হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন অথবা ছিলেন না.......

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি
লিখেছেন মৃত্যুময় ঈষৎ [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ২০/০৭/২০১২ - ৩:৫৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঊনি ছিলেন অথবা ছিলেন না। কোন এক শৈশবে অথবা নির্জন কৈশোরে হাহাকার বিষণ্ণ পথটায় উনার প্রহচ্ছন্ন ছায়া পড়েছিল, সেই থেকে উনাকে চিনি। এ চেনা দীর্ঘ, পর্যায়যুক্ত, শূন্যতা কখনো মুগ্ধতার। উনি হয়তো আমাকে গভীর জীবনবোধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ভিতর ভেঙে চুড়ে দেন নি মাহমুদুল হকের মতো, হয়তো দীর্ঘ অথচ দৃঢ় গাঁথুনির মায়াজালে আচ্ছন্ন করেন নি ইলিয়াসের মতো এমনকি হয়তো ভাষার কারুকার্যে মোহিত করেন নি শওকত ওসমানের মত কিন্তু দেখিয়েছেন—কীভাবে নিজো কণ্ঠস্বর গড়ে নিয়ে নিজো পথে ঋজুভাবে চলতে হয়, সহজত্ব-সারল্যই ছিলো উনার ঢং-স্বকীয়তা; জাদুকরী কথাশিল্পে উনি আমাকে বধ করতেন। উনাকে হাতে নিলে সময় খারাপ কাটতো না, বেছে বেছে নিতাম সেটাও কারণ। নন্দিত নরকে মুগ্ধ করেছিল, করেছিল শঙ্খনিল কারাগারও। মাতাল হাওয়ার কথা মনে পড়ে বা লীলাবতি, বাদশাহ নামদার অথবা দারুচিনি দ্বীপ। আর মনে পড়ে অনেক অনেক সমালোচনা, অবজ্ঞা। আমার স্মরণ শক্তি কম অথবা সব উপন্যাস গুলো মনে রাখার মতো ছিলো না (যেমন ভুলে গেছি মেঘ বলেছে যাবো যাবো বা কবি কতবার পড়েছি- কত আবিষ্ট করেছিল!)।

তবে উনাকে প্রবলাক্রমনের কারণ খুঁজে পেতাম না। কখনি আমার উনাকে জামাতসমর্থক বা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধ শক্তিতে বিশ্বাসী মনে হয় নি। অথচ উনার সমালোচকরা উনাকে বারবার ছিড়ে খেয়ে নিয়েছেন। উনার নাতিদীর্ঘ রচনা, সহজ ভাষ্যকে দুর্বলতা মনে করেছেন।

অয়ময়-কোথাও কেউ নেই-এইসব দিনরাত্রি-আজ রবিবার-এই ঐতিহাসিক নাটকগুলো উনার সৃষ্টি এটা ভুলে যাওয়া উচিৎ নয়। আগুনের পরশমনি- শ্রাবণ মেঘের দিনের মতো মুভি এই বাংলায় খুব বেশি কি হয়েছে? বৈচিত্র্যময় সর্বাধিক জনপ্রিয় চরিত্র মিসিরালী, হিমু বা বাকের ভাই কে আর কে এভাবে গড়ে তুলতে পেরেছে?

হুমায়ুন আহমেদ উনার নিজের কণ্ঠস্বরে দীপ্ত, উনাকে আর কারো মতো হবার প্রয়োজন নাই। উনাকে সারা বাঙালী জাতি কত অপার মমতায় ভালোবাসতো তা উনার মৃতদেহ দেশের মাটি ছুলেই দেখা যাবে। বাঙালী যে এতটুকু বাংলা জানে সে হুমায়ুনকে ভালোবেসেছে, ভালোবাসবে। উনার জাদুতে আবিষ্ট হবে। এটা অবধারিত। উনার প্রতি সাধারণ মানুষের ভালোবাসাকে অস্বীকার করার সুযোগ নাই। আমার বা আমাদের তীব্র সমালোচনাকে তুহ মম শ্যাম সমান বলে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা জিতে যাবে, অক্ষত রবে, এটাই ইতিহাস হয়ে থাকবে। সমালোচনা বেনো জলে পারাপার হয়ে যাবে। ভালোবাসার শক্তি অনির্ণেয়-অসীম।

কদিন ধরেই চিন্তাগ্রস্ত ছিলাম। আজ খবরটা শোনার পর থেকে মস্তিষ্কের কোথায় যেন চিকন এক বিদীর্ণ ব্যাথা অনুভব করছি, শূন্যতা ঘিরে আসছে। হয়তো সমালোচক আমিও অবচেতনে উনাকে ভালোবাসতাম কিংবা আমিও উনার জাদুতে মোহগ্রস্ত ছিলাম।

বাঙালী জাতিসত্তা তার অন্যতম এক শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারিয়ে ফেললো। বাংলাদেশ তোমার ক্রন্দনরোল শুনতে পাচ্ছি। তুমি আজ কাঁদতেই পারো।


মন্তব্য

উতপাখির হৃদয় এর ছবি

বাংলা সাহিত্ত্বের অন্যতম দিকপাল , কথার জাদুকর , সাবলীল গদ্যকার হুমায়ুন আহমেদ এর মৃত্যুতে জাতি এক সূর্য সন্তান কে হারাল । এ শুন্যতা কখনই পূরণ হবার নয় । তার আত্মার বিদেহী শান্তি কামনা করছি ।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

বাংলা সাহিত্ত্বের অন্যতম দিকপাল , কথার জাদুকর , সাবলীল গদ্যকার হুমায়ুন আহমেদ এর মৃত্যুতে জাতি এক সূর্য সন্তান কে হারাল । চলুক


_____________________
Give Her Freedom!

dohon bela এর ছবি

বাঙালী জাতিসত্তা তার অন্যতম এক শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারিয়ে ফেললো।
শ্রদ্ধাঞ্জলি।

Dohon bela

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

মন খারাপ


_____________________
Give Her Freedom!

রিয়েল ডেমোন এর ছবি

এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে বই মেলায় হাত ভোরে আর তাই বই কেনা হবে না।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

তবু বই কিনতে হবে কারণ উনিই না বই কেনার অভ্যাসটা গড়ে তুলেছেন সাধারণ মানুষের।


_____________________
Give Her Freedom!

মেঘা এর ছবি

ভয়াবহ কষ্ট হচ্ছে। এটা ছাড়া আমি আর কিছুই ভাবতে পারছি না। শ্রদ্ধা

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

মন খারাপ


_____________________
Give Her Freedom!

শিশিরকণা এর ছবি

হয়তো ভালোই হয়েছে, আরও বিতর্কিত হয়ে মানুষের ভালোবাসা হারাবার আগেই চলে গেলেন। দাড়িপাল্লায় তুললে তাঁর লেখার দিকটাই এখনো অনেক বেশি ভারি।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

দাড়িপাল্লায় তুললে তাঁর লেখার দিকটাই এখনো অনেক বেশি ভারি। চলুক


_____________________
Give Her Freedom!

অতিথি লেখক এর ছবি

উনি আছেন। সবসময় আছেন। আমাদের মনে, মননে, স্মৃতিতে। আমাদের প্রেমের চিঠিতে, আমাদের কথায়, প্রতিদিনের ঝগড়ায়। উনি আছেন, উনি থাকবেন। আমাদের বৃষ্টি ভেজা বিকেলে, জোছনা মাখা অবাক রাতে, উনি আছেন। উনি থাকবেন। আমাদের আগুন গরম ঘি ভাতের স্বাদে, তেতুল বনের জোছনায়, ছুটির নিমন্ত্রণে উনি আছেন, উনি থাকবেন।

উনি হারাতে পারেন না। শুধু পারেন নতুন রূপে বারবার ফিরে ফিরে আসতে।

আলোকিত_মন

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

উনি আছেন। সবসময় আছেন। আমাদের মনে, মননে, স্মৃতিতে। আমাদের প্রেমের চিঠিতে, আমাদের কথায়, প্রতিদিনের ঝগড়ায়। উনি আছেন, উনি থাকবেন। আমাদের বৃষ্টি ভেজা বিকেলে, জোছনা মাখা অবাক রাতে, উনি আছেন। উনি থাকবেন। আমাদের আগুন গরম ঘি ভাতের স্বাদে, তেতুল বনের জোছনায়, ছুটির নিমন্ত্রণে উনি আছেন, উনি থাকবেন।

উনি হারাতে পারেন না। শুধু পারেন নতুন রূপে বারবার ফিরে ফিরে আসতে। চলুক


_____________________
Give Her Freedom!

অমি_বন্যা এর ছবি

অজানা দেশে শান্তিতে থাকুন। শ্রদ্ধা

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

মন খারাপ


_____________________
Give Her Freedom!

অনিকেত এর ছবি

আনত শ্রদ্ধা হুমায়ুনের জন্যে....... শ্রদ্ধা

হুমায়ুন আহমেদ উনার নিজের কণ্ঠস্বরে দীপ্ত, উনাকে আর কারো মতো হবার প্রয়োজন নাই।

--খুব সত্যি কথা!

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

খুব মুষরে পড়েছি অনিকেতদা। মন খারাপ


_____________________
Give Her Freedom!

সাফি এর ছবি

উনাকে ঘিরে বিতর্কের পেছনে ওনার আলোচনায় থাকার ইচ্ছের কারণেই উনি সৃষ্টি করতেন কিনা জানা নেই। এখন সেই বিতর্কের সময়ও না। শৈশবের অসংখ্য ভালো লাগার মূহুর্তের জন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। প্রিয় হুমায়ুন যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

মন খারাপ

শৈশবের অসংখ্য ভালো লাগার মূহুর্তের জন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। প্রিয় হুমায়ুন যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন। চলুক


_____________________
Give Her Freedom!

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

শ্রদ্ধা

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখার ভাষা খুবই সুন্দর। লিখতে থাকুন।

সুপম রায়

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

শ্রদ্ধা


_____________________
Give Her Freedom!

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

মন খারাপ


_____________________
Give Her Freedom!

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আমার শৈশব আর কৈশোরের হুমায়ূন কখনও মারা যাবেন না, লেখক হুমায়ূন কোনদিনও মরবেন না, মরবেন না নাট্যকার হুমায়ূন, মরবেন না শিল্পী হুমায়ূন; মানুষ হুমায়ূন মরতে পারেন। লেখক হিসেবে তার অসাধারণ ক্ষমতাই হয়ত আমার মত অনেককে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল তার শেষদিকের অহুমায়ূনীয় অনেক কার্যকলাপে। প্রিয় হুমায়ূন, আপনাকে বলতে চাই, আপনাকে অনেক অনেক ভালবেসে অনেক উঁচুতে বসিয়েছিলাম বলেই আপনার ওপর রাগ হত, রাগ হত আপনার হাত থেকে আরও একটি 'নন্দিত নরকে' বা 'হোটেল গ্রেভার ইন' পাইনি বলে, রাগ হত আপনি আর 'শঙ্খনীল কারাগারে' অথবা 'কোথাও কেউ নেই' বানান না বলে, রাগ হত শৈশব আর কৈশোরের সেই জাদুময় সময়গুলো আর দিতেন না বলে। কিন্তু আমার মত এমন অপাংক্তেয় মানুষের রাগে বা অভিমানে কী বা এসে যায়। এত তাড়াতাড়ি না গেলেও তো পারতেন। আপনি কোথায় গেছেন সেটা হয়ত আমি জানিনা, কিন্তু আমার শৈশব আর কৈশোরের হুমায়ূন আমার খুব কাছেই থাকবেন, সারাজীবন। শ্রদ্ধা

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

চলুক

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

চলুক চলুক
মনটা খুব খারাপ শান্ত ভাই। মন খারাপ


_____________________
Give Her Freedom!

কড়িকাঠুরে এর ছবি

শ্রদ্ধা

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

................................


_____________________
Give Her Freedom!

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

লেখাটা ভাল হয়েছে।
হুমায়ূন আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা
আমিও শোকাভিভূত।
ধন্যবাদ আপনাকে।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

মন খারাপ

পড়ার জন্য ধন্যবাদ।


_____________________
Give Her Freedom!

রেজা রিফাত এর ছবি

আমি কি লিখবো? ভেতরে প্রবহমান অনুভূতির প্রকাশ যে কঠিন। এ মুহূর্তে হুমায়ুন স্যারের লেখার সাহিত্তিক-সামাজিক-নান্দনিক কোন মান যাচাই করতেই আমি রাজি নই, পৃথিবীতে ঢের মানুষ আছে, তা নিয়ে ভাবার। তবে আমি একটা সত্য জানি, বাংলাদেশের জন্য হুমায়ুন আহমেদ এমন এক বাক্তিত্ত- যার আগে কেউ ছিল না এবং আমি এটা অনুমান করতে পারি তার পরেও কেউ থাকবে না। তিনি সতন্ত্র এক লেখক।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

চলুক


_____________________
Give Her Freedom!

দুঃখী ধীমান এর ছবি

কৈশোর থেকে একটা ইচ্ছে দানা বেঁধে স্বপ্ন হয়ে বুকে গেঁথে ছিল। স্যার যদি কখন-ও আমার মত নগন্য মানুষ কে দেখা দেন।বাংলাদেশে তো অনেক মানুষ অনেক ভক্ত-সাহস হত না। অথচ তার মৃত্যুর সময় তিনি খুব কাছেই ছিলেন আমার। "জামাইকা" তে ড্রাইভ করার সময় ভাবতাম এক দৌড় দিয়ে বলে আসি, স্যার দিন রাত দোয়া করছি, আপনি ভাল হবেন -ই হবেন। কখন-ও যাওয়া হয়নি।"কেন" -এর উত্তর আমি-ও জানি না। তিনি চলে গেছেন- শুধু তার কথা উঠলে বুকে গাঁথা স্বপ্নটা ব্যথায় মোচড় দিয়ে উঠে।

পাখি চলে গেল-রেখে গেল ভালোবাসা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।