ডিন: ড্যারেন তোমার মেয়েটা কেমন করছে? ও তো কোরিয়ায় তাই না?
ড্যারেন: হ্যাঁ, কোরিয়াতে সউলে একটা স্কুলে ইংরেজি পড়াচ্ছে। মেয়েটা পড়াশুনাটা শেষ করল না।
ডিন: কেন? শেষ করলে তো এখানে ভালো সুযোগ পেত।
ড্যারেন: সুজি বরাবরই এরকম। কোন ডিসিশন ঠিকমত নিতে পারে না। যখন যা পায়, তা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করে।
ভিনসেন্ট: সুযোগ নেয়াটা জীবনের খেলা। কোন সুযোগ তোমার জন্য কি আনবে তা তুমি কখনও প্রেডিক্ট করতে পারবে না।
ডিন: কোরিয়াতে চাকরিটা পেল কিভাবে? বেতন-টেতন কেমন?
ড্যারেন: এখানে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করেছিল। বেতন ভালোই।খারাপ না। (একটু বিরতি)ও কিন্তু দ. কোরিয়ায় চাকরি করে। উত্তরে নয়। দ. কোরিয়ায় স্কেল খারাপ নয়। শুনেছি এশিয়ার মাঝে জাপানের পরই দ. কোরিয়ায় লিভিং কস্ট সবচেয়ে বেশি।
(দীর্ঘশ্বাস পড়ে ড্যারেনের বুক চিরে। শুনতে পায় টেবিলে উপস্হিত সবাই)
ভিনসেন্ট: তুমি খুশি নও মনে হচ্ছে? কি ব্যাপার?
ড্যারেন: আমি আমার মেয়েকে "ডার্টি ও ফিলথি" কোরিয়াতে বসবাসের জন্য গড়ে তুলি নি।
(এ পর্যায়ে সবার দৃষ্টি পড়ে টেবিলের কোনায় বসে থাকা আমার উপর।)
ডিন (আমাকে): কি ব্যাপার? তুমি এত চুপচাপ কেন? এশিয়ার সবদেশ কিন্তু ডার্টি ও ফিলথি নয়। আমরা কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলছি না, বলছি কোরিয়া নিয়ে।
দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে পড়ে আমার বুক থেকেও। চেপে রাখি শুনতে দেই না কাউকে। এ দীর্ঘশ্বাস আমার একার। কাউকে শুনতে দিতে চাই না। জীবনে যত যাই করি না কেন আমার পরিচয় সেই ডার্টি ও ফিলথি এশিয়ান (বাংলাদেশি)। এ পরিচয় আমার জন্মগত ও জানি না কত জেনারেশন আমাকে এই পরিচয় বহন করতে হবে সাদা চামড়ার এই দেশে।
খাবারটা ঠান্ডা হয়ে আসছে। খাওয়ার দিকে মনোযোগ দেই। এত ঝাপসা দেখছি কেন? চোখের কোণে জমা অশ্রুবিন্দু কি অপমানের না দুঃখের নাকি গভীর হতাশার?
মন্তব্য
মজার ব্যাপার হল কোরিয়া আর বাংলাদেশের এই তফাত আজ থেকে চল্লিশ বছর আগেও ছিল না। আমি আগেই লিখেছি এ নিয়ে। পড়ে দেখতে পারেন এখানে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
এইবোধ বড় বেশী প্রাসংগিক,চেতনে কিংবা অচেতনে ।
গ্লাসগোতে পাকিস্তানীরা বোমা হামলা করলে পরদিন যখন ক্যাফেটেরিয়ায় আলোচনা চলে,কোন না কোনো সুযোগে বলি-মুসলমান হলেও আমরা বাংলাদেশীরা কিন্তু ওরকম নয় । মোটে ও ওরকম নয় । সুযোগ পেলে গল্প আরো জুড়ে দেই আমাদের রাষ্ট্রের উদ্ভবই হয়েছিল মৌলবাদ প্রতিরোধ করে ।
পরে হাসি নিজে । সংখ্যালঘু কতো ভাবে নিজেক বাঁচাতে চায় ।
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
নতুন মন্তব্য করুন