******সামহোয়্যার থেকে নেয়া*******
আজকের কাহিনী আমার প্রাক্তন ইউনিভর্সিটি রুম মেট, কলেজ লাইফ থেকে আমার লাইফের সাথে জড়িত চাঁদপুর জেলার মতলব থানানিবাসী কবিরকে নিয়ে। প্রসঙ্গত বলে রাখি সঙ্গত কারণে তার নাম গোপন রাখা হলো। কবির আমার খুবই ভালো বন্ধু। ইউনিভার্সিটি থেকে দূর্দান্ত রেজালট করে সে এখন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে প্রবাসী লিস্টে নাম লিখিয়েছে। বেচারার একটা বিশাল সমস্যা আছে। তা হলো ভদ্্রলোক প্রচন্ড হতাশাবাদী। দেশের স্বনামধন্য ইউনিভার্সিটি থেকে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েও সে ছিল হতাশ।কবিরের হতাশা দেখে আমি হতাশ হওয়া ছেড়ে দিলাম।আমার ধারণা হলো যে টপ রেজালটধারী ছাত্রের যদি হতাশার মাত্রা এই হয়, তাহলে হতাশ হয়ে নিজের জীবন নষ্ট করার কোন মানে হয় না। তার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাদ থেকে লাফ দিলেই ল্যাঠা চুকে যায়। কারণ ক্লাসের শেষের ১০ জনের মধ্যে ৫ম ছিল আমার অবসহান। আর তাছাড়া আমার বন্ধুসকলের মধ্যে আমার ফলাফলটা বরাবর খারাপ। ফলাফল বের হলে মা-বাবার জিজ্ঞাসা থাকত বাকি কার কি রেজালট। আমিও অবলীলায় সত্য কথা বলে পিতৃদেবের অম্ললবাণী হজম করতাম। আমার পিতৃদেবের বক্তব্য এদের সাথে চলাফেরা করে আমার কোন উন্নতি হয় না কেন। আমি মনে মনে বলতাম উন্নতি হয় দেখেই আজ এই অবসহা, তা না হলে রেজালটের পর ফেরারী হতে হতো।
যাইহোক, কবিরের কথায় ফিরে আসি। এত হতাশাবাদী মানুষের সাথে চলাচল একটু বিপদজনক। সবকিছুতেই তারা হতাশা খুঁজে। কিন্তু কবিরের কথা একটু ভিন্ন। সম্ভবত সে নিজের উপর হতাশ।
আমাদের কবির প্রেমে পড়ল দুনিয়ার নিয়মে।নায়িকার নাম সুপ্তি বেগম। আমাদের কলেজের সহপাঠী।আমরা তার প্রেম সফল করার জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলাম। যেমন তারা যেন ক্লাসে একই সমান্তরালে বসতে পারে, ছুটির পর যেন এক সাথে গেট দিয়ে বের হতে পারে,এই জাতীয় কিছু সাধারণ সাহায্য অসাধারণভাবে করতে লাগলাম। কবির তার প্রেমকে চোখের আড়াল না করার জন্য একই ব্যাচে পদার্থবিজ্ঞান পড়া শুরু করল। পদার্থবিজ্ঞান পাঠের পাশাপাশি তাদের রসায়নপূর্ণ ইঙ্গিত আদান-প্রদান ঘটেছিল কিনা তা আমার জানা নেই।তবে সকালে কলেজে প্যারালালি আর দুপুরে স্যারের বাসায় চোখাচোখি করতে করতে কবিরের সাহস বাড়তে থাকল এবং সে মোটামুটি ৩/৪ মাস পর ঠিক করল সুপ্তি বেগমকে প্রেম নিবেদন করবে। কিন্তু বিধিবাম!! প্রস্তুতির চূড়ান্ত মূহুর্তে জানা গেল নায়িকা ভিলেনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। ভিলেন আর কেউ না কবিরকে সাহায্যরত আমাদের জনৈক ক্লাসমেট আশিক। সুদর্শন আশিক মিয়া কিছু না বুঝেই ভিলেন হয়ে গেল এবং সুপ্তি বেগমের প্রেমপত্র তার হস্তগত হলো। কবির মিয়া রাগে-দুঃখে হিন্দি সিনেমার বিরহী নায়ক হবার সিদ্ধান্ত নিল। পরবর্তীতে আশিক-সুপ্তি প্রেম কাহিনীর দ্রুত সমাপ্তি ঘটলেও কবির আর কোন চান্স নিতে রাজি হলো না, তার এক কথা সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস সে গ্রহণ করবে না।
এরইমধ্যে কলেজে নবীনদের আগমন ঘটলো। নতুন মেয়েদের আগমনে কলেজের পুরানো রোমিওদের হার্টরেট বৃদ্ধি পেল। কবির জনৈকা নবীন কান্তার প্রেমে পড়ে গেল যাকে বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইট। কিন্তু পূর্ববর্তী প্রেম থেকে তার ধারনা হলো যে প্রতিষ্ঠিত হবার আগে কান্তার সাথে সে কোন সম্পর্কে যাবে না। তাছাড়া খবরে প্রকাশ পেল যে কান্তার বড়বোন আমাদেরই সহপাঠী যার নিক নেম মহিলা ক্যাডার। শকুনের মত দৃষ্টি , কাকের মত কর্কশ গলার অধিকারিণী ও গলা তুলে ঝগড়া করতে পারদর্শী এই মহিলা ক্যাডার েক কলেজের ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সবাই এড়িয়ে চলে। বাঘে মহিষের এক ঘাটে জল খাওয়া যাকে বলে আর কি!! যাই হোক কবির আশায় আশায় রইল 1টি বছর। পাস করে ইউনিভার্সিটিতে ঢুকেও কবিরের প্রতিষ্ঠিত হওয়া যখন সম্পন্ন হলো না, তখন মায়ের থেকে মাসিদের দরদ বেশি হতে লাগল। আমরা বন্ধুসকল কবিরকে বুঝাতে লাগলাম 'নাউ অর নেভারের মহত্ব'। আমি তো একদিন কান্তাকে নিজের বলে দাবি করে প্রেম নিবেদন করার প্রস্তাব দিয়ে বসলাম। আমার এক কথা হয় কবির কিছু করবে না হলে আমি....আমার আশা ছিল কম্পিটিশনের ভয় দেখালে কবিরের সুপ্ত প্রেম জাগ্রত হবে। কিন্তু বেটার এক কথা, আমি যেন কান্তার দিকে চোখ তুলে না তাকাই, সময় হলে ও নিজে কান্তাকে প্রোপজ করবে।
(আগামী পর্বে সমাপ্ত)
মন্তব্য
এই অধমের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার মতলব থানায়। নানা-বাড়ি এবং দাদা-বাড়ি দুটোই।
এইটা একটা কাজ করলেন ... ... এমন জায়গায় এসে আগামী পর্বের মূলা ঝুলায় দিলেন ... ...
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
রউফ, কবিরের বাড়ি কুমিল্লা হলেও ছেলে ভাল, কিন্তু কিপটা। আমরা অবশ্য এজন্যই ওকে দৌড়ের উপর রাখতাম।
শামীম, মূলা একটু ঝুলাতে হলো বলে দুঃখিত। আগের অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে বড় লেখা মানুষ পড়ে না। একতু অপেক্ষা করুন।
জলদস্যু ভাই, আগে আমিও উল্লেখ করতাম লেখাটি আগে সামহোয়্যারে বা অন্য কোথাও প্রকাশিত কি না। কিন্তু এখন থেকে আর করবো না ভাবছি। সচলায়তনের পাঠকরা অনেকেই সামহোয়্যারের পাঠক নন, কাজেই পুরনো লেখারও একটা বড় পাঠকসাড়া পাওয়া যায়।
হাঁটুপানির জলদস্যু
সহমত।
'সামহোয়্যার থেকে আনা' না বলে 'কোথাও থেকে আনা' বলা যায় না?
নিতান্ত জরুরি হলে আমি রেফারেন্স শেষে দেবো ভাবছি। কেমন হয়?
হাঁটুপানির জলদস্যু
আপনাদের কথাই সই। নো রেফারেন্স এখন থেকে। আমার লেখা আমি যেখানে খুশি ছাপাব।।।কার কি?
নতুন মন্তব্য করুন