ব্লগে ব্লগানো হয় না অনেকদিন। মাঝে মাঝে লিখি। লেখা শেষ করতে পারি না। পরে লিখব লিখব করেও লেখা হয় না। "ব্যস্ততা আমাকে দেয় না অবসর " । আজকে এই লেখা শেষ করবই করব। অপাঠ্য হলেও শেষ করব। যেভাবেই হোক।
লিখতে বসে দেখি শিরোনাম দিতে হবে। কিন্তু কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে তো লিখতে বসি নি। তাই "শিরোনামহীন" শিরোনামে লেখা শুরু করলাম।দেখি কি কি সাব-শিরোনাম দেয়া যায়।
রোযা ও ঈদ
রোযা শেষ হলো আরও একবার। বিদেশের মাটিতে এটা ছিল ৪র্থ রোযার মাস। কোন আহামরি কিছু হয় না রোযার সময় উইক এন্ড ছাড়া। তবে উইকএন্ডের রকমারি ইফতারের বহর দেখে আমার মা জননীও যে ভড়কে যেতেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। এবারের ঈদ নিয়ে আর কিছু না হয় নাই বললাম। বুধবারে ঈদ হয় নাকি? অফিস ঠেলা দিয়েই বাঁচি না, আবার ঈদ!! তবে মানুষজনের মনে অনেক রঙ আছে বুঝলাম। মঙ্গলবার রাত থেকেই ফোন আর এসএমএসের অত্যাচারে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল। এ যেন "পানির অপর নাম জীবন" , আর "মুঠোফোনের অপর নাম যন্ত্রণা"। যাই হোক ঈদের দিনটা ছিল আর ১০টা সাধারন কর্মদিবসের মত। ঈদ বলতে আমরা বৃহত্তর সেন্সে আমরা যা বুঝি তার কিছুই ছিল না। তবে প্রবাসে প্রায় ৫ বছর কাটানোর পর এখন আর বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বের হয় না।দীর্ঘশ্বাসগুলো গলা পর্যন্ত আসার পর ঢোঁক গিলে নিচে নামিয়ে দেই। কার আছে সময় এই অধমের দীর্ঘশ্বাস শোনার?
কলিং কার্ড বিড়ম্বনা
প্রবাসীরা সবাই কম-বেশী কলিং কার্ড ব্যবহার করেন দেশে প্রিয়জনদের সাথে কুশল বিনিময়ের জন্য। ঈদের দিনের কথা তো বাদই দিলাম, ঈদের ৩য় দিন অর্থাৎ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬ ঘটিকার আগে কলিংকার্ড মারফত কোন লাইন-ই পেলাম না। মজার ব্যাপর হলো আমি যে কলিংকার্ড ব্যবহার করি তার মারফত দেশের নম্বর ডায়াল করে বৃহস্পতিবার রাতে দেখি রিঙ টোন তো বাজেই না, এনগেজ টোনও বাজে না। শুনতে পেলাম এক চাঙ্কু মেয়ে একঘেঁয়ে গলায় গান গেয়ে যাচ্ছে।কি আজব!! পরে শনিবারে জানতে পারলাম ঈদ উপলক্ষ্যে ফোনকল করার হিড়িক পরায় বেচারা ফোনকার্ড প্রোভাইডারের সার্ভার নাকি ডাউন হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য এই কথার সত্যতা যাচাই করা যায় নি। উল্লেখ্য আমার "হবু বউ" সারাটা দিন ফোনের পাশে বসেছিল ফোনের আশায়। রাত ৩/৪ টার দিকে তার সাথে কথা হলেও ঐ বদখত সময়ে বাসায় ফোন দেয়ার সাহস হয়নি পিতৃদেবের ঝাড়ি খাবার ভয়ে। কি দরকার স্বেচ্ছায় বাঘের গুহায় ঢুকতে যাওয়ার!!
দাওয়াত-দাওয়াত-দাওয়াত
ঈদের দিন সন্ধ্যা হবার পরই শুরু হলো দাওয়াত দেয়ার হিড়িক। কনফার্ম-রি-কনফার্ম -রি-রি-কনফার্ম করার পরেও মানুষের দেখি শান্তি নাই। ফোন করে জিজ্ঞাসা "ভাই এখনও বাসা, নাকি রওয়ানা দিয়ে দিছেন?' দাবি-দাওয়ারও কমতি নাই। কারও দাবি সবার শেষে এসে ডিনার করতে হবে-কারও দাবি সবার আগে আসতে হবে--তা নাহলে হবে না। আবার কারও দাবি খাই বা না খাই যেতেই হবে। মহা মুসিবত আর কি!! প্রথমে বাসায় গিয়ে খাব না খাব না করে নিজেকে বুঝ দিয়েও খেতে বসে একেবারে খেয়ে "সাফা" বানিয়ে দিলাম। বাড়ির পাচক মহাখুশি। তাঁর সান্ত্বনা সারাদিনের পরিশ্রম সাকসেসফুল। খেয়ে-দেয়ে মোটামুটি বেল্ট একটু ঢিলা করে কোকভর্তি গ্লাস নিয়ে সোফাতে বসতে বসতে নিজেকে মনে মনে বললাম "যা খাওন একখান দিস না মামা, আরও তিন বাড়িতে কি খাবা?"। নিজেকে মোটামুটি মনে মনে বিরাশি সিক্কার ৪/৫ টা লাথি কষালাম। কিন্তু কথায় আছে ভাগ্যবানের বোঝা ভগবানে বয়, তাই যখন দেখলাম ঐ বাসাতেই আরও দুইজনের আগমন-যাদের বাসায় আমার যাওয়ার কথা, তখন কথার মার-প্যাঁচে ফেলে "সিস্টেম" করে ফেললাম। বললাম ভাবিদের এত কষ্টের রান্না আমি বৃথা যেতে দিব না। তাই আজ আর না গিয়ে যদি পরের ২ দিন উনাদের বাসায় যাই, তাহলে মন ভরে একবেলা উদরপূর্তি করা যেত।আমার এহেন তৈলমর্দনের পরে বলাই বাহুল্য যে এক কথাতেই সবাই রাজি হয়ে গেল। অবাক লাগে মাঝে মাঝে এই ভেবে যে এরা আমার কেউই নিকটাত্নীয় নন, অনেককেই আমি বেশিদিন যাবত চিনি না। কিন্তু তাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আমাকে আপ্লুত করে। এই ভিনদেশে শত প্রতিকূলতার মাঝে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা যোগায়। ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট করতে চাই না তাদের, তাদের বলতে চাই আপনাদের এই ভালোবাসা রাখার মত জায়গা আমার হৃদয়ে নেই।
পরে আরও লিখব। এখন আর গ্যাঁজাতে ভালো লাগছে না।
মন্তব্য
কলিং কার্ডের ব্যাপারটা আমাকেও ভুগিয়েছে।
বাঙালির আতিথেয়তা মনে হয় সারাবিশ্বেই মাস্টার আইটেম। যদিও পরিবেশ পরিস্থিতি এবং অনেক আর্থসামাজিক জটিলতা এই বোধটাকে একটু একটু করে চাপা দিয়ে ফেলছে। একদিন যদি এটা পুরোপুরি চাপা পড়ে যায়, তাহলে বাঙালি আর বাঙালি থাকবে কিনা কে জানে !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আমার ঈদ এবার অসুস্থতার মাঝেই কাটলো।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
বিশ্বাস করেন আর না করেন, অনেক ভালো ঈদ কাটিয়েছেন।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
- ঈদ আর কই করলেন, খালি তো দেখি খাওয়া-দাওয়ার গল্প!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন