হিসাব বের করার জন্য অনলাইন ট্যাক্স ক্যালকুলেটর ব্যবহার করছেন। ইংরেজি না জানা বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য মোবাইল ফোনে বাংলা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয়েছে। এছাড়াও আরো অনেক উদ্যোগ রয়েছে। তবে সরকারি পর্যায়ে সেবাদাতার ভুমিকায় যারা রয়েছেন, তাদের দক্ষতা নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে।
দেখা যাচ্ছে ইন্টারনেট কিংবা মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ সরকারি সেবাসমূহ পাচ্ছেন। এদের বেশিরভাগই আগামী নির্বাচনের ভোটার। আবার আমার জানামতে, [তথ্যসূত্র দিতে পারবো না] দেশের মোট ভোটারের ৩৫% তরুণ ভোটার। তরুণরা আবার তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে অগ্রগামী। নতুন ধরনের সরকারের রুপরেখা দিয়ে আগামী নির্বাচনে উতরে যেতে বিএনপিকে এই বিপুল সংখ্যক ভোটারের কথা মনে রাখতে হবে। তাই বর্তমান সরকারের নেয়া উদ্যোগগুলো ধরে রাখার সাথে সাথে নতুন ধরনের সরকারের রূপরেখায় ই-শাসন বা ই-গভার্নেন্স কেমন হবে, সেটাও স্পষ্ট করতে হবে। কারণ, ই-বান্ধব সরকার এখন সময়ের দাবি। এছাড়া এগিয়ে যাওয়ার আর কোনো সহজ রাস্তা নেই।
মন্তব্য
অবশ্যই ই-বান্ধব হবে। তখন ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে হাওয়া ভবনের ১০% পরিশোধ করতে পারবেন, কষ্ট করে আর গুলশানে যেতে হবে না। তাছাড়া কে কে ১০% না দিয়ে নতুন ব্যবসা খুলছেন বা বাড়ি বানাচ্ছেন, সেসবও কাস্টমাইজড সফটঅয়্যারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে জেনে নিতে পারবেন হাওয়া ভবনের বড় গণতন্ত্র। তাছাড়া বাজারে আরজেস গ্রেনেডের হালি এখন কত সে তথ্যও চট করে জেনে নিতে পারবেন। চোখ কান খোলা রাখুন, মতিকণ্ঠে নিয়মিত আপডেট আসছে।
হ, বিশেষ ভবন থেকে বলা হবে বিকাশ করে দেন।
সহমত
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ধন্যবাদ।
বিএনপির নতুন ধারার কথাটাকে আমি সিরিয়াসলি নেই নাই
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
সংবাদ মাধ্যমে দেখলাম বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। তাই আমি সিরিয়াসলি নিয়ে পোস্টটা লিখলাম।
শিরোনামে কী > কি
ঠিক করে দিলাম।
সমস্যা হলো, ওই দলটির কোনটা সত্য কথা আর কোনটা অসত্য ও মিথ্যা সেটা যাচাই করার জন্য আগে আর একটা ই-অ্যাপ্লিকেশন দরকার। তারপর তাদের ঘোষিত নতুন ধরনের সরকারের রূপরেখা নিয়ে ভাবা যেতো।
তবে একটা বিষয় আঁচ করা যায় যে, আমাদের তথাকথিত নিরপেক্ষ মহান সুশীলদেরকে ক্ষমতার কিঞ্চিৎ স্বাদ দেয়ার লোভ দেখাতেই হয়তো একটি অতিরিক্ত কক্ষের মূলা বাজারে ছাড়া হয়েছে। সম্ভবত এটাই নতুন ধরনের সরকারের রূপরেখা ! অন্তত এর বেশি তো ভাবতে পারছি না এখনো !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আমাদের মত আশাবাদী জাতি খুব কমই আছে। কি ভুল বলেছি কিছু?
হেন করবো, তেন করবোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে একেকটা দল।
ঠিক কত % প্রতিশ্রুতি তাঁরা পূরণ করেন? তারপরও সেসব ভুলে আবারও তাদের
দেয়া প্রতিশ্রুতিতে আশায় বুক বাঁধি। এরপরও বলা ঠিক হবে আমরা আশাবাদী নই!
হোক ই-বান্ধব, এনালগ -ডিজিট্যাল এইসবের আগে আসলে বাংলাদেশ বান্ধব হওয়াটা জরুরী।
বাংলাদেশ বান্ধব হতে পারলেই অনেক সমস্যার সুন্দর সমাধান সম্ভব। সেটা সরকারী এবং বিরোধী
দুটো দলের জন্যই সমান প্রযোজ্য মনে করি।
নতুন মন্তব্য করুন