বাংলাদেশের ক্রিকেটের দুরবস্হা ধীরে ধীরে সহ্যের সীমা পার হয়ে যাচ্ছে। ধারাবাহিকতার এত অভাব একটা দলের সবগুলো সদস্যের উপর কিভাবে থাকে? খুব কম পারফর্মারই আমাদের ফর্মে থাকে। আমি সারা দল খুঁজে মাত্র ২/৩ জন ধারাবাহিক পারফর্মার দেখতে পাই। এরা হলো মাশরাফি, রফিক ও পাইলট। এর মাঝে রফিক ও পাইলট আবার দলে অবাঞ্ছিত। পাইলট যে খুব ধারাবাহিক ও সেরা একজন পারফর্মার তা আমি দাবি করছি না। তবে অনেক সময়ই সে ২০-৩৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে চূড়ান্ত বেইজ্জতির হাত থেকে রক্ষা করেছে। একজন উইকেটকিপার কাম লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে এরবেশী আশা করা উচিত নয়। মাশরাফি ও রফিকের মত ক্রিকেটিং ফিগারের আলোচনা/সমালোচনা করার মত যোগ্যতা আমার নেই। একসময় হাবিবুল বাশার ও শাহরিয়ার নাফিসকেও আমার মনে হয়েছিল পরীক্ষিত পারফর্মার, ধারাবাহিকতার অভাব নেই। কিন্তু ২/৩ বছর যাওয়ার পরই ওনারাও যাহাই লাউ, তাহাই কদু হিসাবে নিজেদের প্রমাণ করলেন। অনেকদিন বাংলাদেশের খেলা দেখা হয় না। তবে পত্র-পত্রিকায় যা পড়ি, তাতে মনে হয় আমাদের ব্যাটসম্যানদের টেকনিকে তো বটেই, তাছাড়া পরিপক্কতায় যথেষ্ঠ অভাব আছে। আর আছে হিরো হওয়ার একটা সূক্ষ্ন প্রবণতা। ভাবখানা এমন যে ৩০ বলে সেঞ্চুরি না হলেও ১৩/১৪ বলে একটা ফিফটি না মারতে পারলে তাদের নামের সুবিচার হয় না। অনেকের মত আমিও বিশ্বাস করতাম বয়সের দোষ, কয়েকবছর পর ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কিসের কি? ৩-৫ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেও যদি অরিজিন্যাল ২৫ আর সার্টিফিকেটের ২২ বছর বয়সেও যদি পরিপক্কতা না আসে, তবে আর কবে আসবে? প্রায় এক দশক হতে চলছে আমাদের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার। স্বীকার করতে কোন লজ্জা বা দ্বিধা থাকা ঠিক নয় যে অন্যান্য টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর তুলনায় সুবিধা-সুযোগ আমরা অনেক বেশি পেয়েছি, অনেক কম ঝামেলা পোহাতে হয়েছে আমাদের ক্রিকেটকে। তারপরও উন্নতি কিন্তু তেমন একটা হয় নি।
তবে হ্যাঁ মাঝে মাঝে ওয়ানডেতে চমক দেখাই আমরা। জিতে যাই বড় বড় দলের সাথে। কিন্তু ধারাবাহিকতার চূড়ান্ত অভাবটাই চোখে পড়ে পরের ম্যাচে। ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দীতাও গড়ে তুলতে পারি না আমরা।এসব তো গেল ওয়ানডের কথা। টেস্টের বেহাল অবস্হার কথা তো আর নাই বললাম।
এরপর আছে নির্বাচকদের চটকদার বুলি আর চরম অভিজ্ঞতার অভাব। প্রতি সিরিজেই দেখা যায় ন্যূনতম একজনের অভিষেক। অভিষেকে টিন এজাররা একটু নার্ভাস হতেই পারে। কিন্তু নির্বাচকদের প্রক্রিয়া অনুসারে খরাপ করলেই বাতিল। অস্ট্রেলিয়া ১৮৬৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত টেস্ট ক্যাপ দিয়েছে ৩৯৭ জনকে। আর আমরা মাশাল্লাহ ৮ বছরে দিয়েছি ৫০ জনকে। যেমন বেহাল অবস্হা আমাদের ক্রিকেটের তারচেয়েও বেহাল অবস্হা নির্বাচকদের আর ক্রিকেটাররা তো সুখেই আছেন। বোর্ড, এডভারটাইজমেন্টের বদৌলতে অর্থ-বিত্তের তো কোন অভাব নেই, নেই কোন বাড়তি টেনশন, নেই ভালো করার প্রবণতা। দরকার কি? তারকা খ্যাতি থেকে শুরু করে অন্ন-সংস্হানের চিন্তা তো তাদের করতে হয় না। বেঁচে থাকার জন্য আর কি লাগে একজন মানুষের?
অন্ধকার এক সুড়ংগে ঢুকেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। আমি দেখতে পাই না কোন আলো সে সুড়ংগে। সুড়ংগের শেষ মাথাও আমি দেখতে পাই না। আপনারা পান কি?
মন্তব্য
অতিরিক্ত সীমিত ওভারের ক্রিকেট আমাদের দলকে আরো খারাপের দিকে ঠেলে দিবে। ওয়ানডে খেলা তো ছিলই, এখন এসেছে ২০-২০ নামের ভাঁড়ামো। খেলোয়াড়দের টেকনিক আর টেম্পারামেন্ট কোনটাই বাকি থাকবে না এইসব ফাতরামী নিয়ে মেতে থাকলে। এখন পয়দা হয়েছে আফতাবের মত কাউবয়, তারা খেলে ক্যামেরার জন্যে, মিডিয়ার জন্যে, দলের জন্যে নয়, আর জয়ের জন্যে তো নয়ই। এইভাবে টেস্ট স্ট্যাটাস জিইয়ে রেখে কার কি লাভ হচ্ছে কে জানে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
কাউবয়গুলো বছরের পর বছর ভালো ইনিংস না খেলে দলে তাকে কিভাবে?
এইটা ২০-২০-র ট্রাই নিয়েছিল। কিন্তু তাও হয় নাই। এই স্কোরে ২০-২০ ম্যাচও জেতে সম্ভব না
প্রতিভার তো অভাব নাই। অন্য কি্যু একটা জিনিসের অভাব। দেখা যাক নতুন কোচ কি শেখান। তার হাতে তো বেশীদিন এখনও হয় নাই।
এগুলি সব কমান্ডোকৌশল। আমাদের বোঝা ভার।
হাঁটুপানির জলদস্যু
আমি ব্যক্তিগতভাবে খেলোয়াড়দের গালিগালাজ করার পক্ষপাতী নই। ভালো কিংবা খারাপ - ওঁরাই আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার। মাঠে নেমে কেউ ইচ্ছে করে খারাপ খেলে, এটা কোনও বিশ্বাসযোগ্য কথা নয়। আবার কোনও খেলোয়াড় একই ভুল বার বার করলেই তাঁর চোদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করাটাও অযৌক্তিক - পেশাদার লেখকও একই বানান ভুল করতে পারেন বারবার। আমরা সবাই নিজেদের পেশার ক্ষেত্রেও ভুল করি হরদম।
কয়েক বছর আগের একটা ঘটনা মনে পড়লো।
বিয়ের পর তৎকালিন জাতীয় দলের ক্রিকেটার নাফিস ইকবালের খেলার ফর্ম পড়ে গেলে জনকণ্ঠে রণজিৎ বিশ্বাস এ ব্যাপারে লিখেছিলেন "দাম্পত্যবিভোর নাফিস ইকবাল"। কথাটি রীতিমতো অশ্লীল মনে হয়েছিল আমার। এমন কথা আমরা আড্ডায় বলতে পারি, কিন্তু তা পত্রিকায় লেখা অসভ্যতার পর্যায়ে পড়ে।
বর্তমানের ক্রিকেটারদের টেস্ট খেলার মানসিকতা নেই, তা সত্যি। দিনের পর দিন ওয়ানডে বা ২০-২০ খেলতে বাধ্য হলে অমন মানসিকতা থাকবে না, সেটাই কি স্বাভাবিক নয়?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
হোয়াটমোর যাবার পরে বাংলাদেশের খেলা পড়ে গেছে। সব কোচ হোয়াটমোর নয়।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
নতুন মন্তব্য করুন