"চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছ, এখন আর কেউ আটকাতে পারবে না, দু'দিন পরেই চলে যাব এ কোম্পানি ছেড়ে, তখন আর কেউ ব্লেম করতে পারবে না।"
চাকরি ছাড়া-চাকরি পাওয়া জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমার বর্তমান চাকরির বয়স মাত্র ১৫ মাস। ১৫টি মাসের সুখ-দুঃখের স্মৃতি নিয়ে এমাসের ১৭ তারিখে শেষবারের মত আসব এই অফিসে। প্রচন্ড এনজয় করেছি আমার এই চাকরিটিকে। পরিবেশ থেকে শুরু করে জব সেটিসফিকশন কি ছিল না? বেশীরভাগ চাকরিতে বসের সাথে অধঃস্তনদের খিটিমিটি লেগে থাকে। কিন্তু আমার বস ছিলেন একজন সজ্জন মানুষ। অনেক ভুল করা সত্ত্বেও তিনি আমার উপর নাখোশ খুব একটা হননি কখনও। এছাড়া যে মানসিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা এখানে পেয়েছি, তার জন্য কিছুটা ঋণী হিসাবে নিজেকে দাবি করি তবে তা দোষের কিছু হবে না।
বিচিত্র কারণে মানুষ যখন চাকরি ছেড়ে দেয়, তখন কেন জানি চাকরিদাতার উপর বিমাতাসুলভ আচরণ করে। এই বিচিত্র আচরণ শুধু বাংলাদেশি জাতির মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়।আমাদের ন্যাশনাল অপারেশনস হেলথ এন্ড সেফটি কো অর্ডিনেটর চলিন নিউম্যান কয়েকদিন আগে জব ছাড়লো, সে ভদ্রলোকও যাওয়ার আগে কোম্পানির ক্রেডিট কার্ডে মোটামুটি বিশাল অঙ্কের একটা বিল ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। সাধারণত খানা-পিনার কাজেই এধরনের বড় অঙ্কের খরচ ধরিয়ে দেয়া হয়। কোম্পানির প্রয়োজনে যাতায়াত করতে হলে যাতায়াত থেকে শুরু করে থাকা-খাওয়ার দায়িত্ব কোম্পানি বহন করে। তাই শেষবার ভ্রমনের সময় আমাদের কলিন সাহেব খুবই দামী এক রেস্টুরেন্টে ডিনার করেন সহকর্মীদের সাথে। তিনজনের খানা-পিনার জন্য যেখানে মোটামুটি একটা হোটেলে ২০০ থেকে ৩০০ ডলার যেখানে যথেষ্ঠ, কলিন সাহেব সেখানে ৫৭৫ ডলারের একটা বাল্ক বিল যাওয়ার আগ মুহুর্তে ধরিয়ে দিয়ে গেছেন কোম্পানির এ্যাকাউন্টস সেকশনের কাছে। অথচ তাকে কোম্পানির তরফ থেকে যাওয়ার আগে ফেয়ারওয়েল পার্টিও দেয়া হয়েছিল।
আমার কাছেও একটা কোম্পানির ক্রেডিট কার্ড আছে। আমার নতুন চাকুরিটি কনফার্ম হয়ে যাওয়ার পর অনেক বিশিষ্ট বন্ধুপ্রবর আমাকে এজাতীয় কর্মকান্ডে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। কোন এক অজানা কারণে আমার মন সায় দেয় না। ১৫ মাসের পরিশ্রমের বিনিময়ে যতটুকু সম্ভব ভালোবাসা ও সম্মান আমি অর্জন করেছি, তা এমন নিকৃষ্ট উপায়ে এক বেলা উদরপূর্তির বিনিময়ে আমি বিসর্জন দিতে পারি না। নিজের গুডউইল দিনের পর দিন মেহনত করে অর্জন করে এভাবে বিসর্জন দেয়ার মানে কি হতে পারে তাও বুঝি না।
মন্তব্য
অজানা নয়, আমার তো মনে হয় এই বাক্যেই কারণটা আছে। আপনি কী বলেন?
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
নাহ। ধরতে পারলাম না।
মন সায় দেয় না - সেটাই তো কারণ।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
অ্যাট অ্যাকচুয়াল হারে ভাতা পেলে আমরাও কাম্পানীর উপর খান্দানী খানাপিনার দায় চাপাই
-------------------------------------
রামছাগলের সামনে, খচ্চরের পেছনে আর নিবোর্ধের ধারেকাছে না থাকাই শ্রেয়!
সবাই কম-বেশি করে বলেই আমার ধারণা। তবে কিছুটা হলেও সংযম করা উচিত বলে আমি মনে করি।
নতুন জব নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
সিডনি।:)
"১৫ মাসের পরিশ্রমের বিনিময়ে যতটুকু সম্ভব ভালোবাসা ও সম্মান আমি অর্জন করেছি, তা এমন নিকৃষ্ট উপায়ে এক বেলা উদরপূর্তির বিনিময়ে আমি বিসর্জন দিতে পারি না।"
উদরপূর্তি নিকৃষ্ট মনে হইলে, আমারে টাকাগুলা দিয়া দেন, আমি ডি ভি ডি কিনি ... আমার হিসাবে অনেক উৎকৃষ্ট উপায়
একবার পার হয়ে যাওয়া ব্রীজ কখনো ভেংগে ফেলতে হয় না।
______ ____________________
suspended animation...
সহমত @হাসান ও অমিত। তাছাড়া এ জাতীয় কুকর্মের পর রেফারেন্স পাওয়া যায় না।
কোন দরকার নেই । ম্যাটেরিয়ালী চিন্তা করলে ও কয়েকশো ডলার উড়িয়ে দেয়ার চেয়ে কোমাপানী রেফারেন্স অনেক দামী ।
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
নতুন মন্তব্য করুন